অরুনাভ পোদ্দার
ছেলেগুলো কাজ করছিল নিজের মনেই। হঠাৎ করে একটি ছেলে আমার ঘরে টাঙানো জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গে তোলা আমার কন্যার ছবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশাল ছবি, আসাদুজ্জামান নূর ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের ছবি দেখে বলে উঠল, ‘স্যার, আপনারা কি কেউ লেখালেখি বা অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত?’
একটু অবাকই হলাম! বললাম, ‘না, তেমন কিছু না।’
এই ফাঁকে বলে রাখি, ওরা এসেছে অনলাইনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বাসার সব স্নানাগার, রান্নাঘর পরিষ্কার করে দেবে। ইদানীং দেশে বাড়ির তেলাপোকা, ছারপোকা নিধন থেকে শুরু করে ঘরের জানালা, স্নানাগার পরিষ্কার, খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহের জন্য অনলাইনভিত্তিক নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একটু পরে আমার বুক সেলফের দিকে তাকিয়ে ছেলেটি নিজেই বলতে লাগল, ‘স্যার, আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জাফর ইকবাল স্যার, বুদ্ধদেব গুহ, রবীন্দ্র রচনাবলী পড়েছি।’
অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি পড়াশোনা করো? কিসে পড়ছ?’
ছেলেটি সপ্রতিভভাবে জানাল, ওরা তিন বন্ধু ঢাকার একটি কলেজে অনার্স পড়ছে। পড়াশোনার ফাঁকে একটি গাড়ির শোরুমে চাকরি করত। কিন্তু করোনা মহামারির কালে শোরুম বন্ধ থাকায় ওদের চাকরি চলে যায়। ভেবেচিন্তে তিন বন্ধু মিলে অনলাইনে এ প্রতিষ্ঠানটি খুলেছে।
উত্তর শুনে যতটুকু না বিস্মিত, তার থেকে অনেক বেশি খুশি হলাম। জিজ্ঞেস করে জানলাম, প্রায় প্রতিদিনই কাজ থাকে। প্রায় ছয়-সাত ঘণ্টা ওরা কাজ করল। ওদের কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ হলাম। কাজ শেষে ওদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে কিছুটা বেশি দিলাম। প্রথমে ওরা নিতে চাইল না। বলা যায় জোর করেই দিলাম। ওদের একটাই অনুরোধ, কাজের মান দেখে, যেন তাদের পেজে প্রশংসাসূচক কিছু লিখে দিই।
ভালো লাগল, দেশের শিক্ষিত ছেলেরা এখন এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসছে, তা দেখে। কোনো কাজই যে ছোট না, অবহেলার না, তা প্রমাণ করে এদের এগিয়ে আসায়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ, যুবা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকায় পাড়ি জমায় উন্নত ভবিষ্যতের জন্য। লাখ লাখ টাকা খরচ করে দালাল ধরে, জীবন বিপন্ন করে, পরিবারের ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যান একটু উন্নত জীবন ও ভালো রোজগারের আশায়। সবার স্বপ্ন কি পূরণ হয়? কত হাজারো তরুণ হারিয়ে যায় চিরতরে ভূমধ্যসাগরে বা শীতে জমে যায় বসনিয়া, সার্বিয়ার জঙ্গলে। বিদেশের জেলে পচে মরছে কতশত স্বপ্ন। কতশত পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে দালালদের খপ্পরে পড়ে। কিন্তু তাঁরা প্রায় সবাই বিদেশে অনভিজ্ঞ শ্রমিক হিসেবে এ কাজ করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষিতরাও যেকোনো কাজ করে নিজের শিক্ষাব্যয় ও পরিবারের ভরণপোষণ করে। এতে বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। সেখানে যেকোনো কাজই সম্মানের।
ইউরোপ, আমেরিকায় মিলিয়নিয়ারের সন্তানেরাও ১৮ বছরে পা দিলে মা-বাবার কাছে আর হাত পাতে না। তাইতো রক ফেলার, হেনরি ফোর্ড বা বারাক ওবামার সন্তানেরাও যেকোনো কাজে নেমে পড়ে। কিন্তু আমাদের দেশ ব্যতিক্রম। উচ্চশিক্ষা নিয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এ ধরনের কাজ সমাজ ভালো চোখে দেখে না। তাই এদের এই উদ্যোগ দেখে দারুণ আশাবাদী হলাম। এভাবেই দেশে ধীরে হলেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগছে।
সরকার ইচ্ছে করলে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ ও স্বল্পসময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই তরুণদের উৎসাহিত করতে পারে, এতে দেশের বেকার সমস্যারও সমাধান হবে। যেদিন দেশে যেকোনো শ্রমকেই মর্যাদার চোখে দেখা হবে, সেদিনই আসলে আমরা উন্নত বিশ্বের মতো সমাজ গড়তে পারব। দেশ হবে বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত।
লেখক: চিকিৎসক ও সংস্কৃতিকর্মী
ছেলেগুলো কাজ করছিল নিজের মনেই। হঠাৎ করে একটি ছেলে আমার ঘরে টাঙানো জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গে তোলা আমার কন্যার ছবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশাল ছবি, আসাদুজ্জামান নূর ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের ছবি দেখে বলে উঠল, ‘স্যার, আপনারা কি কেউ লেখালেখি বা অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত?’
একটু অবাকই হলাম! বললাম, ‘না, তেমন কিছু না।’
এই ফাঁকে বলে রাখি, ওরা এসেছে অনলাইনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বাসার সব স্নানাগার, রান্নাঘর পরিষ্কার করে দেবে। ইদানীং দেশে বাড়ির তেলাপোকা, ছারপোকা নিধন থেকে শুরু করে ঘরের জানালা, স্নানাগার পরিষ্কার, খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহের জন্য অনলাইনভিত্তিক নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একটু পরে আমার বুক সেলফের দিকে তাকিয়ে ছেলেটি নিজেই বলতে লাগল, ‘স্যার, আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জাফর ইকবাল স্যার, বুদ্ধদেব গুহ, রবীন্দ্র রচনাবলী পড়েছি।’
অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি পড়াশোনা করো? কিসে পড়ছ?’
ছেলেটি সপ্রতিভভাবে জানাল, ওরা তিন বন্ধু ঢাকার একটি কলেজে অনার্স পড়ছে। পড়াশোনার ফাঁকে একটি গাড়ির শোরুমে চাকরি করত। কিন্তু করোনা মহামারির কালে শোরুম বন্ধ থাকায় ওদের চাকরি চলে যায়। ভেবেচিন্তে তিন বন্ধু মিলে অনলাইনে এ প্রতিষ্ঠানটি খুলেছে।
উত্তর শুনে যতটুকু না বিস্মিত, তার থেকে অনেক বেশি খুশি হলাম। জিজ্ঞেস করে জানলাম, প্রায় প্রতিদিনই কাজ থাকে। প্রায় ছয়-সাত ঘণ্টা ওরা কাজ করল। ওদের কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ হলাম। কাজ শেষে ওদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে কিছুটা বেশি দিলাম। প্রথমে ওরা নিতে চাইল না। বলা যায় জোর করেই দিলাম। ওদের একটাই অনুরোধ, কাজের মান দেখে, যেন তাদের পেজে প্রশংসাসূচক কিছু লিখে দিই।
ভালো লাগল, দেশের শিক্ষিত ছেলেরা এখন এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসছে, তা দেখে। কোনো কাজই যে ছোট না, অবহেলার না, তা প্রমাণ করে এদের এগিয়ে আসায়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ, যুবা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকায় পাড়ি জমায় উন্নত ভবিষ্যতের জন্য। লাখ লাখ টাকা খরচ করে দালাল ধরে, জীবন বিপন্ন করে, পরিবারের ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যান একটু উন্নত জীবন ও ভালো রোজগারের আশায়। সবার স্বপ্ন কি পূরণ হয়? কত হাজারো তরুণ হারিয়ে যায় চিরতরে ভূমধ্যসাগরে বা শীতে জমে যায় বসনিয়া, সার্বিয়ার জঙ্গলে। বিদেশের জেলে পচে মরছে কতশত স্বপ্ন। কতশত পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে দালালদের খপ্পরে পড়ে। কিন্তু তাঁরা প্রায় সবাই বিদেশে অনভিজ্ঞ শ্রমিক হিসেবে এ কাজ করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষিতরাও যেকোনো কাজ করে নিজের শিক্ষাব্যয় ও পরিবারের ভরণপোষণ করে। এতে বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। সেখানে যেকোনো কাজই সম্মানের।
ইউরোপ, আমেরিকায় মিলিয়নিয়ারের সন্তানেরাও ১৮ বছরে পা দিলে মা-বাবার কাছে আর হাত পাতে না। তাইতো রক ফেলার, হেনরি ফোর্ড বা বারাক ওবামার সন্তানেরাও যেকোনো কাজে নেমে পড়ে। কিন্তু আমাদের দেশ ব্যতিক্রম। উচ্চশিক্ষা নিয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এ ধরনের কাজ সমাজ ভালো চোখে দেখে না। তাই এদের এই উদ্যোগ দেখে দারুণ আশাবাদী হলাম। এভাবেই দেশে ধীরে হলেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগছে।
সরকার ইচ্ছে করলে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ ও স্বল্পসময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই তরুণদের উৎসাহিত করতে পারে, এতে দেশের বেকার সমস্যারও সমাধান হবে। যেদিন দেশে যেকোনো শ্রমকেই মর্যাদার চোখে দেখা হবে, সেদিনই আসলে আমরা উন্নত বিশ্বের মতো সমাজ গড়তে পারব। দেশ হবে বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত।
লেখক: চিকিৎসক ও সংস্কৃতিকর্মী
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৩ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৪ ঘণ্টা আগে