মুর্তজা হাসান সৈকত
উগ্রবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ততধিক উগ্র নেতা মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গত ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি গত বেশ কিছুদিনে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংগঠনটির অন্তত চার শতাধিক নেতাকর্মীকে। অন্যদিকে সরকারের কঠোর অবস্থান অনুধাবন করে কোনঠাসা হেফাজতের মূল নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী এক ভিডিওবার্তায় ২৬ মার্চপরবর্তী ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
স্বাধীনতাবিরোধী এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের উদ্যাপনকে ভালো চোখে নিতে পারেনি। তারা একেবারে শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেছে, অপপ্রচার চালিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কৌশলী হেফাজত মামুনুলের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসেবে উপস্থাপন করে গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এই ফতোয়া দেওয়ার জন্য তারা মাসিক আল কাউসার আর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুটি লেখাকে ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেছিল, যেখানে স্বয়ং আরবি ভাষাতে মূর্তি এবং ভাস্কর্য ব্যাপার দুটোকে আলাদা আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আরব দেশসহ মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে প্রচুর ভাস্কর্য থাকার নিদর্শন রয়েছে। ওই সময়ে মামুনুল যে ভাষায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছিলেন, তা ছিল রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। যিনি এই রাষ্ট্রটির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন, এই দেশটিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন—মামুনুল তাঁর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার স্পর্ধাও দেখিয়েছিলেন।
এই দুটি আয়োজনকে ঘিরে প্রথমে তারা কৌশলে বিরোধিতায় নামে এবং পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে তা-ব-ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেয়। তাদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পেছনে লোকদেখানো কারণটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা হলেও মূল কারণটি ছিল অন্য। একটি নব্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে তারা পাকিস্তানপন্থী জামায়াত-বিএনপি, এমনকি প্রগতিশীলতার দাবিদার কিছু পচে যাওয়া সংগঠনের সাম্প্রদায়িক শক্তির শক্ত সহযোগী হিসেবে রাজনীতির মাঠে অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতে চেয়েছিল। এ জন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন একটি দেশের সরকারপ্রধানের বাংলাদেশে আগমনের বিরোধিতা করে নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেওয়া হয়, যে দেশটি মহান মুক্তিযুদ্ধে এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে, খাবার জুগিয়ে এবং সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এর কিছুদিন আগে মামুনুল হকের জনসভাপরবর্তী একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনেও ন্যক্কারজনক সাম্প্রদায়িক তা-ব চালায় সুনামগঞ্জের শাল্লায়।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনকে কলঙ্কিত করতে গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিক থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। এসবের নেতৃত্বেও ছিলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। সরকারের সতর্ক এবং কৌশলী অবস্থানের কারণে তখন হেফাজতের পরিকল্পনা পুরোপুরি সফলতার মুখ না দেখলেও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনকে তারা পাখির চোখ করে। এরই অংশ হিসেবে দলটির বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকসহ অন্য নেতারা ওয়াজ মাহফিলের নামে দেশব্যাপী স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারত এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক উক্তি ছড়ানো শুরু করে। এসবে তারা সফলও হয়। একটি বিশেষ গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ইউটিউবে এসব ব্যাপকভাবে প্রচার করছিল।
এগুলোর মাধ্যমে তারা বার্তা দিতে চেয়েছিল যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এখন আর তাদের সাবেক প্রধান শাহ আহমদ শফী এবং তাঁর অনুসারীদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটির মতো নেই। তারা এখন নতুন নেতৃত্বে একটি নব্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে। হেফাজতে ইসলাম এখন এমন একটি সংগঠন, যারা রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি কিছু, যারা কৌশলগত কারণে দাবি করে যে তাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। কিন্তু এরা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে ২০১৩ সালের মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যে পরিস্থিতির ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত দেশে গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দিত। এসব আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণাতে।
আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম সরকারের পতন ঘটানোর উদ্দেশ্যে মতিঝিলে জমায়েত হয়ে কী তা-ব সৃষ্টি করেছিল। সেদিনও তাদের প্রধান মিত্র ছিল বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ধারণা করেছিলেন, হেফাজতিদের অভ্যুত্থান দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে। বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের এই গোপন আঁতাত সম্পর্কে সম্প্রতি হেফাজত নেতা মুফতি ফখরুল ইসলাম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ৫ মের অবরোধ কর্মসূচির এক সপ্তাহ আগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাবুনগরীর নেতৃত্বে সাক্ষাৎ করেছিলেন হেফাজত নেতারা। এমনকি ওই সময় তাঁরা জামায়াতের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবরোধ কর্মসূচিতে অংশও নিয়েছিলেন। জবানবন্দিতে তিনি আরও জানান, ওই সময় মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী তাঁকে বলেছিলেন যে আন্দোলন ও সহিংসতার বিষয়ে দুজন বিএনপি নেতা এবং একজন জামায়াত নেতা তাঁদের অর্থসহায়তা করছেন। হেফাজতের প্রোগ্রাম শাপলা চত্বরে স্থায়ী হলে বিএনপি-জামায়াতও যোগ দেবে বলেও আলোচনা হয় বৈঠকে। কিন্তু সরকারের পতন না ঘটায় সেদিন নিরাশ হয়েছিল বিএনপি ও হেফাজত উভয়েই।
হেফাজত কিংবা মামুনুল ২০১৩ সালের মতো এবারও সরকারের শক্তিকে ভুল বুঝেছিল। যে কারণে তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ বানচালের পরিকল্পনা করে সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছিল। এমনকি এখনও তারা সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে চলছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, এতিমখানা ছাড়া দেশের সব মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে, একই সঙ্গে পরীক্ষাও বন্ধ থাকবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। হেফাজত সরকারের সিদ্ধান্ত মানে না। দেশের সব মাদ্রাসায় তাদের দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা চলছে। ভাবখানা এমন, সরকার আমাদের ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়ার কে? এই ধ্বজাধারীরা মানুষকে ধর্মের নামে উত্তেজিত করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, তা শুধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা কোমলমতি শিশুদের রাস্তায় নামিয়েছে। অনেকে বলেন এরা ইসলামি দল। বাস্তবে এরা হচ্ছে একদল সন্ত্রাসী, যারা দিনের পর দিন শান্তির ধর্ম ইসলামকে অপমানিত করে চলছে।
নিজেদের অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বাস্তবে হেফাজতে ইসলামের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। শফীর সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক থাকায় যেহেতু এই অংশটি তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছিল না, তাই তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে নিষ্ঠুর ‘অনৈসলামিক’ পন্থা বেছে নেওয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে ঠেলে দেওয়া হয় মৃত্যুর দিকে। ইতিমধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই হত্যাকা-ের সঙ্গে হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।
একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও সম্প্রতি হেফাজত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে তৎপর হয়ে উঠেছিল। ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, হেফাজতে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামের মতো রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়। অন্যদিকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোর ডট কমে প্রকাশিত এক সংবাদে ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেছেন, মামুনুল হক সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘মামুনুল হক দেখলেন তার কথায় তো অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে, অনেক সমর্থক তার, উনি যা বলছেন তারা তা-ই করছে। ভাস্কর্যবিরোধী বিক্ষোভ থেকে শুরু করে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে তিনি যা বলেছেন, তাই হয়েছে। তখন তিনি ভাবলেন জামায়াত-বিএনপি তার সঙ্গে আছে, তিনি তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারবেন।’ এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদও একইরকম তথ্য দেন গত ২০ এপ্রিলের সংবাদ সম্মেলনে। তিনি জানান, রিমান্ডে মামুনুল জানিয়েছেন, তাঁর স্বপ্ন ছিল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার। এ জন্য দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে তিনি সেভাবেই কাজ করছিলেন।
হেফাজতের আরও গোমর ফাঁস হয় গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর জীবনকর্ম, অবদান’ শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায়। ওই সভায় শফিঘনিষ্ঠ হেফাজতের সাবেক নেতারা দাবি করেন, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হামলা, ভাঙচুর করার পাশাপাশি আল্লামা শফীর প্রতি চরম বেয়াদবি করা হয়েছিল। গৃহবন্দী করে নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁকে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁরা জানান, খাবার-ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ ছিল—আর এগুলোই ছিল আহমদ শফীর মৃত্যুর মূল কারণ।
ওই সময় মামুনুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে না আসতে পারলেও গত বছর বাবুনগরী গ্রুপের বিদ্রোহের মুখে বিনা চিকিৎসায় আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আহমদ শফীর অনুসারীদের দূরে সরিয়ে রেখে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটিতে মূল নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয় জুনায়েদ বাবুনগরীকে। এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নিয়ে আসা হয় বাবুনগরীর চাইতে আরও একধাপ বেশি উগ্র মামুনুল হককে। গত ডিসেম্বরে মহাসচিব মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী মারা যাওয়ার পর কার্যত তাঁকে সংগঠনটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ধরা হয়। তিনি এবং জামায়াতঘেঁষা কয়েকজন নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজায় জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সাথে হেফাজতের সেতুবন্ধন সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিলেন। এসবের ইক্যুয়েশনে হেফাজতের নতুন কমিটিতে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এক-তৃতীয়াংশ নেতাই আসেন বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের দলগুলো থেকে। আর এই কারণেই হেফাজতের এবারের হরতালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন ঢুকে হামলা ভাঙচুর চালায়।
বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন এবং স্বাধীনতাবিরোধী কার্যকলাপে পাকিস্তানি দূতাবাস এবং দেশটির কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সবসময় বড় ভূমিকা থাকে। বারবার সতর্ক করার পরও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা এবং ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে আসা তাদের পুরোনো স্বভাব। এবারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে মামুনুলদের সঙ্গে তাদের কীভাবে কতটুকু ভূমিকা ছিল, সেটা নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে। কিছুদিন আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত বিরোধিতার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইছে না পাকিস্তান। বিশ্বের দরবারে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত পাকিস্তান এখন দুই প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও বাংলাদেশের জনগণকে ভারতবিরোধী করতে চাইছে।
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো দেওবন্দের আদলে প্রতিষ্ঠিত এবং নীতি-আদর্শে পরিচালিত হয়। তবে দেওবন্দের ওলামারা ঐতিহ্যগতভাবে সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের কাছে তাদের মূল পরিচয় গৌণ হয়ে রাজনৈতিক অভিলাষ বড় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দেওবন্দে যাঁরা পড়ালেখা করেন, তাঁরা ভারতে ইসলামের নামে কোনো সন্ত্রাস বা সহিংসতা সৃষ্টি না করলেও ২০১৩ সালের মে থেকে এই সংগঠনটি এতটাই উগ্র আর ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে যে এ জন্য মানুষের মুক্তচিন্তা ও স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়াই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ তারা দেখিয়েছে, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং স্বাভাবিক জীবনের জন্য তারা কত বড় হুমকি। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের এই বিষাক্ত চক্র থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে।
সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের আশঙ্কা থেকে যে অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে, তা থেকে উত্তরণে সময় এসেছে এখন গণজাগরণের। বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নানা ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে যেভাবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে ফাঁসি কার্যকর করেছেন, জঙ্গিবাদকে দমন করেছেন; রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ রক্ষার জন্য আরও একবার তাঁকে সে রকম সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামক সংগঠন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্টাইলে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সরকারকে এখনই কঠোর এবং নির্মোহ সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এই সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানপন্থীদের জন্য কোনো সহমর্মিতা থাকতে পারে না।
উগ্রবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ততধিক উগ্র নেতা মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গত ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি গত বেশ কিছুদিনে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংগঠনটির অন্তত চার শতাধিক নেতাকর্মীকে। অন্যদিকে সরকারের কঠোর অবস্থান অনুধাবন করে কোনঠাসা হেফাজতের মূল নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী এক ভিডিওবার্তায় ২৬ মার্চপরবর্তী ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
স্বাধীনতাবিরোধী এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের উদ্যাপনকে ভালো চোখে নিতে পারেনি। তারা একেবারে শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেছে, অপপ্রচার চালিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কৌশলী হেফাজত মামুনুলের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসেবে উপস্থাপন করে গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এই ফতোয়া দেওয়ার জন্য তারা মাসিক আল কাউসার আর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুটি লেখাকে ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেছিল, যেখানে স্বয়ং আরবি ভাষাতে মূর্তি এবং ভাস্কর্য ব্যাপার দুটোকে আলাদা আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আরব দেশসহ মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে প্রচুর ভাস্কর্য থাকার নিদর্শন রয়েছে। ওই সময়ে মামুনুল যে ভাষায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছিলেন, তা ছিল রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। যিনি এই রাষ্ট্রটির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন, এই দেশটিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন—মামুনুল তাঁর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার স্পর্ধাও দেখিয়েছিলেন।
এই দুটি আয়োজনকে ঘিরে প্রথমে তারা কৌশলে বিরোধিতায় নামে এবং পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে তা-ব-ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেয়। তাদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পেছনে লোকদেখানো কারণটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা হলেও মূল কারণটি ছিল অন্য। একটি নব্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে তারা পাকিস্তানপন্থী জামায়াত-বিএনপি, এমনকি প্রগতিশীলতার দাবিদার কিছু পচে যাওয়া সংগঠনের সাম্প্রদায়িক শক্তির শক্ত সহযোগী হিসেবে রাজনীতির মাঠে অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতে চেয়েছিল। এ জন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন একটি দেশের সরকারপ্রধানের বাংলাদেশে আগমনের বিরোধিতা করে নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেওয়া হয়, যে দেশটি মহান মুক্তিযুদ্ধে এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে, খাবার জুগিয়ে এবং সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এর কিছুদিন আগে মামুনুল হকের জনসভাপরবর্তী একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনেও ন্যক্কারজনক সাম্প্রদায়িক তা-ব চালায় সুনামগঞ্জের শাল্লায়।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনকে কলঙ্কিত করতে গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিক থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। এসবের নেতৃত্বেও ছিলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। সরকারের সতর্ক এবং কৌশলী অবস্থানের কারণে তখন হেফাজতের পরিকল্পনা পুরোপুরি সফলতার মুখ না দেখলেও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনকে তারা পাখির চোখ করে। এরই অংশ হিসেবে দলটির বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকসহ অন্য নেতারা ওয়াজ মাহফিলের নামে দেশব্যাপী স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারত এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক উক্তি ছড়ানো শুরু করে। এসবে তারা সফলও হয়। একটি বিশেষ গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ইউটিউবে এসব ব্যাপকভাবে প্রচার করছিল।
এগুলোর মাধ্যমে তারা বার্তা দিতে চেয়েছিল যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এখন আর তাদের সাবেক প্রধান শাহ আহমদ শফী এবং তাঁর অনুসারীদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটির মতো নেই। তারা এখন নতুন নেতৃত্বে একটি নব্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে। হেফাজতে ইসলাম এখন এমন একটি সংগঠন, যারা রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি কিছু, যারা কৌশলগত কারণে দাবি করে যে তাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। কিন্তু এরা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে ২০১৩ সালের মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যে পরিস্থিতির ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত দেশে গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দিত। এসব আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণাতে।
আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম সরকারের পতন ঘটানোর উদ্দেশ্যে মতিঝিলে জমায়েত হয়ে কী তা-ব সৃষ্টি করেছিল। সেদিনও তাদের প্রধান মিত্র ছিল বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ধারণা করেছিলেন, হেফাজতিদের অভ্যুত্থান দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে। বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের এই গোপন আঁতাত সম্পর্কে সম্প্রতি হেফাজত নেতা মুফতি ফখরুল ইসলাম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ৫ মের অবরোধ কর্মসূচির এক সপ্তাহ আগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাবুনগরীর নেতৃত্বে সাক্ষাৎ করেছিলেন হেফাজত নেতারা। এমনকি ওই সময় তাঁরা জামায়াতের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবরোধ কর্মসূচিতে অংশও নিয়েছিলেন। জবানবন্দিতে তিনি আরও জানান, ওই সময় মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী তাঁকে বলেছিলেন যে আন্দোলন ও সহিংসতার বিষয়ে দুজন বিএনপি নেতা এবং একজন জামায়াত নেতা তাঁদের অর্থসহায়তা করছেন। হেফাজতের প্রোগ্রাম শাপলা চত্বরে স্থায়ী হলে বিএনপি-জামায়াতও যোগ দেবে বলেও আলোচনা হয় বৈঠকে। কিন্তু সরকারের পতন না ঘটায় সেদিন নিরাশ হয়েছিল বিএনপি ও হেফাজত উভয়েই।
হেফাজত কিংবা মামুনুল ২০১৩ সালের মতো এবারও সরকারের শক্তিকে ভুল বুঝেছিল। যে কারণে তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ বানচালের পরিকল্পনা করে সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছিল। এমনকি এখনও তারা সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে চলছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, এতিমখানা ছাড়া দেশের সব মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে, একই সঙ্গে পরীক্ষাও বন্ধ থাকবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। হেফাজত সরকারের সিদ্ধান্ত মানে না। দেশের সব মাদ্রাসায় তাদের দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা চলছে। ভাবখানা এমন, সরকার আমাদের ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়ার কে? এই ধ্বজাধারীরা মানুষকে ধর্মের নামে উত্তেজিত করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, তা শুধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা কোমলমতি শিশুদের রাস্তায় নামিয়েছে। অনেকে বলেন এরা ইসলামি দল। বাস্তবে এরা হচ্ছে একদল সন্ত্রাসী, যারা দিনের পর দিন শান্তির ধর্ম ইসলামকে অপমানিত করে চলছে।
নিজেদের অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বাস্তবে হেফাজতে ইসলামের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। শফীর সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক থাকায় যেহেতু এই অংশটি তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছিল না, তাই তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে নিষ্ঠুর ‘অনৈসলামিক’ পন্থা বেছে নেওয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে ঠেলে দেওয়া হয় মৃত্যুর দিকে। ইতিমধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই হত্যাকা-ের সঙ্গে হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।
একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও সম্প্রতি হেফাজত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে তৎপর হয়ে উঠেছিল। ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, হেফাজতে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামের মতো রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়। অন্যদিকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোর ডট কমে প্রকাশিত এক সংবাদে ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেছেন, মামুনুল হক সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘মামুনুল হক দেখলেন তার কথায় তো অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে, অনেক সমর্থক তার, উনি যা বলছেন তারা তা-ই করছে। ভাস্কর্যবিরোধী বিক্ষোভ থেকে শুরু করে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে তিনি যা বলেছেন, তাই হয়েছে। তখন তিনি ভাবলেন জামায়াত-বিএনপি তার সঙ্গে আছে, তিনি তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারবেন।’ এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদও একইরকম তথ্য দেন গত ২০ এপ্রিলের সংবাদ সম্মেলনে। তিনি জানান, রিমান্ডে মামুনুল জানিয়েছেন, তাঁর স্বপ্ন ছিল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার। এ জন্য দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে তিনি সেভাবেই কাজ করছিলেন।
হেফাজতের আরও গোমর ফাঁস হয় গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর জীবনকর্ম, অবদান’ শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায়। ওই সভায় শফিঘনিষ্ঠ হেফাজতের সাবেক নেতারা দাবি করেন, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হামলা, ভাঙচুর করার পাশাপাশি আল্লামা শফীর প্রতি চরম বেয়াদবি করা হয়েছিল। গৃহবন্দী করে নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁকে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁরা জানান, খাবার-ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ ছিল—আর এগুলোই ছিল আহমদ শফীর মৃত্যুর মূল কারণ।
ওই সময় মামুনুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে না আসতে পারলেও গত বছর বাবুনগরী গ্রুপের বিদ্রোহের মুখে বিনা চিকিৎসায় আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আহমদ শফীর অনুসারীদের দূরে সরিয়ে রেখে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটিতে মূল নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয় জুনায়েদ বাবুনগরীকে। এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নিয়ে আসা হয় বাবুনগরীর চাইতে আরও একধাপ বেশি উগ্র মামুনুল হককে। গত ডিসেম্বরে মহাসচিব মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী মারা যাওয়ার পর কার্যত তাঁকে সংগঠনটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ধরা হয়। তিনি এবং জামায়াতঘেঁষা কয়েকজন নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজায় জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সাথে হেফাজতের সেতুবন্ধন সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিলেন। এসবের ইক্যুয়েশনে হেফাজতের নতুন কমিটিতে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এক-তৃতীয়াংশ নেতাই আসেন বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের দলগুলো থেকে। আর এই কারণেই হেফাজতের এবারের হরতালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন ঢুকে হামলা ভাঙচুর চালায়।
বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন এবং স্বাধীনতাবিরোধী কার্যকলাপে পাকিস্তানি দূতাবাস এবং দেশটির কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সবসময় বড় ভূমিকা থাকে। বারবার সতর্ক করার পরও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা এবং ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে আসা তাদের পুরোনো স্বভাব। এবারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে মামুনুলদের সঙ্গে তাদের কীভাবে কতটুকু ভূমিকা ছিল, সেটা নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে। কিছুদিন আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত বিরোধিতার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইছে না পাকিস্তান। বিশ্বের দরবারে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত পাকিস্তান এখন দুই প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও বাংলাদেশের জনগণকে ভারতবিরোধী করতে চাইছে।
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো দেওবন্দের আদলে প্রতিষ্ঠিত এবং নীতি-আদর্শে পরিচালিত হয়। তবে দেওবন্দের ওলামারা ঐতিহ্যগতভাবে সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের কাছে তাদের মূল পরিচয় গৌণ হয়ে রাজনৈতিক অভিলাষ বড় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দেওবন্দে যাঁরা পড়ালেখা করেন, তাঁরা ভারতে ইসলামের নামে কোনো সন্ত্রাস বা সহিংসতা সৃষ্টি না করলেও ২০১৩ সালের মে থেকে এই সংগঠনটি এতটাই উগ্র আর ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে যে এ জন্য মানুষের মুক্তচিন্তা ও স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়াই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ তারা দেখিয়েছে, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং স্বাভাবিক জীবনের জন্য তারা কত বড় হুমকি। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের এই বিষাক্ত চক্র থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে।
সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের আশঙ্কা থেকে যে অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে, তা থেকে উত্তরণে সময় এসেছে এখন গণজাগরণের। বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নানা ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে যেভাবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে ফাঁসি কার্যকর করেছেন, জঙ্গিবাদকে দমন করেছেন; রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ রক্ষার জন্য আরও একবার তাঁকে সে রকম সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামক সংগঠন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্টাইলে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সরকারকে এখনই কঠোর এবং নির্মোহ সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এই সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানপন্থীদের জন্য কোনো সহমর্মিতা থাকতে পারে না।
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
৪ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
৪ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
৪ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
৪ ঘণ্টা আগে