নূরে আলম সিদ্দিকী
১৯৬৬ সাল, ৭ জুন। ভাগ্যবিড়ম্বিত, অধিকারবঞ্চিত বাঙালির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে ঘুমন্ত মানুষগুলো কেবল ঘুম হতে জেগেই ওঠেনি, এক অপূর্ব সংগ্রামী প্রত্যয়ে বুলেটের মুখেও বুক পেতে দিয়েছিল হাসিমুখে। শোষকের রক্তচক্ষু, শাসকের নির্মম বুলেটকে নির্ভয়ে উপেক্ষা করার কী এক অদ্ভুত উন্মাদনা। তারপর পাঁচটি বছর সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতিহাসের পাতায় অনেক নতুন ঘটনা সংযোজিত হয়েছে। অনেক দেশপ্রেমিককে কাটাতে হয়েছে কারাগারের নিঃসঙ্গ প্রহরগুলো। ষড়যন্ত্র মামলার আসামির ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে দেশবাসীর প্রিয় নেতা এবং আরও অনেককে। অপ্রতিরোধ্য শক্তির ধারকদের (!) ইমারতের ভিত্তি ধসে গেছে গণবিস্ফোরণের প্রচণ্ড আঘাতে। ঘটেছে অনেক বিক্ষিপ্ত রক্তক্ষয়ী ঘটনা; কিন্তু মহান ৭ জুনের আদর্শ আজ অপূর্ণ। সেই দাবি আদায়ের তাগিদ আজও সুতীব্র। তাই সেদিনের আত্মত্যাগের অম্লান ঘটনা নিষ্কোষিত তরবারির মতো বিদ্যুৎ ঝিলকে জেগে উঠে দেশবাসীকে জাগায়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ‘ছয় দফা’ দাবি পেশের মধ্য দিয়ে। শোষণ যাদের ধর্ম, অস্ত্র যাদের বর্ম, তারা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করল না; বরং শৃঙ্খলাবদ্ধ করে সঙিন উঁচিয়ে স্তব্ধ করতে চাইল সমগ্র জাতির কণ্ঠ। অন্তরীণ করা হলো শেখ মুজিবসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে। এরই প্রতিবাদে এবং ছয় দফা দাবির সপক্ষে জনমত যাচাই করার উদ্দেশ্যে ৭ জুন হরতাল আহ্বান করা হলো। একজন ছাত্রকর্মী হিসেবে সেই হরতাল সংগঠনের কাজে আমাকেও ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল। সেদিনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকেই আমি দু-চার কথা বলব। বলা বাহুল্য, এই বিবরণ সেদিনের ঘটনার একটি অংশমাত্র।
৫ জুন রাতে কর্মিসভায় তালিকা এবং কর্মস্থান নির্ণয় করে দেওয়া হলো। ঘটনাক্রমে তেজগাঁওয়ের শ্রমিক এলাকার ভার পড়েছিল আমাদের কয়েকজনের ওপর। তেজগাঁওয়ে তখন আমাদের সংশ্লিষ্ট কোনো শ্রমিক সংগঠন ছিল না। নৈতিক সমর্থন ছিল কোনো কোনো শ্রমিক সংস্থার। তাই ছাত্রকর্মীদের পক্ষে দায়িত্ব কতখানি কঠিন, সেটা বাস্তব আলোকে বিচার করে দেখলে অগ্রসর হওয়াই আমাদের পক্ষে অসম্ভব হতো। কিন্তু সেই মুহূর্তে ছয় দফা কর্মসূচি এক অদ্ভুত প্রত্যয়বোধ এনে দিয়েছিল কর্মীদের মনে। তাই ক্ষমতার সীমাবদ্ধ হলেও অপূর্ব প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা এগিয়ে গিয়েছিলাম। নিষ্ঠা ও প্রত্যয়বোধ সাফল্য অর্জনের চূড়ান্ত শক্তি। ৭ জুন তারই জ্বলন্ত সাক্ষী। ৬ তারিখে শ্রমিক আস্তানাগুলো ঘুরে বেড়ালাম। তাদের চোখে-মুখে দেখতে পেলাম প্রেরণাদায়ক দীপ্তি। বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী কর্মী ও শ্রমিক নেতা সমভিব্যাহারে পথসভা হলো। এর মধ্যে তাদের মাঝে যে জাগরণ দেখলাম তা আশাপ্রদ। তবুও একশ্রেণির প্রগতিবাদী রাজনৈতিক মহলের ৭ জুনের হরতালের ছয় দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নমুনা দেখে কিছুটা মুষড়ে পড়লাম। কয়েক দিন আগে আত্মগোপন অবস্থা থেকে আচমকা মুক্তিপ্রাপ্ত এক মার্কামারা সর্বহারা নেতা ও আনকোরা শ্রমিক নেতাদের যুক্ত স্বাক্ষরে প্রকাশিত এক ইশতাহারে ৭ তারিখের হরতালে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ছয় দফার প্রণেতাসহ অনেকেই তখন কারাগারে। সরকারি প্রচারযন্ত্রগুলো হরদম হরতালের বিরুদ্ধে জিকির করছে। প্রশাসনযন্ত্রগুলো আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। এ অবস্থায় আমরা বিপাকে পড়ে গেলাম। কিন্তু বাস্তব জীবনের ব্যথা-বেদনার আলেখ্য হতে যাদের জীবনের সঞ্চয়, তারা লাল মলাটের আন্তর্জাতিক কেতাবের থিয়োরির বেড়াজালে আটকে গেল না। তাই তারা সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে পরের দিনের অবিস্মরণীয় ইতিহাস রচনা করেছিল।
৮টা পর্যন্ত কর্মিসভা, ১০টা পর্যন্ত মিছিল করে আমরা আস্তানায় ফিরে এলাম। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পরে আবার সবাই বেরিয়ে পড়লাম বস্তিতে বস্তিতে। নিঝুম রাতের সারা দিনের ক্লান্তিতে যে বস্তি নিদ্রায় ঢলে পড়ে, আজ সেই বস্তি কেমন যেন খাপছাড়া। সমস্ত বস্তির বুকজুড়ে যেন বিক্ষোভ। জায়গায় জায়গায় মানুষ জটলা পাকিয়ে অপেক্ষা করছে। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কর্মীদের নিয়ে নাখালপাড়ার একটি ঘরে বসলাম। রাত তখন দুইটা-তিনটার মাঝামাঝি। ৭ জুনের মিছিল যখন বের হবে, কোন পথ দিয়ে এগিয়ে যাবে, কী তার স্লোগান হবে, সব ঠিক করা হলো সেই আলোচনা সভায়। সব প্রায় শেষ, পেছন থেকে একটি লণ্ঠন উঁচিয়ে এক অতিবৃদ্ধ চিৎকার করে বললেন, আজ রাতে আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাব না, কালকের হরতাল সফল করে আমাদের বিশ্রাম। লোকটাকে আমরা চিনি না, শ্রমিকেরাও না। তবু যেন সেনাপতির বজ্রনির্ঘোষ আদেশের মতো সবাই মাথা পেতে তাঁর নির্দেশ মেনে নিল।
৬ জুন রাত থেকে পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীর গাড়িতে তেজগাঁও শ্রমিক এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল। রাতে কয়েকজন শ্রমিকের গ্রেপ্তারের সংবাদও আমরা পেলাম।
৭ জুন প্রভাত। রাস্তাঘাটে শুধু পুলিশের গাড়ি চলাচলের শব্দ। চিমনির কালো ধোঁয়া সেদিন আর কুণ্ডলী পাকিয়ে আকাশের দিকে উঠছে না। কলকারখানাগুলোয় কোনো মেশিনের শব্দ নেই। এ এক অদ্ভুত ব্যতিক্রম। মোড়ে মোড়ে শ্রমিকেরা দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে বেলা বাড়তে লাগল আর ধর্মঘটি শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়তে লাগল। কাজ না করলেও কেউ ঘরে বসে নেই।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে হঠাৎ পুলিশের একটি ভ্যান এসে থামল আমাদের কাছাকাছি। আমাদের জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করল। কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই আচমকা রুলের বাড়ি দিয়ে তিনজনকে জিপের মধ্যে উঠিয়ে নিল। প্রথমে আমরা ঘটনা বুঝে উঠতে পারিনি। কিছুটা পিছে হটেও গিয়েছিলাম। মিনিটখানেক পরে যখন এগিয়ে আসলাম, তখন জিপটি চট করে সরে গেল। পনেরো মিনিট পরের ঘটনা। তিব্বত ফ্যাক্টরির কাছে একটি পানবিড়ির দোকানের বন্ধ ঝাপের ওপর এক পুলিশ অফিসার কয়েকটা লাথি মারল এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল। জানতে পারলাম লোকটি ওই দোকানের মালিক। দোকান বন্ধ রাখাই তার একমাত্র অপরাধ। এসব ঘটনার মুখে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে লাগল। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশি গাড়ি চলাচলে ব্যারিকেড রচিত হলো। এর মধ্যে জানতে পারলাম নাবিস্কো ফ্যাক্টরির কাছে পুলিশে-শ্রমিকে একটা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ একজন এসে খবর দিল চট্টগ্রামগামী ‘উল্কা’ তেজগাঁওয়ে এসে থেমে গেছে। পুলিশ জোর করে যাত্রীশূন্য উল্কা চালানোর জন্য বিশেষ পুলিশ ওয়াগন নিয়ে জনতার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। খবর পেয়ে সেদিকে গেলাম দৌড়ে। গিয়ে দেখি, একটি ইঞ্জিন সঙ্গে গোটা দুয়েক বগিতে পুলিশ বোঝাই করে আউটার সিগন্যালের দিকে যাচ্ছে। উল্কাকে ক্লিয়ারেন্স দেবে। এদিকে রেলের এবং সাধারণ শ্রমিকেরা ভীষণ উত্তেজিত। তারা ট্রেনের লাইন উপড়ে দিতে চায়। অবস্থাটা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। কাছাকাছি তেমন কেউ নেই, যিনি এই সময়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেন বা পরামর্শ দিতে পারেন। চারদিকে দারুণ থমথমে ভাব। যাত্রীরা গাড়িতে চড়বে না, ড্রাইভার গাড়ি চালাবে না, তবু কর্তার হুকুমে গাড়ি চলতে হবে। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে এত নিদারুণ সংকটময় মুহূর্ত আর কখনো আসেনি। আমাদের প্রতি সংগঠনের কড়া নির্দেশ ছিল আমাদের পক্ষ হতে যেন ‘ভায়োলেন্স’ না হয়। তাই রেলের লাইন উপড়ে ফেলা সমীচীন হবে না ভেবে আমি একটি মাইলপোস্টের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললাম, ভাই সব, আপনারা ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলবেন না, আসুন, আমরা লাইনের ওপর শুয়ে পড়ি, ওদের সাহস থাকলে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাবে। আমি ওদের নেতা নই, পরিচয়ও অত্যন্ত সীমিত। কিন্তু অপূর্ব তাদের সংগ্রামী চেতনা ও শৃঙ্খলাবোধ। তারা তখনই রেললাইনে শুয়ে পড়ল। মাইলপোস্টের ওপর দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে আমি তখনো কথা বলছিলাম। আমার হাতে সব সময়ের জন্য একটা ব্যাটারি মাইক ছিল। আমার পাশে (সম্ভবত ডান পাশে) আমির হোসেন, কাছাকাছি মনু মিয়া। হঠাৎ পুলিশ ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট থেকে হাত বাড়িয়ে রিভলবার দিয়ে গুলি ছুড়ল। মনু মিয়া পড়ে গেল গুলিবিদ্ধ হয়ে। তার ডান পাঁজরে গুলি লেগেছিল। আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়! তখনকার মানসিক অবস্থা বর্ণনাতীত। মাইলপোস্ট থেকে নেমে তার বুক হতে ফিনকি দিয়ে রক্তঝরা জায়গাটা চেপে ধরলাম। মনু মিয়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, তার কণ্ঠ বিকৃত। তবু বিকৃত কণ্ঠেই সে বলল, ‘আমায় ধরন লাগব না, আপনি কইয়া যান।’ আমি আত্মহারা হয়ে চিৎকার করে বললাম, ‘কী বলব?’ আজও সে কণ্ঠের প্রতিধ্বনি কানে বাজে। সে বলেছিল, ‘সংগ্রামের কথা বলেন।’ তবু একটি অশিক্ষিত শ্রমিকের কণ্ঠে এ বাণী কেবল অসাধারণই নয়, সংগ্রামের একটি জ্বলন্ত প্রেরণা। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পাশেই দণ্ডায়মান আমির হোসেন রক্ত দেখে পাগল হয়ে গেছে। সে কী যেন চিৎকার করতে করতে (সম্ভবত ‘আমায় মারো’ অথবা ‘ওদের ধরো’) বিদ্যুৎ গতিতে পুলিশের দিকে এগিয়ে গেল। তার দিকেও গুলি ছোড়া হলো। দুর্ভাগ্য, তার লাশ আমরা আনতে পারিনি। ওরা ট্রেনে উঠিয়ে নিয়েছে। এর পরের ঘটনা নিখুঁতভাবে আমার পক্ষে বর্ণনা করা কঠিন। কারণ আমি তখন প্রায় বাহ্যজ্ঞানলুপ্ত। তবু মনে আছে, ট্রেনের দিকে শিলাবৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে এবং কম্পার্টমেন্ট থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হচ্ছে। আমার জানা মতে, ওই স্থানেই ৭ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছিল। এর মধ্যে ৪ জনের লাশ আমরা পাইনি।
আহতদের কাঁধে করে আমরা তেজগাঁও লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসের দিকে এলাম। এর মধ্যে আরও গুলি হয়েছে নাবিস্কোর কাছে, তেজগাঁও শ্রমিক এলাকার বিভিন্ন স্থানে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা: এক অভাগিনী মা তার কোলের শিশুকে স্তন্য দিচ্ছিল, স্তন পানরত অবস্থায় শিশু জানতে পারল না তার মা বুলেটের আঘাতে তাকে ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে গেছে। এদিকে অ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। মনু মিয়া তখনো বেঁচে আছে। সে ইঙ্গিতে আমাকে কাছে ডাকল। অস্পষ্ট স্বরে সে আমায় বলল, ‘সাব, মুই আর বাঁচমু না। মোরে লইয়া মিছিল করুন, বেবাক লোকে দেখুক জান দিলাম।’ কেউ সেখানে স্থির থাকতে পারেনি। সবার চোখেই অশ্রুর ঢল নামল। মিছিল বের হলো। সংগঠনের নির্দেশ—মিছিল করে বায়তুল মোকাররমে আসতে হবে। প্রথমে ছিল কয়েক শ, রাজপথে হলো হাজার, তারপরে কয়েক হাজার। দলে দলে মানুষ বেরিয়ে আসতে লাগল। লোক বাড়ছে তো বাড়ছেই। রেলক্রসিংয়ের কাছে হঠাৎ রাউন্ড তিনেক গুলি হলো। এদিকে মানুষগুলো যেন খেপে গেছে। এই নিরীহ বাঙালিগুলো সেদিন কোথা থেকে এত সাহস পেয়েছিল, জানি না। মাইকযোগে প্রচার করা হলো: ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ হওয়া ও মিছিল করা নিষিদ্ধ। কে কার কথা শোনে। মিছিল তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ের কাছে আসতে আর একবার গুলি হলো। জনতা পুলিশ বা ইপিআরের গাড়ি দেখলেই যেন খেপে যাচ্ছে। শাহবাগের কাছে ঘন ঘন সতর্কবাণী উচ্চারিত হলো কিন্তু মিছিল এগিয়ে আসল। মিছিলের আগে লম্বা বাঁশে রক্তমাখা জামা—সংগ্রামের নিশানা হয়ে উড়ছে। শ্রমিকেরা যেন মাতম-মরসিয়া গাইছে রাস্তায়। পথচারীরা কেউ থমকে দাঁড়াচ্ছে, কেউ বা শরিক হচ্ছে। তোপখানার মোড়ে এসে ইপিআর ব্যারিকেড রচনা করল। মিছিলের মোড় ঘুরিয়ে কার্জন হলে নিয়ে গেলাম। কার্জন হলে সভা হলো। আমরা আর কোনো কর্মসূচি নিতে পারলাম না যোগাযোগের অভাবে। কিন্তু আগামী দিনের জন্য বজ্রশপথ নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম।
১৯৬৬ সাল, ৭ জুন। ভাগ্যবিড়ম্বিত, অধিকারবঞ্চিত বাঙালির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে ঘুমন্ত মানুষগুলো কেবল ঘুম হতে জেগেই ওঠেনি, এক অপূর্ব সংগ্রামী প্রত্যয়ে বুলেটের মুখেও বুক পেতে দিয়েছিল হাসিমুখে। শোষকের রক্তচক্ষু, শাসকের নির্মম বুলেটকে নির্ভয়ে উপেক্ষা করার কী এক অদ্ভুত উন্মাদনা। তারপর পাঁচটি বছর সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতিহাসের পাতায় অনেক নতুন ঘটনা সংযোজিত হয়েছে। অনেক দেশপ্রেমিককে কাটাতে হয়েছে কারাগারের নিঃসঙ্গ প্রহরগুলো। ষড়যন্ত্র মামলার আসামির ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে দেশবাসীর প্রিয় নেতা এবং আরও অনেককে। অপ্রতিরোধ্য শক্তির ধারকদের (!) ইমারতের ভিত্তি ধসে গেছে গণবিস্ফোরণের প্রচণ্ড আঘাতে। ঘটেছে অনেক বিক্ষিপ্ত রক্তক্ষয়ী ঘটনা; কিন্তু মহান ৭ জুনের আদর্শ আজ অপূর্ণ। সেই দাবি আদায়ের তাগিদ আজও সুতীব্র। তাই সেদিনের আত্মত্যাগের অম্লান ঘটনা নিষ্কোষিত তরবারির মতো বিদ্যুৎ ঝিলকে জেগে উঠে দেশবাসীকে জাগায়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ‘ছয় দফা’ দাবি পেশের মধ্য দিয়ে। শোষণ যাদের ধর্ম, অস্ত্র যাদের বর্ম, তারা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করল না; বরং শৃঙ্খলাবদ্ধ করে সঙিন উঁচিয়ে স্তব্ধ করতে চাইল সমগ্র জাতির কণ্ঠ। অন্তরীণ করা হলো শেখ মুজিবসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে। এরই প্রতিবাদে এবং ছয় দফা দাবির সপক্ষে জনমত যাচাই করার উদ্দেশ্যে ৭ জুন হরতাল আহ্বান করা হলো। একজন ছাত্রকর্মী হিসেবে সেই হরতাল সংগঠনের কাজে আমাকেও ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল। সেদিনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকেই আমি দু-চার কথা বলব। বলা বাহুল্য, এই বিবরণ সেদিনের ঘটনার একটি অংশমাত্র।
৫ জুন রাতে কর্মিসভায় তালিকা এবং কর্মস্থান নির্ণয় করে দেওয়া হলো। ঘটনাক্রমে তেজগাঁওয়ের শ্রমিক এলাকার ভার পড়েছিল আমাদের কয়েকজনের ওপর। তেজগাঁওয়ে তখন আমাদের সংশ্লিষ্ট কোনো শ্রমিক সংগঠন ছিল না। নৈতিক সমর্থন ছিল কোনো কোনো শ্রমিক সংস্থার। তাই ছাত্রকর্মীদের পক্ষে দায়িত্ব কতখানি কঠিন, সেটা বাস্তব আলোকে বিচার করে দেখলে অগ্রসর হওয়াই আমাদের পক্ষে অসম্ভব হতো। কিন্তু সেই মুহূর্তে ছয় দফা কর্মসূচি এক অদ্ভুত প্রত্যয়বোধ এনে দিয়েছিল কর্মীদের মনে। তাই ক্ষমতার সীমাবদ্ধ হলেও অপূর্ব প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা এগিয়ে গিয়েছিলাম। নিষ্ঠা ও প্রত্যয়বোধ সাফল্য অর্জনের চূড়ান্ত শক্তি। ৭ জুন তারই জ্বলন্ত সাক্ষী। ৬ তারিখে শ্রমিক আস্তানাগুলো ঘুরে বেড়ালাম। তাদের চোখে-মুখে দেখতে পেলাম প্রেরণাদায়ক দীপ্তি। বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী কর্মী ও শ্রমিক নেতা সমভিব্যাহারে পথসভা হলো। এর মধ্যে তাদের মাঝে যে জাগরণ দেখলাম তা আশাপ্রদ। তবুও একশ্রেণির প্রগতিবাদী রাজনৈতিক মহলের ৭ জুনের হরতালের ছয় দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নমুনা দেখে কিছুটা মুষড়ে পড়লাম। কয়েক দিন আগে আত্মগোপন অবস্থা থেকে আচমকা মুক্তিপ্রাপ্ত এক মার্কামারা সর্বহারা নেতা ও আনকোরা শ্রমিক নেতাদের যুক্ত স্বাক্ষরে প্রকাশিত এক ইশতাহারে ৭ তারিখের হরতালে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ছয় দফার প্রণেতাসহ অনেকেই তখন কারাগারে। সরকারি প্রচারযন্ত্রগুলো হরদম হরতালের বিরুদ্ধে জিকির করছে। প্রশাসনযন্ত্রগুলো আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। এ অবস্থায় আমরা বিপাকে পড়ে গেলাম। কিন্তু বাস্তব জীবনের ব্যথা-বেদনার আলেখ্য হতে যাদের জীবনের সঞ্চয়, তারা লাল মলাটের আন্তর্জাতিক কেতাবের থিয়োরির বেড়াজালে আটকে গেল না। তাই তারা সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে পরের দিনের অবিস্মরণীয় ইতিহাস রচনা করেছিল।
৮টা পর্যন্ত কর্মিসভা, ১০টা পর্যন্ত মিছিল করে আমরা আস্তানায় ফিরে এলাম। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পরে আবার সবাই বেরিয়ে পড়লাম বস্তিতে বস্তিতে। নিঝুম রাতের সারা দিনের ক্লান্তিতে যে বস্তি নিদ্রায় ঢলে পড়ে, আজ সেই বস্তি কেমন যেন খাপছাড়া। সমস্ত বস্তির বুকজুড়ে যেন বিক্ষোভ। জায়গায় জায়গায় মানুষ জটলা পাকিয়ে অপেক্ষা করছে। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কর্মীদের নিয়ে নাখালপাড়ার একটি ঘরে বসলাম। রাত তখন দুইটা-তিনটার মাঝামাঝি। ৭ জুনের মিছিল যখন বের হবে, কোন পথ দিয়ে এগিয়ে যাবে, কী তার স্লোগান হবে, সব ঠিক করা হলো সেই আলোচনা সভায়। সব প্রায় শেষ, পেছন থেকে একটি লণ্ঠন উঁচিয়ে এক অতিবৃদ্ধ চিৎকার করে বললেন, আজ রাতে আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাব না, কালকের হরতাল সফল করে আমাদের বিশ্রাম। লোকটাকে আমরা চিনি না, শ্রমিকেরাও না। তবু যেন সেনাপতির বজ্রনির্ঘোষ আদেশের মতো সবাই মাথা পেতে তাঁর নির্দেশ মেনে নিল।
৬ জুন রাত থেকে পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীর গাড়িতে তেজগাঁও শ্রমিক এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল। রাতে কয়েকজন শ্রমিকের গ্রেপ্তারের সংবাদও আমরা পেলাম।
৭ জুন প্রভাত। রাস্তাঘাটে শুধু পুলিশের গাড়ি চলাচলের শব্দ। চিমনির কালো ধোঁয়া সেদিন আর কুণ্ডলী পাকিয়ে আকাশের দিকে উঠছে না। কলকারখানাগুলোয় কোনো মেশিনের শব্দ নেই। এ এক অদ্ভুত ব্যতিক্রম। মোড়ে মোড়ে শ্রমিকেরা দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে বেলা বাড়তে লাগল আর ধর্মঘটি শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়তে লাগল। কাজ না করলেও কেউ ঘরে বসে নেই।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে হঠাৎ পুলিশের একটি ভ্যান এসে থামল আমাদের কাছাকাছি। আমাদের জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করল। কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই আচমকা রুলের বাড়ি দিয়ে তিনজনকে জিপের মধ্যে উঠিয়ে নিল। প্রথমে আমরা ঘটনা বুঝে উঠতে পারিনি। কিছুটা পিছে হটেও গিয়েছিলাম। মিনিটখানেক পরে যখন এগিয়ে আসলাম, তখন জিপটি চট করে সরে গেল। পনেরো মিনিট পরের ঘটনা। তিব্বত ফ্যাক্টরির কাছে একটি পানবিড়ির দোকানের বন্ধ ঝাপের ওপর এক পুলিশ অফিসার কয়েকটা লাথি মারল এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল। জানতে পারলাম লোকটি ওই দোকানের মালিক। দোকান বন্ধ রাখাই তার একমাত্র অপরাধ। এসব ঘটনার মুখে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে লাগল। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশি গাড়ি চলাচলে ব্যারিকেড রচিত হলো। এর মধ্যে জানতে পারলাম নাবিস্কো ফ্যাক্টরির কাছে পুলিশে-শ্রমিকে একটা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ একজন এসে খবর দিল চট্টগ্রামগামী ‘উল্কা’ তেজগাঁওয়ে এসে থেমে গেছে। পুলিশ জোর করে যাত্রীশূন্য উল্কা চালানোর জন্য বিশেষ পুলিশ ওয়াগন নিয়ে জনতার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। খবর পেয়ে সেদিকে গেলাম দৌড়ে। গিয়ে দেখি, একটি ইঞ্জিন সঙ্গে গোটা দুয়েক বগিতে পুলিশ বোঝাই করে আউটার সিগন্যালের দিকে যাচ্ছে। উল্কাকে ক্লিয়ারেন্স দেবে। এদিকে রেলের এবং সাধারণ শ্রমিকেরা ভীষণ উত্তেজিত। তারা ট্রেনের লাইন উপড়ে দিতে চায়। অবস্থাটা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। কাছাকাছি তেমন কেউ নেই, যিনি এই সময়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেন বা পরামর্শ দিতে পারেন। চারদিকে দারুণ থমথমে ভাব। যাত্রীরা গাড়িতে চড়বে না, ড্রাইভার গাড়ি চালাবে না, তবু কর্তার হুকুমে গাড়ি চলতে হবে। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে এত নিদারুণ সংকটময় মুহূর্ত আর কখনো আসেনি। আমাদের প্রতি সংগঠনের কড়া নির্দেশ ছিল আমাদের পক্ষ হতে যেন ‘ভায়োলেন্স’ না হয়। তাই রেলের লাইন উপড়ে ফেলা সমীচীন হবে না ভেবে আমি একটি মাইলপোস্টের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললাম, ভাই সব, আপনারা ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলবেন না, আসুন, আমরা লাইনের ওপর শুয়ে পড়ি, ওদের সাহস থাকলে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাবে। আমি ওদের নেতা নই, পরিচয়ও অত্যন্ত সীমিত। কিন্তু অপূর্ব তাদের সংগ্রামী চেতনা ও শৃঙ্খলাবোধ। তারা তখনই রেললাইনে শুয়ে পড়ল। মাইলপোস্টের ওপর দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে আমি তখনো কথা বলছিলাম। আমার হাতে সব সময়ের জন্য একটা ব্যাটারি মাইক ছিল। আমার পাশে (সম্ভবত ডান পাশে) আমির হোসেন, কাছাকাছি মনু মিয়া। হঠাৎ পুলিশ ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট থেকে হাত বাড়িয়ে রিভলবার দিয়ে গুলি ছুড়ল। মনু মিয়া পড়ে গেল গুলিবিদ্ধ হয়ে। তার ডান পাঁজরে গুলি লেগেছিল। আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়! তখনকার মানসিক অবস্থা বর্ণনাতীত। মাইলপোস্ট থেকে নেমে তার বুক হতে ফিনকি দিয়ে রক্তঝরা জায়গাটা চেপে ধরলাম। মনু মিয়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, তার কণ্ঠ বিকৃত। তবু বিকৃত কণ্ঠেই সে বলল, ‘আমায় ধরন লাগব না, আপনি কইয়া যান।’ আমি আত্মহারা হয়ে চিৎকার করে বললাম, ‘কী বলব?’ আজও সে কণ্ঠের প্রতিধ্বনি কানে বাজে। সে বলেছিল, ‘সংগ্রামের কথা বলেন।’ তবু একটি অশিক্ষিত শ্রমিকের কণ্ঠে এ বাণী কেবল অসাধারণই নয়, সংগ্রামের একটি জ্বলন্ত প্রেরণা। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পাশেই দণ্ডায়মান আমির হোসেন রক্ত দেখে পাগল হয়ে গেছে। সে কী যেন চিৎকার করতে করতে (সম্ভবত ‘আমায় মারো’ অথবা ‘ওদের ধরো’) বিদ্যুৎ গতিতে পুলিশের দিকে এগিয়ে গেল। তার দিকেও গুলি ছোড়া হলো। দুর্ভাগ্য, তার লাশ আমরা আনতে পারিনি। ওরা ট্রেনে উঠিয়ে নিয়েছে। এর পরের ঘটনা নিখুঁতভাবে আমার পক্ষে বর্ণনা করা কঠিন। কারণ আমি তখন প্রায় বাহ্যজ্ঞানলুপ্ত। তবু মনে আছে, ট্রেনের দিকে শিলাবৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে এবং কম্পার্টমেন্ট থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হচ্ছে। আমার জানা মতে, ওই স্থানেই ৭ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছিল। এর মধ্যে ৪ জনের লাশ আমরা পাইনি।
আহতদের কাঁধে করে আমরা তেজগাঁও লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসের দিকে এলাম। এর মধ্যে আরও গুলি হয়েছে নাবিস্কোর কাছে, তেজগাঁও শ্রমিক এলাকার বিভিন্ন স্থানে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা: এক অভাগিনী মা তার কোলের শিশুকে স্তন্য দিচ্ছিল, স্তন পানরত অবস্থায় শিশু জানতে পারল না তার মা বুলেটের আঘাতে তাকে ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে গেছে। এদিকে অ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। মনু মিয়া তখনো বেঁচে আছে। সে ইঙ্গিতে আমাকে কাছে ডাকল। অস্পষ্ট স্বরে সে আমায় বলল, ‘সাব, মুই আর বাঁচমু না। মোরে লইয়া মিছিল করুন, বেবাক লোকে দেখুক জান দিলাম।’ কেউ সেখানে স্থির থাকতে পারেনি। সবার চোখেই অশ্রুর ঢল নামল। মিছিল বের হলো। সংগঠনের নির্দেশ—মিছিল করে বায়তুল মোকাররমে আসতে হবে। প্রথমে ছিল কয়েক শ, রাজপথে হলো হাজার, তারপরে কয়েক হাজার। দলে দলে মানুষ বেরিয়ে আসতে লাগল। লোক বাড়ছে তো বাড়ছেই। রেলক্রসিংয়ের কাছে হঠাৎ রাউন্ড তিনেক গুলি হলো। এদিকে মানুষগুলো যেন খেপে গেছে। এই নিরীহ বাঙালিগুলো সেদিন কোথা থেকে এত সাহস পেয়েছিল, জানি না। মাইকযোগে প্রচার করা হলো: ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ হওয়া ও মিছিল করা নিষিদ্ধ। কে কার কথা শোনে। মিছিল তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ের কাছে আসতে আর একবার গুলি হলো। জনতা পুলিশ বা ইপিআরের গাড়ি দেখলেই যেন খেপে যাচ্ছে। শাহবাগের কাছে ঘন ঘন সতর্কবাণী উচ্চারিত হলো কিন্তু মিছিল এগিয়ে আসল। মিছিলের আগে লম্বা বাঁশে রক্তমাখা জামা—সংগ্রামের নিশানা হয়ে উড়ছে। শ্রমিকেরা যেন মাতম-মরসিয়া গাইছে রাস্তায়। পথচারীরা কেউ থমকে দাঁড়াচ্ছে, কেউ বা শরিক হচ্ছে। তোপখানার মোড়ে এসে ইপিআর ব্যারিকেড রচনা করল। মিছিলের মোড় ঘুরিয়ে কার্জন হলে নিয়ে গেলাম। কার্জন হলে সভা হলো। আমরা আর কোনো কর্মসূচি নিতে পারলাম না যোগাযোগের অভাবে। কিন্তু আগামী দিনের জন্য বজ্রশপথ নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম।
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
৬ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
৬ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
৬ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
৬ ঘণ্টা আগে