ফারুক মেহেদী
অফিসে আসার জন্য বের হয়েছি। মিরপুর-১ থেকে চিড়িয়াখানা রোড হয়ে গাড়ি সনি সিনেমার দিকে এগুচ্ছে। চলতে চলতে এক জায়গায় এক তরুণের দিকে চোখ পড়ল। মনে হলো অকারণেই বসে আছেন। চোখে-মুখে রাজ্যের দুশ্চিন্তা। ইচ্ছে করেই গাড়ি থামালাম। নেমে এগিয়ে যাওয়া দেখে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন। ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলাম। তিনি বিস্ময়ে এদিক-ওদিক তাকালেন। উল্টো প্রশ্ন—‘আমাকে বলছেন?’ ‘জ্বি’। নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, ‘এমনি, আপনি একা বসে আছেন, তাই ভাবলাম একটু কথা বলি।’
নাম তাঁর শামিম। তিনি বলতে শুরু করলেন। ‘ভাই, কী করব বুঝতে পারছি না। শাহ আলী থানার পাশে একটি চায়ের দোকান ছিল আমার। ভালোই চলছিল। থানার পাশে বলে বেশ জমজমাট বেচাকেনা হতো। পরিবার নিয়ে পাশেই একটি বাসা ভাড়া করে থাকতাম। লকডাউনে এ মাসে বলতে গেলে দোকান খুলতেই পারিনি। থানার পাশে হওয়ায় পুলিশের আঙুলের ডগায়, একটু-আধটু যে খুলব তারও উপায় নেই। এই দোকানের আয় দিয়েই আমার পুরো সংসারের ভরণপোষণ, বাসা ভাড়াসহ সব খরচ সামলাতাম। দুটি বাচ্চাসহ আমাদের চারজনের সংসার। গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন। তাঁদের জন্যও কিছু টাকা পাঠাতে হয়। এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। এবারের কড়া লকডাউনে একদমই আয় নেই। দোকানই খোলা যাচ্ছে না, আয় হবে কী করে? গেল মাসের বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। এ মাসও শেষ হওয়ার পথে। এখন শুনছি পুরো মাসই নাকি লকডাউন থাকবে। এ মাসের বাসা ভাড়া না দিতে পারলে বাসাও ছাড়তে হবে। কীভাবে বাসা ভাড়ার টাকা জোগাব, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খাব কী, বাড়িতেই বা কীভাবে মা-বাবার জন্য টাকা পাঠাব— তাও বুঝতে পারছি না। সামনে আসছে ঈদ। একেবারে অন্ধকার দেখছি।’
আর কিচ্ছু জানতে ইচ্ছে হলো না। শুধু বললাম, ‘দেখেন, করোনা থেকেও তো বাঁচতে হবে। একটু ধৈর্য্য ধরেন। আশা করা যায়, সামনে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সত্যি কথা বলতে কী? আমিও জানি না, আসলে সামনে কী অপেক্ষা করছে। করোনার প্রকোপ কমছে না। মৃত্যুর মিছিল থামছে না। বরং দিনে মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে শয়ের ঘর। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার লকডাউনে কড়াকড়ি আরোপ করলেও কিছু মানুষ কারণে-অকারণে বের হচ্ছেন। লকডাউনের পুরো উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে, এটা বলা যাবে না। লকডাউন পুরো বাস্তবায়ন না হলেও মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই। শুধু একজন শামিমই নন, এ লকডাউনে দেশের লাখো শামিমের একই দশা। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা রীতিমতো জীবিকা নিয়ে মারাত্মক সংকটে।
এ ধরনের ব্যবসায়ীদের সাধারণত তেমন কোনো সঞ্চয় থাকে না। বরং তাঁদের অনেকের ব্যাংক ঋণ থাকে। কেউ কেউ ব্যক্তিপর্যায়ে ধার করে ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে থাকেন। নিয়মিত বেচাকেনার মধ্য দিয়ে তাঁরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন। লাভের একটা অংশ দিয়ে সংসার চালান। মোটা দাগে দৈনিক আয় না হলে, তাঁদের জন্য রীতিমতো সমস্যা তৈরি হয়। এখন ঠিক এ রকম সমস্যার কবলে এ ধরনের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এমনিতেই একবছর ধরে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায় মন্দা চলছে। ঠিকমতো বেচাবিক্রি নেই। কোনো রকমে চালিয়ে নিচ্ছেন সবকিছু। এর মধ্যে নতুন করে করোনার প্রকোপ ও লকডাউনে পথে বসার উপক্রম। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামিম ছাড়াও এ খাতের আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের সবারই প্রায় একই কথা। তাঁরা রীতিমতো নিঃস্ব হতে চলেছেন। ব্যবসার পুঁজি তলানিতে। তাঁরা বলছিলেন, জীবন বাঁচাতে লকডাউন যেমন প্রয়োজন, বেঁচে থাকার জন্য তেমনি আয়-রোজগারও প্রয়োজন।
বাস্তবতা হচ্ছে, এখন তাঁদের আয়-রোজগার প্রয়োজন। না হলে জীবন বিপন্ন হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। সত্যিই তাই। গেলবার সরকার আপৎকালীন খাদ্যসহায়তা দিয়েছিল। একেবারে স্বল্প আয়ের মানুষ, দিনমজুর, শ্রমিকেরা এ সুবিধা পেয়েছেন। পরে সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ প্রায় সব খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। যদিও সবাই এ সুযোগ পায়নি। নানান জটিলতায় প্রণোদনার টাকাও পুরোটা খরচ করা যায়নি। আর এবার এখনও এ জাতীয় কোনো প্রণোদনার ঘোষণা আসেনি।
সামনে আসবে এমন আভাসও পাওয়া যায়নি। সরকার যে গেলবারের মতো আরেকটি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে পারবে—এ নিয়েও যথেষ্ট শঙ্কা আছে। কারণ, সরকারেরও সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। এমনিতে সরকার চলতি বাজেট বাস্তবায়ন থেকে অনেক পিছিয়ে। মূলত অর্থসংকটের কারণেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। উন্নয়ন কর্মকা- সীমিত করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প কাটছাঁট করা হয়েছে। প্রকল্পে কৃচ্ছসাধন করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও আয় কমে গেছে। বিশেষ করে রাজস্ব আয়ের প্রবাহ খুবই কম। লক্ষ্য তো অর্জিত হবেই না, বরং প্রবৃদ্ধিও খুব কম। অর্থবছর শেষে বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। সরকার দেশ পরিচালনার খরচ মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
গেল বছর অর্থসংকট কাটাতে বিভিন্ন মহল থেকে টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুপারিশ এসেছিল। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক সমালোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। পক্ষের চেয়ে বিপক্ষেই বেশি মতামত এসেছে। তখন বলা হয়েছে, কৃত্রিমভাবে টাকা ছাপিয়ে বাস্তব সংকট হয়তো আপাতদৃষ্টিতে কমানো যাবে, কিন্তু অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে। বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ বেড়ে যাবে। যদিও সরকার শেষপর্যন্ত সে পথে হাঁটেনি। টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনার প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার কিছুটা সরকারের তহবিল থেকে আর বাকিটা ব্যাংক ব্যবস্থায় নীতিকৌশল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সংস্থান করেছিলেন।
এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সরকারের হাতে পর্যাপ্ত তহবিল নেই। ব্যাংকগুলোকে আরও বাড়তি অর্থায়নের জন্য বলা হবে, সেটাও কতটুকু বাস্তবসম্মত তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। কারণ, ব্যাংকের টাকা স্বল্প সুদে প্রণোদনা খাতে ব্যবহার করলে বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি খাত ঠিকমতো ঋণ পাবে কি না এটা আরও আলোচনার বিষয়। আর ব্যাংক জনগণ থেকে বেশি সুদ দিয়েও কাক্সিক্ষত তহবিল পাবে এরও গ্যারান্টি নেই। কারণ, মানুষ লকডাউন পরিস্থিতি, ব্যবসা মন্দা ও আয় কমে যাওয়ার ফলে হাতে যেটুকু নগদ টাকা আছে, তা ব্যাংকে জমা না করে হাতে রেখে দিতে চাইবে আপৎকালীন খরচের জন্য। ফলে ব্যাংকের তারল্যে টান পড়তে পারে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াচ্ছে যে সরকারের আয় কমে যাচ্ছে, তাই করোনা-সংকট কাটাতে পর্যাপ্ত ব্যয় করতে পারবে এমনটা আশা করা যায় না। যদি সরকার সত্যি সত্যি নগদ অর্থসংকটে পড়ে, তবে ফের টাকা ছাপিয়ে সংকট মোকাবিলা করতে পারে কি না—এ আলোচনা হতে পারে। গেলবার তা না করলেও এবার তা করা সম্ভব হলে করা যেতে পারে। নগদ টাকা ছাপার জন্য সরকারের হাতে বিকল্প রয়েছে। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। এ রিজার্ভ কাজে লাগিয়ে সরকার নগদ টাকা ছাপতে পারে। যদিও টাকা ছাপানোর বড় সমস্যা হলো মুদ্রাস্ফীতি। এ ঝুঁকি সরকারকে নিতে হতে পারে। কারণ, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে মানুষের খাওয়াপরার বিষয়টি বিবেচনায় নিতেই হবে।
লকডাউনে সবকিছু অচল। মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। কোনো আয় নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও করতে হবে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন যেমন যুক্তিযুক্ত, তেমনি মানুষের রুটিরুজির সংস্থান করাও অপরিহার্য। এটা করতে হলে সরকারকে যেকোনো বিকল্প বের করতে হবে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের হাতে টাকা যেতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন ও সেবাসহ সব আয়বর্ধনমূলক কর্মকা- একেবারে বন্ধ করে রাখা যাবে না। যদি তা করতেই হয়, তবে এর সঙ্গে জড়িত লোকজনের হাতে টাকা পৌঁছাতে হবে যেকোনো উপায়ে। এ জন্য সরকারকেই সম্ভাব্য বিকল্প পথ বের করতে হবে। প্রয়োজনে অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বসে কৌশল বের করতে হবে। এই আপৎকালীন পদক্ষেপ অচিরেই নেওয়া প্রয়োজন। না হলে বিপন্ন হবে ব্যবসা-বাণিজ্য, উদ্যোগ ও মানুষের আয়ের পথ। এতে প্রশ্ন উঠবে সরকারের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা নিয়ে। পরিণামে সবকিছু সামলানোর দায় এসে পড়তে পারে। এ জন্য এখনই কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে সম্ভাব্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
অফিসে আসার জন্য বের হয়েছি। মিরপুর-১ থেকে চিড়িয়াখানা রোড হয়ে গাড়ি সনি সিনেমার দিকে এগুচ্ছে। চলতে চলতে এক জায়গায় এক তরুণের দিকে চোখ পড়ল। মনে হলো অকারণেই বসে আছেন। চোখে-মুখে রাজ্যের দুশ্চিন্তা। ইচ্ছে করেই গাড়ি থামালাম। নেমে এগিয়ে যাওয়া দেখে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন। ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলাম। তিনি বিস্ময়ে এদিক-ওদিক তাকালেন। উল্টো প্রশ্ন—‘আমাকে বলছেন?’ ‘জ্বি’। নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, ‘এমনি, আপনি একা বসে আছেন, তাই ভাবলাম একটু কথা বলি।’
নাম তাঁর শামিম। তিনি বলতে শুরু করলেন। ‘ভাই, কী করব বুঝতে পারছি না। শাহ আলী থানার পাশে একটি চায়ের দোকান ছিল আমার। ভালোই চলছিল। থানার পাশে বলে বেশ জমজমাট বেচাকেনা হতো। পরিবার নিয়ে পাশেই একটি বাসা ভাড়া করে থাকতাম। লকডাউনে এ মাসে বলতে গেলে দোকান খুলতেই পারিনি। থানার পাশে হওয়ায় পুলিশের আঙুলের ডগায়, একটু-আধটু যে খুলব তারও উপায় নেই। এই দোকানের আয় দিয়েই আমার পুরো সংসারের ভরণপোষণ, বাসা ভাড়াসহ সব খরচ সামলাতাম। দুটি বাচ্চাসহ আমাদের চারজনের সংসার। গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন। তাঁদের জন্যও কিছু টাকা পাঠাতে হয়। এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। এবারের কড়া লকডাউনে একদমই আয় নেই। দোকানই খোলা যাচ্ছে না, আয় হবে কী করে? গেল মাসের বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। এ মাসও শেষ হওয়ার পথে। এখন শুনছি পুরো মাসই নাকি লকডাউন থাকবে। এ মাসের বাসা ভাড়া না দিতে পারলে বাসাও ছাড়তে হবে। কীভাবে বাসা ভাড়ার টাকা জোগাব, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খাব কী, বাড়িতেই বা কীভাবে মা-বাবার জন্য টাকা পাঠাব— তাও বুঝতে পারছি না। সামনে আসছে ঈদ। একেবারে অন্ধকার দেখছি।’
আর কিচ্ছু জানতে ইচ্ছে হলো না। শুধু বললাম, ‘দেখেন, করোনা থেকেও তো বাঁচতে হবে। একটু ধৈর্য্য ধরেন। আশা করা যায়, সামনে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সত্যি কথা বলতে কী? আমিও জানি না, আসলে সামনে কী অপেক্ষা করছে। করোনার প্রকোপ কমছে না। মৃত্যুর মিছিল থামছে না। বরং দিনে মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে শয়ের ঘর। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার লকডাউনে কড়াকড়ি আরোপ করলেও কিছু মানুষ কারণে-অকারণে বের হচ্ছেন। লকডাউনের পুরো উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে, এটা বলা যাবে না। লকডাউন পুরো বাস্তবায়ন না হলেও মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই। শুধু একজন শামিমই নন, এ লকডাউনে দেশের লাখো শামিমের একই দশা। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা রীতিমতো জীবিকা নিয়ে মারাত্মক সংকটে।
এ ধরনের ব্যবসায়ীদের সাধারণত তেমন কোনো সঞ্চয় থাকে না। বরং তাঁদের অনেকের ব্যাংক ঋণ থাকে। কেউ কেউ ব্যক্তিপর্যায়ে ধার করে ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে থাকেন। নিয়মিত বেচাকেনার মধ্য দিয়ে তাঁরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন। লাভের একটা অংশ দিয়ে সংসার চালান। মোটা দাগে দৈনিক আয় না হলে, তাঁদের জন্য রীতিমতো সমস্যা তৈরি হয়। এখন ঠিক এ রকম সমস্যার কবলে এ ধরনের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এমনিতেই একবছর ধরে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায় মন্দা চলছে। ঠিকমতো বেচাবিক্রি নেই। কোনো রকমে চালিয়ে নিচ্ছেন সবকিছু। এর মধ্যে নতুন করে করোনার প্রকোপ ও লকডাউনে পথে বসার উপক্রম। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামিম ছাড়াও এ খাতের আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের সবারই প্রায় একই কথা। তাঁরা রীতিমতো নিঃস্ব হতে চলেছেন। ব্যবসার পুঁজি তলানিতে। তাঁরা বলছিলেন, জীবন বাঁচাতে লকডাউন যেমন প্রয়োজন, বেঁচে থাকার জন্য তেমনি আয়-রোজগারও প্রয়োজন।
বাস্তবতা হচ্ছে, এখন তাঁদের আয়-রোজগার প্রয়োজন। না হলে জীবন বিপন্ন হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। সত্যিই তাই। গেলবার সরকার আপৎকালীন খাদ্যসহায়তা দিয়েছিল। একেবারে স্বল্প আয়ের মানুষ, দিনমজুর, শ্রমিকেরা এ সুবিধা পেয়েছেন। পরে সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ প্রায় সব খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। যদিও সবাই এ সুযোগ পায়নি। নানান জটিলতায় প্রণোদনার টাকাও পুরোটা খরচ করা যায়নি। আর এবার এখনও এ জাতীয় কোনো প্রণোদনার ঘোষণা আসেনি।
সামনে আসবে এমন আভাসও পাওয়া যায়নি। সরকার যে গেলবারের মতো আরেকটি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে পারবে—এ নিয়েও যথেষ্ট শঙ্কা আছে। কারণ, সরকারেরও সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। এমনিতে সরকার চলতি বাজেট বাস্তবায়ন থেকে অনেক পিছিয়ে। মূলত অর্থসংকটের কারণেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। উন্নয়ন কর্মকা- সীমিত করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প কাটছাঁট করা হয়েছে। প্রকল্পে কৃচ্ছসাধন করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও আয় কমে গেছে। বিশেষ করে রাজস্ব আয়ের প্রবাহ খুবই কম। লক্ষ্য তো অর্জিত হবেই না, বরং প্রবৃদ্ধিও খুব কম। অর্থবছর শেষে বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। সরকার দেশ পরিচালনার খরচ মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
গেল বছর অর্থসংকট কাটাতে বিভিন্ন মহল থেকে টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুপারিশ এসেছিল। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক সমালোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। পক্ষের চেয়ে বিপক্ষেই বেশি মতামত এসেছে। তখন বলা হয়েছে, কৃত্রিমভাবে টাকা ছাপিয়ে বাস্তব সংকট হয়তো আপাতদৃষ্টিতে কমানো যাবে, কিন্তু অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে। বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ বেড়ে যাবে। যদিও সরকার শেষপর্যন্ত সে পথে হাঁটেনি। টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনার প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার কিছুটা সরকারের তহবিল থেকে আর বাকিটা ব্যাংক ব্যবস্থায় নীতিকৌশল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সংস্থান করেছিলেন।
এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সরকারের হাতে পর্যাপ্ত তহবিল নেই। ব্যাংকগুলোকে আরও বাড়তি অর্থায়নের জন্য বলা হবে, সেটাও কতটুকু বাস্তবসম্মত তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। কারণ, ব্যাংকের টাকা স্বল্প সুদে প্রণোদনা খাতে ব্যবহার করলে বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি খাত ঠিকমতো ঋণ পাবে কি না এটা আরও আলোচনার বিষয়। আর ব্যাংক জনগণ থেকে বেশি সুদ দিয়েও কাক্সিক্ষত তহবিল পাবে এরও গ্যারান্টি নেই। কারণ, মানুষ লকডাউন পরিস্থিতি, ব্যবসা মন্দা ও আয় কমে যাওয়ার ফলে হাতে যেটুকু নগদ টাকা আছে, তা ব্যাংকে জমা না করে হাতে রেখে দিতে চাইবে আপৎকালীন খরচের জন্য। ফলে ব্যাংকের তারল্যে টান পড়তে পারে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াচ্ছে যে সরকারের আয় কমে যাচ্ছে, তাই করোনা-সংকট কাটাতে পর্যাপ্ত ব্যয় করতে পারবে এমনটা আশা করা যায় না। যদি সরকার সত্যি সত্যি নগদ অর্থসংকটে পড়ে, তবে ফের টাকা ছাপিয়ে সংকট মোকাবিলা করতে পারে কি না—এ আলোচনা হতে পারে। গেলবার তা না করলেও এবার তা করা সম্ভব হলে করা যেতে পারে। নগদ টাকা ছাপার জন্য সরকারের হাতে বিকল্প রয়েছে। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। এ রিজার্ভ কাজে লাগিয়ে সরকার নগদ টাকা ছাপতে পারে। যদিও টাকা ছাপানোর বড় সমস্যা হলো মুদ্রাস্ফীতি। এ ঝুঁকি সরকারকে নিতে হতে পারে। কারণ, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে মানুষের খাওয়াপরার বিষয়টি বিবেচনায় নিতেই হবে।
লকডাউনে সবকিছু অচল। মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। কোনো আয় নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও করতে হবে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন যেমন যুক্তিযুক্ত, তেমনি মানুষের রুটিরুজির সংস্থান করাও অপরিহার্য। এটা করতে হলে সরকারকে যেকোনো বিকল্প বের করতে হবে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের হাতে টাকা যেতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন ও সেবাসহ সব আয়বর্ধনমূলক কর্মকা- একেবারে বন্ধ করে রাখা যাবে না। যদি তা করতেই হয়, তবে এর সঙ্গে জড়িত লোকজনের হাতে টাকা পৌঁছাতে হবে যেকোনো উপায়ে। এ জন্য সরকারকেই সম্ভাব্য বিকল্প পথ বের করতে হবে। প্রয়োজনে অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বসে কৌশল বের করতে হবে। এই আপৎকালীন পদক্ষেপ অচিরেই নেওয়া প্রয়োজন। না হলে বিপন্ন হবে ব্যবসা-বাণিজ্য, উদ্যোগ ও মানুষের আয়ের পথ। এতে প্রশ্ন উঠবে সরকারের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা নিয়ে। পরিণামে সবকিছু সামলানোর দায় এসে পড়তে পারে। এ জন্য এখনই কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে সম্ভাব্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
৬ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
৬ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
৬ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
৬ ঘণ্টা আগে