শেখর দত্ত
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বিয়োগব্যথা-উদ্বেগ-শঙ্কা নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠার অবিস্মরণীয় দিন ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসটিও চলে গেল। ৫০ বছর আগের ওই দিনটির সঙ্গে উত্থান-পতন, চড়াই-উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে অতিক্রান্ত ও ইতিমধ্যে পালিত হওয়া এই দিনটির বেশ কতগুলো বিষয়ে মিল-অমিল রয়েছে। তখন শত্রু ছিল নৃশংস-প্রাণসংহারী পাক সেনারা, তাদের চোখে দেখা যেত। কিন্তু এখন করোনাভাইরাস নামক শত্রুকে দেখা যায় না। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছিল তখন বাঁচার পথ। কিন্তু এখন ঘরে থাকাটাই বাঁচার পথ। তখন সৈন্য নামিয়ে, কারফিউ দিয়ে জনগণের চেতনাকে ধ্বংস করতে, সংগ্রামকে স্তব্ধ করতে ঘরে বন্দী রাখতে চেষ্টা করত হানাদার সরকার। আর এখন লকডাউন ঘোষণা করে মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে সচেতন করতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লড়াই চালাতে সহযোগিতা করছে বর্তমান সরকার।
তখন হানাদার সরকারের বিরোধিতার জন্য নিয়ম-আইন ভাঙাটা ছিল কাজ। আর বর্তমানে সরকারের পক্ষে থেকে আইন রক্ষা করাটা হচ্ছে কাজ। তখন মতামত প্রকাশে ছিল বাধা, এখন তাতে বাধা নেই। এমন মিল-অমিল কত যে রয়েছে! তবে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক মিল হচ্ছে, তখন সেই দুর্যোগ-দুর্বিপাক-হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে ছিল ঘাতক-দালালেরা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শত্রুরা। এখনও রয়েছে ভিন্নভাবে ওই শক্তি, সুযোগ খুঁজে নিয়ে চালাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ, প্রতিনিয়ত করে চলেছে কমবেশি আমাদের জাতীয় চেতনা তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে আঘাত। তখন ওইসব ঘাতক-দালাল ছিল সংখ্যায় কম, গণবিচ্ছিন্ন ও চিহ্নিত। কিন্তু এখন ওই শক্তি সংখ্যায় কম হলেও রয়েছে মুখোশ পরে, তাই গণবিচ্ছিন্ন বলা যাবে না। ধর্মপ্রাণ অথচ যুক্তিহীন মানুষ একাংশের মধ্যে ওই মুখোশধারীদের রয়েছে প্রভাব। অবস্থাদৃষ্টে অনুধাবন করা যায়, স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত ক্ষমতা, তাৎক্ষণিক উগ্র ও মারমুখি অবস্থান গ্রহণের দিক দিয়ে মুখোশপরা ও অশুভ শক্তি রয়েছে জাতীয় মূলধারার রাজনীতি তথা উন্নয়নকামী অগ্রগতির শক্তির চেয়ে এগিয়ে। এদের দমন বা বিচ্ছিন্ন করতে সরকার বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অগ্রসর হতে হচ্ছে সুকৌশলে।
সার্বিক বিচারে ঠিক সেই দিনের মতোই ভরসা হচ্ছে অন্তহীন প্রেরণার উৎস মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ওই চেতনার পক্ষের সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের দিনে করোনাভাইরাস দুর্যোগের মধ্যে যদি ক্ষমতায় থাকত ২০০১-২০০৬ সালের মতো চারদলীয় জোট, তবে আজ উগ্র জঙ্গিদের বোমা-গ্রেনেডবাজি কোন পর্যায়ে উপনীত হতো, তা ভাবলে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল দিনটিতে যখন লকডাউনের মধ্যে ঘরেবন্দী থেকে ঘাতকের নিষ্ঠুর আঘাতে নিহত বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের অগণিত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই দিনগুলোর ইতিহাসের মধ্যে অবগাহন করছি; তখন ওই সময়ের নেতৃত্বের সাহস-দূরদর্শিতা-কর্মতৎপরতা আর সেইসঙ্গে ব্যথা-দুর্দশার মধ্যেও আপামর জনগণের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস ও সংগ্রামী চেতনা-ঐক্য নিয়ে পূর্বাপর কেবলই সব ভাবছি। সেসব ভাগ্যবানের মধ্যে আমিও রয়েছি, যাঁরা ওই দিনগুলোতে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছিলেন। সব দেখেছি, শুনেছি এবং উপলব্ধিতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাথি বন্ধুদের সঙ্গে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, ২৫ মার্চ, ১৭ এপ্রিল আর সব শেষে ১৬ ডিসেম্বর যেন ইতিহাসের রক্তস্নাত ফুল। সব মিলিয়ে যেন গৌরবময় একটি মালা। ভাবলে কেবলই বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়—বঙ্গবন্ধু ওই কালজয়ী ভাষণটা কীভাবে দিলেন! অভূতপূর্ব বাঁধভাঙা গণজোয়ার ছিল এর স্রষ্টা। লিখিত ভাষণ নয়; জাতির মনের কথা, প্রাণের কথা, বাঁচার কথা জাতির অবিসংবাদিত নেতার মুখ থেকে বের হয়ে এসেছিল—‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই আহ্বানের সঙ্গে পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে কতটাই না ভারসাম্যমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন সেনাশাসক ইয়াহিয়ার বর্বরতার বিরুদ্ধে: ‘তোমরা আমার ভাই ব্যারাকে ফিরে যাও।’ ...একই সঙ্গে সংগ্রামের আহ্বান: ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল...।’ অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, দেশবাসীকে নির্দেশ প্রদান—সবকিছুই যেন ঘটে চলেছিল অবিসংবাদিত নেতার অঙ্গুলিনির্দেশে; সঠিকভাবে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে গতিমুখ রেখে।
ষাটের দশকে যিনি পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার কথা অভিজ্ঞতা থেকে দৃঢ়তা নিয়ে ভেবেছিলেন, সুকৌশলে জেল-মামলা সহ্য করে জনগণকে সেই লক্ষ্যাভিমুখী অগ্রসর করেছিলেন; তা যখন সামনে এল, তখন তিনি যথাযথ কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিতে একটুও ভুল করলেন না। পালিয়ে ভারতে না গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা ও সাথিদের কর্তব্যকর্ম ঠিক করে দিয়ে হানাদার বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর বন্দী হওয়ার কৌশলটা ছিল সবচেয়ে সময়োপযোগী ও চিত্তাকর্ষক। মেজরিটি পার্টির নেতা, যাঁকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ক্ষমতার দাবিদার করেছে জনগণ; তিনি পালাবেন কেন? বিচ্ছিন্নতা বা ভারতের দালাল হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ দেবেন কেন? ফাঁসি বা হত্যার মুখোমুখি তো আগেও হয়েছেন; আগরতলা মামলার বিচারের সময়। ফাঁসির দড়ি সামনে থাকা সত্ত্বেও প্যারোলে গোলটেবিলে যাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন। চোখের সামনে যখন ওই মামলার আভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলিতে হত্যা হতে দেখেছেন, তখনও ভয় পেয়ে পিছু হটেননি। সেই কালরাত্রি পঁচিশে মার্চেও তিনি তা করলেন না। আজ যখন ওই দিনগুলোর দিকে তাকাই, তখন বিস্ময়াভূত হয়ে মনে হয়—কতটাই না যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
আর তাঁর সাথিরা। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা তাজউদ্দীন আহমদ তখন যেসব সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাও ছিল চিত্তাকর্ষক। তখন এক-একটা দিন নয়, এক-একটা মুহূর্তও ছিল মহামূল্যবান। তিনি একটুও ভুল করেননি ভারতে যেতে। সহযোদ্ধা ও সাথি, বিশেষত তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন পেয়ে এবং পাকিস্তানের পক্ষে চীন-আমেরিকার অবস্থান ও হানাদার-দালাল এবং দুই কুকুরের লড়াইপন্থীদের হত্যাযজ্ঞ ও অপপ্রচারের ভ্রুক্ষেপ না করে ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা প্রচার করলেন। ওই দিনটিতে আরও একটি যথার্থ ও অতিপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেন। জারি করলেন, আইনের ধারাবাহিতকা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১। মেজরিটি পার্টির নেতাকে বন্দী করা, মুক্তিযুদ্ধের আইনি বাতাবরণ সৃষ্টি করা ছিল পাকিস্তান-চীন-যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘের ভেতরে লড়াইয়ের প্রধান অস্ত্র।
প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ যখন দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুক্তিযুদ্ধকে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখনই হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগনে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসাররা কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতা একটু ভুল বা বিলম্ব না করে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের দিনই কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বে সেনাযোদ্ধাদের নিয়ে আসা হয়। কেবল তা-ই নয় প্রবাসী সরকারের রাজধানীর মুজিবনগর নামকরণ, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমর পরিষদ ও মুক্তিফৌজ গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা, দেশবাসীর জন্য ১০ দফা নির্দেশনামাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ সরকারের এই উদ্যোগের সফলতা ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, খন্দকার মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তান ও আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা করার উদ্যোগ পূর্বাপর অব্যাহত রাখলেও জাতীয় ঐক্য ও আওয়ামী লীগের ঐক্য বজায় রাখা এবং জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ঊর্ধেŸ তুলে রাখার স্বার্থে মুজিবনগর সরকার শিয়ালসম ওই ধূর্তকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে কার্যত বন্দী করে রেখেছিলেন ঐক্যের জালে। তবে ইতিহাসে একটা প্রশ্ন থেকেই যাবে, স্বাধীনতার পর বিশেষত বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পরও ওই ষড়যন্ত্রকারীকে মন্ত্রী হিসেবে রাখা হলো কেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে সরিয়ে করা হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে চরম খাদ্যঘাটতির মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী। দল ও সরকারের মধ্যে শত্রুকে জিইয়ে রাখাটা ছিল সাক্ষাৎ যমবিশেষ। খাদ্যঘাটতির মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী! চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যবহনকারী জাহাজ কেলেঙ্কারির কথা মনে হলে আজও ওই কথাই কেবল মনে পড়ে আর ভাবি, এই ভুল নবোজাত দেশের সরকার করল কী কারণে? বঙ্গবন্ধুর হাতকে শক্তিশালী করার কথা মুখে বলেছে জাতি ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ; কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে, জাতীয় চার নেতাকে রক্ষা করতে পেরেছে কি? সাহায্যকারী গণ-আস্থাসম্পন্ন ও শক্তিশালী দলও ছিল না। তাই তাদেরও পারার প্রশ্ন ছিল না।
মুজিবনগর দিবসে ওই সময়ের জাতি ও জাতীয় নেতৃত্বের সবলতা-দুর্বলতা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে, মোশতাক গংদের তখন সরকার থেকে বাদ দিলেই কি পঁচাত্তরের সেই কালরাত্রির চরম দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো? রাজনীতির বিজ্ঞান বলে, বিপ্লব ও বিজয়ের পিছু পিছু আসে প্রতিবিপ্লব ও পরাজয়। সর্বোপরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে সমাজতন্ত্র-ধনতন্ত্র ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকে থাকা পর্যন্ত যেসব দেশ সমাজতন্ত্র অভিমুখী অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কমবেশি বিপ্লবী প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, তার কোনোটাই কালের করাল গ্রাসে টিকে থাকতে পারেনি। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অব্যাহত রেখে হত্যা-ক্যুয়ের যুগ ছিল সেটা। সার্বিক বিচারে তাই মনে হয়, ৭ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গৌরবের সেই মালাকে আমরা গলায় পরে রাখতে পারিনি। ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি বা ভাগ্যের লিখন যেন আমাদের টেনে নিয়ে গেছে পঁচাত্তরের সেই কালো দিনগুলোর করালগ্রাসের মধ্যে।
কিন্তু বিগত ওই দিনগুলো রেখে গেছে অভিজ্ঞতা। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও হত্যা-ক্যু থেকে কীভাবে বাঁচা যাবে, সেই অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা। খুনি মোশতাকের মতো ঘরের শত্রু বিভীষণ রেখে আসলে বাইরের শত্রুকে মোকাবিলা করা কিংবা সাফল্য অর্জন করা যায় না। আবার আমাদের জাতীয় পছন্দ গণতন্ত্র হওয়ায় কঠোর শাসনও কার্যকর করা যায় না। হিতে হয় বিপরীত। বাস্তবে ভারসাম্য রক্ষা করে সুকৌশলে অগ্রসর হওয়াটাই বড় কথা। বাস্তব শত্রু চোখে দেখা যায়, কিন্তু চেতনার শত্রু কি দেখা যায়? এটাও যেন ঠিক করোনাভাইরাসের মতো! বাস্তবের লড়াই ও চেতনার লড়াই একত্রে চালানোর শিক্ষাই কিন্তু রেখে গেছে মুজিবনগর দিবস তথা স্বাধীনতার আগে-পরের দিনগুলো। মুজিবনগর দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব ইতিহাস ও চেতনা অবিনশ্বর। যতই এর কাছে যাব আমরা, অবগাহন করব; ততই অনুপ্রেরণা পাব, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পথ অনুসন্ধান করে অগ্রসর হতে পারব; জাতি হবে আলোকিত ও সমৃদ্ধ। আলোকের পথে, সমৃদ্ধির পথে, অবিরাম আঁকাবাঁকা পথে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়াটাই হোক বর্তমান সময়ের প্রত্যাশা।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বিয়োগব্যথা-উদ্বেগ-শঙ্কা নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠার অবিস্মরণীয় দিন ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসটিও চলে গেল। ৫০ বছর আগের ওই দিনটির সঙ্গে উত্থান-পতন, চড়াই-উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে অতিক্রান্ত ও ইতিমধ্যে পালিত হওয়া এই দিনটির বেশ কতগুলো বিষয়ে মিল-অমিল রয়েছে। তখন শত্রু ছিল নৃশংস-প্রাণসংহারী পাক সেনারা, তাদের চোখে দেখা যেত। কিন্তু এখন করোনাভাইরাস নামক শত্রুকে দেখা যায় না। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছিল তখন বাঁচার পথ। কিন্তু এখন ঘরে থাকাটাই বাঁচার পথ। তখন সৈন্য নামিয়ে, কারফিউ দিয়ে জনগণের চেতনাকে ধ্বংস করতে, সংগ্রামকে স্তব্ধ করতে ঘরে বন্দী রাখতে চেষ্টা করত হানাদার সরকার। আর এখন লকডাউন ঘোষণা করে মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে সচেতন করতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লড়াই চালাতে সহযোগিতা করছে বর্তমান সরকার।
তখন হানাদার সরকারের বিরোধিতার জন্য নিয়ম-আইন ভাঙাটা ছিল কাজ। আর বর্তমানে সরকারের পক্ষে থেকে আইন রক্ষা করাটা হচ্ছে কাজ। তখন মতামত প্রকাশে ছিল বাধা, এখন তাতে বাধা নেই। এমন মিল-অমিল কত যে রয়েছে! তবে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক মিল হচ্ছে, তখন সেই দুর্যোগ-দুর্বিপাক-হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে ছিল ঘাতক-দালালেরা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শত্রুরা। এখনও রয়েছে ভিন্নভাবে ওই শক্তি, সুযোগ খুঁজে নিয়ে চালাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ, প্রতিনিয়ত করে চলেছে কমবেশি আমাদের জাতীয় চেতনা তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে আঘাত। তখন ওইসব ঘাতক-দালাল ছিল সংখ্যায় কম, গণবিচ্ছিন্ন ও চিহ্নিত। কিন্তু এখন ওই শক্তি সংখ্যায় কম হলেও রয়েছে মুখোশ পরে, তাই গণবিচ্ছিন্ন বলা যাবে না। ধর্মপ্রাণ অথচ যুক্তিহীন মানুষ একাংশের মধ্যে ওই মুখোশধারীদের রয়েছে প্রভাব। অবস্থাদৃষ্টে অনুধাবন করা যায়, স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত ক্ষমতা, তাৎক্ষণিক উগ্র ও মারমুখি অবস্থান গ্রহণের দিক দিয়ে মুখোশপরা ও অশুভ শক্তি রয়েছে জাতীয় মূলধারার রাজনীতি তথা উন্নয়নকামী অগ্রগতির শক্তির চেয়ে এগিয়ে। এদের দমন বা বিচ্ছিন্ন করতে সরকার বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অগ্রসর হতে হচ্ছে সুকৌশলে।
সার্বিক বিচারে ঠিক সেই দিনের মতোই ভরসা হচ্ছে অন্তহীন প্রেরণার উৎস মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ওই চেতনার পক্ষের সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের দিনে করোনাভাইরাস দুর্যোগের মধ্যে যদি ক্ষমতায় থাকত ২০০১-২০০৬ সালের মতো চারদলীয় জোট, তবে আজ উগ্র জঙ্গিদের বোমা-গ্রেনেডবাজি কোন পর্যায়ে উপনীত হতো, তা ভাবলে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল দিনটিতে যখন লকডাউনের মধ্যে ঘরেবন্দী থেকে ঘাতকের নিষ্ঠুর আঘাতে নিহত বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের অগণিত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই দিনগুলোর ইতিহাসের মধ্যে অবগাহন করছি; তখন ওই সময়ের নেতৃত্বের সাহস-দূরদর্শিতা-কর্মতৎপরতা আর সেইসঙ্গে ব্যথা-দুর্দশার মধ্যেও আপামর জনগণের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস ও সংগ্রামী চেতনা-ঐক্য নিয়ে পূর্বাপর কেবলই সব ভাবছি। সেসব ভাগ্যবানের মধ্যে আমিও রয়েছি, যাঁরা ওই দিনগুলোতে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছিলেন। সব দেখেছি, শুনেছি এবং উপলব্ধিতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাথি বন্ধুদের সঙ্গে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, ২৫ মার্চ, ১৭ এপ্রিল আর সব শেষে ১৬ ডিসেম্বর যেন ইতিহাসের রক্তস্নাত ফুল। সব মিলিয়ে যেন গৌরবময় একটি মালা। ভাবলে কেবলই বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়—বঙ্গবন্ধু ওই কালজয়ী ভাষণটা কীভাবে দিলেন! অভূতপূর্ব বাঁধভাঙা গণজোয়ার ছিল এর স্রষ্টা। লিখিত ভাষণ নয়; জাতির মনের কথা, প্রাণের কথা, বাঁচার কথা জাতির অবিসংবাদিত নেতার মুখ থেকে বের হয়ে এসেছিল—‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই আহ্বানের সঙ্গে পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে কতটাই না ভারসাম্যমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন সেনাশাসক ইয়াহিয়ার বর্বরতার বিরুদ্ধে: ‘তোমরা আমার ভাই ব্যারাকে ফিরে যাও।’ ...একই সঙ্গে সংগ্রামের আহ্বান: ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল...।’ অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, দেশবাসীকে নির্দেশ প্রদান—সবকিছুই যেন ঘটে চলেছিল অবিসংবাদিত নেতার অঙ্গুলিনির্দেশে; সঠিকভাবে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে গতিমুখ রেখে।
ষাটের দশকে যিনি পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার কথা অভিজ্ঞতা থেকে দৃঢ়তা নিয়ে ভেবেছিলেন, সুকৌশলে জেল-মামলা সহ্য করে জনগণকে সেই লক্ষ্যাভিমুখী অগ্রসর করেছিলেন; তা যখন সামনে এল, তখন তিনি যথাযথ কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিতে একটুও ভুল করলেন না। পালিয়ে ভারতে না গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা ও সাথিদের কর্তব্যকর্ম ঠিক করে দিয়ে হানাদার বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর বন্দী হওয়ার কৌশলটা ছিল সবচেয়ে সময়োপযোগী ও চিত্তাকর্ষক। মেজরিটি পার্টির নেতা, যাঁকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ক্ষমতার দাবিদার করেছে জনগণ; তিনি পালাবেন কেন? বিচ্ছিন্নতা বা ভারতের দালাল হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ দেবেন কেন? ফাঁসি বা হত্যার মুখোমুখি তো আগেও হয়েছেন; আগরতলা মামলার বিচারের সময়। ফাঁসির দড়ি সামনে থাকা সত্ত্বেও প্যারোলে গোলটেবিলে যাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন। চোখের সামনে যখন ওই মামলার আভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলিতে হত্যা হতে দেখেছেন, তখনও ভয় পেয়ে পিছু হটেননি। সেই কালরাত্রি পঁচিশে মার্চেও তিনি তা করলেন না। আজ যখন ওই দিনগুলোর দিকে তাকাই, তখন বিস্ময়াভূত হয়ে মনে হয়—কতটাই না যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
আর তাঁর সাথিরা। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা তাজউদ্দীন আহমদ তখন যেসব সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাও ছিল চিত্তাকর্ষক। তখন এক-একটা দিন নয়, এক-একটা মুহূর্তও ছিল মহামূল্যবান। তিনি একটুও ভুল করেননি ভারতে যেতে। সহযোদ্ধা ও সাথি, বিশেষত তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন পেয়ে এবং পাকিস্তানের পক্ষে চীন-আমেরিকার অবস্থান ও হানাদার-দালাল এবং দুই কুকুরের লড়াইপন্থীদের হত্যাযজ্ঞ ও অপপ্রচারের ভ্রুক্ষেপ না করে ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা প্রচার করলেন। ওই দিনটিতে আরও একটি যথার্থ ও অতিপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেন। জারি করলেন, আইনের ধারাবাহিতকা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১। মেজরিটি পার্টির নেতাকে বন্দী করা, মুক্তিযুদ্ধের আইনি বাতাবরণ সৃষ্টি করা ছিল পাকিস্তান-চীন-যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘের ভেতরে লড়াইয়ের প্রধান অস্ত্র।
প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ যখন দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুক্তিযুদ্ধকে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখনই হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগনে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসাররা কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতা একটু ভুল বা বিলম্ব না করে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের দিনই কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বে সেনাযোদ্ধাদের নিয়ে আসা হয়। কেবল তা-ই নয় প্রবাসী সরকারের রাজধানীর মুজিবনগর নামকরণ, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমর পরিষদ ও মুক্তিফৌজ গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা, দেশবাসীর জন্য ১০ দফা নির্দেশনামাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ সরকারের এই উদ্যোগের সফলতা ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, খন্দকার মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তান ও আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা করার উদ্যোগ পূর্বাপর অব্যাহত রাখলেও জাতীয় ঐক্য ও আওয়ামী লীগের ঐক্য বজায় রাখা এবং জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ঊর্ধেŸ তুলে রাখার স্বার্থে মুজিবনগর সরকার শিয়ালসম ওই ধূর্তকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে কার্যত বন্দী করে রেখেছিলেন ঐক্যের জালে। তবে ইতিহাসে একটা প্রশ্ন থেকেই যাবে, স্বাধীনতার পর বিশেষত বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পরও ওই ষড়যন্ত্রকারীকে মন্ত্রী হিসেবে রাখা হলো কেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে সরিয়ে করা হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে চরম খাদ্যঘাটতির মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী। দল ও সরকারের মধ্যে শত্রুকে জিইয়ে রাখাটা ছিল সাক্ষাৎ যমবিশেষ। খাদ্যঘাটতির মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী! চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যবহনকারী জাহাজ কেলেঙ্কারির কথা মনে হলে আজও ওই কথাই কেবল মনে পড়ে আর ভাবি, এই ভুল নবোজাত দেশের সরকার করল কী কারণে? বঙ্গবন্ধুর হাতকে শক্তিশালী করার কথা মুখে বলেছে জাতি ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ; কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে, জাতীয় চার নেতাকে রক্ষা করতে পেরেছে কি? সাহায্যকারী গণ-আস্থাসম্পন্ন ও শক্তিশালী দলও ছিল না। তাই তাদেরও পারার প্রশ্ন ছিল না।
মুজিবনগর দিবসে ওই সময়ের জাতি ও জাতীয় নেতৃত্বের সবলতা-দুর্বলতা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে, মোশতাক গংদের তখন সরকার থেকে বাদ দিলেই কি পঁচাত্তরের সেই কালরাত্রির চরম দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো? রাজনীতির বিজ্ঞান বলে, বিপ্লব ও বিজয়ের পিছু পিছু আসে প্রতিবিপ্লব ও পরাজয়। সর্বোপরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে সমাজতন্ত্র-ধনতন্ত্র ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকে থাকা পর্যন্ত যেসব দেশ সমাজতন্ত্র অভিমুখী অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কমবেশি বিপ্লবী প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, তার কোনোটাই কালের করাল গ্রাসে টিকে থাকতে পারেনি। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অব্যাহত রেখে হত্যা-ক্যুয়ের যুগ ছিল সেটা। সার্বিক বিচারে তাই মনে হয়, ৭ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গৌরবের সেই মালাকে আমরা গলায় পরে রাখতে পারিনি। ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি বা ভাগ্যের লিখন যেন আমাদের টেনে নিয়ে গেছে পঁচাত্তরের সেই কালো দিনগুলোর করালগ্রাসের মধ্যে।
কিন্তু বিগত ওই দিনগুলো রেখে গেছে অভিজ্ঞতা। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও হত্যা-ক্যু থেকে কীভাবে বাঁচা যাবে, সেই অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা। খুনি মোশতাকের মতো ঘরের শত্রু বিভীষণ রেখে আসলে বাইরের শত্রুকে মোকাবিলা করা কিংবা সাফল্য অর্জন করা যায় না। আবার আমাদের জাতীয় পছন্দ গণতন্ত্র হওয়ায় কঠোর শাসনও কার্যকর করা যায় না। হিতে হয় বিপরীত। বাস্তবে ভারসাম্য রক্ষা করে সুকৌশলে অগ্রসর হওয়াটাই বড় কথা। বাস্তব শত্রু চোখে দেখা যায়, কিন্তু চেতনার শত্রু কি দেখা যায়? এটাও যেন ঠিক করোনাভাইরাসের মতো! বাস্তবের লড়াই ও চেতনার লড়াই একত্রে চালানোর শিক্ষাই কিন্তু রেখে গেছে মুজিবনগর দিবস তথা স্বাধীনতার আগে-পরের দিনগুলো। মুজিবনগর দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব ইতিহাস ও চেতনা অবিনশ্বর। যতই এর কাছে যাব আমরা, অবগাহন করব; ততই অনুপ্রেরণা পাব, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পথ অনুসন্ধান করে অগ্রসর হতে পারব; জাতি হবে আলোকিত ও সমৃদ্ধ। আলোকের পথে, সমৃদ্ধির পথে, অবিরাম আঁকাবাঁকা পথে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়াটাই হোক বর্তমান সময়ের প্রত্যাশা।
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
৪ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
৪ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
৪ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
৪ ঘণ্টা আগে