চিররঞ্জন সরকার
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ে; যা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর বলে দাবি করা হচ্ছে। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পরপরই তা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ফোনালাপের একপর্যায়ে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো (... বাচ্চা) যদি আমার পেছনে লাগে, আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি তাকে দেশছাড়া করব।’ উল্লেখ্য, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা কামরুন নাহারকে গত বছরের ডিসেম্বরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই ফোনালাপে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের কথায় ‘খিস্তিখেউড়, গালাগাল, রাজনৈতিক দাপট দেখানো’ ইত্যাদি কারণে একশ্রেণির মানুষ খুবই মর্মাহত হয়েছেন বলে দাবি করছেন। তাঁরা কিছুতেই একজন অধ্যক্ষের মুখ থেকে এমন কথা শোনার জন্য নাকি প্রস্তুত ছিলেন না।
আসলে কামরুন নাহার কোনো দেবদেবী বা অবতার নন। তিনি আমাদের মতোই একজন মানুষ। আমাদের এই সমাজেরই মানুষ। ‘ভাগ্যদোষে’ হয়তো ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অধ্যক্ষরা কি মানুষ নন? তাঁদের কি আবেগ-অনুভূতি নেই? তাঁরা কি নোংরা বা খারাপ কথা বলতে পারেন না?
আমাদের দেশে খিস্তিখেউড়, অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ, গালি ইত্যাদি কে না দেয়? কারওটা প্রকাশ হয়, কারওটা হয় না। কামরুন নাহার ঠিক কাজটিই করেছেন। তিনি মুখে যা এসেছে তাই বলেছেন। ভণ্ডামি বা প্রতারণা করেননি। তিনি অনেকের মতো ‘মুখে একটা মনে একটা’ ধরনের মুখোশ আঁটেননি। যা বলার স্পষ্ট করে বলেছেন। প্রতিপক্ষকে ‘উচিত ভাষায়’ শাসিয়েছেন।
গত কয়েক দশকে আমাদের সমাজে খারাপ কথা, কুকথা, নোংরা কথা, গালাগাল ইত্যাদির বাম্পার ফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। নানা জনের কণ্ঠে নানা বাণী। এসব বাণী কবিগুরুর কবিতার মতো সুললিত নয়; বরং তা বজ্রের মতো। তিরের ফলার মতো। কুকথা বলার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ এক আশ্চর্য সাম্যে পৌঁছেছে। যেই মুখ খোলে, তার মুখ থেকেই অবিরল কুকথার ধারা প্রবাহিত হয়। স্বাদে-গন্ধে অপূর্ব! আমাদের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাধারণ মানুষ–সবার মুখের ভাষাই আজ প্রায় এক হয়ে গেছে। পুরো বাংলাদেশ আজ করোনার পাশাপাশি গালাগালের ভাইরাসে সংক্রমিত।
আমাদের ছোট নেতা থেকে বড় নেত্রী, সবাই কমবেশি কুভাষার চর্চা করছেন। এসব নাকি কথামৃত। লোকায়ত ভাষা। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক উচ্চারণ। কেউ কেউ একে নির্ভেজাল গরল অভব্য অশিক্ষার বিষ বলছেন। তাঁদের মতে, অশিক্ষিতের, বস্তুত অশিক্ষা-গর্বিতের যুক্তির অভাব হয় না! সে যুক্তি কুযুক্তি, অপযুক্তি। বাঙালি অপযুক্তির বশ হয়েছে!
যদিও উল্লিখিত যুক্তি মানা কঠিন। আসলে সব কালে, সব সমাজেই গালি দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল বা আছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাম-শহর, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিবের ব্যবধান খুব একটা নেই। সবাই গালি দেয়। শিক্ষিতরা দেয় ইংরেজিতে, আর সাধারণরা দেয় বাংলায়, কখনো আঞ্চলিক ভাষায়।
অনেকে বলেন, গালি দেওয়াটা কোনো সংস্কৃতিমান মানুষের কাজ নয়। ‘অসংস্কৃত’, ‘নিচু স্তরের’ মানুষই গালাগাল করে বেশি। তাদের কথায় স্ল্যাং বা গালির আধিক্য থাকে। তবে এখন শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মধ্যে গালাগালের ব্যাপারে খুব একটা ইতর-বিশেষ নেই। যেসব শব্দ ছাপার অযোগ্য বলে গণ্য হতো, সেসব আজ সর্বজনীন হয়ে জননেতার মুখে, বুদ্ধিজীবীর লেখায় কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালে ভেসে বেড়ায়! সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে সংবাদ কিংবা মতামতের নিচে সাংবাদিকদের প্রতি যে কদর্যতর হুমকি দিয়ে মন্তব্য পোস্ট করা হয়, কিছুদিন আগেও যা অকল্পনীয় ছিল।
এখন এসব কুকথা মানুষ লিখে আনন্দ পাচ্ছে, বলে আনন্দ পাচ্ছে, যারা পড়ে কিংবা শোনে–তারাও নিশ্চয়ই আনন্দ পায়। এসবের চাহিদা বা বাজারমূল্য যদি না-ই থাকবে, তাহলে সবাই গালাগালের প্রতি এমন উৎসাহ দেখাবে কেন? গালি বা কুকথা যদি কোনো ‘প্রোডাক্ট’ হয়, তার ক্রেতা আমরা সবাই। আর যার চাহিদা আছে, কাটতি আছে, তাকে বাজার থেকে হটাবে কে? এখন তো ‘সবার উপরে বাজার সত্য, তাহার ওপরে নাই!’
গালাগালি কারও ভালো লাগুক চাই না লাগুক, গালির কিন্তু অনেক গুণ। একটা মানুষ কতটা শিক্ষিত, রুচিবান, উন্নত চিন্তাধারার–সেটা নির্ণয় করা কঠিন কাজ। যারা গালি দেয়, কুকথা বলে, আমরা খুব সহজে তাদের বংশ, রুচির সুন্দর পরিচয় পাই। এখনকার এই চতুরের দুনিয়ায় মানুষ চেনা বড় দায়। গালিবাজরা নিজেরাই কত ভদ্রভাবে নিজেদের চিনিয়ে দেয়।
কাজেই গালি চলুক, চলতে থাকুক!
লেখক: রম্যলেখক।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ে; যা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর বলে দাবি করা হচ্ছে। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পরপরই তা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ফোনালাপের একপর্যায়ে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো (... বাচ্চা) যদি আমার পেছনে লাগে, আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি তাকে দেশছাড়া করব।’ উল্লেখ্য, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা কামরুন নাহারকে গত বছরের ডিসেম্বরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই ফোনালাপে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের কথায় ‘খিস্তিখেউড়, গালাগাল, রাজনৈতিক দাপট দেখানো’ ইত্যাদি কারণে একশ্রেণির মানুষ খুবই মর্মাহত হয়েছেন বলে দাবি করছেন। তাঁরা কিছুতেই একজন অধ্যক্ষের মুখ থেকে এমন কথা শোনার জন্য নাকি প্রস্তুত ছিলেন না।
আসলে কামরুন নাহার কোনো দেবদেবী বা অবতার নন। তিনি আমাদের মতোই একজন মানুষ। আমাদের এই সমাজেরই মানুষ। ‘ভাগ্যদোষে’ হয়তো ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অধ্যক্ষরা কি মানুষ নন? তাঁদের কি আবেগ-অনুভূতি নেই? তাঁরা কি নোংরা বা খারাপ কথা বলতে পারেন না?
আমাদের দেশে খিস্তিখেউড়, অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ, গালি ইত্যাদি কে না দেয়? কারওটা প্রকাশ হয়, কারওটা হয় না। কামরুন নাহার ঠিক কাজটিই করেছেন। তিনি মুখে যা এসেছে তাই বলেছেন। ভণ্ডামি বা প্রতারণা করেননি। তিনি অনেকের মতো ‘মুখে একটা মনে একটা’ ধরনের মুখোশ আঁটেননি। যা বলার স্পষ্ট করে বলেছেন। প্রতিপক্ষকে ‘উচিত ভাষায়’ শাসিয়েছেন।
গত কয়েক দশকে আমাদের সমাজে খারাপ কথা, কুকথা, নোংরা কথা, গালাগাল ইত্যাদির বাম্পার ফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। নানা জনের কণ্ঠে নানা বাণী। এসব বাণী কবিগুরুর কবিতার মতো সুললিত নয়; বরং তা বজ্রের মতো। তিরের ফলার মতো। কুকথা বলার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ এক আশ্চর্য সাম্যে পৌঁছেছে। যেই মুখ খোলে, তার মুখ থেকেই অবিরল কুকথার ধারা প্রবাহিত হয়। স্বাদে-গন্ধে অপূর্ব! আমাদের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাধারণ মানুষ–সবার মুখের ভাষাই আজ প্রায় এক হয়ে গেছে। পুরো বাংলাদেশ আজ করোনার পাশাপাশি গালাগালের ভাইরাসে সংক্রমিত।
আমাদের ছোট নেতা থেকে বড় নেত্রী, সবাই কমবেশি কুভাষার চর্চা করছেন। এসব নাকি কথামৃত। লোকায়ত ভাষা। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক উচ্চারণ। কেউ কেউ একে নির্ভেজাল গরল অভব্য অশিক্ষার বিষ বলছেন। তাঁদের মতে, অশিক্ষিতের, বস্তুত অশিক্ষা-গর্বিতের যুক্তির অভাব হয় না! সে যুক্তি কুযুক্তি, অপযুক্তি। বাঙালি অপযুক্তির বশ হয়েছে!
যদিও উল্লিখিত যুক্তি মানা কঠিন। আসলে সব কালে, সব সমাজেই গালি দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল বা আছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাম-শহর, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিবের ব্যবধান খুব একটা নেই। সবাই গালি দেয়। শিক্ষিতরা দেয় ইংরেজিতে, আর সাধারণরা দেয় বাংলায়, কখনো আঞ্চলিক ভাষায়।
অনেকে বলেন, গালি দেওয়াটা কোনো সংস্কৃতিমান মানুষের কাজ নয়। ‘অসংস্কৃত’, ‘নিচু স্তরের’ মানুষই গালাগাল করে বেশি। তাদের কথায় স্ল্যাং বা গালির আধিক্য থাকে। তবে এখন শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মধ্যে গালাগালের ব্যাপারে খুব একটা ইতর-বিশেষ নেই। যেসব শব্দ ছাপার অযোগ্য বলে গণ্য হতো, সেসব আজ সর্বজনীন হয়ে জননেতার মুখে, বুদ্ধিজীবীর লেখায় কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালে ভেসে বেড়ায়! সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে সংবাদ কিংবা মতামতের নিচে সাংবাদিকদের প্রতি যে কদর্যতর হুমকি দিয়ে মন্তব্য পোস্ট করা হয়, কিছুদিন আগেও যা অকল্পনীয় ছিল।
এখন এসব কুকথা মানুষ লিখে আনন্দ পাচ্ছে, বলে আনন্দ পাচ্ছে, যারা পড়ে কিংবা শোনে–তারাও নিশ্চয়ই আনন্দ পায়। এসবের চাহিদা বা বাজারমূল্য যদি না-ই থাকবে, তাহলে সবাই গালাগালের প্রতি এমন উৎসাহ দেখাবে কেন? গালি বা কুকথা যদি কোনো ‘প্রোডাক্ট’ হয়, তার ক্রেতা আমরা সবাই। আর যার চাহিদা আছে, কাটতি আছে, তাকে বাজার থেকে হটাবে কে? এখন তো ‘সবার উপরে বাজার সত্য, তাহার ওপরে নাই!’
গালাগালি কারও ভালো লাগুক চাই না লাগুক, গালির কিন্তু অনেক গুণ। একটা মানুষ কতটা শিক্ষিত, রুচিবান, উন্নত চিন্তাধারার–সেটা নির্ণয় করা কঠিন কাজ। যারা গালি দেয়, কুকথা বলে, আমরা খুব সহজে তাদের বংশ, রুচির সুন্দর পরিচয় পাই। এখনকার এই চতুরের দুনিয়ায় মানুষ চেনা বড় দায়। গালিবাজরা নিজেরাই কত ভদ্রভাবে নিজেদের চিনিয়ে দেয়।
কাজেই গালি চলুক, চলতে থাকুক!
লেখক: রম্যলেখক।
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ দিন আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১ দিন আগে