বিভুরঞ্জন সরকার
সাপ্তাহিক চলতিপত্রে (১৯৯৬ সালে প্রকাশিত) আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেন এবং তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন আহসান কবির। এখন বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান। কবির সম্পর্কে লিখলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। কবির সেই যায়যায়দিন থেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন। ওর লেখার স্টাইল আমি পছন্দ করতাম। তাই বিশেষ কিছু মাথায় এলে ডাকতাম কবিরকে। সামান্য ব্রিফ করলেই কবির বুঝে যেতেন, আমি কি চাই। তিনি তথ্য সংগ্রহে অত্যন্ত পটু ছিলেন। আবার গল্প লেখার হাত ছিল বলে একটি নীরস প্রতিবেদনকেও কবির রসে টইটম্বুর করে পরিবেশন করতে পারতেন। তাঁর লেখা সরেজমিন প্রতিবেদন ছিল এফোঁড়–ওফোঁড় করা।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে কবিরের প্রতিবেদন হলো মৌচাকে ঢিল ছোড়ার মতো। হুল কীভাবে আমাকে বিঁধল সেটাই বলছি।
তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে চলতিপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানাজন নানাভাবে আমাকে সাবধান-সতর্ক করতে লাগলেন। পত্রিকা যেদিন বাজারে যায়, সে রাতে বাসার ল্যান্ডফোনটি বেজে উঠলে রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর প্রান্ত থেকে শুনলাম অত্যন্ত মোলায়েম কিন্তু অপরিচিত একটি কণ্ঠ।
‘ভালো আছেন দাদা?’ আমি ‘ভালো আছি’ বলতেই ওদিকের কণ্ঠ—‘ছোট ভাইকে বিপদে ফেলে ভালো তো থাকবেনই।’
আমি জানতে চাইলাম, ‘কার সঙ্গে কথা বলছি?’ এবার সরাসরি জবাব—‘দাদা, ছোট ভাইয়ের নাম মকবুল, আলহাজ মকবুল হোসেন, এমপি।’
আমার গলা একটু শুকিয়ে এল। তিনি আমার ছোট ভাই? বিগ ব্রাদার বললে না জুতসই হতো! ‘খাইছে আমারে’, মনে মনে বলে উঠলাম। চলতিপত্রের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বললেন, ‘এই কাজটা ভালো করেননি দাদা। আমি যে আপনার কী ক্ষতি করতে পারি, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকলে আপনি এমন কাজ করতেন না।’
তিনি আমার কাছে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা চাইলেন এবং বললেন, ‘তার “ছেলেরা” ওই প্রতিবেদককে ধরে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে।’ পেলে বেচারার কী যে অবস্থা হবে, আল্লাই মালুম। আমি আহসান কবিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলাম। মকবুল সাহেবের ‘ছেলে’রা ওকে সামনে পেলে যে কিমা বানাবে, সেটা বুঝতে পারলাম। ঝামেলা না বাড়িয়ে আমি আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বললাম, ‘যা হওয়ার হয়েছে, সব ভুলে যান। একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দিন, পরের সংখ্যায় ছাপিয়ে দেব।’
মকবুল সাহেব বলেন, ‘এত সহজে তো ঘটনা শেষ হবে না দাদা। যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের চরিত্রহানি করা হয়েছে, সুনামহানি করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ কি একটি প্রতিবাদপত্রে শেষ হতে পারে? আপনি আমাদের পক্ষের লোক। তাই আপনার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও আমি আপনার এবং আপনার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কিছু না করে পারব না। “ছেলেরা” কখন কোথায় কী করে ফেলবে, তা হয়তো আমি জানবও না!’ এমন কথা শুনে বুকের ভেতরে একটু মোচড় দিয়ে না উঠে পারে?
প্রতিবেদনটিতে এমন সব তথ্য আছে যেগুলো ‘অসত্য’ বলা যাবে না। আবার প্রমাণ করাও সহজ নয়। দুর্নীতি-অনিয়ম কেউ সাক্ষী-সাবুদ রেখে করে না। তাই মকবুল সাহেব ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করা হয়েছিল এম আর আখতারের ‘শোনা যায়’, ‘জানা যায়’ স্টাইলে।
মকবুল সাহেব বলেন, ‘আমি যদি এখন আমার দৈনিকে আপনার বিরুদ্ধে লিখি যে, গতরাতে চলতিপত্র সম্পাদককে টানবাজার থেকে মদ্যপ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে “জানা যায়”, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?’
আমি কিছুটা অসহায় বোধ করি। মকবুল সাহেব ইচ্ছা করলে পারেন না, এমন কী আর আছে। দৈনিক আল-আমিন নামে তাঁর একটি পত্রিকা ছিল, যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবার ‘বঙ্গবীর’ বলে পরিচিত টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী। ওই দৈনিকে সত্যি যদি আমার নামে কোনো একটা ‘শোনা যায়’ নিউজ ছেপে দেয়? এবার ভয় আমাকে পেয়ে বসে। আমি বেশ বুঝতে পারি মকবুল সাহেব আমাকে ভয়ই দেখাতে চান। আমি ভয় পেয়ে ভেতরে-ভেতরে মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে থাকি!
পথ একটা পেয়েছিলাম বলেই আজও পাঠকদের সামনে হাজির হতে পারছি। কিন্তু পথটি কী পেলাম? মকবুল হোসেন এমপি আমাকে কথার প্যাঁচে ফেলতে চান বুঝতে পেরে আমিও রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকি। তিনি ক্ষমতাবান, বিত্তবান মানুষ। শাসক দলের সংসদ সদস্য। তাঁর ‘সমর্থক’ বাহিনী আছে। তাঁর ছেলেও ‘বাপকা বেটা’। এসব চলতিপত্রের প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। মকবুল সাহেব ইচ্ছে করলে আমাকে যা খুশি, তাই করতে পারেন।
তিনি আমাকে বারবার চাপ দিতে থাকেন প্রতিবেদকের ঠিকানা দেওয়ার জন্য। আমি আহসান কবিরের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ি। নিজের জন্যও একটু চিন্তা হয়। আবার মনে হয়, ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী লীগ, আমাকে বেশি হেনস্তা করার ঝুঁকি হয়তো তিনি নেবেন না।
আমি তাঁকে বলি, ‘ভাই, আপনি এত বড় মনের এবং বড় মাপের একজন মানুষ—কোথাকার কোন আহসান কবিরের এক রিপোর্ট, যা কিনা ছাপা হয়েছে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়, এটা নিয়ে হইচই করা কি আপনার মানায়? আপনি হলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আপনার পক্ষে-বিপক্ষে কত কথা বলা হয়, হবে। সব কথা কি সত্য? আর সব কথা কি ধরতে হয়?’
মকবুল হোসেন একটু নরম হন। তারপরও বলেন, ‘আপনার কাগজের প্রতিবেদনে আমার মানহানি হয়েছে। আমি একটা মানহানির মামলা করব।’ আমি মামলার ঝামেলা এড়াতে চাই। হঠাৎ জোঁকের মুখে লবণ দিলে জোঁক শেষ! মকবুল সাহেবকে ঠান্ডা করার জন্য আমি একটা গল্প ফাঁদি। বলি, ‘কাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা তখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন) এবং অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে আমার একটি বৈঠক আছে...।’
আমার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই মকবুল সাহেব বিগলিত কণ্ঠে বলেন, ‘এই তো দেখেন দাদা। আমরা হলাম এক মত-পথের লোক। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকা উচিত নয়!’ বুঝতে পারি ওষুধ কাজে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মিটিংয়ের কথা শুনে মকবুল সাহেব হয়তো ভেবেছেন তাঁর প্রসঙ্গ যদি আমি সেখানে তুলি!
আমার মিটিং ছিল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছিলাম জোঁকের মুখে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য এবং সত্যি তাতে কাজ হয়। মকবুল সাহেব ভয় দেখানো বন্ধ করে বললেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে দাদা। আপনি আর এটা বাড়াইয়েন না। আমিও পোলাপানগো ঠান্ডা থাকতে কমু।’ আমি বলি, ‘সেটাই ভালো। আপনি এটা নিয়ে কিছু করতে গেলে পত্রিকায় খবর ছাপা হবে। এখন যে বিষয়টি কম লোকে জানে, তখন নানাভাবে বেশি লোকে জানবে। এটা আপনার জন্যই অসম্মানজনক হবে।’ মকবুল সাহেব বলেন, ‘আপনার পত্রিকা ভালো হচ্ছে দাদা। চালিয়ে যান।’ পরস্পরকে শুভকামনা জানিয়ে আমাদের ফোনালাপ শেষ হয়। আমি আমার বুক থেকে ভয়ের বোঝা নামিয়ে ফেলে স্বস্তি বোধ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সাপ্তাহিক চলতিপত্রে (১৯৯৬ সালে প্রকাশিত) আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেন এবং তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন আহসান কবির। এখন বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান। কবির সম্পর্কে লিখলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। কবির সেই যায়যায়দিন থেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন। ওর লেখার স্টাইল আমি পছন্দ করতাম। তাই বিশেষ কিছু মাথায় এলে ডাকতাম কবিরকে। সামান্য ব্রিফ করলেই কবির বুঝে যেতেন, আমি কি চাই। তিনি তথ্য সংগ্রহে অত্যন্ত পটু ছিলেন। আবার গল্প লেখার হাত ছিল বলে একটি নীরস প্রতিবেদনকেও কবির রসে টইটম্বুর করে পরিবেশন করতে পারতেন। তাঁর লেখা সরেজমিন প্রতিবেদন ছিল এফোঁড়–ওফোঁড় করা।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে কবিরের প্রতিবেদন হলো মৌচাকে ঢিল ছোড়ার মতো। হুল কীভাবে আমাকে বিঁধল সেটাই বলছি।
তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে চলতিপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানাজন নানাভাবে আমাকে সাবধান-সতর্ক করতে লাগলেন। পত্রিকা যেদিন বাজারে যায়, সে রাতে বাসার ল্যান্ডফোনটি বেজে উঠলে রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর প্রান্ত থেকে শুনলাম অত্যন্ত মোলায়েম কিন্তু অপরিচিত একটি কণ্ঠ।
‘ভালো আছেন দাদা?’ আমি ‘ভালো আছি’ বলতেই ওদিকের কণ্ঠ—‘ছোট ভাইকে বিপদে ফেলে ভালো তো থাকবেনই।’
আমি জানতে চাইলাম, ‘কার সঙ্গে কথা বলছি?’ এবার সরাসরি জবাব—‘দাদা, ছোট ভাইয়ের নাম মকবুল, আলহাজ মকবুল হোসেন, এমপি।’
আমার গলা একটু শুকিয়ে এল। তিনি আমার ছোট ভাই? বিগ ব্রাদার বললে না জুতসই হতো! ‘খাইছে আমারে’, মনে মনে বলে উঠলাম। চলতিপত্রের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বললেন, ‘এই কাজটা ভালো করেননি দাদা। আমি যে আপনার কী ক্ষতি করতে পারি, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকলে আপনি এমন কাজ করতেন না।’
তিনি আমার কাছে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা চাইলেন এবং বললেন, ‘তার “ছেলেরা” ওই প্রতিবেদককে ধরে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে।’ পেলে বেচারার কী যে অবস্থা হবে, আল্লাই মালুম। আমি আহসান কবিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলাম। মকবুল সাহেবের ‘ছেলে’রা ওকে সামনে পেলে যে কিমা বানাবে, সেটা বুঝতে পারলাম। ঝামেলা না বাড়িয়ে আমি আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বললাম, ‘যা হওয়ার হয়েছে, সব ভুলে যান। একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দিন, পরের সংখ্যায় ছাপিয়ে দেব।’
মকবুল সাহেব বলেন, ‘এত সহজে তো ঘটনা শেষ হবে না দাদা। যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের চরিত্রহানি করা হয়েছে, সুনামহানি করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ কি একটি প্রতিবাদপত্রে শেষ হতে পারে? আপনি আমাদের পক্ষের লোক। তাই আপনার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও আমি আপনার এবং আপনার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কিছু না করে পারব না। “ছেলেরা” কখন কোথায় কী করে ফেলবে, তা হয়তো আমি জানবও না!’ এমন কথা শুনে বুকের ভেতরে একটু মোচড় দিয়ে না উঠে পারে?
প্রতিবেদনটিতে এমন সব তথ্য আছে যেগুলো ‘অসত্য’ বলা যাবে না। আবার প্রমাণ করাও সহজ নয়। দুর্নীতি-অনিয়ম কেউ সাক্ষী-সাবুদ রেখে করে না। তাই মকবুল সাহেব ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করা হয়েছিল এম আর আখতারের ‘শোনা যায়’, ‘জানা যায়’ স্টাইলে।
মকবুল সাহেব বলেন, ‘আমি যদি এখন আমার দৈনিকে আপনার বিরুদ্ধে লিখি যে, গতরাতে চলতিপত্র সম্পাদককে টানবাজার থেকে মদ্যপ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে “জানা যায়”, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?’
আমি কিছুটা অসহায় বোধ করি। মকবুল সাহেব ইচ্ছা করলে পারেন না, এমন কী আর আছে। দৈনিক আল-আমিন নামে তাঁর একটি পত্রিকা ছিল, যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবার ‘বঙ্গবীর’ বলে পরিচিত টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী। ওই দৈনিকে সত্যি যদি আমার নামে কোনো একটা ‘শোনা যায়’ নিউজ ছেপে দেয়? এবার ভয় আমাকে পেয়ে বসে। আমি বেশ বুঝতে পারি মকবুল সাহেব আমাকে ভয়ই দেখাতে চান। আমি ভয় পেয়ে ভেতরে-ভেতরে মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে থাকি!
পথ একটা পেয়েছিলাম বলেই আজও পাঠকদের সামনে হাজির হতে পারছি। কিন্তু পথটি কী পেলাম? মকবুল হোসেন এমপি আমাকে কথার প্যাঁচে ফেলতে চান বুঝতে পেরে আমিও রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকি। তিনি ক্ষমতাবান, বিত্তবান মানুষ। শাসক দলের সংসদ সদস্য। তাঁর ‘সমর্থক’ বাহিনী আছে। তাঁর ছেলেও ‘বাপকা বেটা’। এসব চলতিপত্রের প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। মকবুল সাহেব ইচ্ছে করলে আমাকে যা খুশি, তাই করতে পারেন।
তিনি আমাকে বারবার চাপ দিতে থাকেন প্রতিবেদকের ঠিকানা দেওয়ার জন্য। আমি আহসান কবিরের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ি। নিজের জন্যও একটু চিন্তা হয়। আবার মনে হয়, ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী লীগ, আমাকে বেশি হেনস্তা করার ঝুঁকি হয়তো তিনি নেবেন না।
আমি তাঁকে বলি, ‘ভাই, আপনি এত বড় মনের এবং বড় মাপের একজন মানুষ—কোথাকার কোন আহসান কবিরের এক রিপোর্ট, যা কিনা ছাপা হয়েছে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়, এটা নিয়ে হইচই করা কি আপনার মানায়? আপনি হলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আপনার পক্ষে-বিপক্ষে কত কথা বলা হয়, হবে। সব কথা কি সত্য? আর সব কথা কি ধরতে হয়?’
মকবুল হোসেন একটু নরম হন। তারপরও বলেন, ‘আপনার কাগজের প্রতিবেদনে আমার মানহানি হয়েছে। আমি একটা মানহানির মামলা করব।’ আমি মামলার ঝামেলা এড়াতে চাই। হঠাৎ জোঁকের মুখে লবণ দিলে জোঁক শেষ! মকবুল সাহেবকে ঠান্ডা করার জন্য আমি একটা গল্প ফাঁদি। বলি, ‘কাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা তখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন) এবং অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে আমার একটি বৈঠক আছে...।’
আমার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই মকবুল সাহেব বিগলিত কণ্ঠে বলেন, ‘এই তো দেখেন দাদা। আমরা হলাম এক মত-পথের লোক। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকা উচিত নয়!’ বুঝতে পারি ওষুধ কাজে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মিটিংয়ের কথা শুনে মকবুল সাহেব হয়তো ভেবেছেন তাঁর প্রসঙ্গ যদি আমি সেখানে তুলি!
আমার মিটিং ছিল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছিলাম জোঁকের মুখে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য এবং সত্যি তাতে কাজ হয়। মকবুল সাহেব ভয় দেখানো বন্ধ করে বললেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে দাদা। আপনি আর এটা বাড়াইয়েন না। আমিও পোলাপানগো ঠান্ডা থাকতে কমু।’ আমি বলি, ‘সেটাই ভালো। আপনি এটা নিয়ে কিছু করতে গেলে পত্রিকায় খবর ছাপা হবে। এখন যে বিষয়টি কম লোকে জানে, তখন নানাভাবে বেশি লোকে জানবে। এটা আপনার জন্যই অসম্মানজনক হবে।’ মকবুল সাহেব বলেন, ‘আপনার পত্রিকা ভালো হচ্ছে দাদা। চালিয়ে যান।’ পরস্পরকে শুভকামনা জানিয়ে আমাদের ফোনালাপ শেষ হয়। আমি আমার বুক থেকে ভয়ের বোঝা নামিয়ে ফেলে স্বস্তি বোধ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১৯ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১৯ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
২০ ঘণ্টা আগে