ড. মো. ফখরুল ইসলাম
শহরের বা উঁচু এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে বসন্তের আমেজ বইছে। শিশুরা মাঠে নেমে লাফালাফি করছে, খেলছে, গল্প করছে। ওদের দীর্ঘদিনের সরাসরি বলার মতো আলাপন জমে ছিল প্রিয় বন্ধুদের জন্য। শিক্ষার্থীদের এই আনন্দ করার বিষয়টি খুব ভালো লাগছে। গণমাধ্যমে সেগুলোর ছবি খুব দ্রুত প্রচারের ব্যবস্থাও হয়ে যাচ্ছে।
বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত নদীপারের বা গ্রামাঞ্চলের শিক্ষালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা। তাঁদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে প্রতিষ্ঠান খোলার দিনে একটি পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হয়েছে এক উপজেলার কলেজমাঠে থইথই পানি। বড় বিল্ডিংয়ের নিচতলার প্রতিটি কক্ষে পানি। পাশের টিনের তৈরি ঘরের সব শ্রেণিকক্ষে হাঁটুপানি। চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ সবকিছুই পানিতে ভাসমান। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের পৌর এলাকাসহ আটটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী। স্বভাবতই সেখানকার ১০৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রথম দিনে খোলেনি। রাস্তাঘাটে পানি থাকায় যোগাযোগ বন্ধ (ইত্তেফাক ১২.০৯. ২০২১)।
উজানের নদীগুলো দিয়ে দিনদিন পানি নামতে থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় দুই দিন আগে নদীতীরবর্তী সব প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বন্যার পানি জমে ছিল। স্কুলের মাঠে কোমরপানি। কিছু শিশু কলাগাছের তৈরি ভেলায় চড়ে স্কুলের মাঠে গিয়ে নিজের প্রিয় স্কুলঘরের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছিল, পানিতে বসার বেঞ্চ পচে নষ্ট হয়ে যাবে না তো? সেদিন সংবাদে বলা হয়েছিল, সেসব জেলায় ১৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে। গত সপ্তাহে দেশের প্রায় ৪০টি জেলায় বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যার পানি উজানের বা উত্তরের বাড়িঘর-শিক্ষালয়, আবাদ লন্ডভন্ড করে এখন দক্ষিণের পানে ধেয়ে চলেছে। নদীভাঙন এখনো উজানে থামেনি। তার পূর্বেই ভাটিতে ভাসাচ্ছে বন্যা ও ভাঙছে নদীপাড়।
তার ওপর ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। বড় বড় নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে। প্রবল স্রোতের কারণে নদীতে ঘূর্ণিপাক হওয়ায় নদী পারাপার করে এক তীরের শিক্ষার্থী বাচ্চারা অপর তীরের শিক্ষালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁশের সাঁকো ও কালভার্ট ধসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এখন দক্ষিণের বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বরগুনার আমতলী প্রভৃতি এলাকায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। চার উপজেলার অর্ধশত বসতবাড়ি পানির নিচে। রোপা আমন ধান, বীজতলাসহ শাকসবজি পচে গেছে। পানির নিচে থাকা গ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।
মজার ব্যাপার হলো, শহরের শিক্ষালয় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হলেও গণমাধ্যমে গ্রামের বন্যাকবলিত বিপর্যস্ত শিক্ষালয়ের করুণ দশা খুব সামান্যই প্রচারিত হচ্ছে। নদীভাঙনে দিশেহারা বাঁধে বা রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া মানুষ এখনো নিজ ডেরায় ফিরতে পারেনি। কারণ, ওদের চরম দুর্ভাগ্য হলো, অনেকের বসতভিটা এখন মাঝনদীতে অথই দরিয়ার মধ্যে নিপতিত হয়ে গেছে। তারা ফিরবে কোথায়? তাদের পোষ্যরা বিপর্যস্ত, সর্বস্বান্ত। ওরা পোশাক, পুস্তক কিছুই সঙ্গে আনেনি। তারা শিক্ষালয়ে যাবে কীভাবে?
প্রায় দুই বছর শিক্ষাবিচ্ছিন্ন থাকার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ভুলে গেছে। অনেকে ইতিমধ্যে কর্মজীবী শিশুদের খাতায় নাম লিখিয়েছে। পুরান ঢাকার একটি অবৈধ নকল জুস তৈরির কারখানায় কর্মরত ৮০টি শিশু এবং একটি পোশাক তৈরির কারখানায় অসংখ্য শিশুকে সেদিন একটি টিভি চ্যানেলে দেখানো হলো। তারা নদীভাঙনের শিকার হয়ে পেটের দায়ে গ্রাম থেকে সেখানে এসে কাজ নিয়েছে। শিশুদের এসব কাজ করা অবৈধ কি না, তা তারা মোটেও জানে না। আর জানলেই বা কী হবে? তাদের ক্ষুধার অন্ন কে দেবে? এমন আক্ষেপ ও ক্ষোভ শোনা গেল কারও কারও মুখে। এসব কর্মজীবী শিশু কি আর ফিরতে পারবে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে?
করোনা, বন্যা ও ডেঙ্গুর কারণে কতসংখ্যক শিক্ষার্থীর আর কখনো শিক্ষালয়ে যাওয়া হয়ে উঠবে না, তা আর কিছুদিন পর মেগা জরিপ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়, মক্তব, হাফেজখানা, এতিমখানা, মাদ্রাসা ইত্যাদি থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকেরাও বিদায় নিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা জীবনের প্রয়োজনে, সংসারের দায়ে পেশা বদল করে ভিন্ন শহরে চলে গেছেন পরিবার ছেড়ে। জীবন-জীবিকার তাগিদে এ ধরনের মাইগ্রেশন দেশের গণশিক্ষাব্যবস্থাকে ভারসাম্যহীন করতে খুব ক্ষতিকারক বলে চিহ্নিত করতে হবে। গ্রামের একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক পেটের দায়ে পেশা বদল করে অন্যত্র চলে গেলে আমাদের গ্রামের আধুনিকায়ন করার নীতি কাগুজে বাঘ হিসেবে পড়ে থাকবে। গ্রামের সেই অজ্ঞানতার অন্ধকারের কালিমা ঘোচাবে কে, কীভাবে?
করোনা অতিমারি ও বর্তমান বন্যায় নতুন করে সৃষ্ট লাখ লাখ কর্মজীবী শিশুকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এটা নিয়ে বিষোদ্গারের ব্রিফিং দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করলে আমাদের শিক্ষার হার নিম্নমুখী
হয়ে পড়বে। সেটা সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে।
আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, খুলে দেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করে শিশু মনস্তত্ত্ব উপেক্ষা করে পড়ার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। মা-বাবা বেশি পড়ার জন্য চাপ দেবেন শিশুদের। অন্যদিকে শিক্ষকেরা অল্প সময়ে বেশি শেখাতে চাইবেন। এ জন্য হয়তো প্রাইভেট টিউশনি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, বেশি করে জ্ঞান গিলিয়ে এত দিনের পড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার নাম করে।
এ বিষয়টিতে শিক্ষক, অভিভাবক ও সরকারি নীতিনির্ধারকদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
আরও একটি জরুরি বিষয় হলো, করোনা ও ডেঙ্গু আবার বেড়ে গেলে পুনরায় শিক্ষালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই ভীতিতে শিশুদের বোঝা বোঝা হোমওয়ার্কের লোড যেন দেওয়া না হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে বাচ্চাদের ভার বইবার ক্ষমতা ও সহনশীলতা মেনে এগোতে হবে।
যে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম: বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে শিক্ষালয় খোলা ও বন্ধ রাখা বা থাকা নিয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে যেন ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এমনিতেই বন্যায় পানিবন্দী শিক্ষালয়ে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা সংকটে দিনাতিপাত করছেন।
তাঁদের কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ যেন মনের মধ্যে বৈষম্য ও বঞ্চনার গভীর ক্ষত সৃষ্টি না করে, সে জন্য বিকল্প উপায়ে তাদের এসব ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে উপযোজন লাভ (অ্যাডাপ্টেশন) করার উৎসাহ ও প্রণোদনামূলক আর্থসামাজিক কর্মসূচি খুব দ্রুত হাতে নিয়ে নৈতিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
লেখক: অধ্যাপক ও ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শহরের বা উঁচু এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে বসন্তের আমেজ বইছে। শিশুরা মাঠে নেমে লাফালাফি করছে, খেলছে, গল্প করছে। ওদের দীর্ঘদিনের সরাসরি বলার মতো আলাপন জমে ছিল প্রিয় বন্ধুদের জন্য। শিক্ষার্থীদের এই আনন্দ করার বিষয়টি খুব ভালো লাগছে। গণমাধ্যমে সেগুলোর ছবি খুব দ্রুত প্রচারের ব্যবস্থাও হয়ে যাচ্ছে।
বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত নদীপারের বা গ্রামাঞ্চলের শিক্ষালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা। তাঁদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে প্রতিষ্ঠান খোলার দিনে একটি পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হয়েছে এক উপজেলার কলেজমাঠে থইথই পানি। বড় বিল্ডিংয়ের নিচতলার প্রতিটি কক্ষে পানি। পাশের টিনের তৈরি ঘরের সব শ্রেণিকক্ষে হাঁটুপানি। চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ সবকিছুই পানিতে ভাসমান। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের পৌর এলাকাসহ আটটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী। স্বভাবতই সেখানকার ১০৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রথম দিনে খোলেনি। রাস্তাঘাটে পানি থাকায় যোগাযোগ বন্ধ (ইত্তেফাক ১২.০৯. ২০২১)।
উজানের নদীগুলো দিয়ে দিনদিন পানি নামতে থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় দুই দিন আগে নদীতীরবর্তী সব প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বন্যার পানি জমে ছিল। স্কুলের মাঠে কোমরপানি। কিছু শিশু কলাগাছের তৈরি ভেলায় চড়ে স্কুলের মাঠে গিয়ে নিজের প্রিয় স্কুলঘরের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছিল, পানিতে বসার বেঞ্চ পচে নষ্ট হয়ে যাবে না তো? সেদিন সংবাদে বলা হয়েছিল, সেসব জেলায় ১৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে। গত সপ্তাহে দেশের প্রায় ৪০টি জেলায় বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যার পানি উজানের বা উত্তরের বাড়িঘর-শিক্ষালয়, আবাদ লন্ডভন্ড করে এখন দক্ষিণের পানে ধেয়ে চলেছে। নদীভাঙন এখনো উজানে থামেনি। তার পূর্বেই ভাটিতে ভাসাচ্ছে বন্যা ও ভাঙছে নদীপাড়।
তার ওপর ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। বড় বড় নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে। প্রবল স্রোতের কারণে নদীতে ঘূর্ণিপাক হওয়ায় নদী পারাপার করে এক তীরের শিক্ষার্থী বাচ্চারা অপর তীরের শিক্ষালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁশের সাঁকো ও কালভার্ট ধসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এখন দক্ষিণের বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বরগুনার আমতলী প্রভৃতি এলাকায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। চার উপজেলার অর্ধশত বসতবাড়ি পানির নিচে। রোপা আমন ধান, বীজতলাসহ শাকসবজি পচে গেছে। পানির নিচে থাকা গ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।
মজার ব্যাপার হলো, শহরের শিক্ষালয় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হলেও গণমাধ্যমে গ্রামের বন্যাকবলিত বিপর্যস্ত শিক্ষালয়ের করুণ দশা খুব সামান্যই প্রচারিত হচ্ছে। নদীভাঙনে দিশেহারা বাঁধে বা রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া মানুষ এখনো নিজ ডেরায় ফিরতে পারেনি। কারণ, ওদের চরম দুর্ভাগ্য হলো, অনেকের বসতভিটা এখন মাঝনদীতে অথই দরিয়ার মধ্যে নিপতিত হয়ে গেছে। তারা ফিরবে কোথায়? তাদের পোষ্যরা বিপর্যস্ত, সর্বস্বান্ত। ওরা পোশাক, পুস্তক কিছুই সঙ্গে আনেনি। তারা শিক্ষালয়ে যাবে কীভাবে?
প্রায় দুই বছর শিক্ষাবিচ্ছিন্ন থাকার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ভুলে গেছে। অনেকে ইতিমধ্যে কর্মজীবী শিশুদের খাতায় নাম লিখিয়েছে। পুরান ঢাকার একটি অবৈধ নকল জুস তৈরির কারখানায় কর্মরত ৮০টি শিশু এবং একটি পোশাক তৈরির কারখানায় অসংখ্য শিশুকে সেদিন একটি টিভি চ্যানেলে দেখানো হলো। তারা নদীভাঙনের শিকার হয়ে পেটের দায়ে গ্রাম থেকে সেখানে এসে কাজ নিয়েছে। শিশুদের এসব কাজ করা অবৈধ কি না, তা তারা মোটেও জানে না। আর জানলেই বা কী হবে? তাদের ক্ষুধার অন্ন কে দেবে? এমন আক্ষেপ ও ক্ষোভ শোনা গেল কারও কারও মুখে। এসব কর্মজীবী শিশু কি আর ফিরতে পারবে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে?
করোনা, বন্যা ও ডেঙ্গুর কারণে কতসংখ্যক শিক্ষার্থীর আর কখনো শিক্ষালয়ে যাওয়া হয়ে উঠবে না, তা আর কিছুদিন পর মেগা জরিপ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়, মক্তব, হাফেজখানা, এতিমখানা, মাদ্রাসা ইত্যাদি থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকেরাও বিদায় নিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা জীবনের প্রয়োজনে, সংসারের দায়ে পেশা বদল করে ভিন্ন শহরে চলে গেছেন পরিবার ছেড়ে। জীবন-জীবিকার তাগিদে এ ধরনের মাইগ্রেশন দেশের গণশিক্ষাব্যবস্থাকে ভারসাম্যহীন করতে খুব ক্ষতিকারক বলে চিহ্নিত করতে হবে। গ্রামের একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক পেটের দায়ে পেশা বদল করে অন্যত্র চলে গেলে আমাদের গ্রামের আধুনিকায়ন করার নীতি কাগুজে বাঘ হিসেবে পড়ে থাকবে। গ্রামের সেই অজ্ঞানতার অন্ধকারের কালিমা ঘোচাবে কে, কীভাবে?
করোনা অতিমারি ও বর্তমান বন্যায় নতুন করে সৃষ্ট লাখ লাখ কর্মজীবী শিশুকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এটা নিয়ে বিষোদ্গারের ব্রিফিং দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করলে আমাদের শিক্ষার হার নিম্নমুখী
হয়ে পড়বে। সেটা সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে।
আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, খুলে দেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করে শিশু মনস্তত্ত্ব উপেক্ষা করে পড়ার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। মা-বাবা বেশি পড়ার জন্য চাপ দেবেন শিশুদের। অন্যদিকে শিক্ষকেরা অল্প সময়ে বেশি শেখাতে চাইবেন। এ জন্য হয়তো প্রাইভেট টিউশনি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, বেশি করে জ্ঞান গিলিয়ে এত দিনের পড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার নাম করে।
এ বিষয়টিতে শিক্ষক, অভিভাবক ও সরকারি নীতিনির্ধারকদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
আরও একটি জরুরি বিষয় হলো, করোনা ও ডেঙ্গু আবার বেড়ে গেলে পুনরায় শিক্ষালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই ভীতিতে শিশুদের বোঝা বোঝা হোমওয়ার্কের লোড যেন দেওয়া না হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে বাচ্চাদের ভার বইবার ক্ষমতা ও সহনশীলতা মেনে এগোতে হবে।
যে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম: বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে শিক্ষালয় খোলা ও বন্ধ রাখা বা থাকা নিয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে যেন ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এমনিতেই বন্যায় পানিবন্দী শিক্ষালয়ে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা সংকটে দিনাতিপাত করছেন।
তাঁদের কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ যেন মনের মধ্যে বৈষম্য ও বঞ্চনার গভীর ক্ষত সৃষ্টি না করে, সে জন্য বিকল্প উপায়ে তাদের এসব ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে উপযোজন লাভ (অ্যাডাপ্টেশন) করার উৎসাহ ও প্রণোদনামূলক আর্থসামাজিক কর্মসূচি খুব দ্রুত হাতে নিয়ে নৈতিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
লেখক: অধ্যাপক ও ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৩ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৪ ঘণ্টা আগে