মর্তুজা হাসান সৈকত
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। তাঁদের হাড়ভাঙা খাটুনিতে আলোকিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অথচ সেই প্রবাসীদের অনেকেই ধুঁকছেন অন্ধকারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ সরকার শ্রম অভিবাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রবাসী শ্রমিকেরা নতুন করে নানাভাবে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন; বিশেষ করে করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অর্থনীতি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যাঁরা দেশের বাইরে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেন, তাঁদের জীবনেও একধরনের অনিশ্চয়তার মেঘ দেখা দিয়েছে। তদুপরি, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের করোনা-উত্তরকালের নতুন নিয়মকানুনের কারণেও প্রবাসীরা যেমন চাকরিচ্যুত হচ্ছেন, তেমনি নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে থমকে থাকা শ্রমবাজারে এ বছরের শুরুর দিকে গতি ফিরে এলেও ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের কয়েকটি দেশ অভিবাসন-প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এই খারাপ সময়েও অর্থনীতিতে সুবাতাস ছড়িয়েছে প্রবাসী আয়। বিদায়ী অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে; যা আগের বছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। যদিও এ সময়েই করোনার কারণে কয়েক লাখ প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। অন্যদিকে, যাঁরা প্রবাসে আছেন, তাঁদের অনেকেরই আয় কমে গেছে। তারপরও বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ে অনেকটা যেন জোয়ার ছিল।
দেশে রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন নতুন উচ্চতায় উঠেছে। এমনকি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবাহের কারণেই সরকার এখন অন্য দেশকে ঋণ দেওয়ার মতো সাহসও দেখিয়েছে। অন্যদিকে, করোনার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতেও বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়েছে। তদুপরি, গ্রামীণ জনপদে থাকা প্রবাসীদের স্বজনেরা করোনার আর্থিক প্রভাব থেকেও রেহাই পাচ্ছেন।
দেশের অর্থনীতির চার খুঁটির অন্যতম প্রধান হচ্ছে প্রবাসে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের পাঠানো রেমিট্যান্স। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি। পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি, যন্ত্রপাতি কেনার খরচ বাদ দিলে এই খাতের আয়ের চেয়ে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। বর্তমানে পৃথিবীর ১৬৯টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ প্রবাসী কর্মরত; মানে প্রায় প্রতি ১৫ জনে ১ জন বাংলাদেশি জীবিকার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান এবং কাজ করছেন।
পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, প্রতিবছর যে ২২ লাখ কর্মপ্রত্যাশী দেশের শ্রমবাজারে যোগ হন, সেখান থেকে প্রায় গড়ে ৭ লাখের মতো কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান দেশের বাইরে। এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে। এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন অন্তত ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি। আরব আমিরাতে (ইউএই) আছেন ১৫ লাখ। ওমান আর মালয়েশিয়ায় আছেন ১০ লাখের বেশি। এরপর কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, বাহরাইনে বেশি শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডায়ও বেশ ভালোসংখ্যক প্রবাসী আছেন। এ প্রতিটি দেশের অর্থনীতিই করোনাভাইরাসের প্রভাবে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যার অবধারিত প্রভাব পড়েছে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপরও।
এর ফলে চাকরি হারিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরা শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্যমতে, গত বছরের এপ্রিল থেকে গত এক বছরে চাকরি হারানোসহ নানা কারণে দেশে ফিরেছেন প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী শ্রমিক। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশফেরত এসব শ্রমিকের ৫৩ শতাংশই দিনমজুরিসহ ছোট কোনো কাজে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। বাকি ৪৭ শতাংশের আয়ের কোনো পথ নেই।
সংকটময় এই সময়ে প্রবাসীদের পাশে রাষ্ট্রসহ সবার থাকাটা জরুরি। কারণ, যাঁরা ফিরে আসছেন, তাঁদের আর্থিক ক্ষতির কোনো শেষ নেই। তাঁদের অনেকেই পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লোন নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই টাকা শোধ না হতেই ফিরে আসতে হচ্ছে। অনেকেই আবার ফ্রি ভিসায় গিয়েছিলেন, ফলে তাঁদের কোনো নিয়োগকর্তা নেই। অন্যদিকে লকডাউন থাকার ফলে ভিসা নবায়ন করতে না পেরে খালি হাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। এর ফলে পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিক নানা রকম সমস্যার মুখে পড়ছেন তাঁরা। যাঁরা ঋণ নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা পড়েছেন ভয়াবহ চাপে।
কাজ হারিয়ে ফেরা বিশাল এই প্রবাসী জনবলের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থান তৈরি করাও নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন কাজ। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরও কয়েকটি সংস্থার সহায়তায় ব্র্যাকের উদ্যোগে বিদেশফেরত ৭ হাজার ২৫০ জন কর্মীকে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছিল। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সরকারও ২০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। ৪ শতাংশ সুদে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ওই ঋণের অর্থ বিতরণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কাগজপত্রসংক্রান্ত জটিলতা ও নানা শর্তের বেড়াজালে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এককালীন আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি অন্য সমর্থনমূলক উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একনেক সভায় বলেছেন, প্রবাসীরা এত দিন অর্থ পাঠিয়ে দেশকে অনেক দিয়েছেন, এবার দেশ তাঁদের দেবে। তাঁদের প্রয়োজনে সম্ভব সবকিছু করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ জন্য একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ছাড়াও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া প্রবাসীদের কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়া টাকাও এসব প্রত্যাবাসিত শ্রমিকদের জন্য ব্যয়ের আরেকটি উৎস হতে পারে। একজন প্রবাসী বিদেশে যাওয়ার সময় তিন হাজার টাকা প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়ে যান, বছরে সেই তহবিলে প্রায় ২২৫-২৫০ কোটি টাকা জমা হয়। গত ১০-১২ বছরে সেই তহবিলে দুই-আড়াই হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে।
মনে রাখতে হবে, মানুষ খুব একটা দায়ে না পড়লে নিজস্ব বাড়িঘর, আত্মীয়স্বজন, ভাষা-সংস্কৃতি ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমান না। যাঁরা যান, তাঁরা নিতান্ত দায়ে পড়েই যান। কিন্তু এই অভিবাসী কর্মজীবীদের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। ঘাম ও অশ্রু মেশানো রেমিট্যান্স সরবরাহ করে দেশের অর্থনীতিতে শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করাতে বছরের পর বছর ধরে তাঁরা ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে তাঁদের অনেকেই আজ তীব্র মানবিক সংকটে।
করোনাকালে মানবিক সংকটে ভোগা এই অভিবাসী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যেটা উপলব্ধি করেছেন, সেটা অনেকেরই মনের কথা। তাঁরা দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন, এখন তাঁদের জীবনকে নিরাপদ ও স্বস্তিকর করে তুলতে রাষ্ট্র ও সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক—প্রত্যাশা এটাই।
লেখক: কবি, কলামিস্ট
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। তাঁদের হাড়ভাঙা খাটুনিতে আলোকিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অথচ সেই প্রবাসীদের অনেকেই ধুঁকছেন অন্ধকারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ সরকার শ্রম অভিবাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রবাসী শ্রমিকেরা নতুন করে নানাভাবে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন; বিশেষ করে করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অর্থনীতি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যাঁরা দেশের বাইরে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেন, তাঁদের জীবনেও একধরনের অনিশ্চয়তার মেঘ দেখা দিয়েছে। তদুপরি, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের করোনা-উত্তরকালের নতুন নিয়মকানুনের কারণেও প্রবাসীরা যেমন চাকরিচ্যুত হচ্ছেন, তেমনি নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে থমকে থাকা শ্রমবাজারে এ বছরের শুরুর দিকে গতি ফিরে এলেও ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের কয়েকটি দেশ অভিবাসন-প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এই খারাপ সময়েও অর্থনীতিতে সুবাতাস ছড়িয়েছে প্রবাসী আয়। বিদায়ী অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে; যা আগের বছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। যদিও এ সময়েই করোনার কারণে কয়েক লাখ প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। অন্যদিকে, যাঁরা প্রবাসে আছেন, তাঁদের অনেকেরই আয় কমে গেছে। তারপরও বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ে অনেকটা যেন জোয়ার ছিল।
দেশে রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন নতুন উচ্চতায় উঠেছে। এমনকি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবাহের কারণেই সরকার এখন অন্য দেশকে ঋণ দেওয়ার মতো সাহসও দেখিয়েছে। অন্যদিকে, করোনার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতেও বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়েছে। তদুপরি, গ্রামীণ জনপদে থাকা প্রবাসীদের স্বজনেরা করোনার আর্থিক প্রভাব থেকেও রেহাই পাচ্ছেন।
দেশের অর্থনীতির চার খুঁটির অন্যতম প্রধান হচ্ছে প্রবাসে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের পাঠানো রেমিট্যান্স। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি। পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি, যন্ত্রপাতি কেনার খরচ বাদ দিলে এই খাতের আয়ের চেয়ে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। বর্তমানে পৃথিবীর ১৬৯টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ প্রবাসী কর্মরত; মানে প্রায় প্রতি ১৫ জনে ১ জন বাংলাদেশি জীবিকার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান এবং কাজ করছেন।
পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, প্রতিবছর যে ২২ লাখ কর্মপ্রত্যাশী দেশের শ্রমবাজারে যোগ হন, সেখান থেকে প্রায় গড়ে ৭ লাখের মতো কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান দেশের বাইরে। এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে। এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন অন্তত ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি। আরব আমিরাতে (ইউএই) আছেন ১৫ লাখ। ওমান আর মালয়েশিয়ায় আছেন ১০ লাখের বেশি। এরপর কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, বাহরাইনে বেশি শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডায়ও বেশ ভালোসংখ্যক প্রবাসী আছেন। এ প্রতিটি দেশের অর্থনীতিই করোনাভাইরাসের প্রভাবে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যার অবধারিত প্রভাব পড়েছে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপরও।
এর ফলে চাকরি হারিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরা শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্যমতে, গত বছরের এপ্রিল থেকে গত এক বছরে চাকরি হারানোসহ নানা কারণে দেশে ফিরেছেন প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী শ্রমিক। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশফেরত এসব শ্রমিকের ৫৩ শতাংশই দিনমজুরিসহ ছোট কোনো কাজে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। বাকি ৪৭ শতাংশের আয়ের কোনো পথ নেই।
সংকটময় এই সময়ে প্রবাসীদের পাশে রাষ্ট্রসহ সবার থাকাটা জরুরি। কারণ, যাঁরা ফিরে আসছেন, তাঁদের আর্থিক ক্ষতির কোনো শেষ নেই। তাঁদের অনেকেই পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লোন নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই টাকা শোধ না হতেই ফিরে আসতে হচ্ছে। অনেকেই আবার ফ্রি ভিসায় গিয়েছিলেন, ফলে তাঁদের কোনো নিয়োগকর্তা নেই। অন্যদিকে লকডাউন থাকার ফলে ভিসা নবায়ন করতে না পেরে খালি হাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। এর ফলে পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিক নানা রকম সমস্যার মুখে পড়ছেন তাঁরা। যাঁরা ঋণ নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা পড়েছেন ভয়াবহ চাপে।
কাজ হারিয়ে ফেরা বিশাল এই প্রবাসী জনবলের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থান তৈরি করাও নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন কাজ। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরও কয়েকটি সংস্থার সহায়তায় ব্র্যাকের উদ্যোগে বিদেশফেরত ৭ হাজার ২৫০ জন কর্মীকে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছিল। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সরকারও ২০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। ৪ শতাংশ সুদে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ওই ঋণের অর্থ বিতরণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কাগজপত্রসংক্রান্ত জটিলতা ও নানা শর্তের বেড়াজালে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এককালীন আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি অন্য সমর্থনমূলক উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একনেক সভায় বলেছেন, প্রবাসীরা এত দিন অর্থ পাঠিয়ে দেশকে অনেক দিয়েছেন, এবার দেশ তাঁদের দেবে। তাঁদের প্রয়োজনে সম্ভব সবকিছু করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ জন্য একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ছাড়াও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া প্রবাসীদের কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়া টাকাও এসব প্রত্যাবাসিত শ্রমিকদের জন্য ব্যয়ের আরেকটি উৎস হতে পারে। একজন প্রবাসী বিদেশে যাওয়ার সময় তিন হাজার টাকা প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়ে যান, বছরে সেই তহবিলে প্রায় ২২৫-২৫০ কোটি টাকা জমা হয়। গত ১০-১২ বছরে সেই তহবিলে দুই-আড়াই হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে।
মনে রাখতে হবে, মানুষ খুব একটা দায়ে না পড়লে নিজস্ব বাড়িঘর, আত্মীয়স্বজন, ভাষা-সংস্কৃতি ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমান না। যাঁরা যান, তাঁরা নিতান্ত দায়ে পড়েই যান। কিন্তু এই অভিবাসী কর্মজীবীদের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। ঘাম ও অশ্রু মেশানো রেমিট্যান্স সরবরাহ করে দেশের অর্থনীতিতে শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করাতে বছরের পর বছর ধরে তাঁরা ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে তাঁদের অনেকেই আজ তীব্র মানবিক সংকটে।
করোনাকালে মানবিক সংকটে ভোগা এই অভিবাসী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যেটা উপলব্ধি করেছেন, সেটা অনেকেরই মনের কথা। তাঁরা দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন, এখন তাঁদের জীবনকে নিরাপদ ও স্বস্তিকর করে তুলতে রাষ্ট্র ও সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক—প্রত্যাশা এটাই।
লেখক: কবি, কলামিস্ট
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ দিন আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১ দিন আগে