বিজন সাহা
অনেক দিন পর ভালোদিয়ার সঙ্গে দেখা। ও আমার ল্যাবেই কাজ করে।
–টিকা নিয়েছ?
–না, এখনো নিইনি। আমার তো করোনা হয়েছিল, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই নেব।
এ এক নতুন বাস্তবতা। কেউ আর কেমন আছ জিজ্ঞেস করে না, যেন টিকা ছাড়া ভালো থাকা যায় না।
–তুমি যে বেঁচে আছ, তা দেখে খুব ভালো লাগছে।
আমি বুঝলাম ও আমাকে কিছুদিন আগে মারা গেছে—এমন একজনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছে। আসলে আমাদের আসল পরিচয় গায়ের রঙে বা দেশের নামে। আমারও এমন হয়, অনেককে নামে চিনি, অনেককে মুখে। খুব কম মানুষকেই নামে ও মুখে চিনি। তাই কেউ মারা গেলে কত মুখ যে চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়!
–কি আর করা? কেউ বাঁচবে, কেউ মরবে। সময়ই এমন।
–কারমা (ওরা কর্মকে কারমা বলে)। ওর কারমা ছিল এখানে এভাবে মরার, তাই মরেছে।
–জানো কর্ম কি?
–এটা সেই শক্তি, যা আমাদের জীবনের ভালোমন্দ নির্ধারণ করে, যার হাত থেকে মুক্তি নেই।
–শোনো, শত হলেও আমি উপমহাদেশের লোক। কর্মের মূল অর্থ হলো কাজ, অ্যাকশন। জানোই তো, আমি কসমোলজির ওপর কাজ করি। আমাদের বর্তমান বলে কিছু নেই। সেটা একটা ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত। অতীত থেকে সময় ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সঙ্গে আমরাও। এই যে আমরা এখন এখানে, সেটা আমাদের অ্যাকশনের ফল। আমরা অফিস থেকে হাঁটা শুরু করেছি আর তার ফলে এখানে এসেছি। আমাদের প্রতিটি বর্তমান, তথা ভবিষ্যৎ আমাদের অতীত কর্মের ফল। এটাই কর্মের মেসেজ। যাকগে, টিকা নিয়েছ?
–না। আমার খুব একটা বিশ্বাস নেই আমাদের টিকার ওপর।
–দ্যাখ, টিকা তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস না করতে পার; কিন্তু বিজ্ঞানকে তো পার।
–আমার ধারণা, আমাদের আমলারা নিজেরা বিদেশি টিকা নিয়ে আমাদের এসব দিচ্ছেন।
আসলে সোভিয়েত আমল ও পরবর্তীকালে আমলাদের ওপর এমন অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, ওপর থেকে কিছু বললেই এরা সতর্ক হয়ে যায়, ভাবে আবার কোনো ফন্দি আঁটছে।
–সেটা বুঝলাম, তবে এই যে এত লোক মারা যাচ্ছে, সেটা তো অস্বীকার করতে পার না। পরিচিত কত লোকই তো নিচ্ছে। তাদের তো সমস্যা হচ্ছে না।
–আমার মনে হয় না করোনায় এত মানুষ মারা যাচ্ছে। অন্য কোনো কারণে মারা গেলেও ডাক্তাররা রিপোর্টে লেখে করোনায় মারা গেছে। তাতে ওরা এক্সট্রা পয়সা পায়।
–বলো কী? আমি কিন্তু হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তারদের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি দেখিনি।
–আমার শ্বশুর হাসপাতালে কাজ করেন। তাঁরাও আপ্রাণ চেষ্টা করেন রোগীকে সাহায্য করতে। সবাই তো এক রকম নন।
আমি কথা বাড়ালাম না। আসলে অবিশ্বাস যখন খুব গভীর হয়, তখন মানুষ নিজের ভালোমন্দও বোঝে না। তবে মৃত্যুর সামনে সব সাহস কর্পূরের মতো উবে যায়। অনেক আগে টিকা বাজারে এলেও কেউ তেমন একটা গা করেনি নেওয়ার। এখন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। ভালো হতো, যদি বাইরের টিকা এখানে নিয়ে আসত। নিজেদের টিকা আগের মতোই ফ্রি আর বাইরের টিকা টাকার বিনিময়ে। যাঁর যেটা খুশি নিত, অন্তত তাতে ভ্যাক্সিনেটেড লোকসংখ্যা বাড়ত। যদিও সারা বিশ্বে টিকা আশানুরূপ কাজ করছে না। মানে আমেরিকাসহ অনেক দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির উপযোগীসংখ্যক মানুষ টিকা নেওয়ার পরও সংক্রমণ বাড়ছে। আর পোশাক বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মডেল বদলানোর মতো করোনাভাইরাসও রূপ বদলে টিকার ফেস কন্ট্রোল এড়িয়ে মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ছে। তবু স্বীকার করতেই হবে, এখন পর্যন্ত টিকাই করোনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা। তবে টিকার সঙ্গে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও প্রয়োজন।
লেখক: গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা, রাশিয়া
অনেক দিন পর ভালোদিয়ার সঙ্গে দেখা। ও আমার ল্যাবেই কাজ করে।
–টিকা নিয়েছ?
–না, এখনো নিইনি। আমার তো করোনা হয়েছিল, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই নেব।
এ এক নতুন বাস্তবতা। কেউ আর কেমন আছ জিজ্ঞেস করে না, যেন টিকা ছাড়া ভালো থাকা যায় না।
–তুমি যে বেঁচে আছ, তা দেখে খুব ভালো লাগছে।
আমি বুঝলাম ও আমাকে কিছুদিন আগে মারা গেছে—এমন একজনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছে। আসলে আমাদের আসল পরিচয় গায়ের রঙে বা দেশের নামে। আমারও এমন হয়, অনেককে নামে চিনি, অনেককে মুখে। খুব কম মানুষকেই নামে ও মুখে চিনি। তাই কেউ মারা গেলে কত মুখ যে চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়!
–কি আর করা? কেউ বাঁচবে, কেউ মরবে। সময়ই এমন।
–কারমা (ওরা কর্মকে কারমা বলে)। ওর কারমা ছিল এখানে এভাবে মরার, তাই মরেছে।
–জানো কর্ম কি?
–এটা সেই শক্তি, যা আমাদের জীবনের ভালোমন্দ নির্ধারণ করে, যার হাত থেকে মুক্তি নেই।
–শোনো, শত হলেও আমি উপমহাদেশের লোক। কর্মের মূল অর্থ হলো কাজ, অ্যাকশন। জানোই তো, আমি কসমোলজির ওপর কাজ করি। আমাদের বর্তমান বলে কিছু নেই। সেটা একটা ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত। অতীত থেকে সময় ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সঙ্গে আমরাও। এই যে আমরা এখন এখানে, সেটা আমাদের অ্যাকশনের ফল। আমরা অফিস থেকে হাঁটা শুরু করেছি আর তার ফলে এখানে এসেছি। আমাদের প্রতিটি বর্তমান, তথা ভবিষ্যৎ আমাদের অতীত কর্মের ফল। এটাই কর্মের মেসেজ। যাকগে, টিকা নিয়েছ?
–না। আমার খুব একটা বিশ্বাস নেই আমাদের টিকার ওপর।
–দ্যাখ, টিকা তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস না করতে পার; কিন্তু বিজ্ঞানকে তো পার।
–আমার ধারণা, আমাদের আমলারা নিজেরা বিদেশি টিকা নিয়ে আমাদের এসব দিচ্ছেন।
আসলে সোভিয়েত আমল ও পরবর্তীকালে আমলাদের ওপর এমন অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, ওপর থেকে কিছু বললেই এরা সতর্ক হয়ে যায়, ভাবে আবার কোনো ফন্দি আঁটছে।
–সেটা বুঝলাম, তবে এই যে এত লোক মারা যাচ্ছে, সেটা তো অস্বীকার করতে পার না। পরিচিত কত লোকই তো নিচ্ছে। তাদের তো সমস্যা হচ্ছে না।
–আমার মনে হয় না করোনায় এত মানুষ মারা যাচ্ছে। অন্য কোনো কারণে মারা গেলেও ডাক্তাররা রিপোর্টে লেখে করোনায় মারা গেছে। তাতে ওরা এক্সট্রা পয়সা পায়।
–বলো কী? আমি কিন্তু হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তারদের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি দেখিনি।
–আমার শ্বশুর হাসপাতালে কাজ করেন। তাঁরাও আপ্রাণ চেষ্টা করেন রোগীকে সাহায্য করতে। সবাই তো এক রকম নন।
আমি কথা বাড়ালাম না। আসলে অবিশ্বাস যখন খুব গভীর হয়, তখন মানুষ নিজের ভালোমন্দও বোঝে না। তবে মৃত্যুর সামনে সব সাহস কর্পূরের মতো উবে যায়। অনেক আগে টিকা বাজারে এলেও কেউ তেমন একটা গা করেনি নেওয়ার। এখন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। ভালো হতো, যদি বাইরের টিকা এখানে নিয়ে আসত। নিজেদের টিকা আগের মতোই ফ্রি আর বাইরের টিকা টাকার বিনিময়ে। যাঁর যেটা খুশি নিত, অন্তত তাতে ভ্যাক্সিনেটেড লোকসংখ্যা বাড়ত। যদিও সারা বিশ্বে টিকা আশানুরূপ কাজ করছে না। মানে আমেরিকাসহ অনেক দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির উপযোগীসংখ্যক মানুষ টিকা নেওয়ার পরও সংক্রমণ বাড়ছে। আর পোশাক বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মডেল বদলানোর মতো করোনাভাইরাসও রূপ বদলে টিকার ফেস কন্ট্রোল এড়িয়ে মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ছে। তবু স্বীকার করতেই হবে, এখন পর্যন্ত টিকাই করোনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা। তবে টিকার সঙ্গে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও প্রয়োজন।
লেখক: গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা, রাশিয়া
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১০ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১০ ঘণ্টা আগে