বিভুরঞ্জন সরকার
গণতন্ত্র নিয়ে অতি মাতামাতি করতেন না আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউ। তিনি ব্যক্তির অবাধ স্বাধীনতারও পক্ষে ছিলেন বলে মনে হয় না। ১৯৮৬ সালে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রায়ই নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ শুনতে হয়। আমি ন্যূনতম অনুতাপ ছাড়াই বলছি যে, আমরা আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না, আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতি করতে পারতাম না, যদি আমরা মানুষের খুব ব্যক্তিগত বিষয়গুলোয় নাক না গলাতাম। কে আপনার প্রতিবেশী, আপনি কীভাবে জীবনযাপন করেন, আপনি যেসব শব্দ ব্যবহার করেন, আপনি কীভাবে থুতু ফেলেন কিংবা আপনি কোন ভাষা ব্যবহার করেন—এর সবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর কোনটা সঠিক, আমরা তা নির্ধারণ করে দিই।’
আমাদের দেশে কোনো সরকার যদি এমন নাগরিক অধিকারবিরোধী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে সে সরকারকে গদি থেকে টেনে নামাতে পথে নেমে পড়বে সবাই। সিঙ্গাপুরের মানুষ কি তাহলে অধিকার সচেতন নন? তারা কি নিয়ন্ত্রক সরকার ব্যবস্থা পছন্দ করেন? না, ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। সেখানকার মানুষ দেখেছেন, সরকার যে উদ্যোগ নেয় সেটা সমষ্টির স্বার্থে, জনকল্যাণে। সবার স্বার্থ যেখানে নিহিত, সেখানে বিরোধিতা করা তো আত্মঘাতী। গণতন্ত্রের নামে স্বেচ্ছাচারিতা এবং জনদুর্ভোগ মানুষ সমর্থন করেনি বলেই লি কুয়ান তাঁর মতো করে দেশটিকে পরিচালিত করতে পেরেছেন। তিনি কর্তৃত্ববাদী, স্বেচ্ছাচারী—এসব সমালোচনা তাঁর বিরুদ্ধে আছে।
লি কুয়ান ১৯৯৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা পশ্চিমের ব্যাপারে অনুদার নই। আমরা যদি পশ্চিমের ভালো দিকগুলো অনুসরণ না করতাম, তাহলে আমরা আমাদের পশ্চাৎপদতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম না। আমরা একটা পশ্চাৎপদ অর্থনীতি নিয়ে একটা পশ্চাৎপদ সমাজ হিসেবেই থেকে যেতাম। তবে আমরা পশ্চিমের সবকিছু হুবহু অনুকরণ করি না।’
ভালো এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে পেরে মন্দটাকে বর্জন করে ভালোটাকে গ্রহণ করতে পারাই সিঙ্গাপুরের সাফল্যের জাদুকাঠি।
লি কুয়ান বলছেন, ‘আমাকে একটা উদাহরণ দিয়ে আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে পুরো পার্থক্যটা বোঝাতে দিন। আমেরিকায় ভয়াবহ মাদক সমস্যা আছে। তারা কীভাবে এর সমাধান করছে? এটা সারা দুনিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে যাচ্ছে এবং জোগান বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরে এমন কোনো সুযোগ নেই। আমরা যা করতে পারি, তা হলো একটি আইন পাস করা। যে আইনে বলা আছে, যেকোনো কাস্টমস কিংবা পুলিশ কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে কাউকে সন্দেহজনক আচরণ করতে দেখলে, তিনি ওই ব্যক্তির প্রস্রাব পরীক্ষা করাবেন। যদি মাদকের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আমেরিকায় এটা করলে তার অর্থ দাঁড়াবে, আপনি ব্যক্তি অধিকারে হস্তক্ষেপ করছেন এবং আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
লি কুয়ান সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সম-অংশীদারত্বভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক একটি সমাজ গড়তে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু অর্থনীতির বিকাশের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগের বিকাশ এবং প্রণোদনার প্রয়োজন ছিল।
লি কুয়ান বলেছেন, ‘সবার কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা সমান নয়। এ ক্ষেত্রে যদি কর্মদক্ষতার আলোকে বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাপ্যতা নির্ধারিত হয়, তাহলে কেউ অধিক লাভবান হবেন, কেউ বা মাঝারি লাভবান হবেন এবং ব্যাপকসংখ্যক মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এতে করে সামাজিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
লি কুয়ান তাই রাষ্ট্রের অর্জিত সম্পদ সমভাবে বণ্টনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের অর্জিত সম্পদ বিতরণে সমবণ্টনের নীতি অনুসরণ না করতাম, তাহলে আমাদের জাতীয় সংহতির অনুভূতি দুর্বল হয়ে যেত এবং একটি সুনির্দিষ্ট অভীষ্টে চলার পথে হোঁচট খেতে হতো। আমি ব্যক্তিবিশেষের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে গোষ্ঠীসংহতির স্বার্থে তাওইজমের প্রতীক, তথা দুটি মাছের মাধ্যমে একটি চক্রসদৃশ সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলেছিলাম। এর একটি মাছ ছিল পুরুষসদৃশ এবং অন্যটি নারী। এ ক্ষেত্রে পুরুষ মাছটি যদি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে সবকিছু অর্জন করে নিত, তাহলে সামাজিক সংহতি দুর্বল হয়ে যেত, যে কারণে ভারসাম্য তথা সামাজিক সংহতি রক্ষার্থে আমরা নারী মাছটির অনুকূলেও সম্পদের অংশবিশেষ বিতরণ করেছিলাম।’
বৈষম্য দূর করে সমতার সুযোগ অবারিত করলে মানুষ কেন সরকারের বিরোধিতা করবে?
গণতন্ত্র নিয়ে অতি মাতামাতি করতেন না আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউ। তিনি ব্যক্তির অবাধ স্বাধীনতারও পক্ষে ছিলেন বলে মনে হয় না। ১৯৮৬ সালে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রায়ই নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ শুনতে হয়। আমি ন্যূনতম অনুতাপ ছাড়াই বলছি যে, আমরা আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না, আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতি করতে পারতাম না, যদি আমরা মানুষের খুব ব্যক্তিগত বিষয়গুলোয় নাক না গলাতাম। কে আপনার প্রতিবেশী, আপনি কীভাবে জীবনযাপন করেন, আপনি যেসব শব্দ ব্যবহার করেন, আপনি কীভাবে থুতু ফেলেন কিংবা আপনি কোন ভাষা ব্যবহার করেন—এর সবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর কোনটা সঠিক, আমরা তা নির্ধারণ করে দিই।’
আমাদের দেশে কোনো সরকার যদি এমন নাগরিক অধিকারবিরোধী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে সে সরকারকে গদি থেকে টেনে নামাতে পথে নেমে পড়বে সবাই। সিঙ্গাপুরের মানুষ কি তাহলে অধিকার সচেতন নন? তারা কি নিয়ন্ত্রক সরকার ব্যবস্থা পছন্দ করেন? না, ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। সেখানকার মানুষ দেখেছেন, সরকার যে উদ্যোগ নেয় সেটা সমষ্টির স্বার্থে, জনকল্যাণে। সবার স্বার্থ যেখানে নিহিত, সেখানে বিরোধিতা করা তো আত্মঘাতী। গণতন্ত্রের নামে স্বেচ্ছাচারিতা এবং জনদুর্ভোগ মানুষ সমর্থন করেনি বলেই লি কুয়ান তাঁর মতো করে দেশটিকে পরিচালিত করতে পেরেছেন। তিনি কর্তৃত্ববাদী, স্বেচ্ছাচারী—এসব সমালোচনা তাঁর বিরুদ্ধে আছে।
লি কুয়ান ১৯৯৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা পশ্চিমের ব্যাপারে অনুদার নই। আমরা যদি পশ্চিমের ভালো দিকগুলো অনুসরণ না করতাম, তাহলে আমরা আমাদের পশ্চাৎপদতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম না। আমরা একটা পশ্চাৎপদ অর্থনীতি নিয়ে একটা পশ্চাৎপদ সমাজ হিসেবেই থেকে যেতাম। তবে আমরা পশ্চিমের সবকিছু হুবহু অনুকরণ করি না।’
ভালো এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে পেরে মন্দটাকে বর্জন করে ভালোটাকে গ্রহণ করতে পারাই সিঙ্গাপুরের সাফল্যের জাদুকাঠি।
লি কুয়ান বলছেন, ‘আমাকে একটা উদাহরণ দিয়ে আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে পুরো পার্থক্যটা বোঝাতে দিন। আমেরিকায় ভয়াবহ মাদক সমস্যা আছে। তারা কীভাবে এর সমাধান করছে? এটা সারা দুনিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে যাচ্ছে এবং জোগান বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরে এমন কোনো সুযোগ নেই। আমরা যা করতে পারি, তা হলো একটি আইন পাস করা। যে আইনে বলা আছে, যেকোনো কাস্টমস কিংবা পুলিশ কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে কাউকে সন্দেহজনক আচরণ করতে দেখলে, তিনি ওই ব্যক্তির প্রস্রাব পরীক্ষা করাবেন। যদি মাদকের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আমেরিকায় এটা করলে তার অর্থ দাঁড়াবে, আপনি ব্যক্তি অধিকারে হস্তক্ষেপ করছেন এবং আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
লি কুয়ান সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সম-অংশীদারত্বভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক একটি সমাজ গড়তে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু অর্থনীতির বিকাশের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগের বিকাশ এবং প্রণোদনার প্রয়োজন ছিল।
লি কুয়ান বলেছেন, ‘সবার কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা সমান নয়। এ ক্ষেত্রে যদি কর্মদক্ষতার আলোকে বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাপ্যতা নির্ধারিত হয়, তাহলে কেউ অধিক লাভবান হবেন, কেউ বা মাঝারি লাভবান হবেন এবং ব্যাপকসংখ্যক মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এতে করে সামাজিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
লি কুয়ান তাই রাষ্ট্রের অর্জিত সম্পদ সমভাবে বণ্টনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের অর্জিত সম্পদ বিতরণে সমবণ্টনের নীতি অনুসরণ না করতাম, তাহলে আমাদের জাতীয় সংহতির অনুভূতি দুর্বল হয়ে যেত এবং একটি সুনির্দিষ্ট অভীষ্টে চলার পথে হোঁচট খেতে হতো। আমি ব্যক্তিবিশেষের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে গোষ্ঠীসংহতির স্বার্থে তাওইজমের প্রতীক, তথা দুটি মাছের মাধ্যমে একটি চক্রসদৃশ সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলেছিলাম। এর একটি মাছ ছিল পুরুষসদৃশ এবং অন্যটি নারী। এ ক্ষেত্রে পুরুষ মাছটি যদি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে সবকিছু অর্জন করে নিত, তাহলে সামাজিক সংহতি দুর্বল হয়ে যেত, যে কারণে ভারসাম্য তথা সামাজিক সংহতি রক্ষার্থে আমরা নারী মাছটির অনুকূলেও সম্পদের অংশবিশেষ বিতরণ করেছিলাম।’
বৈষম্য দূর করে সমতার সুযোগ অবারিত করলে মানুষ কেন সরকারের বিরোধিতা করবে?
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
৬ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
৬ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
৬ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
৬ ঘণ্টা আগে