নূরুননবী শান্ত
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণগ্রন্থাগার, শিল্পকলা একাডেমি ইত্যাদি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে সর্বসাধারণের জ্ঞান বিস্তারের সব রকম সুযোগ শূন্যে এসে ঠেকেছে। ফলে, মানুষের নৈতিক অধঃপতন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক সংকটের চরম রূপ খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করায় আমরা কেবল ব্যক্তিগতভাবে বাঁচার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছি, সর্বজনীন সমাজের দিকে নজর দিতে সম্পূর্ণ ভুলে গেছি।
এর থেকে উত্তরণ ঘটানোর জন্য এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য একটি বিনীত প্রস্তাব পেশ করছি।
আমরা বিশ্বাস করি, মহামারি চিরস্থায়ী হবে না অথবা আমরা শিগগিরই বাধ্যতামূলক বিচ্ছিন্ন জীবন থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে পুনরায় প্রবেশ করব। কিন্তু এই যে দীর্ঘ সময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে আমরা বিরত আছি, আমাদের লোকশিল্পীরা, শিল্পই যাঁদের জীবিকা এবং যাঁরা অনাহার-অর্ধাহার থেকে মুক্তি পেতে বিকল্প পেশায় অভিযোজিত হওয়ার সংগ্রাম করতে বাধ্য হচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন মনস্তাত্ত্বিক সংকটে, তাঁদের জন্য আবার স্বরূপে ফিরে আসাটা অত সহজ হবে না। তাই, করোনা-উত্তর নতুন জীবনে জনসাধারণের চিন্তাশক্তির নবায়ন প্রয়োজন হবে এবং তা ঘটতে পারে সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের মাধ্যমে।
এ জন্য সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় ‘বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্র’ গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্র হবে একাধারে চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান এবং পঠন-পাঠন ও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার উন্মুক্ত সম্মিলন কেন্দ্র, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একাত্ম হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান। শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণেরাই সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য হলেও এখানে লেখাপড়া জানা কিংবা নিরক্ষরসহ সব বয়সী মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্রে একটি পাঠাগার অবশ্যই থাকবে। পাঠাগার কেবল কাগজের বইকেই গুরুত্ব দেবে না। অনলাইনে ও অফলাইনে ডিজিটাল বই পড়া ও কেনার সুযোগও থাকবে। একই সঙ্গে লেখাপড়া না-জানাদের জন্য থাকবে অডিও বুকের ব্যবস্থা এবং অন্তর্জালে যুক্ত থাকা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পাঠাগারের সংগ্রহ দেখার সুযোগও থাকবে সবার জন্য। বই মানে কেবল গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধের বই নয়, কৃষি, প্রযুক্তি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন, দুর্যোগ বা মহামারি মোকাবিলা—সব বিষয়ের বইকেই গুরুত্ব দিয়ে পাঠাগারে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে, পঠিত বইয়ের ওপর আলাপ-আলোচনা করার জন্য আলাদা পাঠক-আড্ডার স্থান থাকতে হবে এবং সে আড্ডায় বই পড়তে অক্ষম ব্যক্তিরাও অংশগ্রহণ করবেন। এই নৈমিত্তিক আলাপে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে অবারিত।
শিশুদের জন্য থাকবে আলাদা পাঠকক্ষ। পুরো ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় তরুণ-তরুণী এবং বয়স্ক নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে সংস্কৃতি কেন্দ্রের পাঠাগার পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
সংস্কৃতি কেন্দ্রের একটি বড় কাজ হবে লোকশিক্ষার বিস্তার ঘটানো। গ্রামবাংলার সাক্ষর-নিরক্ষরনির্বিশেষে যে মান্য মানুষেরা আছেন, তাঁরা অনেকেই কৃষি বা কুটিরশিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে থাকেন নীরবে। সংস্কৃতি কেন্দ্রে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁরা তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। অধিকন্তু আমরা জানি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে এ দেশে নানা শৈলীর ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হাজার বছর ধরে লোকশিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা পালন করে চলেছে। ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার বহু আগেই এখানে চর্যাপদের পরিবেশনা যেমন প্রচলিত ছিল, তেমনি আজও প্রবহমান আছে কবিগান, পালাগান, গম্ভীরা, যাত্রাগান, বাউলগান, পুঁথিপাঠ ইত্যাদি বহু বিচিত্র মাধ্যমে সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা। সংস্কৃতি কেন্দ্রে অবশ্যই থাকতে হবে সুপরিসর উন্মুক্ত মঞ্চ, যেখানে প্রতিটি অঞ্চলের পরিবেশনামূলক সংস্কৃতিচর্চার সময়োপযোগী সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি, সংস্কৃতি কেন্দ্রে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন মিলনায়তনও থাকতে হবে, যেখানে আধুনিক সময়ের সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, নাগরিক নাটক পরিবেশনা, চলতি স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনাময় মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন সর্বস্তরের মানুষ।
সংস্কৃতি কেন্দ্রের ভবন হবে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির পরিচয় প্রকাশক নকশাভিত্তিক। সবগুলো ভবনের নকশা একই রকমের হতে হবে, তা নয়। নদী অঞ্চল, চরাঞ্চল, হাওরাঞ্চল, পাহাড়, সমতলের আদিবাসী অঞ্চল, বিল এলাকা ইত্যাদিভেদে নকশা ভিন্ন হবে। অবশ্যই সেখানে স্থানীয় প্রকৃতির উদ্ভিদ, পাখি ইত্যাদির সমাগম থাকার পরিবেশ বজায় থাকবে। সংস্কৃতি কেন্দ্রের সঙ্গে থাকতে হবে ঘাসে ঢাকা সুপরিসর খোলা মাঠ, যা শিশু ও তরুণেরা খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করবে। সেখানে জনপ্রিয় খেলাধুলার পাশাপাশি লাঠিখেলা, হা-ডু-ডুসহ নিজ নিজ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজন করবেন স্থানীয় মানুষেরাই।
বাংলাদেশের জন্ম কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই হয়নি। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরপরই আমাদের পূর্বপুরুষেরা বুঝেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কেবল দূরত্বগত ও ক্ষমতাগত ফারাকই পাহাড়প্রমাণ নয়, সংস্কৃতিগত ফারাক অপরিমেয়। ভাষা তো বটেই, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, আচরণ সবই আলাদা। ফলে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তিতে আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছিলাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’য় আমরা দেখতে পাই যে তিনি সংস্কৃতিকে, সংগীতকে জীবন, সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করতেন। কিন্তু অর্ধশতকের স্বাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ বেশ কিছু দিকে অগ্রসরমাণ হলেও আমরা সাংস্কৃতিক পরিচয় থেকে বিচ্যুত হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছি। দোষ কেবল আকাশ সংস্কৃতি, মোবাইল ফোন ও হাতে হাতে ইন্টারনেট থাকারই নয়।
সংস্কৃতি বিকাশের যথাযথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগ আমরা যে দিইনি, তা স্বীকার করতে হবে। ফলে, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে মানুষের চেয়ে, সংস্কৃতির চেয়ে অপবিশ্বাসের ও কুতর্কের চর্চাই কেবল বাড়েনি, বেড়েছে ধনী-গরিবের ব্যবধান, গ্রামে-শহরে বৈষম্য। মানুষের মধ্যে সাম্য ও সুন্দরের চিন্তা ও চর্চার বিকাশ ঘটতে পারে একমাত্র সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে। শিশুদের হতাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে এবং কিশোর-কিশোরীদের ধ্বংসাত্মক গ্যাং গড়ে তুলতে দিয়ে আফসোস কেবল করতে হবে। ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’-এর আফসোস থেকে বেরিয়ে এসে বৃহত্তর সম্প্রীতিময় সৃষ্টিশীল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পথ হতে পারে দেশের প্রতিটি উপজেলায় বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।
লেখক: গল্পকার, অনুবাদক
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণগ্রন্থাগার, শিল্পকলা একাডেমি ইত্যাদি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে সর্বসাধারণের জ্ঞান বিস্তারের সব রকম সুযোগ শূন্যে এসে ঠেকেছে। ফলে, মানুষের নৈতিক অধঃপতন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক সংকটের চরম রূপ খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করায় আমরা কেবল ব্যক্তিগতভাবে বাঁচার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছি, সর্বজনীন সমাজের দিকে নজর দিতে সম্পূর্ণ ভুলে গেছি।
এর থেকে উত্তরণ ঘটানোর জন্য এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য একটি বিনীত প্রস্তাব পেশ করছি।
আমরা বিশ্বাস করি, মহামারি চিরস্থায়ী হবে না অথবা আমরা শিগগিরই বাধ্যতামূলক বিচ্ছিন্ন জীবন থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে পুনরায় প্রবেশ করব। কিন্তু এই যে দীর্ঘ সময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে আমরা বিরত আছি, আমাদের লোকশিল্পীরা, শিল্পই যাঁদের জীবিকা এবং যাঁরা অনাহার-অর্ধাহার থেকে মুক্তি পেতে বিকল্প পেশায় অভিযোজিত হওয়ার সংগ্রাম করতে বাধ্য হচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন মনস্তাত্ত্বিক সংকটে, তাঁদের জন্য আবার স্বরূপে ফিরে আসাটা অত সহজ হবে না। তাই, করোনা-উত্তর নতুন জীবনে জনসাধারণের চিন্তাশক্তির নবায়ন প্রয়োজন হবে এবং তা ঘটতে পারে সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের মাধ্যমে।
এ জন্য সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় ‘বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্র’ গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্র হবে একাধারে চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান এবং পঠন-পাঠন ও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার উন্মুক্ত সম্মিলন কেন্দ্র, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একাত্ম হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান। শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণেরাই সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য হলেও এখানে লেখাপড়া জানা কিংবা নিরক্ষরসহ সব বয়সী মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্রে একটি পাঠাগার অবশ্যই থাকবে। পাঠাগার কেবল কাগজের বইকেই গুরুত্ব দেবে না। অনলাইনে ও অফলাইনে ডিজিটাল বই পড়া ও কেনার সুযোগও থাকবে। একই সঙ্গে লেখাপড়া না-জানাদের জন্য থাকবে অডিও বুকের ব্যবস্থা এবং অন্তর্জালে যুক্ত থাকা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পাঠাগারের সংগ্রহ দেখার সুযোগও থাকবে সবার জন্য। বই মানে কেবল গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধের বই নয়, কৃষি, প্রযুক্তি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন, দুর্যোগ বা মহামারি মোকাবিলা—সব বিষয়ের বইকেই গুরুত্ব দিয়ে পাঠাগারে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে, পঠিত বইয়ের ওপর আলাপ-আলোচনা করার জন্য আলাদা পাঠক-আড্ডার স্থান থাকতে হবে এবং সে আড্ডায় বই পড়তে অক্ষম ব্যক্তিরাও অংশগ্রহণ করবেন। এই নৈমিত্তিক আলাপে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে অবারিত।
শিশুদের জন্য থাকবে আলাদা পাঠকক্ষ। পুরো ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় তরুণ-তরুণী এবং বয়স্ক নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে সংস্কৃতি কেন্দ্রের পাঠাগার পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
সংস্কৃতি কেন্দ্রের একটি বড় কাজ হবে লোকশিক্ষার বিস্তার ঘটানো। গ্রামবাংলার সাক্ষর-নিরক্ষরনির্বিশেষে যে মান্য মানুষেরা আছেন, তাঁরা অনেকেই কৃষি বা কুটিরশিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে থাকেন নীরবে। সংস্কৃতি কেন্দ্রে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁরা তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। অধিকন্তু আমরা জানি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে এ দেশে নানা শৈলীর ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হাজার বছর ধরে লোকশিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা পালন করে চলেছে। ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার বহু আগেই এখানে চর্যাপদের পরিবেশনা যেমন প্রচলিত ছিল, তেমনি আজও প্রবহমান আছে কবিগান, পালাগান, গম্ভীরা, যাত্রাগান, বাউলগান, পুঁথিপাঠ ইত্যাদি বহু বিচিত্র মাধ্যমে সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা। সংস্কৃতি কেন্দ্রে অবশ্যই থাকতে হবে সুপরিসর উন্মুক্ত মঞ্চ, যেখানে প্রতিটি অঞ্চলের পরিবেশনামূলক সংস্কৃতিচর্চার সময়োপযোগী সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি, সংস্কৃতি কেন্দ্রে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন মিলনায়তনও থাকতে হবে, যেখানে আধুনিক সময়ের সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, নাগরিক নাটক পরিবেশনা, চলতি স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনাময় মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন সর্বস্তরের মানুষ।
সংস্কৃতি কেন্দ্রের ভবন হবে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির পরিচয় প্রকাশক নকশাভিত্তিক। সবগুলো ভবনের নকশা একই রকমের হতে হবে, তা নয়। নদী অঞ্চল, চরাঞ্চল, হাওরাঞ্চল, পাহাড়, সমতলের আদিবাসী অঞ্চল, বিল এলাকা ইত্যাদিভেদে নকশা ভিন্ন হবে। অবশ্যই সেখানে স্থানীয় প্রকৃতির উদ্ভিদ, পাখি ইত্যাদির সমাগম থাকার পরিবেশ বজায় থাকবে। সংস্কৃতি কেন্দ্রের সঙ্গে থাকতে হবে ঘাসে ঢাকা সুপরিসর খোলা মাঠ, যা শিশু ও তরুণেরা খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করবে। সেখানে জনপ্রিয় খেলাধুলার পাশাপাশি লাঠিখেলা, হা-ডু-ডুসহ নিজ নিজ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজন করবেন স্থানীয় মানুষেরাই।
বাংলাদেশের জন্ম কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই হয়নি। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরপরই আমাদের পূর্বপুরুষেরা বুঝেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কেবল দূরত্বগত ও ক্ষমতাগত ফারাকই পাহাড়প্রমাণ নয়, সংস্কৃতিগত ফারাক অপরিমেয়। ভাষা তো বটেই, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, আচরণ সবই আলাদা। ফলে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তিতে আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছিলাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’য় আমরা দেখতে পাই যে তিনি সংস্কৃতিকে, সংগীতকে জীবন, সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করতেন। কিন্তু অর্ধশতকের স্বাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ বেশ কিছু দিকে অগ্রসরমাণ হলেও আমরা সাংস্কৃতিক পরিচয় থেকে বিচ্যুত হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছি। দোষ কেবল আকাশ সংস্কৃতি, মোবাইল ফোন ও হাতে হাতে ইন্টারনেট থাকারই নয়।
সংস্কৃতি বিকাশের যথাযথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগ আমরা যে দিইনি, তা স্বীকার করতে হবে। ফলে, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে মানুষের চেয়ে, সংস্কৃতির চেয়ে অপবিশ্বাসের ও কুতর্কের চর্চাই কেবল বাড়েনি, বেড়েছে ধনী-গরিবের ব্যবধান, গ্রামে-শহরে বৈষম্য। মানুষের মধ্যে সাম্য ও সুন্দরের চিন্তা ও চর্চার বিকাশ ঘটতে পারে একমাত্র সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে। শিশুদের হতাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে এবং কিশোর-কিশোরীদের ধ্বংসাত্মক গ্যাং গড়ে তুলতে দিয়ে আফসোস কেবল করতে হবে। ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’-এর আফসোস থেকে বেরিয়ে এসে বৃহত্তর সম্প্রীতিময় সৃষ্টিশীল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পথ হতে পারে দেশের প্রতিটি উপজেলায় বহুমুখী সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।
লেখক: গল্পকার, অনুবাদক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২১ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১ দিন আগে