অর্ণব সান্যাল
একদিকে বাজারের উত্তাপ গনগনে উনুনে রূপ নিচ্ছে। অন্যদিকে আমরা বারংবার শুনে চলেছি সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার নিদান। জনগণকে নসিহত দেওয়া হচ্ছে বুঝে-শুনে খরচ করার। এই প্রেসক্রিপশন দেনেওয়ালারা সব ক্ষেত্রে সেটি মেনে চলার কথা বলছেন তো?
জনগণকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলা হচ্ছে বর্তমান বাজারের অবস্থা নিয়েই। সরকারের পক্ষে মন্ত্রী পর্যায় থেকেই এমন উপদেশ আমরা পাচ্ছি সম্প্রতি। খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন আহ্বান জানানোর খবর সংবাদমাধ্যমেও এসেছে। হ্যাঁ, বিশ্ব বাজারের অবস্থা সত্যিই ভালো নয়। বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ বলছেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা প্রবলভাবেই আছে। এর মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটকে। বলা হচ্ছে, এই সংকটের কারণে পুরো পৃথিবীতেই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে খাদ্যসংকট দেখা দেওয়াও বিচিত্র নয়। বিশ্বায়নের তোড়ে সেই সংকট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যেতেও সময় লাগবে না। এরই মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্যও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
অস্থিরতার সেই ধাক্কা আসছে আমাদের দেশেও। ডলারের দাম বাড়ছে হু হু করে। আর ঠিক তখনই সাধারণ জনগণের পকেটে টান পড়ছে। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, দাম বাড়ার দৌড়ে চাল-ডাল-তেলের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে অন্যান্য সব পণ্য। কীসের দাম বাড়েনি! এক মাসের ব্যবধানে সুগন্ধি সাবান, কাপড় কাচার পাউডার, হেয়ার ওয়েল, হ্যান্ডওয়াশ, বিস্কুট, গুঁড়ো দুধ, পাউরুটি, চানাচুর, এয়ারফ্রেশনার, অ্যারোসলসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেকে যে ইসবগুলের ভুসি খান, বাদ যায়নি তার দামও। একটু মৌজ করে চানাচুর খেতে চাওয়াতেও এখন সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে। প্যাকেটজাত বিস্কুট, পাউরুটি ও চানাচুরের দাম বেড়ে গেছে। এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও এখন কম পয়সায় মিলবে না! কারণ টিস্যু, এয়ারফ্রেশনার, অ্যারোসল ও টয়লেট ক্লিনারের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
এই সকল পণ্যের দাম আসলেই বিশ্বায়িত সংকটের কারণে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে কি না, তা নিয়ে যদিও জনগণের সংশয় আছে। হাটে-বাজারে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে গিয়ে মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষ কখনোই পুরোপুরি বৈশ্বিক সংকট বলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দেখানো কারণগুলোর ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। এ দেশের ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনও বলছে, পণ্যবাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে সব জায়গায় লাগামহীনভাবে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
বাজারের অস্থিরতা নিয়ে সাধারণের এই সংশয় বা আস্থাহীনতা কেন তৈরি হয়? এর জন্য বেশি দূরে যেতে হবে না। মোটে এক মাস আগের সয়াবিন তেল সংকটের কথা মাথায় নিলেই হবে। ওই সময় যেভাবে বাজার থেকে তেলের বোতল হাপিস করে দিয়ে তেলের লিটার প্রায় ২০০ টাকায় নেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়াটিই মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। ওই সময় এবং এখনো প্রায়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা লুকিয়ে থাকা ‘তেলের খনি’ আবিষ্কারের খবর পাচ্ছি। তাতে দেখা যাচ্ছে, সংকটের আগে আনা তেল বেশি লাভের আশায় কীভাবে মজুত করা হয়েছিল!
এভাবে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে পকেট কাটার যুগেই আপামর জনগণ পাচ্ছে সাশ্রয়ী হওয়ার প্রেসক্রিপশন। এমন ব্যবস্থাপত্র উচ্চপর্যায় থেকে আসা খারাপ কিছু নয়। অন্তত সাধারণেরা তখন সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু জনতার পকেট থেকে টাকা হাপিস করার যথেচ্ছাচারের এই দেশে যখন এমন প্রেসক্রিপশন আসে, তখন ক্রুদ্ধ স্বগতোক্তি মেলে অনেক। যখন জানবেন ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে কালোটাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটিতে, তখন একজন আমজনতার মনে হতেই পারে—‘বাহ্, সব সাশ্রয় তবে আমার ঘাড়েই!’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় সম্প্রতি কালোটাকার এই বিপুল হিসাব দেখানো হয়েছে। অর্থনীতি সমিতি আরও বলছে, ওই একই সময়ে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে ৮ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কালোটাকা ও অর্থপাচারে লাখ কোটির নিচে আমরা নামছিই না। অথচ দেশের বাজারে সংকট হলেই জনগণকে বলা হচ্ছে চাহিদা ‘নিচে নামাতে’।
অর্থাৎ, সংকট সৃষ্টি হলেই তার দায় পড়ছে জনগণের ওপর। কিন্তু অর্থপাচার বা কালোটাকার পাহাড় তৈরির ক্ষেত্রে আবার কর্তৃপক্ষ স্পিকটি নট। তখন কর্তৃপক্ষের ভাব, ‘দেখছি-করছি’ ঘরানার। এ দেশে কালোটাকা সাদা করার প্রশ্নহীন সুযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম এই প্রশ্নটিও করা হয় না যে, ‘টাকায় কালো রং ঢেলেছিলেন কেন?’ উল্টো সাদা করার জন্য দেওয়া হয় এন্তার সুযোগ। এভাবে কি অপরাধ সংগঠনকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে না প্রকারান্তরে?
এসব নিয়ে দেশের ভেতরে কথাও হয়েছে ঢের। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি জনগণকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার নিদান দেওয়া কর্তৃপক্ষ। উল্টো সামনে আসছে অর্থ পাচারকারীদের জন্য ‘শুভ দিন’! এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার আগামী বাজেটে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ট্যাক্স দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ বৈধ পথে দেশে আনার সুযোগ পাবেন পাচারকারীরা। তিনি একে দেখছেন বিদেশে যারা টাকা নিয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া ‘ব্যবস্থা’ হিসেবে।
আহা, এ দেশে কালোটাকার মালিক বা অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থাগুলো কতটা ‘আদুরে’! কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো শাস্তি নেই—তাদের জন্য শুধু আছে একরাশ ‘প্রণোদনা’। অনেকটা মাথায় হাত বুলিয়ে চূড়ান্ত অপরাধ করা বখে যাওয়া সন্তানের পক্ষ নেওয়ার মতো! তখন তাকে দিতে হয় সৎ পথে ফিরে আসার হাজারো সহজ পথ। একটি ভালো কাজ করলেই তখন দেওয়া হয় প্রচুর পুণ্য এবং ‘একটি কিনলে দশটি ফ্রি’ অফার! সেই অফারও আবার চলে সীমাহীন সময়ের জন্য।
আর এমন একটা দেশেই যখন সাধারণ খেটে খাওয়া এবং সাদা টাকায় চাল-গম-আটা কেনা মানুষেরা পকেট হাতড়ায়, তখন শুনতে হয় সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার স্লোগান। তেমনটা শুনে নিয়মিত আয়সহ যাবতীয় কর পরিশোধ করা আম-আদমিদের কেউ কেউ যদি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েই বসেন, তখন কি তাদের দোষ দেওয়া যায়?
না, যায় না। যদিও আমাদের শাসককূলের তাতে কিছু যায় আসে না। চালের দাম বাড়লে, তাঁরা বলবেন—বেশি ভাত খাওয়া খারাপ। মরিচের দাম বাড়লে বলবেন, ‘বেশি খাবেন না, ওতে আলসার হয়।’ সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি হলে জানিয়ে দেবেন—তেল ছাড়া রান্নার শতেক উপায়! আর ক্ষোভ-বিক্ষোভ বেশি জানালে আইনি অস্ত্র তো আছেই হরেক।
কথায় আছে, ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’। এ দেশে কর্তৃপক্ষীয়রা আমাদের পিঠের পরীক্ষা নিয়তই নিতে থাকবেন, তা তো জানাই। আবহমান ঐতিহ্য বলেও তো একটা বিষয় আছে। তবে এবার পেটের দিকটায় একটু সহৃদয় নজর দিলে খারাপ হয় না, কিংবা কানের। পিঠের ওপর অত্যাচার তখন সহ্য করাটা একটু সহজ হতো কিনা!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একদিকে বাজারের উত্তাপ গনগনে উনুনে রূপ নিচ্ছে। অন্যদিকে আমরা বারংবার শুনে চলেছি সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার নিদান। জনগণকে নসিহত দেওয়া হচ্ছে বুঝে-শুনে খরচ করার। এই প্রেসক্রিপশন দেনেওয়ালারা সব ক্ষেত্রে সেটি মেনে চলার কথা বলছেন তো?
জনগণকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলা হচ্ছে বর্তমান বাজারের অবস্থা নিয়েই। সরকারের পক্ষে মন্ত্রী পর্যায় থেকেই এমন উপদেশ আমরা পাচ্ছি সম্প্রতি। খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন আহ্বান জানানোর খবর সংবাদমাধ্যমেও এসেছে। হ্যাঁ, বিশ্ব বাজারের অবস্থা সত্যিই ভালো নয়। বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ বলছেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা প্রবলভাবেই আছে। এর মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটকে। বলা হচ্ছে, এই সংকটের কারণে পুরো পৃথিবীতেই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে খাদ্যসংকট দেখা দেওয়াও বিচিত্র নয়। বিশ্বায়নের তোড়ে সেই সংকট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যেতেও সময় লাগবে না। এরই মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্যও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
অস্থিরতার সেই ধাক্কা আসছে আমাদের দেশেও। ডলারের দাম বাড়ছে হু হু করে। আর ঠিক তখনই সাধারণ জনগণের পকেটে টান পড়ছে। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, দাম বাড়ার দৌড়ে চাল-ডাল-তেলের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে অন্যান্য সব পণ্য। কীসের দাম বাড়েনি! এক মাসের ব্যবধানে সুগন্ধি সাবান, কাপড় কাচার পাউডার, হেয়ার ওয়েল, হ্যান্ডওয়াশ, বিস্কুট, গুঁড়ো দুধ, পাউরুটি, চানাচুর, এয়ারফ্রেশনার, অ্যারোসলসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেকে যে ইসবগুলের ভুসি খান, বাদ যায়নি তার দামও। একটু মৌজ করে চানাচুর খেতে চাওয়াতেও এখন সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে। প্যাকেটজাত বিস্কুট, পাউরুটি ও চানাচুরের দাম বেড়ে গেছে। এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও এখন কম পয়সায় মিলবে না! কারণ টিস্যু, এয়ারফ্রেশনার, অ্যারোসল ও টয়লেট ক্লিনারের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
এই সকল পণ্যের দাম আসলেই বিশ্বায়িত সংকটের কারণে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে কি না, তা নিয়ে যদিও জনগণের সংশয় আছে। হাটে-বাজারে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে গিয়ে মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষ কখনোই পুরোপুরি বৈশ্বিক সংকট বলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দেখানো কারণগুলোর ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। এ দেশের ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনও বলছে, পণ্যবাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে সব জায়গায় লাগামহীনভাবে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
বাজারের অস্থিরতা নিয়ে সাধারণের এই সংশয় বা আস্থাহীনতা কেন তৈরি হয়? এর জন্য বেশি দূরে যেতে হবে না। মোটে এক মাস আগের সয়াবিন তেল সংকটের কথা মাথায় নিলেই হবে। ওই সময় যেভাবে বাজার থেকে তেলের বোতল হাপিস করে দিয়ে তেলের লিটার প্রায় ২০০ টাকায় নেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়াটিই মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। ওই সময় এবং এখনো প্রায়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা লুকিয়ে থাকা ‘তেলের খনি’ আবিষ্কারের খবর পাচ্ছি। তাতে দেখা যাচ্ছে, সংকটের আগে আনা তেল বেশি লাভের আশায় কীভাবে মজুত করা হয়েছিল!
এভাবে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে পকেট কাটার যুগেই আপামর জনগণ পাচ্ছে সাশ্রয়ী হওয়ার প্রেসক্রিপশন। এমন ব্যবস্থাপত্র উচ্চপর্যায় থেকে আসা খারাপ কিছু নয়। অন্তত সাধারণেরা তখন সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু জনতার পকেট থেকে টাকা হাপিস করার যথেচ্ছাচারের এই দেশে যখন এমন প্রেসক্রিপশন আসে, তখন ক্রুদ্ধ স্বগতোক্তি মেলে অনেক। যখন জানবেন ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে কালোটাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটিতে, তখন একজন আমজনতার মনে হতেই পারে—‘বাহ্, সব সাশ্রয় তবে আমার ঘাড়েই!’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় সম্প্রতি কালোটাকার এই বিপুল হিসাব দেখানো হয়েছে। অর্থনীতি সমিতি আরও বলছে, ওই একই সময়ে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে ৮ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কালোটাকা ও অর্থপাচারে লাখ কোটির নিচে আমরা নামছিই না। অথচ দেশের বাজারে সংকট হলেই জনগণকে বলা হচ্ছে চাহিদা ‘নিচে নামাতে’।
অর্থাৎ, সংকট সৃষ্টি হলেই তার দায় পড়ছে জনগণের ওপর। কিন্তু অর্থপাচার বা কালোটাকার পাহাড় তৈরির ক্ষেত্রে আবার কর্তৃপক্ষ স্পিকটি নট। তখন কর্তৃপক্ষের ভাব, ‘দেখছি-করছি’ ঘরানার। এ দেশে কালোটাকা সাদা করার প্রশ্নহীন সুযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম এই প্রশ্নটিও করা হয় না যে, ‘টাকায় কালো রং ঢেলেছিলেন কেন?’ উল্টো সাদা করার জন্য দেওয়া হয় এন্তার সুযোগ। এভাবে কি অপরাধ সংগঠনকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে না প্রকারান্তরে?
এসব নিয়ে দেশের ভেতরে কথাও হয়েছে ঢের। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি জনগণকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার নিদান দেওয়া কর্তৃপক্ষ। উল্টো সামনে আসছে অর্থ পাচারকারীদের জন্য ‘শুভ দিন’! এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার আগামী বাজেটে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ট্যাক্স দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ বৈধ পথে দেশে আনার সুযোগ পাবেন পাচারকারীরা। তিনি একে দেখছেন বিদেশে যারা টাকা নিয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া ‘ব্যবস্থা’ হিসেবে।
আহা, এ দেশে কালোটাকার মালিক বা অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থাগুলো কতটা ‘আদুরে’! কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো শাস্তি নেই—তাদের জন্য শুধু আছে একরাশ ‘প্রণোদনা’। অনেকটা মাথায় হাত বুলিয়ে চূড়ান্ত অপরাধ করা বখে যাওয়া সন্তানের পক্ষ নেওয়ার মতো! তখন তাকে দিতে হয় সৎ পথে ফিরে আসার হাজারো সহজ পথ। একটি ভালো কাজ করলেই তখন দেওয়া হয় প্রচুর পুণ্য এবং ‘একটি কিনলে দশটি ফ্রি’ অফার! সেই অফারও আবার চলে সীমাহীন সময়ের জন্য।
আর এমন একটা দেশেই যখন সাধারণ খেটে খাওয়া এবং সাদা টাকায় চাল-গম-আটা কেনা মানুষেরা পকেট হাতড়ায়, তখন শুনতে হয় সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার স্লোগান। তেমনটা শুনে নিয়মিত আয়সহ যাবতীয় কর পরিশোধ করা আম-আদমিদের কেউ কেউ যদি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েই বসেন, তখন কি তাদের দোষ দেওয়া যায়?
না, যায় না। যদিও আমাদের শাসককূলের তাতে কিছু যায় আসে না। চালের দাম বাড়লে, তাঁরা বলবেন—বেশি ভাত খাওয়া খারাপ। মরিচের দাম বাড়লে বলবেন, ‘বেশি খাবেন না, ওতে আলসার হয়।’ সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি হলে জানিয়ে দেবেন—তেল ছাড়া রান্নার শতেক উপায়! আর ক্ষোভ-বিক্ষোভ বেশি জানালে আইনি অস্ত্র তো আছেই হরেক।
কথায় আছে, ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’। এ দেশে কর্তৃপক্ষীয়রা আমাদের পিঠের পরীক্ষা নিয়তই নিতে থাকবেন, তা তো জানাই। আবহমান ঐতিহ্য বলেও তো একটা বিষয় আছে। তবে এবার পেটের দিকটায় একটু সহৃদয় নজর দিলে খারাপ হয় না, কিংবা কানের। পিঠের ওপর অত্যাচার তখন সহ্য করাটা একটু সহজ হতো কিনা!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১৯ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
২০ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
২০ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
২০ ঘণ্টা আগে