সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ছয় দফা ঘোষণার পর শেখ মুজিব কারারুদ্ধ হন; তবে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থাতেও ৭ জুন আওয়ামী লীগ যে হরতালের ডাক দেয়, সেটিকে সফল করার পেছনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কৃতিত্ব ছিল সর্বাধিক। হরতালের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। শ্রমিকেরা এসে যোগ দিয়েছেন। এত দিন আওয়ামী লীগের কোনো শ্রমিক সংগঠন ছিল না; সিরাজুল আলম খান উদ্যোগী হয়ে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করেছিলেন, যার দরুন মিছিলে ও হরতালে শ্রমিকেরা যুক্ত হয়েছেন। জনমনে আইয়ুববিরোধী অসন্তোষ ছিল ধূমায়িত। হরতালের ডাক সেই অসন্তোষ প্রকাশের একটি সুযোগ এনে দিল। হরতালের সময় সরকারি হিসাবেই পুলিশের গুলিবর্ষণে ১০ জন প্রাণ হারায়। সংবাদপত্রে স্বাধীনভাবে কোনো রিপোর্ট ছাপা সম্ভব ছিল না, তাই শুধু প্রেসনোটই ছাপা হয়। তা ছাড়া, প্রায় সব পত্রিকারই অবস্থান ছিল ছয় দফার বিরুদ্ধে। এমনকি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখপাত্র বলে স্বীকৃত ইত্তেফাকও শুরুতে ছয় দফার ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়নি। ইত্তেফাকে ছয় দফা ঘোষণার খবরটি ছাপা হয়েছিল দায়সারা গোছে, প্রথম পৃষ্ঠার মাঝামাঝি এক কলামে, অল্প কয়েকটি লাইনে; শিরোনাম ছিল ‘শেখ মুজিবের ৬ দফা’।
পরে অবশ্য ইত্তেফাক ছয় দফার সমর্থনে লেখা শুরু করে। ধারণা করা হয় যে এর পেছনে ছিল গ্রেপ্তারের আগে শেখ মুজিবের ইত্তেফাক কার্যালয়ে যাওয়া ও সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা। ছয় দফার পক্ষে সমর্থন লাভের জন্য তাঁর বহুমুখী তৎপরতার ওটি ছিল একটি জরুরি অংশ।
কারাবন্দী হওয়ার আগে তিনি যেমন জনসভা করেছেন, তেমনি প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে ব্যস্ত ছিলেন ব্যক্তিগত যোগাযোগের তৎপরতায়। তাঁর জন্য রাজনীতি ছিল সার্বক্ষণিক কাজ। ছয় দফার পক্ষে ইত্তেফাকের এই অবস্থান গ্রহণের মাশুল প্রদানে অবশ্য বিলম্ব ঘটেনি। জুন মাসের ১৬ তারিখেই ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া গ্রেপ্তার হন এবং পরের দিন পত্রিকাটির ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার ফলে কেবল দৈনিক ইত্তেফাক নয়, সাপ্তাহিক ঢাকা টাইমস ও সাপ্তাহিক পূর্বাণীর প্রকাশনাও বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় গণহারে চলতে থাকে। গভর্নর মোনায়েম খান যতভাবে পারা যায় ছয় দফাকে মুছে ফেলবার চেষ্টা করতে থাকেন।
এবং যতই তাঁর চেষ্টা বৃদ্ধি পায়, ততই ছয় দফা জনপ্রিয় হতে থাকে। যেন তিনি শেখ মুজিবের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, নিজের অজান্তে। ইত্তেফাকের ওপর ওই হামলার প্রতিবাদ অন্যরা তেমন একটা না করতে পারলেও সাংবাদিকেরা ও সংবাদপত্রকর্মীরা কিন্তু করেছিলেন; ২২ জুন ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় সব পত্রিকা ধর্মঘটে গিয়েছিল।
ছয় দফার পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন সংগ্রহের জন্য সিরাজুল আলম খান বাম রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসব উদ্যোগের ফলাফল সম্পর্কে পরে তিনি জানিয়েছেনও। মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির (রুশপন্থী) ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক; তিনি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেছেন বটে, তবে ছয় দফাকে আন্দোলনের মূল বিষয় করতে সম্মত হননি। চীনপন্থী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন ছিল; কিন্তু সেটাও তিনি করেছিলেন, মোহাম্মদ তোয়াহা ও আবদুল হকের সঙ্গে তিনি গোপনে মিলিত হন। তাঁরা তাঁকে যা বলেন তার সারমর্ম হলো, পূর্ব পাকিস্তান অবশ্যই স্বাধীন হবে এবং স্বাধীনতার পক্ষেই তাঁরা কাজ করছেন, তবে ‘৬ দফা দিয়ে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে কিংবা ভারত বা আমেরিকার লেজুড়বৃত্তি করে সে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়।’ ছাত্রলীগের এই নেতা আরও লক্ষ করেছেন যে সে সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিক বাঙালির স্বাধীনতার পক্ষে কোনো প্রবন্ধ, নাটক ও উপন্যাস লেখেননি। এঁদের কাজ দালালির পর্যায়ে পড়ে বলে তাঁর মনে হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্তরে যে ঐক্য গড়া সম্ভব হয়নি, সেটা কিন্তু ছাত্রদের স্তরে গড়ে উঠেছিল। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী শিক্ষা আন্দোলন যে অভিজ্ঞতা, সেটা নিকট ঐতিহ্য হিসেবে ছাত্রদের ভেতর প্রবহমান ছিল; স্বায়ত্তশাসনের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা সেটাও তীব্র হয়ে উঠেছিল, আইয়ুবি-মোনায়েমি দুঃশাসন দুর্বিষহ আকার নিচ্ছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলছিল। ফলে সমাজের সবচেয়ে সচেতন ও সংবেদনশীল যে অংশ সেই ছাত্রদের ভেতর সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আগ্রহটা শক্তিশালী রূপ নিচ্ছিল। এই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্ররাও সরকারবিরোধী আন্দোলনে চলে এসেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনের অবশ্য একটা গুণগত পার্থক্য ছিল; সেটা এই যে, পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা চাইছিল পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং প্রকারান্তরে গোটা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী পাকিস্তানি রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন; পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের আন্দোলনের লক্ষ্য সে তুলনায় ছিল সীমিত, তারা তাদের ওপর সরকারি অত্যাচার-অবিচারের অবসান ও নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছিল। তবে তাদের সে আন্দোলনও ক্রমাগত তীব্র হচ্ছিল। সরকারি দমন-পীড়নও সমানে ঘটছিল। এবং পূর্ব–পশ্চিমে আওয়াজটা ছিল একই। সেটা হলো আইয়ুবি দুঃশাসনের অবসান চাই।
পূর্ববঙ্গে ছাত্রদের ঐক্যের পথে প্রাথমিক অন্তরায়টা ছিল কিন্তু আবার ওই ছয় দফাই। ছাত্র ইউনিয়ন ততদিনে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে তারাই ছিল প্রধান শক্তি; বিভক্ত অবস্থাতেও তারা ছাত্রলীগের তুলনায় অধিক প্রভাবশালী ছিল বৈকি। ছয় দফা সম্পর্কে বাম রাজনৈতিক নেতাদের যে আপত্তি, সেটা ছাত্র ইউনিয়নের উভয় অংশেরই ছিল, যদিও রুশপন্থী অংশ চরিত্রগতভাবেই ছিল কিছুটা আপসপন্থী। বেশ কিছু দর-কষাকষির পর জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল, যার দলিল হচ্ছে এগারো দফা। বামপন্থীরা ছয় দফাতে আপত্তি করেনি, পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন তারা অবশ্যই চায়, কিন্তু তাদের লক্ষ্য ছিল আরও সম্প্রসারিত। ছয় দফার সঙ্গে তারা যুক্ত করতে চেয়েছে মেহনতি মানুষের অধিকার, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা এবং এক ইউনিটের বিলুপ্তি। ছাত্রলীগের বক্তব্য ছিল, পূর্ব বাংলার মূল সমস্যা হচ্ছে স্বায়ত্তশাসন, তাই অন্যসব প্রশ্ন আপাতত অপ্রাসঙ্গিক, সেগুলো পরে দেখা যাবে। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতায় তাদের আপত্তির সূত্র হয়তো ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি মার্কিন আনুকূল্য লাভের সম্ভাবনা। আর এক ইউনিট ভাঙতে আপত্তির পেছনে হয়তো এই জ্ঞান কাজ করেছে যে ওটি আওয়ামী লীগের ‘কার্যকর’ নেতা সোহরাওয়ার্দীর সমর্থনেই ১৯৫৬ সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। অনেকটা তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘অর্জন’। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মীমাংসা হয়েছে, এগারো দফা প্রণীত হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের উভয় অংশ, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংঘের (ডাকসু) সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে সময়ে ডাকসুর সহসভাপতি ছিলেন ছাত্রলীগের এবং সাধারণ সম্পাদক সরকার-সমর্থক জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের (এনএসএফ)। সরকার-সমর্থকদের মধ্যে একটি অংশ যে তখন কিছুটা স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে চাচ্ছিল এনএসএফ-এর সম্মতি তারই ইঙ্গিতবহ। ১১ দফা গ্রহণ করে সমাজতন্ত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হলো জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে। ১১ দফার ৩ নম্বর দফায় ছয় দফাকে হুবহু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ৪ নম্বর দফায় বলা হয়, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুসহ সকল প্রদেশের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করত সাব-ফেডারেশন গঠন’ চাই। অর্থাৎ এক ইউনিট থাকবে না। এই দফাটির সঙ্গে ন্যাপের দেওয়া চৌদ্দ দফার একেবারে প্রথম দফাটির মিলটা লক্ষ করবার মতো। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ‘সংস্কৃতি ও ভাষায় সমতা এবং ভৌগোলিক সংলগ্নতার ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশসমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসাবে পুনর্গঠন’ করতে হবে। অর্থাৎ এক ইউনিট বিলুপ্ত হবে, আর তার জায়গাতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলো একটি ‘আঞ্চলিক ফেডারেশন’ গঠন করবে। পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে ন্যাপের চৌদ্দ দফায় বলা হয়েছিল, ‘পাকিস্তানকে সিয়াটো ও সেন্টো হইতে সদস্যপদ প্রত্যাহার করিতে হইবে।’ ছাত্রসমাজের এগারো দফাতেও ঠিক একই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, যদিও একটু ভিন্ন ভাষাতে; বলা হয়েছে, ‘সিয়াটো, সেন্টো, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করিয়া জোট-বহির্ভূত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি কায়েম করিতে হইবে’।
দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের এগারো দফা আওয়ামী লীগের ছয় দফার তুলনায় ভাসানী ন্যাপের চৌদ্দ দফার বরঞ্চ কাছাকাছি। কিন্তু এগারো দফার ভিত্তিতেই যেহেতু আন্দোলন হয়েছে, চৌদ্দ দফার ভিত্তিতে হয়নি, চৌদ্দ দফা তাই ইতিহাসের অন্তর্গত হলেও লোকচক্ষুর আড়ালেই চলে গেছে।
এরই মধ্যে আবার আট দফাও এসেছিল। দিয়েছে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)। এটি ছিল আট দলের একটি জোট। ডাকের আট দফাতে পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের উল্লেখ নেই, যেমন উল্লেখ নেই পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভাঙার দাবির। আট দফা পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে একেবারেই নীরব। এই নীরবতা জানিয়ে দেয় যে আইয়ুবের পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ডাকের দাবিনামায় যা আছে তা হলো: ১. ফেডারেল পদ্ধতির পার্লামেন্টারি সরকার; ২. সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন; ৩. অবিলম্বে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার; ৪. পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রবর্তন এবং ১৯৬১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স এবং বিনা বিচারের আটক ব্যবস্থার সকল কালাকানুন বাতিল; ৫. শেখ মুজিব, খান ওয়ালী খান ও জেড এ ভুট্টোসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি এবং কোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে রাজনৈতিক মামলাসহ সকল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার; ৬. ১৪৪ ধারা মোতাবেক সকল অগণতান্ত্রিক নির্দেশ প্রত্যাহার; ৭. শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার প্রত্যর্পণ; এবং ৮. সংবাদপত্রের ওপর আরোপিত সকল বিধিনিষেধ ও পত্রিকা প্রকাশের ওপর সকল বাধা প্রত্যাহার এবং ‘ইত্তেফাক’ ‘চাট্টাম’, ‘প্রগ্রেসিভ পেপারস লিমিটেড ও সকল প্রেস, পত্রিকা ও সাময়িকীসহ যে সকল প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেগুলো মূল মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ।
ডাক-এর এই আট দফা দাবিনামা ঘোষণা করা হয় ১৯৬৯-এর ৮ জানুয়ারি; ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা ঘোষণার তিন দিন পরে। ছাত্রদের ১১ দফার সঙ্গে ডাকের আট দফার পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট। ডাক যা চাইছে তা কোনো মৌলিক পরিবর্তন নয়; স্বায়ত্তশাসনের কথা এতে যেমন নেই তেমনি নেই পররাষ্ট্রনীতিরও কোনো উল্লেখ। ডাক-এর মূল দাবি প্রথম দুটিই; ফেডারেল পদ্ধতির সংসদীয় সরকার ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন। ডাক-এর আট দফা ছাত্রদের ১১ দফা দাবি ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কি না, নিশ্চিত করে বলা যাবে না; তবে আট দফার ঘোষণা যে ১১ দফার পরপরই এল সে-ঘটনাকে নেহাত কাকতালীয় বলাও সম্ভব নয়। মূল বিবেচনায় আট দফা ছাত্রদের ১১ দফার বিরোধী। সেটা দাবিনামাটার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তবে কৌতূহলের বিষয় এটা যে ছাত্রদের ১১ দফায় শিক্ষাসংক্রান্ত দাবিগুলোর ভেতরে, ‘কুখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সম্পূর্ণ বাতিল করিতে হইবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে’ বলে যে জোরালো দাবিটি ছিল, ক্ষীণ কণ্ঠে হলেও ডাক-এর দফাতে সেটা স্থান পেয়েছে। যেন প্রতিধ্বনি। (চলবে)
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছয় দফা ঘোষণার পর শেখ মুজিব কারারুদ্ধ হন; তবে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থাতেও ৭ জুন আওয়ামী লীগ যে হরতালের ডাক দেয়, সেটিকে সফল করার পেছনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কৃতিত্ব ছিল সর্বাধিক। হরতালের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। শ্রমিকেরা এসে যোগ দিয়েছেন। এত দিন আওয়ামী লীগের কোনো শ্রমিক সংগঠন ছিল না; সিরাজুল আলম খান উদ্যোগী হয়ে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করেছিলেন, যার দরুন মিছিলে ও হরতালে শ্রমিকেরা যুক্ত হয়েছেন। জনমনে আইয়ুববিরোধী অসন্তোষ ছিল ধূমায়িত। হরতালের ডাক সেই অসন্তোষ প্রকাশের একটি সুযোগ এনে দিল। হরতালের সময় সরকারি হিসাবেই পুলিশের গুলিবর্ষণে ১০ জন প্রাণ হারায়। সংবাদপত্রে স্বাধীনভাবে কোনো রিপোর্ট ছাপা সম্ভব ছিল না, তাই শুধু প্রেসনোটই ছাপা হয়। তা ছাড়া, প্রায় সব পত্রিকারই অবস্থান ছিল ছয় দফার বিরুদ্ধে। এমনকি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখপাত্র বলে স্বীকৃত ইত্তেফাকও শুরুতে ছয় দফার ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়নি। ইত্তেফাকে ছয় দফা ঘোষণার খবরটি ছাপা হয়েছিল দায়সারা গোছে, প্রথম পৃষ্ঠার মাঝামাঝি এক কলামে, অল্প কয়েকটি লাইনে; শিরোনাম ছিল ‘শেখ মুজিবের ৬ দফা’।
পরে অবশ্য ইত্তেফাক ছয় দফার সমর্থনে লেখা শুরু করে। ধারণা করা হয় যে এর পেছনে ছিল গ্রেপ্তারের আগে শেখ মুজিবের ইত্তেফাক কার্যালয়ে যাওয়া ও সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা। ছয় দফার পক্ষে সমর্থন লাভের জন্য তাঁর বহুমুখী তৎপরতার ওটি ছিল একটি জরুরি অংশ।
কারাবন্দী হওয়ার আগে তিনি যেমন জনসভা করেছেন, তেমনি প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে ব্যস্ত ছিলেন ব্যক্তিগত যোগাযোগের তৎপরতায়। তাঁর জন্য রাজনীতি ছিল সার্বক্ষণিক কাজ। ছয় দফার পক্ষে ইত্তেফাকের এই অবস্থান গ্রহণের মাশুল প্রদানে অবশ্য বিলম্ব ঘটেনি। জুন মাসের ১৬ তারিখেই ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া গ্রেপ্তার হন এবং পরের দিন পত্রিকাটির ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার ফলে কেবল দৈনিক ইত্তেফাক নয়, সাপ্তাহিক ঢাকা টাইমস ও সাপ্তাহিক পূর্বাণীর প্রকাশনাও বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় গণহারে চলতে থাকে। গভর্নর মোনায়েম খান যতভাবে পারা যায় ছয় দফাকে মুছে ফেলবার চেষ্টা করতে থাকেন।
এবং যতই তাঁর চেষ্টা বৃদ্ধি পায়, ততই ছয় দফা জনপ্রিয় হতে থাকে। যেন তিনি শেখ মুজিবের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, নিজের অজান্তে। ইত্তেফাকের ওপর ওই হামলার প্রতিবাদ অন্যরা তেমন একটা না করতে পারলেও সাংবাদিকেরা ও সংবাদপত্রকর্মীরা কিন্তু করেছিলেন; ২২ জুন ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় সব পত্রিকা ধর্মঘটে গিয়েছিল।
ছয় দফার পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন সংগ্রহের জন্য সিরাজুল আলম খান বাম রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসব উদ্যোগের ফলাফল সম্পর্কে পরে তিনি জানিয়েছেনও। মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির (রুশপন্থী) ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক; তিনি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেছেন বটে, তবে ছয় দফাকে আন্দোলনের মূল বিষয় করতে সম্মত হননি। চীনপন্থী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন ছিল; কিন্তু সেটাও তিনি করেছিলেন, মোহাম্মদ তোয়াহা ও আবদুল হকের সঙ্গে তিনি গোপনে মিলিত হন। তাঁরা তাঁকে যা বলেন তার সারমর্ম হলো, পূর্ব পাকিস্তান অবশ্যই স্বাধীন হবে এবং স্বাধীনতার পক্ষেই তাঁরা কাজ করছেন, তবে ‘৬ দফা দিয়ে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে কিংবা ভারত বা আমেরিকার লেজুড়বৃত্তি করে সে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়।’ ছাত্রলীগের এই নেতা আরও লক্ষ করেছেন যে সে সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিক বাঙালির স্বাধীনতার পক্ষে কোনো প্রবন্ধ, নাটক ও উপন্যাস লেখেননি। এঁদের কাজ দালালির পর্যায়ে পড়ে বলে তাঁর মনে হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্তরে যে ঐক্য গড়া সম্ভব হয়নি, সেটা কিন্তু ছাত্রদের স্তরে গড়ে উঠেছিল। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী শিক্ষা আন্দোলন যে অভিজ্ঞতা, সেটা নিকট ঐতিহ্য হিসেবে ছাত্রদের ভেতর প্রবহমান ছিল; স্বায়ত্তশাসনের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা সেটাও তীব্র হয়ে উঠেছিল, আইয়ুবি-মোনায়েমি দুঃশাসন দুর্বিষহ আকার নিচ্ছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলছিল। ফলে সমাজের সবচেয়ে সচেতন ও সংবেদনশীল যে অংশ সেই ছাত্রদের ভেতর সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আগ্রহটা শক্তিশালী রূপ নিচ্ছিল। এই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্ররাও সরকারবিরোধী আন্দোলনে চলে এসেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনের অবশ্য একটা গুণগত পার্থক্য ছিল; সেটা এই যে, পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা চাইছিল পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং প্রকারান্তরে গোটা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী পাকিস্তানি রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন; পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের আন্দোলনের লক্ষ্য সে তুলনায় ছিল সীমিত, তারা তাদের ওপর সরকারি অত্যাচার-অবিচারের অবসান ও নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছিল। তবে তাদের সে আন্দোলনও ক্রমাগত তীব্র হচ্ছিল। সরকারি দমন-পীড়নও সমানে ঘটছিল। এবং পূর্ব–পশ্চিমে আওয়াজটা ছিল একই। সেটা হলো আইয়ুবি দুঃশাসনের অবসান চাই।
পূর্ববঙ্গে ছাত্রদের ঐক্যের পথে প্রাথমিক অন্তরায়টা ছিল কিন্তু আবার ওই ছয় দফাই। ছাত্র ইউনিয়ন ততদিনে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে তারাই ছিল প্রধান শক্তি; বিভক্ত অবস্থাতেও তারা ছাত্রলীগের তুলনায় অধিক প্রভাবশালী ছিল বৈকি। ছয় দফা সম্পর্কে বাম রাজনৈতিক নেতাদের যে আপত্তি, সেটা ছাত্র ইউনিয়নের উভয় অংশেরই ছিল, যদিও রুশপন্থী অংশ চরিত্রগতভাবেই ছিল কিছুটা আপসপন্থী। বেশ কিছু দর-কষাকষির পর জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল, যার দলিল হচ্ছে এগারো দফা। বামপন্থীরা ছয় দফাতে আপত্তি করেনি, পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন তারা অবশ্যই চায়, কিন্তু তাদের লক্ষ্য ছিল আরও সম্প্রসারিত। ছয় দফার সঙ্গে তারা যুক্ত করতে চেয়েছে মেহনতি মানুষের অধিকার, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা এবং এক ইউনিটের বিলুপ্তি। ছাত্রলীগের বক্তব্য ছিল, পূর্ব বাংলার মূল সমস্যা হচ্ছে স্বায়ত্তশাসন, তাই অন্যসব প্রশ্ন আপাতত অপ্রাসঙ্গিক, সেগুলো পরে দেখা যাবে। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতায় তাদের আপত্তির সূত্র হয়তো ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি মার্কিন আনুকূল্য লাভের সম্ভাবনা। আর এক ইউনিট ভাঙতে আপত্তির পেছনে হয়তো এই জ্ঞান কাজ করেছে যে ওটি আওয়ামী লীগের ‘কার্যকর’ নেতা সোহরাওয়ার্দীর সমর্থনেই ১৯৫৬ সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। অনেকটা তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘অর্জন’। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মীমাংসা হয়েছে, এগারো দফা প্রণীত হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের উভয় অংশ, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংঘের (ডাকসু) সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে সময়ে ডাকসুর সহসভাপতি ছিলেন ছাত্রলীগের এবং সাধারণ সম্পাদক সরকার-সমর্থক জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের (এনএসএফ)। সরকার-সমর্থকদের মধ্যে একটি অংশ যে তখন কিছুটা স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে চাচ্ছিল এনএসএফ-এর সম্মতি তারই ইঙ্গিতবহ। ১১ দফা গ্রহণ করে সমাজতন্ত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হলো জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে। ১১ দফার ৩ নম্বর দফায় ছয় দফাকে হুবহু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ৪ নম্বর দফায় বলা হয়, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুসহ সকল প্রদেশের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করত সাব-ফেডারেশন গঠন’ চাই। অর্থাৎ এক ইউনিট থাকবে না। এই দফাটির সঙ্গে ন্যাপের দেওয়া চৌদ্দ দফার একেবারে প্রথম দফাটির মিলটা লক্ষ করবার মতো। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ‘সংস্কৃতি ও ভাষায় সমতা এবং ভৌগোলিক সংলগ্নতার ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশসমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসাবে পুনর্গঠন’ করতে হবে। অর্থাৎ এক ইউনিট বিলুপ্ত হবে, আর তার জায়গাতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলো একটি ‘আঞ্চলিক ফেডারেশন’ গঠন করবে। পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে ন্যাপের চৌদ্দ দফায় বলা হয়েছিল, ‘পাকিস্তানকে সিয়াটো ও সেন্টো হইতে সদস্যপদ প্রত্যাহার করিতে হইবে।’ ছাত্রসমাজের এগারো দফাতেও ঠিক একই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, যদিও একটু ভিন্ন ভাষাতে; বলা হয়েছে, ‘সিয়াটো, সেন্টো, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করিয়া জোট-বহির্ভূত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি কায়েম করিতে হইবে’।
দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের এগারো দফা আওয়ামী লীগের ছয় দফার তুলনায় ভাসানী ন্যাপের চৌদ্দ দফার বরঞ্চ কাছাকাছি। কিন্তু এগারো দফার ভিত্তিতেই যেহেতু আন্দোলন হয়েছে, চৌদ্দ দফার ভিত্তিতে হয়নি, চৌদ্দ দফা তাই ইতিহাসের অন্তর্গত হলেও লোকচক্ষুর আড়ালেই চলে গেছে।
এরই মধ্যে আবার আট দফাও এসেছিল। দিয়েছে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)। এটি ছিল আট দলের একটি জোট। ডাকের আট দফাতে পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের উল্লেখ নেই, যেমন উল্লেখ নেই পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভাঙার দাবির। আট দফা পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে একেবারেই নীরব। এই নীরবতা জানিয়ে দেয় যে আইয়ুবের পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ডাকের দাবিনামায় যা আছে তা হলো: ১. ফেডারেল পদ্ধতির পার্লামেন্টারি সরকার; ২. সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন; ৩. অবিলম্বে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার; ৪. পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রবর্তন এবং ১৯৬১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স এবং বিনা বিচারের আটক ব্যবস্থার সকল কালাকানুন বাতিল; ৫. শেখ মুজিব, খান ওয়ালী খান ও জেড এ ভুট্টোসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি এবং কোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে রাজনৈতিক মামলাসহ সকল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার; ৬. ১৪৪ ধারা মোতাবেক সকল অগণতান্ত্রিক নির্দেশ প্রত্যাহার; ৭. শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার প্রত্যর্পণ; এবং ৮. সংবাদপত্রের ওপর আরোপিত সকল বিধিনিষেধ ও পত্রিকা প্রকাশের ওপর সকল বাধা প্রত্যাহার এবং ‘ইত্তেফাক’ ‘চাট্টাম’, ‘প্রগ্রেসিভ পেপারস লিমিটেড ও সকল প্রেস, পত্রিকা ও সাময়িকীসহ যে সকল প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেগুলো মূল মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ।
ডাক-এর এই আট দফা দাবিনামা ঘোষণা করা হয় ১৯৬৯-এর ৮ জানুয়ারি; ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা ঘোষণার তিন দিন পরে। ছাত্রদের ১১ দফার সঙ্গে ডাকের আট দফার পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট। ডাক যা চাইছে তা কোনো মৌলিক পরিবর্তন নয়; স্বায়ত্তশাসনের কথা এতে যেমন নেই তেমনি নেই পররাষ্ট্রনীতিরও কোনো উল্লেখ। ডাক-এর মূল দাবি প্রথম দুটিই; ফেডারেল পদ্ধতির সংসদীয় সরকার ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন। ডাক-এর আট দফা ছাত্রদের ১১ দফা দাবি ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কি না, নিশ্চিত করে বলা যাবে না; তবে আট দফার ঘোষণা যে ১১ দফার পরপরই এল সে-ঘটনাকে নেহাত কাকতালীয় বলাও সম্ভব নয়। মূল বিবেচনায় আট দফা ছাত্রদের ১১ দফার বিরোধী। সেটা দাবিনামাটার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তবে কৌতূহলের বিষয় এটা যে ছাত্রদের ১১ দফায় শিক্ষাসংক্রান্ত দাবিগুলোর ভেতরে, ‘কুখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সম্পূর্ণ বাতিল করিতে হইবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে’ বলে যে জোরালো দাবিটি ছিল, ক্ষীণ কণ্ঠে হলেও ডাক-এর দফাতে সেটা স্থান পেয়েছে। যেন প্রতিধ্বনি। (চলবে)
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ দিন আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১ দিন আগে