সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
১৯৭১ সালের ৯ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। এ উপলক্ষে প্রকাশিত আহ্বানপত্রে স্বভাবতই লাহোর প্রস্তাবের কথাটা বিশেষভাবেই এসেছিল। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৪৬ সালে গণভোটের মাধ্যমে দুটি স্বতন্ত্র সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব বেরিয়ে আসে। কিন্তু সে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মওলানার ডাকা সম্মেলনের আহ্বানপত্রে আরও বলা হয়েছিল: ‘মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসন ও পশ্চিমা শোষক-শাসকদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শোষিত-নির্যাতিত হইতে চায় কি না, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যম জনগণ তাহারই সুস্পষ্ট জবাব প্রদান করিয়াছিল।
ঠিক একইভাবে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আর একবার এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হইয়া গেল যে, ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানে পুঁজিবাদী স্বৈরাচারী শাসক, আমলাতন্ত্রের শাসন-শোষণ হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত হইয়া স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো কোরবানি করিতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ প্রস্তুত রহিয়াছে।’
সত্তরের নির্বাচনী রায় সম্পর্কে ভাসানীর বক্তব্যটি ছিল খুবই স্পষ্ট: ‘এবারকার ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচন কোনো ব্যক্তি বা দলের জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন নহে, ৬ দফা-৯ দফার প্রশ্ন নহে, এই দেশের বাঙালি জনগণ স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান চায় কি না, ভোটের মাধ্যমে সেই প্রশ্নেরই মীমাংসা করিয়া দিয়াছে।’
‘আপস আলোচনার মাধ্যমে কেবলমাত্র গদি দখল করিয়া মন্ত্রী বানাইবার জন্য নয়; বরং পূর্ব পাকিস্তানের ৭ কোটি বাঙালি জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতার একক দাবিই এবারকার নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হইয়াছে।’
স্বাধীনতার এই দাবির ভেতর শ্রেণির প্রশ্নটি যে কিছুতেই ভোলা যাবে না, সে বিষয়েও কোনো সন্দেহ রাখেননি। তিনি বলছেন, ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ৯৫ জন মেহনতী মানুষের মুক্তি নির্ভর করছে সমাজতন্ত্র কায়েমের ওপর। অন্যথায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের মতোই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়া যাইবে।’ ওই মুহূর্তে তাই, ‘জাতি-ধর্ম-দলমতনির্বিশেষ সকল শ্রেণির নারী-পুরুষের কর্তব্য হইল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যোগদান করিয়া মাতৃভূমিকে পশ্চিমা শোষকদের কবল হইতে মুক্ত করা।’
‘মাতৃভূমি’র উল্লেখটি কিন্তু মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। মওলানার লড়াইটা ছিল পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধেও, যে পিতৃতান্ত্রিকতা সামন্তবাদের তো অবশ্যই, পুঁজিবাদেরও কেন্দ্রীয় সত্য। আর মুক্তিসংগ্রামের প্রশ্নে সর্বদলীয় সংগ্রামের কথা তো ভাসানী সব সময়ই বলে এসেছেন। একাত্তরে শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর আহ্বান ছিল সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠনের। যুদ্ধের সময় কলকাতায় বামপন্থীদের একাংশ ‘বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম কমিটি’ নামে একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলে মওলানা ভাসানীকেই তাঁরা সেটির সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন, যদিও মওলানার পক্ষে গঠন-সভায় উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, কার্যত তিনি অন্তরীণ অবস্থাতেই ছিলেন।
ভাসানী ন্যাপের কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে হলেও দেশের অভ্যন্তরে থেকে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে; যুদ্ধকালেই প্রকাশিত তাদের একটি পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে সন্তোষে অনুষ্ঠিত ন্যাপের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানার ‘স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা’র দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির কবজা থেকে মুক্ত, ‘শোষণহীন স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য পূর্ব বাংলার সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।’
শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দুদিন পরে, ৯ মার্চ পল্টন ময়দানে ভাসানী একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা দেন। সেটিতে কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের কথা আর নেই; আছে পূর্ব বাংলার কথা। সেখানে তিনি বলছেন, ‘আজ আমি সাত কোটি পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে এই জরুরি আহ্বান জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনারা দল-মত-ধর্ম-শ্রেণিনির্বিশেষ প্রতিটি মানুষ একত্রে এবং একযোগে একটি সাধারণ কর্মসূচি গ্রহণ করুন, যার মূল লক্ষ্য হবে ২৩ বৎসরের অমানুষিক এবং শোষণকারী শোষকগোষ্ঠীর কবল থেকে পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম করা।’
তাঁর কাছে তখন আর পূর্ব পাকিস্তান নেই; রাষ্ট্র পূর্ব বাংলায় পরিণত হয়ে গেছে। তবে মেহনতীদের কথা ভোলা তাঁর পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না এবং তিনি তা ভোলেনওনি। ওই বক্তৃতারই অপরাংশে তিনি বলছেন, ‘আসুন, আমরা বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা করি যে, “জয় বাংলা” রব তুলে নিপীড়িত কোটি কোটি বাঙালির ভোট তথা সমর্থন নিয়ে, সেই শক্তির বিনিময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষক ও সামরিক শাসকদের সাথে হাত মিলিয়ে যেনতেন প্রকারের একটা আপস এবং সমঝোতার গঠনপূর্বক শোষিত বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের দ্বিধাহীন ও দুর্বার আকাঙ্ক্ষাকে পুনর্বার বানচাল করার যে চক্রান্ত মুষ্টিমেয় বাঙালি শোষক ও তাদের হোতারা করে চলেছে, সেই হীন ষড়যন্ত্রকে আমরা শতকরা ৯৫ জন শোষিত, নিপীড়িত বাঙালি একযোগে অঙ্কুরেই প্রতিহত ও বিনষ্ট করি।’
মওলানার পক্ষে স্বাধীন ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র ধারণাকে ত্যাগ করাটা সহজ ছিল না নিশ্চয়ই, কিন্তু সেটা তিনি করেছিলেন। আর এটা কখনোই ভোলা যাবে না যে তাঁর স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের স্বাধীন বাংলাদেশের মতো ছিল না। ছিল একেবারেই ভিন্ন।
পূর্ব পাকিস্তানের ধারণা তিনি ত্যাগ করলেও কেউ কেউ কিন্তু তা ওভাবে ত্যাগ করতে পারেননি। যেমন পারেনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (রুশপন্থী)। এ দলটি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় একাত্তর সালের এপ্রিল মাসে, আগরতলায় বৈঠক করে। তারা কিন্তু পার্টির নাম তখনো পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়নি। পার্টির হয়ে দেশের ভেতরে যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন নূহ-উল আলম লেনিন। আক্ষেপ করে তিনি লিখেছেন: ‘যে পার্টি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে, আনুগত্য প্রকাশ করেছে মুজিবনগর সরকারের প্রতি, সেই পার্টি কিন্তু তার নাম পরিবর্তন করেনি। পার্টির তখনকার কাগজপত্র ও মুখপত্রেও পার্টির পরিচয় লেখা হতো “পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) কমিউনিস্ট পার্টি” বলে।’ তাঁর ভাষ্য: ‘মুক্তিযুদ্ধকালে আমরা যারা দেশের ভেতরে ছিলাম, তখন কমিউনিস্ট পার্টির ওই সব দলিল প্রচার করতে সাহস পাইনি দলের সঙ্গে পাকিস্তান নামটি যুক্ত ছিল বলে।’ পূর্ববঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির জন্য একটা বড় সমস্যা ছিল জনবিচ্ছিন্নতার, ভাসানীর জন্য সেই সমস্যাটা কখনোই ছিল না, সর্বদাই তিনি জনতার সঙ্গে থাকতেন, অনেক সময়েই এগিয়েও যেতেন, জননেতা হিসেবে, সেটিই ছিল তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তিনি তাঁর প্রিয় ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র ধারণাকে পরিত্যাগ করেছিলেন; অন্যদিকে আবার জনগণের মুক্তির প্রশ্নটিকে সব সময়ই বুকের ভেতর আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।
পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ পার্থক্যটা অবশ্য অনেক পুরোনো, কিন্তু পূর্ববঙ্গের নাম বদলে পূর্ব পাকিস্তান হওয়াটা শুরু হয় ১৯৪০-এর দশকে, লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের পর থেকে। কলকাতায় তরুণ মুসলিম সাহিত্যসেবীদের নবীন উৎসাহে পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি গঠিত হয় ১৯৪২ সালে। কলকাতা শহরে তাঁরা একটি সাহিত্য সম্মেলনও করেন, যাতে স্বতন্ত্র পাকিস্তানবাদী সাহিত্য সৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের কয়েকজন মিলে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান ওই বছরই। পাকিস্তান নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকাও তাঁরা প্রকাশ শুরু করেন।
দৈনিক আজাদ ও মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা পাকিস্তান এবং তার পূর্বাঞ্চলে পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা জোরেশোরে বলত। আজাদ-এর সম্পাদকীয় স্তম্ভের ওপরে একটি মানচিত্রও ছাপা হতো, ভারতবর্ষের দুই প্রান্তে দুটি পাকিস্তান দেখিয়ে। তবে পাকিস্তানের জন্মের পরে কিছুদিন পূর্ব পাকিস্তান নয়, সর্বত্র পাকিস্তান নামের জয়জয়কার চলতে থাকে। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সোচ্চার হয় যে প্রতিষ্ঠান, তমদ্দুন মজলিশ, প্রতিষ্ঠা যার ১৯৪৭-এর ১ সেপ্টেম্বরে, তারাও নিজেদের নাম রেখেছিল ‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ’। ১৯৫২-তে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরে এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠা অসাম্প্রদায়িক ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের, সেটিরও নাম প্রথমে ছিল ‘পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’, পরে অক্টোবরে এসে সংশোধন করে নাম করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’। তবে ১৪ আগস্টের সঙ্গে সঙ্গেই যে সরকারি কাগজপত্রে পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান হয়ে গেছে তা নয়, আইনসভার নাম পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদই ছিল; দাপ্তরিক কাগজপত্রেও প্রথম পূর্ববঙ্গই লেখা হতো। তরুণ নাজির আহমদের লেখা পাকিস্তানবিষয়ক যে গানটি রেডিওতে গাওয়া হতো এবং যেটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তাতে পশ্চিমের ‘ধূসর মরু সাহারা’র পাশে ‘পূর্ব বাংলার শ্যামলিমা’র গুণ-বন্দনা হাজির ছিল। রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ববঙ্গ পুরোপুরি পূর্ব পাকিস্তানের পোশাক পরে ১৯৫৬ সালে, সংবিধান প্রণয়নের সময়ে। পাকিস্তানের অন্তর্গত সেই পূর্ব পাকিস্তান যখন স্বাধীনতার অভিমুখে এগোচ্ছে, স্বভাবতই তখন প্রশ্ন উঠেছিল এর নতুন নাম কী হবে। উনসত্তরের শেষ দিকে, ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে পূর্ব পাকিস্তানের নাম ‘বাংলাদেশ’ হবে বলে উল্লেখ করেন শেখ মুজিব। এরপর ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে মুজিবানুরাগী ছাত্রলীগের ছেলেরা ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ’র এক ইশতেহার পাঠ করে, যাতে স্বাধীন পূর্ববঙ্গের নাম কী হবে, সেটা নিশ্চিতই হয়ে যায়। লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনরা যে তাঁদের স্বপ্নের পূর্ববঙ্গের নাম ‘বাংলাদেশ’ হবে ঠিক করেছিলেন, সেটাও আমরা লক্ষ করেছি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালের ৯ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। এ উপলক্ষে প্রকাশিত আহ্বানপত্রে স্বভাবতই লাহোর প্রস্তাবের কথাটা বিশেষভাবেই এসেছিল। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৪৬ সালে গণভোটের মাধ্যমে দুটি স্বতন্ত্র সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব বেরিয়ে আসে। কিন্তু সে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মওলানার ডাকা সম্মেলনের আহ্বানপত্রে আরও বলা হয়েছিল: ‘মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসন ও পশ্চিমা শোষক-শাসকদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শোষিত-নির্যাতিত হইতে চায় কি না, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যম জনগণ তাহারই সুস্পষ্ট জবাব প্রদান করিয়াছিল।
ঠিক একইভাবে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আর একবার এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হইয়া গেল যে, ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানে পুঁজিবাদী স্বৈরাচারী শাসক, আমলাতন্ত্রের শাসন-শোষণ হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত হইয়া স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো কোরবানি করিতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ প্রস্তুত রহিয়াছে।’
সত্তরের নির্বাচনী রায় সম্পর্কে ভাসানীর বক্তব্যটি ছিল খুবই স্পষ্ট: ‘এবারকার ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচন কোনো ব্যক্তি বা দলের জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন নহে, ৬ দফা-৯ দফার প্রশ্ন নহে, এই দেশের বাঙালি জনগণ স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান চায় কি না, ভোটের মাধ্যমে সেই প্রশ্নেরই মীমাংসা করিয়া দিয়াছে।’
‘আপস আলোচনার মাধ্যমে কেবলমাত্র গদি দখল করিয়া মন্ত্রী বানাইবার জন্য নয়; বরং পূর্ব পাকিস্তানের ৭ কোটি বাঙালি জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতার একক দাবিই এবারকার নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হইয়াছে।’
স্বাধীনতার এই দাবির ভেতর শ্রেণির প্রশ্নটি যে কিছুতেই ভোলা যাবে না, সে বিষয়েও কোনো সন্দেহ রাখেননি। তিনি বলছেন, ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ৯৫ জন মেহনতী মানুষের মুক্তি নির্ভর করছে সমাজতন্ত্র কায়েমের ওপর। অন্যথায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের মতোই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়া যাইবে।’ ওই মুহূর্তে তাই, ‘জাতি-ধর্ম-দলমতনির্বিশেষ সকল শ্রেণির নারী-পুরুষের কর্তব্য হইল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যোগদান করিয়া মাতৃভূমিকে পশ্চিমা শোষকদের কবল হইতে মুক্ত করা।’
‘মাতৃভূমি’র উল্লেখটি কিন্তু মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। মওলানার লড়াইটা ছিল পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধেও, যে পিতৃতান্ত্রিকতা সামন্তবাদের তো অবশ্যই, পুঁজিবাদেরও কেন্দ্রীয় সত্য। আর মুক্তিসংগ্রামের প্রশ্নে সর্বদলীয় সংগ্রামের কথা তো ভাসানী সব সময়ই বলে এসেছেন। একাত্তরে শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর আহ্বান ছিল সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠনের। যুদ্ধের সময় কলকাতায় বামপন্থীদের একাংশ ‘বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম কমিটি’ নামে একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলে মওলানা ভাসানীকেই তাঁরা সেটির সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন, যদিও মওলানার পক্ষে গঠন-সভায় উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, কার্যত তিনি অন্তরীণ অবস্থাতেই ছিলেন।
ভাসানী ন্যাপের কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে হলেও দেশের অভ্যন্তরে থেকে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে; যুদ্ধকালেই প্রকাশিত তাদের একটি পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে সন্তোষে অনুষ্ঠিত ন্যাপের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানার ‘স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা’র দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির কবজা থেকে মুক্ত, ‘শোষণহীন স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য পূর্ব বাংলার সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।’
শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দুদিন পরে, ৯ মার্চ পল্টন ময়দানে ভাসানী একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা দেন। সেটিতে কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের কথা আর নেই; আছে পূর্ব বাংলার কথা। সেখানে তিনি বলছেন, ‘আজ আমি সাত কোটি পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে এই জরুরি আহ্বান জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনারা দল-মত-ধর্ম-শ্রেণিনির্বিশেষ প্রতিটি মানুষ একত্রে এবং একযোগে একটি সাধারণ কর্মসূচি গ্রহণ করুন, যার মূল লক্ষ্য হবে ২৩ বৎসরের অমানুষিক এবং শোষণকারী শোষকগোষ্ঠীর কবল থেকে পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম করা।’
তাঁর কাছে তখন আর পূর্ব পাকিস্তান নেই; রাষ্ট্র পূর্ব বাংলায় পরিণত হয়ে গেছে। তবে মেহনতীদের কথা ভোলা তাঁর পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না এবং তিনি তা ভোলেনওনি। ওই বক্তৃতারই অপরাংশে তিনি বলছেন, ‘আসুন, আমরা বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা করি যে, “জয় বাংলা” রব তুলে নিপীড়িত কোটি কোটি বাঙালির ভোট তথা সমর্থন নিয়ে, সেই শক্তির বিনিময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষক ও সামরিক শাসকদের সাথে হাত মিলিয়ে যেনতেন প্রকারের একটা আপস এবং সমঝোতার গঠনপূর্বক শোষিত বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের দ্বিধাহীন ও দুর্বার আকাঙ্ক্ষাকে পুনর্বার বানচাল করার যে চক্রান্ত মুষ্টিমেয় বাঙালি শোষক ও তাদের হোতারা করে চলেছে, সেই হীন ষড়যন্ত্রকে আমরা শতকরা ৯৫ জন শোষিত, নিপীড়িত বাঙালি একযোগে অঙ্কুরেই প্রতিহত ও বিনষ্ট করি।’
মওলানার পক্ষে স্বাধীন ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র ধারণাকে ত্যাগ করাটা সহজ ছিল না নিশ্চয়ই, কিন্তু সেটা তিনি করেছিলেন। আর এটা কখনোই ভোলা যাবে না যে তাঁর স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের স্বাধীন বাংলাদেশের মতো ছিল না। ছিল একেবারেই ভিন্ন।
পূর্ব পাকিস্তানের ধারণা তিনি ত্যাগ করলেও কেউ কেউ কিন্তু তা ওভাবে ত্যাগ করতে পারেননি। যেমন পারেনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (রুশপন্থী)। এ দলটি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় একাত্তর সালের এপ্রিল মাসে, আগরতলায় বৈঠক করে। তারা কিন্তু পার্টির নাম তখনো পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়নি। পার্টির হয়ে দেশের ভেতরে যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন নূহ-উল আলম লেনিন। আক্ষেপ করে তিনি লিখেছেন: ‘যে পার্টি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে, আনুগত্য প্রকাশ করেছে মুজিবনগর সরকারের প্রতি, সেই পার্টি কিন্তু তার নাম পরিবর্তন করেনি। পার্টির তখনকার কাগজপত্র ও মুখপত্রেও পার্টির পরিচয় লেখা হতো “পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) কমিউনিস্ট পার্টি” বলে।’ তাঁর ভাষ্য: ‘মুক্তিযুদ্ধকালে আমরা যারা দেশের ভেতরে ছিলাম, তখন কমিউনিস্ট পার্টির ওই সব দলিল প্রচার করতে সাহস পাইনি দলের সঙ্গে পাকিস্তান নামটি যুক্ত ছিল বলে।’ পূর্ববঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির জন্য একটা বড় সমস্যা ছিল জনবিচ্ছিন্নতার, ভাসানীর জন্য সেই সমস্যাটা কখনোই ছিল না, সর্বদাই তিনি জনতার সঙ্গে থাকতেন, অনেক সময়েই এগিয়েও যেতেন, জননেতা হিসেবে, সেটিই ছিল তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তিনি তাঁর প্রিয় ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র ধারণাকে পরিত্যাগ করেছিলেন; অন্যদিকে আবার জনগণের মুক্তির প্রশ্নটিকে সব সময়ই বুকের ভেতর আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।
পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ পার্থক্যটা অবশ্য অনেক পুরোনো, কিন্তু পূর্ববঙ্গের নাম বদলে পূর্ব পাকিস্তান হওয়াটা শুরু হয় ১৯৪০-এর দশকে, লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের পর থেকে। কলকাতায় তরুণ মুসলিম সাহিত্যসেবীদের নবীন উৎসাহে পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি গঠিত হয় ১৯৪২ সালে। কলকাতা শহরে তাঁরা একটি সাহিত্য সম্মেলনও করেন, যাতে স্বতন্ত্র পাকিস্তানবাদী সাহিত্য সৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের কয়েকজন মিলে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান ওই বছরই। পাকিস্তান নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকাও তাঁরা প্রকাশ শুরু করেন।
দৈনিক আজাদ ও মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা পাকিস্তান এবং তার পূর্বাঞ্চলে পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা জোরেশোরে বলত। আজাদ-এর সম্পাদকীয় স্তম্ভের ওপরে একটি মানচিত্রও ছাপা হতো, ভারতবর্ষের দুই প্রান্তে দুটি পাকিস্তান দেখিয়ে। তবে পাকিস্তানের জন্মের পরে কিছুদিন পূর্ব পাকিস্তান নয়, সর্বত্র পাকিস্তান নামের জয়জয়কার চলতে থাকে। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সোচ্চার হয় যে প্রতিষ্ঠান, তমদ্দুন মজলিশ, প্রতিষ্ঠা যার ১৯৪৭-এর ১ সেপ্টেম্বরে, তারাও নিজেদের নাম রেখেছিল ‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ’। ১৯৫২-তে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরে এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠা অসাম্প্রদায়িক ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের, সেটিরও নাম প্রথমে ছিল ‘পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’, পরে অক্টোবরে এসে সংশোধন করে নাম করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’। তবে ১৪ আগস্টের সঙ্গে সঙ্গেই যে সরকারি কাগজপত্রে পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান হয়ে গেছে তা নয়, আইনসভার নাম পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদই ছিল; দাপ্তরিক কাগজপত্রেও প্রথম পূর্ববঙ্গই লেখা হতো। তরুণ নাজির আহমদের লেখা পাকিস্তানবিষয়ক যে গানটি রেডিওতে গাওয়া হতো এবং যেটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তাতে পশ্চিমের ‘ধূসর মরু সাহারা’র পাশে ‘পূর্ব বাংলার শ্যামলিমা’র গুণ-বন্দনা হাজির ছিল। রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ববঙ্গ পুরোপুরি পূর্ব পাকিস্তানের পোশাক পরে ১৯৫৬ সালে, সংবিধান প্রণয়নের সময়ে। পাকিস্তানের অন্তর্গত সেই পূর্ব পাকিস্তান যখন স্বাধীনতার অভিমুখে এগোচ্ছে, স্বভাবতই তখন প্রশ্ন উঠেছিল এর নতুন নাম কী হবে। উনসত্তরের শেষ দিকে, ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে পূর্ব পাকিস্তানের নাম ‘বাংলাদেশ’ হবে বলে উল্লেখ করেন শেখ মুজিব। এরপর ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে মুজিবানুরাগী ছাত্রলীগের ছেলেরা ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ’র এক ইশতেহার পাঠ করে, যাতে স্বাধীন পূর্ববঙ্গের নাম কী হবে, সেটা নিশ্চিতই হয়ে যায়। লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনরা যে তাঁদের স্বপ্নের পূর্ববঙ্গের নাম ‘বাংলাদেশ’ হবে ঠিক করেছিলেন, সেটাও আমরা লক্ষ করেছি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১০ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১০ ঘণ্টা আগে