ফারুক মেহেদী
যে পথে গত কিছুদিন সুনসান নীরবতায় দম বন্ধ লাগত; সেই পথে ঘন হয়ে রিকশায় বসা একজোড়া তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বাস আর উদ্দামতায় চোখ আটকে গেল। ছেলেটি মেয়েটির এলো চুল ঠিক করে দিচ্ছে। আর মেয়েটি অপলক চেয়ে আছে ছেলেটির দিকে! মনে হলো–আহা…কত দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তাদের এ চোখের মিলন! মাস্কবিহীন দুটি মুখের অবয়বে খেলা করছে অব্যক্ত অনুরাগ। অনেক দিন পর দেখা বলে হয়তো ছেলেটির পছন্দের নীল শাড়ি পরেছে মেয়েটি। চোখে মোটা করে কালো কাজলের প্রলেপ আর ঠোঁটজুড়ে লিপস্টিকের শৈল্পিক আস্তরণ। আর ছেলেটিও হয়তো পাঞ্জাবি পরেছে মেয়েটিরই আগ্রহে।
রিকশা থেকে নেমে তারা গলির মুখের জমজমাট চায়ের দোকানে গিয়ে পাশাপাশি বসল। পরক্ষণে আমার গাড়িও অতিক্রম করল তাদের। ১১ আগস্ট সন্ধ্যারাতে মিরপুরের উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের পাশের গলির চিত্র এটি। সেদিনই লকডাউন শিথিল করে প্রায় সবকিছু খুলে দেয় সরকার। আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম। আমার দেখা ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারত।
তবে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতো শেষ হয়েও যেন হলো না শেষ। রেশ রয়ে গেল আমার মনে! হতে পারে চলতি পথে অবধারিতভাবেই প্রেমমুখর এ জুটির রোমান্টিক একটি সন্ধ্যা আমার চোখ আটকে দিয়েছে। তবে এখানে কোনো প্রেমের গল্প বলা আমার বিষয় নয়। এ ঘটনাটি থেকে কয়েকটি বিষয় আমি পর্যবেক্ষণ করেছি–সেগুলো বলার চেষ্টা করব। করোনা সত্যি অনেকের জীবন থেকে হাসি-আনন্দ, প্রেম-অনুরাগ কেড়ে নিয়েছে! আমাদের চারপাশের নিত্য যে অভ্যাস ও চিরাচরিত রীতি, তাতেও ছেদ পড়েছে করোনা অতিমারির কারণে।
এটি এমন এক ভয়ংকর সংক্রমণ, যা রোধ করতে মুখ ঢেকে রাখতে হয় মাস্কে। বজায় রাখতে হয় সামাজিক দূরত্ব। হাতে হাত রাখা ও হাত মেলানোও মানা। মা তাঁর সন্তানকে স্নেহের আলিঙ্গন দিতে পারছেন না। কত দিন পর দেখা বন্ধু জড়িয়ে ধরতে পারছে না প্রিয় বন্ধুটিকে। স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকাও করোনার অদৃশ্য মৃত্যু পরোয়ানার বিধিনিষেধে বিসর্জন দিয়েছে স্নেহ, প্রেম, অনুরাগ–সবকিছু। ওই দিনের ঘটনাটির পর মনে হলো, নিশ্চয় লকডাউনে তাদের দেখাদেখি হয়নি অনেক দিন। হয়তো ফোনে কথা হয়েছে, কিন্তু প্রিয়জনকে চোখে না দেখার যে অতৃপ্তি, সে কারণেই তাদের এমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
লকডাউন খুলে দিয়েছে, তাই হয়তো কোথাও তাদের হারিয়ে যেতে নেই মানা–এমন একটি অবস্থা! একজন আরেকজনের জন্য প্রাণভরে সেজেছে, পছন্দের জামা পরেছে। করোনাকে হারিয়ে দিয়ে মাস্ক ছাড়াই প্রিয়জনের সামনে গিয়েছে। ঘন হয়ে পাশাপাশি বসেছে। তাদেরই বা দোষ কী? ভালোবাসা কি আর বাধা মানে! এমন অসহায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য সত্যি মায়া লাগছে!
তবে সত্যি হলো, লকডাউন তুলে দিলেও করোনা দেশ থেকে চলে যায়নি। এখনো প্রতিদিন মানুষ মরছে শত শত। হাজার হাজার মানুষ নতুন করে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালের আইসিইউ বেড খালি নেই। অনেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এখন আর শুধু বৃদ্ধরা নয়; নির্বিচারে সংক্রমণের শিকার হচ্ছে শিশু, যুবারাও। এ মরণব্যাধির কাছে মায়ের স্নেহ, বাবার আদর, প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা তুচ্ছ! মা মারা গেছেন, আর শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই করোনার শিকার হয়েছে–এমন ঘটনাও আছে। মোটকথা, করোনা কাউকে মায়া করছে না। এটি যেন পৃথিবীর তাবৎ স্নেহ, মায়া তছনছ করতে ওত পেতে আছে আমাদের চারপাশে!
এ মহামারি এখনো শেষ হয়ে যায়নি; বরং প্রবল প্রভাব বিস্তার করেই সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। তারপরও সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির আপত্তির মুখেও কেন লকডাউন শিথিল করা হলো? এ প্রশ্ন কেউ কেউ অবশ্যই করবেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের করোনার জন্য দীর্ঘ সময়ের লকডাউনের মতো কঠিন ব্যবস্থা ধারণ করার সক্ষমতা নেই।
এখানে মানুষের পর্যাপ্ত সঞ্চয় নেই যে বসে বসে খাবে। এখানের সরকারের পর্যাপ্ত প্রাচুর্য নেই যে অসহায় দরিদ্র মানুষকে হাত খুলে সাহায্য করতে পারবে। অব্যাহত লকডাউনে ভারী শিল্প থেকে গলির ভাসমান হকারের ব্যবসাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশের কাছে চলে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও সবশেষ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৩ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। অথচ গত কয়েক বছরে তা ছিল ৭ শতাংশের ওপরে। মধ্যবিত্ত টিকে থাকার কঠোর সংগ্রাম করছে। সরকারও চারদিক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
এভাবে লকডাউন চলতে থাকলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। তাই নিরুপায় সরকার বাধ্য হয়েই করোনার উচ্চ সংক্রমণ জেনেও তা শিথিল করেছে। কারণ একটি উঠতি অর্থনীতির সব জানালা যদি একে একে বন্ধ হয়ে যায়, তবে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হবে দেশকে। এ জন্য সময় থাকতেই সরকার একটি ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনীতির গতি কিছু সচল রাখার উপায় হিসেবে লকডাউন শিথিল করেছে।
এই সুযোগে আমরা যারা নাগরিক রয়েছি, তারা বেশি মাত্রায় উৎফুল্ল হয়ে পড়েছি! লকডাউন তুলে দেওয়ার দিন আসতে না আসতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছি! সড়ক-মহাসড়ক, গলি-ফুটপাত, কাঁচাবাজার থেকে শপিং মল, মোড়ের চায়ের দোকান থেকে পাঁচতারকা হোটেল, পার্ক, বার সর্বত্র আমাদের সরব উপস্থিতি। কার আগে কে বের হবে–এমন অবস্থা! দল বেঁধে বেড়ানো শুরু হয়েছে। বিয়ে, জন্মদিন, মিটিং, আড্ডা, পার্টি, জনসভা–সব হচ্ছে এখন। যুক্তি তো আছেই–সরকার সব খুলে দিয়েছে, ঘরে বসে থাকব কেন?
হ্যাঁ, সরকার সবকিছু শিথিল করেছে। কেন করেছে তা আগেই বলেছি। আমরা সবাই তা জানি। ঘরের মানুষের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে কারও কারও প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। পত্রিকায় খবর দেখলাম, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার রেজাউল করিম নামের এক দরিদ্র মানুষ অভাবের তাড়নায় অভিমানে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন!
এটাই এখন বাস্তবতা। এ রকম ঘটনা ঘটছে অহরহ।
যাঁদের জীবন চলে না, যাঁদের আয় না করলে খাবার জোটে না, যাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তাঁরা অবশ্যই বের হবেন, কাজ করবেন। তবে তাঁদেরও বের হতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। গড্ডলিকায় গা ভাসালে চলবে না। সরকার খুলে দিল বলেই সবাইকে বেপরোয়াভাবে সবকিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে কেন? যাঁদের প্রয়োজন নেই বের হওয়ার, তাঁরা কেন বের হবেন? যাঁদের জরুরি তাঁরা ছাড়া বিনা কাজে, অপ্রয়োজনে শুধু বেড়ানোর খাতিরে পার্কে, কফিশপে, বন্ধুদের সঙ্গে বের হওয়া কতটা যৌক্তিক?
লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকেই দেখা যায় বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কোনো রকমের স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। রাস্তাঘাটে অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। দূরত্ব মেনে চলাচলও মানছেন না অনেকে। অথচ করোনা ঠিকই রয়ে গেছে। সবাইকে টিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত চাইলেই বেপরোয়া চলাচল করা যাবে না–এটি মনে হয় সবাই ভুলে গেছেন! এখন যেভাবে মানুষ নির্বিকারভাবে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, রাস্তায়, শপিংয়ে, রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন, তাতে সামনের দিনে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। লকডাউন শিথিলের সুযোগে সবাই ইচ্ছেমতো বাইরে যাওয়ার ফলে সামনে যে চিত্র আবারও পাল্টে যাবে না, তার নিশ্চয়তাও নেই।
লকডাউন যতই শিথিল হোক, সবাই যাঁর যাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শতভাগ সতর্কতার সঙ্গে বের হওয়া উচিত। একজনের অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা অন্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জীবন আর জীবিকা বাঁচাতে ভারসাম্য করে চলা দরকার। এ বিশেষ সময়ে বিশেষভাবে জীবনযাপন করতে হবে। বেঁচে থাকলে জীবনকে উপভোগ করার যথেষ্ট সময় আসবে সামনে। প্রেম, অনুরাগ, ভালোবাসাও জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সময় পেলে একদিন আবারও নিশ্চয় মুখোমুখি বসে, হাত ধরে প্রিয়জনকে মন ও চোখের ভাষা বোঝানো যাবে। জীবনকে নতুন প্রাণ দিতে এখন না হয় আমরা কিছুটা সংযমী হলাম! দিন এলে আবারও নিশ্চয় গাইব জীবনের জয়গান! তার জন্য সবাই চলুন, আরেকটু কষ্ট করি।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
যে পথে গত কিছুদিন সুনসান নীরবতায় দম বন্ধ লাগত; সেই পথে ঘন হয়ে রিকশায় বসা একজোড়া তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বাস আর উদ্দামতায় চোখ আটকে গেল। ছেলেটি মেয়েটির এলো চুল ঠিক করে দিচ্ছে। আর মেয়েটি অপলক চেয়ে আছে ছেলেটির দিকে! মনে হলো–আহা…কত দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তাদের এ চোখের মিলন! মাস্কবিহীন দুটি মুখের অবয়বে খেলা করছে অব্যক্ত অনুরাগ। অনেক দিন পর দেখা বলে হয়তো ছেলেটির পছন্দের নীল শাড়ি পরেছে মেয়েটি। চোখে মোটা করে কালো কাজলের প্রলেপ আর ঠোঁটজুড়ে লিপস্টিকের শৈল্পিক আস্তরণ। আর ছেলেটিও হয়তো পাঞ্জাবি পরেছে মেয়েটিরই আগ্রহে।
রিকশা থেকে নেমে তারা গলির মুখের জমজমাট চায়ের দোকানে গিয়ে পাশাপাশি বসল। পরক্ষণে আমার গাড়িও অতিক্রম করল তাদের। ১১ আগস্ট সন্ধ্যারাতে মিরপুরের উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের পাশের গলির চিত্র এটি। সেদিনই লকডাউন শিথিল করে প্রায় সবকিছু খুলে দেয় সরকার। আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম। আমার দেখা ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারত।
তবে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতো শেষ হয়েও যেন হলো না শেষ। রেশ রয়ে গেল আমার মনে! হতে পারে চলতি পথে অবধারিতভাবেই প্রেমমুখর এ জুটির রোমান্টিক একটি সন্ধ্যা আমার চোখ আটকে দিয়েছে। তবে এখানে কোনো প্রেমের গল্প বলা আমার বিষয় নয়। এ ঘটনাটি থেকে কয়েকটি বিষয় আমি পর্যবেক্ষণ করেছি–সেগুলো বলার চেষ্টা করব। করোনা সত্যি অনেকের জীবন থেকে হাসি-আনন্দ, প্রেম-অনুরাগ কেড়ে নিয়েছে! আমাদের চারপাশের নিত্য যে অভ্যাস ও চিরাচরিত রীতি, তাতেও ছেদ পড়েছে করোনা অতিমারির কারণে।
এটি এমন এক ভয়ংকর সংক্রমণ, যা রোধ করতে মুখ ঢেকে রাখতে হয় মাস্কে। বজায় রাখতে হয় সামাজিক দূরত্ব। হাতে হাত রাখা ও হাত মেলানোও মানা। মা তাঁর সন্তানকে স্নেহের আলিঙ্গন দিতে পারছেন না। কত দিন পর দেখা বন্ধু জড়িয়ে ধরতে পারছে না প্রিয় বন্ধুটিকে। স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকাও করোনার অদৃশ্য মৃত্যু পরোয়ানার বিধিনিষেধে বিসর্জন দিয়েছে স্নেহ, প্রেম, অনুরাগ–সবকিছু। ওই দিনের ঘটনাটির পর মনে হলো, নিশ্চয় লকডাউনে তাদের দেখাদেখি হয়নি অনেক দিন। হয়তো ফোনে কথা হয়েছে, কিন্তু প্রিয়জনকে চোখে না দেখার যে অতৃপ্তি, সে কারণেই তাদের এমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
লকডাউন খুলে দিয়েছে, তাই হয়তো কোথাও তাদের হারিয়ে যেতে নেই মানা–এমন একটি অবস্থা! একজন আরেকজনের জন্য প্রাণভরে সেজেছে, পছন্দের জামা পরেছে। করোনাকে হারিয়ে দিয়ে মাস্ক ছাড়াই প্রিয়জনের সামনে গিয়েছে। ঘন হয়ে পাশাপাশি বসেছে। তাদেরই বা দোষ কী? ভালোবাসা কি আর বাধা মানে! এমন অসহায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য সত্যি মায়া লাগছে!
তবে সত্যি হলো, লকডাউন তুলে দিলেও করোনা দেশ থেকে চলে যায়নি। এখনো প্রতিদিন মানুষ মরছে শত শত। হাজার হাজার মানুষ নতুন করে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালের আইসিইউ বেড খালি নেই। অনেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এখন আর শুধু বৃদ্ধরা নয়; নির্বিচারে সংক্রমণের শিকার হচ্ছে শিশু, যুবারাও। এ মরণব্যাধির কাছে মায়ের স্নেহ, বাবার আদর, প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা তুচ্ছ! মা মারা গেছেন, আর শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই করোনার শিকার হয়েছে–এমন ঘটনাও আছে। মোটকথা, করোনা কাউকে মায়া করছে না। এটি যেন পৃথিবীর তাবৎ স্নেহ, মায়া তছনছ করতে ওত পেতে আছে আমাদের চারপাশে!
এ মহামারি এখনো শেষ হয়ে যায়নি; বরং প্রবল প্রভাব বিস্তার করেই সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। তারপরও সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির আপত্তির মুখেও কেন লকডাউন শিথিল করা হলো? এ প্রশ্ন কেউ কেউ অবশ্যই করবেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের করোনার জন্য দীর্ঘ সময়ের লকডাউনের মতো কঠিন ব্যবস্থা ধারণ করার সক্ষমতা নেই।
এখানে মানুষের পর্যাপ্ত সঞ্চয় নেই যে বসে বসে খাবে। এখানের সরকারের পর্যাপ্ত প্রাচুর্য নেই যে অসহায় দরিদ্র মানুষকে হাত খুলে সাহায্য করতে পারবে। অব্যাহত লকডাউনে ভারী শিল্প থেকে গলির ভাসমান হকারের ব্যবসাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশের কাছে চলে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও সবশেষ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৩ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। অথচ গত কয়েক বছরে তা ছিল ৭ শতাংশের ওপরে। মধ্যবিত্ত টিকে থাকার কঠোর সংগ্রাম করছে। সরকারও চারদিক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
এভাবে লকডাউন চলতে থাকলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। তাই নিরুপায় সরকার বাধ্য হয়েই করোনার উচ্চ সংক্রমণ জেনেও তা শিথিল করেছে। কারণ একটি উঠতি অর্থনীতির সব জানালা যদি একে একে বন্ধ হয়ে যায়, তবে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হবে দেশকে। এ জন্য সময় থাকতেই সরকার একটি ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনীতির গতি কিছু সচল রাখার উপায় হিসেবে লকডাউন শিথিল করেছে।
এই সুযোগে আমরা যারা নাগরিক রয়েছি, তারা বেশি মাত্রায় উৎফুল্ল হয়ে পড়েছি! লকডাউন তুলে দেওয়ার দিন আসতে না আসতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছি! সড়ক-মহাসড়ক, গলি-ফুটপাত, কাঁচাবাজার থেকে শপিং মল, মোড়ের চায়ের দোকান থেকে পাঁচতারকা হোটেল, পার্ক, বার সর্বত্র আমাদের সরব উপস্থিতি। কার আগে কে বের হবে–এমন অবস্থা! দল বেঁধে বেড়ানো শুরু হয়েছে। বিয়ে, জন্মদিন, মিটিং, আড্ডা, পার্টি, জনসভা–সব হচ্ছে এখন। যুক্তি তো আছেই–সরকার সব খুলে দিয়েছে, ঘরে বসে থাকব কেন?
হ্যাঁ, সরকার সবকিছু শিথিল করেছে। কেন করেছে তা আগেই বলেছি। আমরা সবাই তা জানি। ঘরের মানুষের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে কারও কারও প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। পত্রিকায় খবর দেখলাম, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার রেজাউল করিম নামের এক দরিদ্র মানুষ অভাবের তাড়নায় অভিমানে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন!
এটাই এখন বাস্তবতা। এ রকম ঘটনা ঘটছে অহরহ।
যাঁদের জীবন চলে না, যাঁদের আয় না করলে খাবার জোটে না, যাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তাঁরা অবশ্যই বের হবেন, কাজ করবেন। তবে তাঁদেরও বের হতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। গড্ডলিকায় গা ভাসালে চলবে না। সরকার খুলে দিল বলেই সবাইকে বেপরোয়াভাবে সবকিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে কেন? যাঁদের প্রয়োজন নেই বের হওয়ার, তাঁরা কেন বের হবেন? যাঁদের জরুরি তাঁরা ছাড়া বিনা কাজে, অপ্রয়োজনে শুধু বেড়ানোর খাতিরে পার্কে, কফিশপে, বন্ধুদের সঙ্গে বের হওয়া কতটা যৌক্তিক?
লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকেই দেখা যায় বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কোনো রকমের স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। রাস্তাঘাটে অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। দূরত্ব মেনে চলাচলও মানছেন না অনেকে। অথচ করোনা ঠিকই রয়ে গেছে। সবাইকে টিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত চাইলেই বেপরোয়া চলাচল করা যাবে না–এটি মনে হয় সবাই ভুলে গেছেন! এখন যেভাবে মানুষ নির্বিকারভাবে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, রাস্তায়, শপিংয়ে, রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন, তাতে সামনের দিনে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। লকডাউন শিথিলের সুযোগে সবাই ইচ্ছেমতো বাইরে যাওয়ার ফলে সামনে যে চিত্র আবারও পাল্টে যাবে না, তার নিশ্চয়তাও নেই।
লকডাউন যতই শিথিল হোক, সবাই যাঁর যাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শতভাগ সতর্কতার সঙ্গে বের হওয়া উচিত। একজনের অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা অন্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জীবন আর জীবিকা বাঁচাতে ভারসাম্য করে চলা দরকার। এ বিশেষ সময়ে বিশেষভাবে জীবনযাপন করতে হবে। বেঁচে থাকলে জীবনকে উপভোগ করার যথেষ্ট সময় আসবে সামনে। প্রেম, অনুরাগ, ভালোবাসাও জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সময় পেলে একদিন আবারও নিশ্চয় মুখোমুখি বসে, হাত ধরে প্রিয়জনকে মন ও চোখের ভাষা বোঝানো যাবে। জীবনকে নতুন প্রাণ দিতে এখন না হয় আমরা কিছুটা সংযমী হলাম! দিন এলে আবারও নিশ্চয় গাইব জীবনের জয়গান! তার জন্য সবাই চলুন, আরেকটু কষ্ট করি।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১৬ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১৬ ঘণ্টা আগে