মহিউদ্দিন খান মোহন
মায়ের প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা-ভক্তি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। জন্মদাতা পিতা এবং গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি সন্তানের ঋণ কখনো শোধ হওয়ার নয়। তাই বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে দেখভাল করার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে; বিশেষ করে মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনকে সব ধর্মেই পুণ্যের কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। হিন্দুধর্মেও পিতা-মাতাকে পরম পূজনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাতৃভক্তির উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি তখন মেদিনীপুর কলেজের শিক্ষক। মা তাঁকে বাড়ি আসার জন্য পত্র পাঠালেন। তিনি ছুটি চাইলে কলেজের প্রিন্সিপাল তা নাকচ করে দেন। তিনি কালবিলম্ব না করে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাড়িতে রওনা হন। পথে আক্রান্ত হন ঝড়বৃষ্টিতে। দামোদর নদীর পাড়ে এসে দেখেন পারাপারের কোনো নৌকা নেই। তিনি সাঁতরে পার হলেন সেই উত্তাল নদী। জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে ছুটে এলেন মায়ের কাছে। বায়েজিদ বোস্তামী ইসলাম ধর্মের এক মহান সাধকপুরুষ। বায়েজিদ বোস্তামী যখন বালক, তাঁর মায়ের ভীষণ অসুখ হলো। এক রাতে অসুস্থ মা পুত্রের কাছে পানি চাইলেন। বালক বায়েজিদ দেখলেন ঘরে এক ফোঁটাও পানি নেই। তিনি পানি আনতে চলে গেলেন কুয়ার কাছে। পানি নিয়ে এসে দেখলেন মা ঘুমিয়ে গেছেন। তিনি মাকে ডেকে তাঁর ঘুম ভাঙালেন না। পানি হাতে তাঁর শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলেন। সরে গেলেন না একমুহূর্তের জন্য; যদি ঘুম থেকে উঠে মা পানি চান। সারা রাত মায়ের শিয়রে পানির পাত্র হাতে বায়েজিদ দাঁড়িয়ে থাকলেন। ভোর হতেই মা চোখ মেলে দেখলেন পুত্র তাঁর জন্য পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
আজকাল অমন মাতৃভক্ত সন্তানের দেখা পাওয়া বিরল। তবে অনেকেই আছেন যাঁরা তাঁদের মা-বাবাকে অপরিসীম ভক্তি-শ্রদ্ধা করেন। বৃদ্ধ বয়সে তাঁরা কী করে ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন, তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। আবার এমন অনেক পাষণ্ডের খবর আমরা পাই, যাঁরা বৃদ্ধ মা কিংবা বাবাকে ছেঁড়া ন্যাকড়ার মতো সংসার থেকে ছুড়ে ফেলে দেন। মাঝেমধ্যেই পত্রিকায় খবর বেরোয় সন্তান কর্তৃক বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার খবর। কিছুদিন আগে এমন একজন ভাগ্যহত মাকে তুলে এনে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন, সন্তানকে ডেকে এনে মাকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিলেন। কয়েক বছর আগে পরিচিত একজন এক পিতার করুণ পরিণতির কথা শুনিয়েছিলেন। ভদ্রলোক ছিলেন সরকারি চাকুরে। অবসরে যাওয়ার পর জীবনের সমুদয় সঞ্চয় দিয়ে রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়ি করেছিলেন। কিন্তু সে বাড়িতে তাঁর থাকা হয়নি। একদিন তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেল উত্তরার একটি মসজিদের বারান্দায়।
আমার পরিচিত ভদ্রলোক তাঁকে নিয়ে ভর্তি করালেন হাসপাতালে। খবর দিলেন তাঁর পুত্র-কন্যাদের। কিন্তু কেউ এল না। কদিন বাদেই ভদ্রলোক মারা গেলেন। ওই ভদ্রলোক তখন পুত্রকে ফোন করে পিতার মৃত্যুসংবাদ দিলেন। পুত্র উত্তরে জানালেন, তিনি এখন ব্যবসায়িক মিটিংয়ে ব্যস্ত। তাহলে তাঁর পিতার দাফনের কী হবে? পুত্র নির্বিকার বললেন, ‘পারলে ব্যবস্থা করেন, না পারলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দিয়ে দেন।’ শেষ পর্যন্ত আমার পরিচিত ভদ্রলোকই বৃদ্ধের দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন।
মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা, অযত্ন, ক্ষেত্রবিশেষে নিষ্ঠুরতার এই সময়ে মাতৃভক্তির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন আমাদের প্রাণিসম্পদসচিব রওনক মাহমুদ। ২৪ আগস্ট আজকের পত্রিকাসহ কয়েকটি দৈনিকে খবরটি বেরিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সচিব তাঁর বৃদ্ধ মাকে হাসপাতালে দেখাশোনা করার জন্য তাঁর একান্ত সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কুড়িজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সচিবের ৯৫ বছর বয়সী মা জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পালাক্রমে সেখানে ডিউটি করছেন। একই বিষয়ে ওই দিন আরেকটি দৈনিকের খবরে কে কোন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন, তার বিশদ বিবরণও দেওয়া হয়েছে। অবশ্য সচিব রওনক মাহমুদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পত্রিকাটির কাছে।
বলেছেন, ‘আমার অসুস্থ মাকে অফিসের লোকজন দেখতে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও আপনারা নিউজ করছেন। এখন কী করা যাবে? আমি লিখিত কোনো নির্দেশনা দিইনি, এটা বললে আপনারা বলবেন আমি অস্বীকার করছি। ফলে এ বিষয়ে আমাকে আর জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। আপনারা গিয়ে সরেজমিনে দেখেন। যেটি বাস্তবে পাবেন, সেটি লেখেন।’ (সমকাল ২৪ আগস্ট, ২০২১)
সরেজমিনে পরদিন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে বৃদ্ধার পাশে সচিবের বড় ভাই ও তাঁর দুই সন্তানকে দেখতে পেয়েছেন। হাসপাতালের একজন নার্স প্রতিবেদককে বলেছেন, আগের দিন প্রচুর সরকারি কর্মচারী আসা-যাওয়া করেছেন হাসপাতালে। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, সাংবাদিকদের তৎপরতা শুরু হওয়ার পর সচিব সাহেব সতর্ক হয়ে গেছেন এবং ‘সরেজমিনে’ গিয়ে যাতে কেউ অভিযোগের প্রমাণ না পায়, সে ব্যবস্থা করে থাকবেন।
একজন নবতিপর অসুস্থ বৃদ্ধার সেবা শুশ্রূষার জন্য যে কেউ আগ্রহী হয়ে সেখানে যেতে পারেন। এট মানবিক কাজের মধ্যেও পড়ে। তবে তা যদি হয় রীতিমতো নির্দেশনা জারি করে শিফট ভাগ করে দিয়ে, কথা ওঠে তখনই। কেননা, সচিব বড়কর্তা হলেও ব্যক্তিগত কাজে অফিসের কাউকে নিযুক্ত করার অধিকার তাঁর নেই। সচিব রওনক মাহমুদ বিষয়টি অস্বীকার বা এড়াতে চাইলেও এটা পরিষ্কার যে মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের তিনি তাঁর মায়ের সেবায় লাগিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের সার্ভিস রুলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অবশ্যপালনীয় যেসব বিধান রয়েছে, তাতে অফিসের গাড়ি, আসবাব বা যেকোনো সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ।
কেউ করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাঁদের কোনো কর্মকর্তা যদি ব্যক্তিগত কাজে বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যবহার করেন, তাহলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হবে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে সচিব রওনক মাহমুদকে বোধ হয় সেই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে না। কেননা, ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তাঁর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ২৪ আগস্ট সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, সচিব কাউকে তাঁর মায়ের সেবায় নিযুক্ত করেননি। এ কথা সচিব নাকি তাঁকে জানিয়েছেন। মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। তাঁকে একজন নিষ্ঠাবান রাজনীতিক ও সৎ মানুষ হিসেবেই জানি। কিন্তু তিনি কেন তাঁর সচিবের মুখপাত্র সেজে কথা বলতে গেলেন, তা আমার বোধের অগম্য। এটা তো তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। বোধকরি এভাবেই আমাদের রাজনীতিকেরা নিজেদের অজান্তেই আমলাদের অনৈতিক কাজের বৈধতা দিয়ে থাকেন, আশকারা দিয়ে থাকেন।
আর রাজনীতিকদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর মওকাটা আমলারা বোধকরি এভাবে পেয়ে থাকেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
মায়ের প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা-ভক্তি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। জন্মদাতা পিতা এবং গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি সন্তানের ঋণ কখনো শোধ হওয়ার নয়। তাই বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে দেখভাল করার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে; বিশেষ করে মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনকে সব ধর্মেই পুণ্যের কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। হিন্দুধর্মেও পিতা-মাতাকে পরম পূজনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাতৃভক্তির উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি তখন মেদিনীপুর কলেজের শিক্ষক। মা তাঁকে বাড়ি আসার জন্য পত্র পাঠালেন। তিনি ছুটি চাইলে কলেজের প্রিন্সিপাল তা নাকচ করে দেন। তিনি কালবিলম্ব না করে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাড়িতে রওনা হন। পথে আক্রান্ত হন ঝড়বৃষ্টিতে। দামোদর নদীর পাড়ে এসে দেখেন পারাপারের কোনো নৌকা নেই। তিনি সাঁতরে পার হলেন সেই উত্তাল নদী। জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে ছুটে এলেন মায়ের কাছে। বায়েজিদ বোস্তামী ইসলাম ধর্মের এক মহান সাধকপুরুষ। বায়েজিদ বোস্তামী যখন বালক, তাঁর মায়ের ভীষণ অসুখ হলো। এক রাতে অসুস্থ মা পুত্রের কাছে পানি চাইলেন। বালক বায়েজিদ দেখলেন ঘরে এক ফোঁটাও পানি নেই। তিনি পানি আনতে চলে গেলেন কুয়ার কাছে। পানি নিয়ে এসে দেখলেন মা ঘুমিয়ে গেছেন। তিনি মাকে ডেকে তাঁর ঘুম ভাঙালেন না। পানি হাতে তাঁর শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলেন। সরে গেলেন না একমুহূর্তের জন্য; যদি ঘুম থেকে উঠে মা পানি চান। সারা রাত মায়ের শিয়রে পানির পাত্র হাতে বায়েজিদ দাঁড়িয়ে থাকলেন। ভোর হতেই মা চোখ মেলে দেখলেন পুত্র তাঁর জন্য পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
আজকাল অমন মাতৃভক্ত সন্তানের দেখা পাওয়া বিরল। তবে অনেকেই আছেন যাঁরা তাঁদের মা-বাবাকে অপরিসীম ভক্তি-শ্রদ্ধা করেন। বৃদ্ধ বয়সে তাঁরা কী করে ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন, তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। আবার এমন অনেক পাষণ্ডের খবর আমরা পাই, যাঁরা বৃদ্ধ মা কিংবা বাবাকে ছেঁড়া ন্যাকড়ার মতো সংসার থেকে ছুড়ে ফেলে দেন। মাঝেমধ্যেই পত্রিকায় খবর বেরোয় সন্তান কর্তৃক বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার খবর। কিছুদিন আগে এমন একজন ভাগ্যহত মাকে তুলে এনে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন, সন্তানকে ডেকে এনে মাকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিলেন। কয়েক বছর আগে পরিচিত একজন এক পিতার করুণ পরিণতির কথা শুনিয়েছিলেন। ভদ্রলোক ছিলেন সরকারি চাকুরে। অবসরে যাওয়ার পর জীবনের সমুদয় সঞ্চয় দিয়ে রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়ি করেছিলেন। কিন্তু সে বাড়িতে তাঁর থাকা হয়নি। একদিন তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেল উত্তরার একটি মসজিদের বারান্দায়।
আমার পরিচিত ভদ্রলোক তাঁকে নিয়ে ভর্তি করালেন হাসপাতালে। খবর দিলেন তাঁর পুত্র-কন্যাদের। কিন্তু কেউ এল না। কদিন বাদেই ভদ্রলোক মারা গেলেন। ওই ভদ্রলোক তখন পুত্রকে ফোন করে পিতার মৃত্যুসংবাদ দিলেন। পুত্র উত্তরে জানালেন, তিনি এখন ব্যবসায়িক মিটিংয়ে ব্যস্ত। তাহলে তাঁর পিতার দাফনের কী হবে? পুত্র নির্বিকার বললেন, ‘পারলে ব্যবস্থা করেন, না পারলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দিয়ে দেন।’ শেষ পর্যন্ত আমার পরিচিত ভদ্রলোকই বৃদ্ধের দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন।
মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা, অযত্ন, ক্ষেত্রবিশেষে নিষ্ঠুরতার এই সময়ে মাতৃভক্তির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন আমাদের প্রাণিসম্পদসচিব রওনক মাহমুদ। ২৪ আগস্ট আজকের পত্রিকাসহ কয়েকটি দৈনিকে খবরটি বেরিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সচিব তাঁর বৃদ্ধ মাকে হাসপাতালে দেখাশোনা করার জন্য তাঁর একান্ত সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কুড়িজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সচিবের ৯৫ বছর বয়সী মা জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পালাক্রমে সেখানে ডিউটি করছেন। একই বিষয়ে ওই দিন আরেকটি দৈনিকের খবরে কে কোন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন, তার বিশদ বিবরণও দেওয়া হয়েছে। অবশ্য সচিব রওনক মাহমুদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পত্রিকাটির কাছে।
বলেছেন, ‘আমার অসুস্থ মাকে অফিসের লোকজন দেখতে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও আপনারা নিউজ করছেন। এখন কী করা যাবে? আমি লিখিত কোনো নির্দেশনা দিইনি, এটা বললে আপনারা বলবেন আমি অস্বীকার করছি। ফলে এ বিষয়ে আমাকে আর জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। আপনারা গিয়ে সরেজমিনে দেখেন। যেটি বাস্তবে পাবেন, সেটি লেখেন।’ (সমকাল ২৪ আগস্ট, ২০২১)
সরেজমিনে পরদিন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে বৃদ্ধার পাশে সচিবের বড় ভাই ও তাঁর দুই সন্তানকে দেখতে পেয়েছেন। হাসপাতালের একজন নার্স প্রতিবেদককে বলেছেন, আগের দিন প্রচুর সরকারি কর্মচারী আসা-যাওয়া করেছেন হাসপাতালে। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, সাংবাদিকদের তৎপরতা শুরু হওয়ার পর সচিব সাহেব সতর্ক হয়ে গেছেন এবং ‘সরেজমিনে’ গিয়ে যাতে কেউ অভিযোগের প্রমাণ না পায়, সে ব্যবস্থা করে থাকবেন।
একজন নবতিপর অসুস্থ বৃদ্ধার সেবা শুশ্রূষার জন্য যে কেউ আগ্রহী হয়ে সেখানে যেতে পারেন। এট মানবিক কাজের মধ্যেও পড়ে। তবে তা যদি হয় রীতিমতো নির্দেশনা জারি করে শিফট ভাগ করে দিয়ে, কথা ওঠে তখনই। কেননা, সচিব বড়কর্তা হলেও ব্যক্তিগত কাজে অফিসের কাউকে নিযুক্ত করার অধিকার তাঁর নেই। সচিব রওনক মাহমুদ বিষয়টি অস্বীকার বা এড়াতে চাইলেও এটা পরিষ্কার যে মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের তিনি তাঁর মায়ের সেবায় লাগিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের সার্ভিস রুলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অবশ্যপালনীয় যেসব বিধান রয়েছে, তাতে অফিসের গাড়ি, আসবাব বা যেকোনো সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ।
কেউ করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাঁদের কোনো কর্মকর্তা যদি ব্যক্তিগত কাজে বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যবহার করেন, তাহলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হবে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে সচিব রওনক মাহমুদকে বোধ হয় সেই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে না। কেননা, ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তাঁর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ২৪ আগস্ট সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, সচিব কাউকে তাঁর মায়ের সেবায় নিযুক্ত করেননি। এ কথা সচিব নাকি তাঁকে জানিয়েছেন। মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। তাঁকে একজন নিষ্ঠাবান রাজনীতিক ও সৎ মানুষ হিসেবেই জানি। কিন্তু তিনি কেন তাঁর সচিবের মুখপাত্র সেজে কথা বলতে গেলেন, তা আমার বোধের অগম্য। এটা তো তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। বোধকরি এভাবেই আমাদের রাজনীতিকেরা নিজেদের অজান্তেই আমলাদের অনৈতিক কাজের বৈধতা দিয়ে থাকেন, আশকারা দিয়ে থাকেন।
আর রাজনীতিকদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর মওকাটা আমলারা বোধকরি এভাবে পেয়ে থাকেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১১ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১২ ঘণ্টা আগে