আব্দুর রাজ্জাক
কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একটি ছেলে আমাকে টেলিফোন করে সাহায্যের আবেদন করল এই বলে যে, তারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। আমি একটু হতভম্ব হয়ে গেলাম, এই ছেলেগুলো ভদ্রবেশে চাঁদাবাজি শুরু করল কি না! আমি ‘দেখব’ বলে টেলিফোন রেখে দিয়েছিলাম। ছেলেটি ছিল আমার পূর্বপরিচিত কোনো এক ব্যক্তির সন্তান।
পরে আমি ওদের ঠিকানা সংগ্রহ করে খোঁজখবর নিতে লাগলাম। জানলাম এক বিস্ময়কর তথ্য! ১০-১২টি ছেলে নিজেদের ঘর থেকে, মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সত্যি সত্যি সন্ধ্যার পর রাস্তার পাশে বসা মানুষকে প্যাকেটে করে কিছু চাল-ডাল সরবরাহ করে। আবার খিচুড়ি রান্না করে প্যাকেট করে রাস্তায় অসহায় ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করে। আমি চার-পাঁচ দিন এই রকম লক্ষ করার পর, একদিন ওদের কিছু টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলাম। ওদের কথাবার্তা, চালচলন লক্ষ করলাম। দেখলাম, আমার কাছ থেকে কিছু টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এক চালের ব্যাপারীর কাছে চালের অর্ডার দিল। আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, ওরা কোনো টাকা পেলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য কিনে দু-এক দিনের মধ্যেই অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে।
ওরা কয়েক দিন আগে একটি পরিকল্পনা করল, যেসব মানুষ বস্তিতে অথবা ফুটপাতে রাতযাপন করে, তাদের মধ্যে মশারি বিতরণ করবে। ওরা বলল, ‘এখন ডেঙ্গুর সময়, তাই আমাদের এই মশারি বিতরণের পরিকল্পনা।’
অভিনব এই পরিকল্পনা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। আরও একটু খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলাম। এই ১০-১২টি ছেলে কোনো খারাপ কাজ করে না, কোনো নেশা করে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমরা এই কাজ করছ কেন?’ ওদের উত্তর, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অলস সময় পার করলে অনেক খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়তে পারি। তাই নিজেকে শুদ্ধ রাখার জন্য, খারাপ কাজে মনোনিবেশ না করার জন্য, আমরা এই সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি অসহায়দের প্রতি।’
আমার স্কুল ও কলেজজীবনের কথা মনে পড়ে গেল। আমরা রেড ক্রিসেন্টের সদস্য ছিলাম। জেলা রেড ক্রিসেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে প্রতিটি স্কুলে টিম গঠন করে বন্যার সময়, বিপদের সময় গ্রামে গিয়ে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতাম। এখন পেছন ফিরে দেখি, সেই সময় আমাদের বন্ধুদের মাঝে যারা এসব করেছি, তারা কোনো খারাপ কাজে জড়াইনি। নেশায় আসক্ত হইনি। আজ সবার জীবনযাপন প্রণালি মিলিয়ে দেখি, আমরা যারা ওই মানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলাম, ব্যক্তি পর্যায়ে সমাজে আমাদের একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ‘রোটারেক্ট ক্লাব অব রাজধানী সোনারগাঁও’-এর সৈকতসহ কয়েকটি ছেলে আমাকে আপ্লুত করে চল্লিশ বছর আগে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। যুবসমাজকে নেশামুক্ত রাখতে হলে, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হলে, মাস্তানি-চাঁদাবাজি থেকে দূরে রাখার একটি মোক্ষম হাতিয়ার হলো নিজের সন্তানকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত করতে উদ্বুদ্ধ করা। মানবতার সেবা করলে শুধু সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষগুলো উপকৃত হবে না,
আপনার সন্তান নেশামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ বড় মনের অধিকারী হবে। আগামী দিনে এই সমাজের নেতৃত্ব দেবে আপনার এই সুসন্তান। আমি আমার ছেলেকে প্রস্তাব দিয়েছি, প্রথমে ঘর থেকে নিজে কিছু টাকা নিতে। তার বন্ধুদেরও যেন এমনটাই করতে বলে। এভাবে কিছু টাকা নিয়ে যেন সন্ধ্যার পর অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে। এ ধরনের কাজে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে, সারা জীবন এই কাজটি করার প্রবণতা তার হৃদয়ে বহমান থাকবে।
লেখক: প্রকৌশলী
কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একটি ছেলে আমাকে টেলিফোন করে সাহায্যের আবেদন করল এই বলে যে, তারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। আমি একটু হতভম্ব হয়ে গেলাম, এই ছেলেগুলো ভদ্রবেশে চাঁদাবাজি শুরু করল কি না! আমি ‘দেখব’ বলে টেলিফোন রেখে দিয়েছিলাম। ছেলেটি ছিল আমার পূর্বপরিচিত কোনো এক ব্যক্তির সন্তান।
পরে আমি ওদের ঠিকানা সংগ্রহ করে খোঁজখবর নিতে লাগলাম। জানলাম এক বিস্ময়কর তথ্য! ১০-১২টি ছেলে নিজেদের ঘর থেকে, মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সত্যি সত্যি সন্ধ্যার পর রাস্তার পাশে বসা মানুষকে প্যাকেটে করে কিছু চাল-ডাল সরবরাহ করে। আবার খিচুড়ি রান্না করে প্যাকেট করে রাস্তায় অসহায় ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করে। আমি চার-পাঁচ দিন এই রকম লক্ষ করার পর, একদিন ওদের কিছু টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলাম। ওদের কথাবার্তা, চালচলন লক্ষ করলাম। দেখলাম, আমার কাছ থেকে কিছু টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এক চালের ব্যাপারীর কাছে চালের অর্ডার দিল। আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, ওরা কোনো টাকা পেলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য কিনে দু-এক দিনের মধ্যেই অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে।
ওরা কয়েক দিন আগে একটি পরিকল্পনা করল, যেসব মানুষ বস্তিতে অথবা ফুটপাতে রাতযাপন করে, তাদের মধ্যে মশারি বিতরণ করবে। ওরা বলল, ‘এখন ডেঙ্গুর সময়, তাই আমাদের এই মশারি বিতরণের পরিকল্পনা।’
অভিনব এই পরিকল্পনা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। আরও একটু খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলাম। এই ১০-১২টি ছেলে কোনো খারাপ কাজ করে না, কোনো নেশা করে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমরা এই কাজ করছ কেন?’ ওদের উত্তর, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অলস সময় পার করলে অনেক খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়তে পারি। তাই নিজেকে শুদ্ধ রাখার জন্য, খারাপ কাজে মনোনিবেশ না করার জন্য, আমরা এই সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি অসহায়দের প্রতি।’
আমার স্কুল ও কলেজজীবনের কথা মনে পড়ে গেল। আমরা রেড ক্রিসেন্টের সদস্য ছিলাম। জেলা রেড ক্রিসেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে প্রতিটি স্কুলে টিম গঠন করে বন্যার সময়, বিপদের সময় গ্রামে গিয়ে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতাম। এখন পেছন ফিরে দেখি, সেই সময় আমাদের বন্ধুদের মাঝে যারা এসব করেছি, তারা কোনো খারাপ কাজে জড়াইনি। নেশায় আসক্ত হইনি। আজ সবার জীবনযাপন প্রণালি মিলিয়ে দেখি, আমরা যারা ওই মানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলাম, ব্যক্তি পর্যায়ে সমাজে আমাদের একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ‘রোটারেক্ট ক্লাব অব রাজধানী সোনারগাঁও’-এর সৈকতসহ কয়েকটি ছেলে আমাকে আপ্লুত করে চল্লিশ বছর আগে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। যুবসমাজকে নেশামুক্ত রাখতে হলে, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হলে, মাস্তানি-চাঁদাবাজি থেকে দূরে রাখার একটি মোক্ষম হাতিয়ার হলো নিজের সন্তানকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত করতে উদ্বুদ্ধ করা। মানবতার সেবা করলে শুধু সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষগুলো উপকৃত হবে না,
আপনার সন্তান নেশামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ বড় মনের অধিকারী হবে। আগামী দিনে এই সমাজের নেতৃত্ব দেবে আপনার এই সুসন্তান। আমি আমার ছেলেকে প্রস্তাব দিয়েছি, প্রথমে ঘর থেকে নিজে কিছু টাকা নিতে। তার বন্ধুদেরও যেন এমনটাই করতে বলে। এভাবে কিছু টাকা নিয়ে যেন সন্ধ্যার পর অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে। এ ধরনের কাজে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে, সারা জীবন এই কাজটি করার প্রবণতা তার হৃদয়ে বহমান থাকবে।
লেখক: প্রকৌশলী
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১৩ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১৪ ঘণ্টা আগে