জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা
দ্বিতীয় তলা ছাড়া ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরের সিঁড়িতে ছিল সিলিন্ডার, যেটা খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার। আগুন লাগার পর এগুলো বিস্ফোরিত হওয়ায় মানুষ নিচে নামতে পারেনি। ভবনটা মনে হয়েছে, অনেকটা আগুনের চুল্লির মতো।—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস।
বোঝাই যাচ্ছে, দুর্ঘটনাটা অবশ্যম্ভাবীই ছিল। এই অবস্থা নিঃসন্দেহে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কেউ কখনো কি পরিদর্শনে যাননি? ভোক্তা অধিকার? অথবা কর আদায়ের কঠিন টার্গেট পূরণের চাপে থাকা এনবিআরের লোকেরা নিশ্চয়ই একাধিকবার গিয়ে হম্বিতম্বি করে এসেছেন! খাবারের বেশি দাম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি, খাবারে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার, ভ্যাট চালানের রসিদ না দেওয়া—ইত্যাদি ইত্যাদি জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বুলি অত্যন্ত দায়িত্বশীলদের মতোই ছেড়েছেন।
উদাসীন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের আকস্মিক অসুবিধায় ক্রেতা ও ভোক্তাসাধারণেরা হয়তো তখন প্রতিশোধ স্পৃহা মিটিয়ে নেওয়ার আনন্দ পেয়েছেন। গণমাধ্যমে সচিত্র ও ভিডিওসহ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। কর্মকর্তারা বাহবা পেয়েছেন। ব্যস, ওইটুকুই!
আজকের বেইলি শুধু রোড নয়, এর আগে পুরান ঢাকার ঘটনাগুলোতেই স্পষ্ট হয়েছে, একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর দপ্তরে দপ্তরে তদন্ত কমিটি হয়। কমিটিগুলো হয়তো ভালো ভালো কিছু সুপারিশও করে। কিন্তু কেন বাস্তবায়ন হয় না, সেই খবর পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে কখনো জবাবদিহি করতেও দেখা যায়নি।
আর আমাদের দেশ এতটাই ঘটনাবহুল, গণমাধ্যমের ব্রডশিটে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এবং মানুষের স্মৃতিতে একটি ঘটনা বেশি দিন স্থায়ী হওয়ার জো নেই! ফলে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে। সংবাদমাধ্যমগুলো কয়েক দিন যাবৎ অত্যন্ত আবেগঘন মর্মান্তিক ছবিসহ প্রথম পাতাজুড়ে শিরোনাম করতে পারছে। এরপর সব আগের মতোই চলছে।
বিশেষ করে রাজধানীর আগুনের ঘটনাগুলো, গ্যাস সিলিন্ডার অথবা শর্ট সার্কিট থেকে ঘটছে। অন্তত পুরান ঢাকার ঘটনাগুলোর সূত্রপাত রেস্টুরেন্টের গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই। একেকটা ঘটনার পরই গণমাধ্যমে উঠে আসে: ভবনের নকশা অনুমোদিত ছিল না, অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না অথবা ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ, ভবনে ফায়ার এক্সিট ছিল না, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ছিল না অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ, ইলেকট্রিক ওয়্যারিং দক্ষ হাতে করা হয়নি অথবা নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব খবর বেরোনোর পর দেশের অসাধু, উদাসীন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠী উদ্ধারের আরেকবার মওকা পাওয়া যায়। দোষী সাব্যস্ত করে দু-একজনকে জেল-জরিমানা দেওয়া হয়। এতে আমাদের দেশের ক্ষমতাহীন, ন্যূনতম নাগরিক অধিকার বঞ্চিত; পুলিশের, ডাকাতের, ছিনতাইকারীর, রাজনৈতিক ক্যাডার/কর্মীর, সরকারি আমলার, প্রভাবশালীর, সর্বশক্তিমান করপোরেটের হাতে সকাল-সন্ধ্যা মার খাওয়া মেরুদণ্ডহীন মানুষেরা পরোক্ষ প্রতিশোধ মেটানোর আনন্দ পায়। এরপর আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে মুখ গোঁজে; মধ্যবিত্ত কর্তাটি, নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি বেরিয়ে পড়ে রোজগারের সন্ধানে।
বারবারই এভাবে ক্ষমতাহীনের মগজে পালক বুলিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাহীনদের অপমৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে। এবার দোষটা অসাধু ব্যবসায়ী আর অসচেতন/কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের ওপর চাপিয়ে দায় এড়িয়ে নির্ভার থাকার সংস্কৃতি বন্ধ হোক।
মানুষ অপরাধপ্রবণ—এটি ধরে নিয়েই রাষ্ট্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাখা হয়, বিভিন্ন খাতের জন্য আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বেইলি রোডের ব্যবসায়ীরা খারাপ—এটি ধরে নিলেও এসব দপ্তর কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। দেশের করদাতাদের টাকায় এই দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা হয়, তাঁদের কাজই শুধু এসব দেখভাল করা। নাগরিকদের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধানই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ জন্যই নাগরিক তার উপার্জনের একটি অংশ রাষ্ট্রকে দেয়।
এ ছাড়া আর আর যারা নাগরিকদের উপার্জনে ভাগ বসান, তাঁদেরও দায় নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। ঢাকায় এখন অলিতে-গলিতে রেস্টুরেন্ট। প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, এটি ভালো খবর। কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে কী হতে পারে, তা এক রাতে প্রায় অর্ধশত জীবন দিয়ে বুঝতে যেন না হয়!
রেস্টুরেন্ট বিলাসিতার এই সময়ে আরেক পেশার রমরমা চলছে: ফুড ভ্লগার। তাঁরা নতুন নতুন রেস্টুরেন্টে গিয়ে প্লেটভর্তি খাবার নেন, সেসব খাবারের রিভিউ দিয়ে পয়সা কামান। তাঁরা সেসব রেস্টুরেন্টের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার দিকে একটু নজর দিলে হয়তো আরেকটু কম প্রাণহানি দেখতে হবে।
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
দ্বিতীয় তলা ছাড়া ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরের সিঁড়িতে ছিল সিলিন্ডার, যেটা খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার। আগুন লাগার পর এগুলো বিস্ফোরিত হওয়ায় মানুষ নিচে নামতে পারেনি। ভবনটা মনে হয়েছে, অনেকটা আগুনের চুল্লির মতো।—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস।
বোঝাই যাচ্ছে, দুর্ঘটনাটা অবশ্যম্ভাবীই ছিল। এই অবস্থা নিঃসন্দেহে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কেউ কখনো কি পরিদর্শনে যাননি? ভোক্তা অধিকার? অথবা কর আদায়ের কঠিন টার্গেট পূরণের চাপে থাকা এনবিআরের লোকেরা নিশ্চয়ই একাধিকবার গিয়ে হম্বিতম্বি করে এসেছেন! খাবারের বেশি দাম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি, খাবারে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার, ভ্যাট চালানের রসিদ না দেওয়া—ইত্যাদি ইত্যাদি জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বুলি অত্যন্ত দায়িত্বশীলদের মতোই ছেড়েছেন।
উদাসীন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের আকস্মিক অসুবিধায় ক্রেতা ও ভোক্তাসাধারণেরা হয়তো তখন প্রতিশোধ স্পৃহা মিটিয়ে নেওয়ার আনন্দ পেয়েছেন। গণমাধ্যমে সচিত্র ও ভিডিওসহ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। কর্মকর্তারা বাহবা পেয়েছেন। ব্যস, ওইটুকুই!
আজকের বেইলি শুধু রোড নয়, এর আগে পুরান ঢাকার ঘটনাগুলোতেই স্পষ্ট হয়েছে, একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর দপ্তরে দপ্তরে তদন্ত কমিটি হয়। কমিটিগুলো হয়তো ভালো ভালো কিছু সুপারিশও করে। কিন্তু কেন বাস্তবায়ন হয় না, সেই খবর পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে কখনো জবাবদিহি করতেও দেখা যায়নি।
আর আমাদের দেশ এতটাই ঘটনাবহুল, গণমাধ্যমের ব্রডশিটে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এবং মানুষের স্মৃতিতে একটি ঘটনা বেশি দিন স্থায়ী হওয়ার জো নেই! ফলে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে। সংবাদমাধ্যমগুলো কয়েক দিন যাবৎ অত্যন্ত আবেগঘন মর্মান্তিক ছবিসহ প্রথম পাতাজুড়ে শিরোনাম করতে পারছে। এরপর সব আগের মতোই চলছে।
বিশেষ করে রাজধানীর আগুনের ঘটনাগুলো, গ্যাস সিলিন্ডার অথবা শর্ট সার্কিট থেকে ঘটছে। অন্তত পুরান ঢাকার ঘটনাগুলোর সূত্রপাত রেস্টুরেন্টের গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই। একেকটা ঘটনার পরই গণমাধ্যমে উঠে আসে: ভবনের নকশা অনুমোদিত ছিল না, অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না অথবা ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ, ভবনে ফায়ার এক্সিট ছিল না, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ছিল না অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ, ইলেকট্রিক ওয়্যারিং দক্ষ হাতে করা হয়নি অথবা নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব খবর বেরোনোর পর দেশের অসাধু, উদাসীন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠী উদ্ধারের আরেকবার মওকা পাওয়া যায়। দোষী সাব্যস্ত করে দু-একজনকে জেল-জরিমানা দেওয়া হয়। এতে আমাদের দেশের ক্ষমতাহীন, ন্যূনতম নাগরিক অধিকার বঞ্চিত; পুলিশের, ডাকাতের, ছিনতাইকারীর, রাজনৈতিক ক্যাডার/কর্মীর, সরকারি আমলার, প্রভাবশালীর, সর্বশক্তিমান করপোরেটের হাতে সকাল-সন্ধ্যা মার খাওয়া মেরুদণ্ডহীন মানুষেরা পরোক্ষ প্রতিশোধ মেটানোর আনন্দ পায়। এরপর আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে মুখ গোঁজে; মধ্যবিত্ত কর্তাটি, নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি বেরিয়ে পড়ে রোজগারের সন্ধানে।
বারবারই এভাবে ক্ষমতাহীনের মগজে পালক বুলিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাহীনদের অপমৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে। এবার দোষটা অসাধু ব্যবসায়ী আর অসচেতন/কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের ওপর চাপিয়ে দায় এড়িয়ে নির্ভার থাকার সংস্কৃতি বন্ধ হোক।
মানুষ অপরাধপ্রবণ—এটি ধরে নিয়েই রাষ্ট্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাখা হয়, বিভিন্ন খাতের জন্য আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বেইলি রোডের ব্যবসায়ীরা খারাপ—এটি ধরে নিলেও এসব দপ্তর কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। দেশের করদাতাদের টাকায় এই দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা হয়, তাঁদের কাজই শুধু এসব দেখভাল করা। নাগরিকদের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধানই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ জন্যই নাগরিক তার উপার্জনের একটি অংশ রাষ্ট্রকে দেয়।
এ ছাড়া আর আর যারা নাগরিকদের উপার্জনে ভাগ বসান, তাঁদেরও দায় নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। ঢাকায় এখন অলিতে-গলিতে রেস্টুরেন্ট। প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, এটি ভালো খবর। কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে কী হতে পারে, তা এক রাতে প্রায় অর্ধশত জীবন দিয়ে বুঝতে যেন না হয়!
রেস্টুরেন্ট বিলাসিতার এই সময়ে আরেক পেশার রমরমা চলছে: ফুড ভ্লগার। তাঁরা নতুন নতুন রেস্টুরেন্টে গিয়ে প্লেটভর্তি খাবার নেন, সেসব খাবারের রিভিউ দিয়ে পয়সা কামান। তাঁরা সেসব রেস্টুরেন্টের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার দিকে একটু নজর দিলে হয়তো আরেকটু কম প্রাণহানি দেখতে হবে।
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২০ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
২০ ঘণ্টা আগে