কামরুল হাসান, ঢাকা
অনেক দিন রিপোর্টিং করার সুবাদে রাজধানীর পথঘাট আমার কাছে হাতের রেখার মতো। অচেনা কোনো এলাকা নেই। মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের উল্টো দিকে ১ নম্বর সড়কের মুখের তিনতলা বাড়িটি চিনতেও কোনো অসুবিধা হলো না। এই বাড়িতেই থাকেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী এ এফ এম মহিতুল ইসলাম। একজনকে তাঁর নাম বলতেই ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে বললেন, ওই দেখেন তিনি বসে আছেন। বাড়ির সামনে একটি বাগান, তার ভেতরে জনা কয়েক পুলিশ নিয়ে বসে আছেন তিনি।
আমি তাঁর পাশে গিয়ে পরিচয় দিতেই হাতের ইশারা দিয়ে চেয়ারে বসতে বললেন। কথা বলার উপায় নেই, অনর্গল তাঁর ফোন বেজে চলেছে। কোনোটা নিজে ধরছেন, কোনোটা পাশের কাউকে দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে একটি শিশু এসে এটা-সেটা বলছে। পুলিশের এক সদস্য বললেন, ‘স্যার, কাল অনেক কাজ। টিভি রেকর্ডিং, বঙ্গবন্ধু ভবনে যেতে হবে।’ তিনি তাঁকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে আমাকে বললেন, বলেন কী জানতে চান।
প্রথমে জানতে চাইলাম, আপনি কি এখানেই থাকেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, বাড়ির নিচতলায় স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকি।’ তিনি হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওমা... ১২টা বেজে গেছে! আমি ভাই ডায়াবেটিসের রোগী, তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।’
মহিতুল ইসলামের সঙ্গে আমার এই কথোপকথন ২০০৯ সালের ১৮ নভেম্বর সকালে। এর পরদিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায় উপলক্ষে বাদীর সঙ্গে কথা বলার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছি। কিন্তু মহিতুল ইসলামকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি থাকতেন অনেকটা আত্মগোপনে। মামলার রায়ের দিন যত কাছে আসছিল, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর শঙ্কা তত বাড়ছিল।
কথায় কথায় আমাকে বললেন, ‘১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা করার পর থেকে পুলিশের পাহারায় ছিলাম। প্রথম চার বছর বাড়িতে পুলিশ ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ তুলে নেওয়া হয়। এরপর শুরু হলো নানা অত্যাচার। অধিকাংশ দিন বাড়িতে থাকতাম না। রাতে ঢিল পড়ত বাড়িতে। আমার জীবন ছিল ফেরারি আসামির মতো। অচেনা লোকজন খুঁজতে আসত। ফোনে ভয়ভীতি দেখাত। ভয়ে থানা-পুলিশের ধারেকাছেও যেতাম না। বাড়ির সামনে ফুলের টব ছিল, একদিন কে বা কারা সেটা নিয়ে গেল। একটা পোষা ছাগল ছিল, সেটাও লুট হলো। একেকবার মনে হতো আর বাঁচতে পারব না, কিন্তু সাহস হারাইনি। বুকে পাথর চেপে সময় পার করেছি।’
মহিতুল ইসলামের আদিবাস ছিল যশোরে। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ ফজলুল হক মনি, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ ও সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে যে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই বাহিনীর সদস্য। যুদ্ধের পরে ’৭২ সালে ঢাকায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র জমা দিতে। তার আগে এসএসসি পাস করেন। তখন মুখ্য সচিব ছিলেন রুহুল কুদ্দুস। তিনি চাকরির প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যান। তিন-চার দিনের মধ্যে চাকরি হয় শাখা সহকারী হিসেবে। এর মধ্যে একদিন মুখ্য সচিবের অফিস থেকে একটি ফাইল নিয়ে যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। প্রথম দেখায় তাঁকে পছন্দ করেন বঙ্গবন্ধু, সেদিনই তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ জুটে যায়। সেই থেকে তিনি হয়ে যান জাতির জনকের ব্যক্তিগত সহকারী।
জানতে চাইলাম, আপনি কী কাজ করতেন? তিনি বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নিচতলায় অফিস ছিল, আমার কাজ ছিল রাষ্ট্রপতির পক্ষে ফোন ধরা আর প্রটোকল রক্ষা করা।’ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ রাতের কথা তুলতেই মহিতুল বললেন, “সেদিন রাতে বাসার মিস্ত্রি মতিন আমাকে ঘুম থেকে জাগায়। বলে, প্রেসিডেন্ট আমাকে ডাকছেন। সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণ হয়েছে, পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ফোন করতে হবে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু নিজেই নিচে নেমে আসেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ ফোনটি আমিই ধরিয়ে দিয়েছিলাম। না, সেই ফোনে কেউ আর সাড়া দেয়নি। বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট বলছি, আমার বাড়ির সামনে গুলি হচ্ছে, তোমরা দেখো।’ এরপর তিনি ওপরে চলে যান।” তিনি বলেই যাচ্ছেন, “ততক্ষণে ৩২ নম্বরের আশপাশে গুলি শুরু হয়েছে। একপর্যায়ে শেখ কামাল নিচে নামেন। তিনি নামতে না নামতেই কয়েকজন ঘাতক বাড়ির ভেতরে ঢোকে। তারা কামালকে হাত উঁচিয়ে থাকতে বলে। ব্রাশফায়ারে আমার সামনেই নিথর হয়ে যায় শেখ কামালের শরীর। ওই গুলিতে আমি, ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও এসবির এক দারোগা আহত হই। আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। ঘাতকেরা আমাদের চুল ধরে টেনে লাইনে দাঁড় করায়। একপর্যায়ে ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর গলা শোনা যায়। তিনি চিৎকার করে বলছেন, ‘তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?’ সঙ্গে সঙ্গে গুলির আওয়াজ। লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। রাসেল দৌড়ে এসে এ অবস্থায় আমাকে জড়িয়ে ধরে। সে ভয়ে ভয়ে বলে, ‘ভাইয়া, ওরা আমাকে মারবে না তো।’ আমি তাকে অভয় দিই। এ সময় একজন ঘাতক তাকে জোর করে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভবনের গেটের পুলিশ বক্সে নিয়ে বসিয়ে রাখে। একজন ঘাতক মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি বলে ওপরে নিয়ে তাকে গুলি করে।”
তারপর কী হলো? প্রশ্ন করতেই মহিতুল বললেন, ‘সকাল ১০টা পর্যন্ত আমরা সবাই ৩২ নম্বরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পা থেকে তখনো রক্ত ঝরছিল। এরপর আর্মির গাড়িতে করে আমাদের ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। সেখানে পাহারায় চিকিৎসা চলছিল। তিন দিন থাকার পর ফাঁক বুঝে পালিয়ে যশোরে চলে যাই। ছয় দিন পর যশোর থেকে সেনাবাহিনী আমাকে ঢাকায় ধরে আনে। গণভবনে তখন তদন্ত কমিশন কাজ করছিল। তারা আমাকে আটক করে জেরা করে।’
জানতে চাইলাম, আপনি কি ঘাতকদের নাম কমিশনের কাছে বলেছিলেন? তিনি বললেন, ‘না বলিনি। আমার মনে হয়েছিল এদের সবকিছু সাজানো, লোক দেখানো। এ কারণে তাদের জেরার জবাবে আমি কিছুই বলিনি। তখন খন্দকার মোশতাকের মুখ্য সচিব শাহরিয়ার জেড এ ইকবাল আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। পরে আমি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেছি। ২০০১ সালের ১ এপ্রিল বিএনপি সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করে।’
আগে কখনো মামলা করতে চেয়েছিলেন—প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে ত্বরিত জবাব দিলেন মহিতুল। বললেন, “’৭৬ সালের ২৩ অক্টোবর একবার চেষ্টা করেছিলাম। সরকারের অনুমতি ছাড়া লালবাগ থানায় গিয়েছিলাম মামলা করতে। এজাহারের বিবরণ শুনে ডিউটি অফিসার গালে এক চড় কষিয়ে বললেন, ‘তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি।’ এরপর অপেক্ষায় ছিলাম, ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর মামলা করলাম ধানমন্ডি থানায়।”
মহিতুল বলছিলেন, ‘ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না, এটা হতে পারে না। আমি মনে করেছিলাম, যত দিন বেঁচে আছি, আমার পক্ষে যা করার করে যাব। কিছুটা হলেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঋণ শোধ করতে পারব। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ঘাতকদের সাজা কার্যকর দেখে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় হয়েছে, আসামিদের সাজাও কার্যকর হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট তিনি মারা যান।
আর মাত্র এক দিন পরেই ১৫ আগস্টের সেই কালরাত। শোকাবহ এই দিনে অকুতোভয় মানুষটির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
আরও পড়ুন:
অনেক দিন রিপোর্টিং করার সুবাদে রাজধানীর পথঘাট আমার কাছে হাতের রেখার মতো। অচেনা কোনো এলাকা নেই। মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের উল্টো দিকে ১ নম্বর সড়কের মুখের তিনতলা বাড়িটি চিনতেও কোনো অসুবিধা হলো না। এই বাড়িতেই থাকেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী এ এফ এম মহিতুল ইসলাম। একজনকে তাঁর নাম বলতেই ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে বললেন, ওই দেখেন তিনি বসে আছেন। বাড়ির সামনে একটি বাগান, তার ভেতরে জনা কয়েক পুলিশ নিয়ে বসে আছেন তিনি।
আমি তাঁর পাশে গিয়ে পরিচয় দিতেই হাতের ইশারা দিয়ে চেয়ারে বসতে বললেন। কথা বলার উপায় নেই, অনর্গল তাঁর ফোন বেজে চলেছে। কোনোটা নিজে ধরছেন, কোনোটা পাশের কাউকে দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে একটি শিশু এসে এটা-সেটা বলছে। পুলিশের এক সদস্য বললেন, ‘স্যার, কাল অনেক কাজ। টিভি রেকর্ডিং, বঙ্গবন্ধু ভবনে যেতে হবে।’ তিনি তাঁকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে আমাকে বললেন, বলেন কী জানতে চান।
প্রথমে জানতে চাইলাম, আপনি কি এখানেই থাকেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, বাড়ির নিচতলায় স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকি।’ তিনি হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওমা... ১২টা বেজে গেছে! আমি ভাই ডায়াবেটিসের রোগী, তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।’
মহিতুল ইসলামের সঙ্গে আমার এই কথোপকথন ২০০৯ সালের ১৮ নভেম্বর সকালে। এর পরদিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায় উপলক্ষে বাদীর সঙ্গে কথা বলার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছি। কিন্তু মহিতুল ইসলামকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি থাকতেন অনেকটা আত্মগোপনে। মামলার রায়ের দিন যত কাছে আসছিল, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর শঙ্কা তত বাড়ছিল।
কথায় কথায় আমাকে বললেন, ‘১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা করার পর থেকে পুলিশের পাহারায় ছিলাম। প্রথম চার বছর বাড়িতে পুলিশ ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ তুলে নেওয়া হয়। এরপর শুরু হলো নানা অত্যাচার। অধিকাংশ দিন বাড়িতে থাকতাম না। রাতে ঢিল পড়ত বাড়িতে। আমার জীবন ছিল ফেরারি আসামির মতো। অচেনা লোকজন খুঁজতে আসত। ফোনে ভয়ভীতি দেখাত। ভয়ে থানা-পুলিশের ধারেকাছেও যেতাম না। বাড়ির সামনে ফুলের টব ছিল, একদিন কে বা কারা সেটা নিয়ে গেল। একটা পোষা ছাগল ছিল, সেটাও লুট হলো। একেকবার মনে হতো আর বাঁচতে পারব না, কিন্তু সাহস হারাইনি। বুকে পাথর চেপে সময় পার করেছি।’
মহিতুল ইসলামের আদিবাস ছিল যশোরে। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ ফজলুল হক মনি, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ ও সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে যে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই বাহিনীর সদস্য। যুদ্ধের পরে ’৭২ সালে ঢাকায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র জমা দিতে। তার আগে এসএসসি পাস করেন। তখন মুখ্য সচিব ছিলেন রুহুল কুদ্দুস। তিনি চাকরির প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যান। তিন-চার দিনের মধ্যে চাকরি হয় শাখা সহকারী হিসেবে। এর মধ্যে একদিন মুখ্য সচিবের অফিস থেকে একটি ফাইল নিয়ে যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। প্রথম দেখায় তাঁকে পছন্দ করেন বঙ্গবন্ধু, সেদিনই তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ জুটে যায়। সেই থেকে তিনি হয়ে যান জাতির জনকের ব্যক্তিগত সহকারী।
জানতে চাইলাম, আপনি কী কাজ করতেন? তিনি বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নিচতলায় অফিস ছিল, আমার কাজ ছিল রাষ্ট্রপতির পক্ষে ফোন ধরা আর প্রটোকল রক্ষা করা।’ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ রাতের কথা তুলতেই মহিতুল বললেন, “সেদিন রাতে বাসার মিস্ত্রি মতিন আমাকে ঘুম থেকে জাগায়। বলে, প্রেসিডেন্ট আমাকে ডাকছেন। সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণ হয়েছে, পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ফোন করতে হবে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু নিজেই নিচে নেমে আসেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ ফোনটি আমিই ধরিয়ে দিয়েছিলাম। না, সেই ফোনে কেউ আর সাড়া দেয়নি। বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট বলছি, আমার বাড়ির সামনে গুলি হচ্ছে, তোমরা দেখো।’ এরপর তিনি ওপরে চলে যান।” তিনি বলেই যাচ্ছেন, “ততক্ষণে ৩২ নম্বরের আশপাশে গুলি শুরু হয়েছে। একপর্যায়ে শেখ কামাল নিচে নামেন। তিনি নামতে না নামতেই কয়েকজন ঘাতক বাড়ির ভেতরে ঢোকে। তারা কামালকে হাত উঁচিয়ে থাকতে বলে। ব্রাশফায়ারে আমার সামনেই নিথর হয়ে যায় শেখ কামালের শরীর। ওই গুলিতে আমি, ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও এসবির এক দারোগা আহত হই। আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। ঘাতকেরা আমাদের চুল ধরে টেনে লাইনে দাঁড় করায়। একপর্যায়ে ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর গলা শোনা যায়। তিনি চিৎকার করে বলছেন, ‘তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?’ সঙ্গে সঙ্গে গুলির আওয়াজ। লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। রাসেল দৌড়ে এসে এ অবস্থায় আমাকে জড়িয়ে ধরে। সে ভয়ে ভয়ে বলে, ‘ভাইয়া, ওরা আমাকে মারবে না তো।’ আমি তাকে অভয় দিই। এ সময় একজন ঘাতক তাকে জোর করে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভবনের গেটের পুলিশ বক্সে নিয়ে বসিয়ে রাখে। একজন ঘাতক মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি বলে ওপরে নিয়ে তাকে গুলি করে।”
তারপর কী হলো? প্রশ্ন করতেই মহিতুল বললেন, ‘সকাল ১০টা পর্যন্ত আমরা সবাই ৩২ নম্বরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পা থেকে তখনো রক্ত ঝরছিল। এরপর আর্মির গাড়িতে করে আমাদের ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। সেখানে পাহারায় চিকিৎসা চলছিল। তিন দিন থাকার পর ফাঁক বুঝে পালিয়ে যশোরে চলে যাই। ছয় দিন পর যশোর থেকে সেনাবাহিনী আমাকে ঢাকায় ধরে আনে। গণভবনে তখন তদন্ত কমিশন কাজ করছিল। তারা আমাকে আটক করে জেরা করে।’
জানতে চাইলাম, আপনি কি ঘাতকদের নাম কমিশনের কাছে বলেছিলেন? তিনি বললেন, ‘না বলিনি। আমার মনে হয়েছিল এদের সবকিছু সাজানো, লোক দেখানো। এ কারণে তাদের জেরার জবাবে আমি কিছুই বলিনি। তখন খন্দকার মোশতাকের মুখ্য সচিব শাহরিয়ার জেড এ ইকবাল আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। পরে আমি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেছি। ২০০১ সালের ১ এপ্রিল বিএনপি সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করে।’
আগে কখনো মামলা করতে চেয়েছিলেন—প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে ত্বরিত জবাব দিলেন মহিতুল। বললেন, “’৭৬ সালের ২৩ অক্টোবর একবার চেষ্টা করেছিলাম। সরকারের অনুমতি ছাড়া লালবাগ থানায় গিয়েছিলাম মামলা করতে। এজাহারের বিবরণ শুনে ডিউটি অফিসার গালে এক চড় কষিয়ে বললেন, ‘তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি।’ এরপর অপেক্ষায় ছিলাম, ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর মামলা করলাম ধানমন্ডি থানায়।”
মহিতুল বলছিলেন, ‘ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না, এটা হতে পারে না। আমি মনে করেছিলাম, যত দিন বেঁচে আছি, আমার পক্ষে যা করার করে যাব। কিছুটা হলেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঋণ শোধ করতে পারব। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ঘাতকদের সাজা কার্যকর দেখে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় হয়েছে, আসামিদের সাজাও কার্যকর হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট তিনি মারা যান।
আর মাত্র এক দিন পরেই ১৫ আগস্টের সেই কালরাত। শোকাবহ এই দিনে অকুতোভয় মানুষটির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
আরও পড়ুন:
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘ইসকনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি দেয়নি হেফাজতে ইসলাম বরং মুসলিমদের উত্তেজিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হেফাজত দায়িত্ব নিয়েছে
১৫ মিনিট আগেসাবেক প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করীম আর নেই। আজ শনিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।
১ ঘণ্টা আগেহোটেল সোনারগাঁওয়ে চলছে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সম্মেলন। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এতে ৮০ টিরও বেশি দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি আলোচক, ৩০০ জন প্রতিনিধিসহ ৮০০ শোর অংশগ্রহণকারী রয়েছেন।
১ ঘণ্টা আগেসেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল সম্মেলন’ শুরু হয়েছে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৩ ঘণ্টা আগে