বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
যেসব হত্যাকাণ্ড মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়, তার রেশ সহজে মিলিয়ে যায় না। মানুষ হয়তো সব সময় প্রতিবাদে সরব থাকতে পারে না, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সবকিছু ভুলে যায়। আসলে ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা কখনো মরে না। কয়েক বছর আগে নুবান হত্যার রায় শুনে আমার সে রকমই মনে হয়েছিল। নুবানের কথা মনে আছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যিনি খুন হয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক খুন হওয়ার পর যে রকম হইচই হয়, নুবানের ক্ষেত্রেও তা কিছুটা হয়েছিল। এরপর সেই হত্যার বিচার নিয়ে আর কাউকে কখনো সরব হতে দেখিনি—না রাষ্ট্র, না প্রতিষ্ঠান, না পরিবার। কেন তারা সরব হয়নি, সেটা এখনো বিস্ময়ের।
নুবান আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক। কৃতী বলছি এ কারণে যে, ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পরীক্ষায় অর্থনীতিতে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাঁকে শিক্ষকতায় নিয়ে আসে। নুবানের বাবা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক। দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সুখের সংসার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির পর কাজী সোহানা নাজনীনকে বিয়ে করেন নুবান। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের একটি বাসায়। ১৯৯৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সেই বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন আসাদ গেটে নিজের ক্যামেরা মেরামত করার উদ্দেশ্যে। আধঘণ্টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা বলে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু আর ফেরেননি।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা এলাকায় অজ্ঞাতনামা আততায়ীরা তাঁকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে গুরুতর আহত করে ফেলে যায়। তেজগাঁও থানার ওসি খবর পেয়ে অচেতন অবস্থায় তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে ভর্তি করান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় তিনি মারা যান।
ঘটনার দিন মোহাম্মদপুরের বাসায় নুবানের স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তাঁর মা, বোন পঞ্চগড়ে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাতে নুবানের বন্ধু মিল্টন একটি ভিডিও ক্যাসেট দেওয়ার জন্য সেই বাসায় যান। সেখান থেকে তেজগাঁও থানায় গিয়ে নুবানের নিখোঁজ হওয়ার খবর দিয়ে একটি জিডি করেন। যদিও ওই সময় নুবান মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নুবান মারা যাওয়ার পর তাঁর শ্বশুর কাজী শামসুল হুদা তেজগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম ছিল না।
তেজগাঁও থানা-পুলিশ সে সময় চার ছিনতাইকারীকে ধরে বলার চেষ্টা করেছিল, এটি ছিনতাইকারীদের কাজ। যদিও নুবানের কাছে ছিনতাই হওয়ার মতো কিছু ছিল না। এরপর মামলা যায় ডিবিতে। সেখানে লোকদেখানো কিছু তদন্ত এবং আরও পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়। পত্রপত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হলে মামলা যায় সিআইডিতে। আবদুল কাহার আকন্দ প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি তদন্তের শুরুতেই শরীয়তপুরের জাজিরার কে এম আলমগীর নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে আরও তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা সেই মামলা তদন্ত করেন।
তখন নুবানের খুনের কারণ হিসেবে দুটি বিষয় সামনে এসেছিল। প্রথমে বলা হয়, এই খুনে নুবানের স্ত্রী কাজী সোহানা নাজনীন ও তাঁর বন্ধু মোহাইমিনুর রহমান মিল্টনের হাত আছে। নুবানের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই সোহানা-মিল্টনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নুবানকে খুন করে পথের কাঁটা সরান তাঁরা। নুবানের শাশুড়ি মেহেরুন্নেসা আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকারও করেছিলেন।
আর দ্বিতীয়টি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নুবানের অবস্থান নেওয়া। সে সময় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং বিভাগের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এতে একজন শিক্ষক চাকরি হারান, আরেকজনকে তদন্তের পর বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় কিছু ছাত্র ও কয়েকজন শিক্ষক নুবানের ওপর রুষ্ট হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দি’ দিয়েছিলেন নুবান। পুলিশ ও চিকিৎসকের উপস্থিতিতে বলেছিলেন, ‘মোরশেদ সব জানে। ঈর্ষা।’ তাঁর এই জবানবন্দির ব্যক্তিটি হলেন নুবানের সহকর্মী প্রভাষক এ কে এম মাহবুব মোরশেদ। কিন্তু পুলিশ তাঁদের কাউকেই কখনো আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাসের মাথায় ১৯৯৬ সালে এ কে এম মাহবুব মোরশেদ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। নুবান মারা যাওয়ার পর মোহাইমিনুর রহমান মিল্টনকে বিয়ে করে বিদেশে চলে যান নুবানের স্ত্রী কাজী সোহানা নাজনীন।
এ মামলা তদন্ত করে ২০০২ সালের ১ জুলাই অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী সুপার মো. আমিনুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে নুবানের স্ত্রী কাজী সোহানা নাজনীনের সম্পর্ক। সোহানা ও তাঁর বর্তমান স্বামী মোহাইমিনুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন এবং হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা প্রভাষক এ কে এম মাহবুব মোরশেদ জানতেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমে মোরশেদের এই বক্তব্য আনা হয়। মোরশেদ বলেন, খুন হওয়ার আগে নুবান আহমেদ বলেছিলেন, কিছু ছাত্র তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন।
নুবান আহমেদ খুন হওয়ার পর তাঁর শ্বশুর কাজী শামসুল হুদা এজাহারে ও সাক্ষ্যে বলেন, নুবানের অবস্থানের কারণে ১৫ জন ছাত্রের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।
মজার ব্যাপার হলো, এই অভিযোগপত্র দেওয়ার কিছুদিন পর ডিভি লটারি পেয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
এরপর বিচার শুরু হয়। মহানগর দায়রা জজ আদালতের মূল বিচারক, ভারপ্রাপ্ত বিচারকসহ অন্তত ১২ জন বিচারক এই মামলার বিচারের কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। সবাই মামলার তদন্তে অবহেলা আর সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি দেখে বিস্মিত হন। অবশেষে ২০১৮ সালের ৫ জুন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। তিনি তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। আদালত বলেন, এ হত্যার তদন্ত ছিল ‘অপ্রতুল’, প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। নুবানের মা, বোনসহ মামলার সাক্ষীদের কেউই সরাসরি হত্যার অভিযোগে কাউকে অভিযুক্ত করেননি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও আরও সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হন।
নুবানের শ্বশুর এবং তাঁর শাশুড়ি মেহেরুন্নেসাও মামলায় সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু তাঁদের জবানবন্দিতে তাঁরা নিজের মেয়ে বা অন্য দুই প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য দেননি।
আদালত বলেছেন, ‘অপরাধীদের হাতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এ ঘৃণ্য অপরাধের বিচার না পাওয়াটাও দুর্ভাগ্যজনক।’
‘আষাঢ়ে নয়’ লেখার আগে কাল ফোন করেছিলাম নুবানের বড় বোন আসফিয়া সাবিনাকে। কথা বলতে গিয়ে তাঁর কণ্ঠ ধরে এসেছে। বললেন, ‘কী হবে আর এ নিয়ে কথা বলে!’
কথা শেষ করে মনটা খারাপ হয়ে গেল। নুবান খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছিল, তারা সব উধাও। শুধু কোথাও কেউ নেই—না অভিযুক্ত, না আপনজন, না ন্যায়বিচার। এমনকি কোনো কথাও নেই।
আরও পড়ুন:
যেসব হত্যাকাণ্ড মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়, তার রেশ সহজে মিলিয়ে যায় না। মানুষ হয়তো সব সময় প্রতিবাদে সরব থাকতে পারে না, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সবকিছু ভুলে যায়। আসলে ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা কখনো মরে না। কয়েক বছর আগে নুবান হত্যার রায় শুনে আমার সে রকমই মনে হয়েছিল। নুবানের কথা মনে আছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যিনি খুন হয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক খুন হওয়ার পর যে রকম হইচই হয়, নুবানের ক্ষেত্রেও তা কিছুটা হয়েছিল। এরপর সেই হত্যার বিচার নিয়ে আর কাউকে কখনো সরব হতে দেখিনি—না রাষ্ট্র, না প্রতিষ্ঠান, না পরিবার। কেন তারা সরব হয়নি, সেটা এখনো বিস্ময়ের।
নুবান আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক। কৃতী বলছি এ কারণে যে, ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পরীক্ষায় অর্থনীতিতে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাঁকে শিক্ষকতায় নিয়ে আসে। নুবানের বাবা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক। দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সুখের সংসার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির পর কাজী সোহানা নাজনীনকে বিয়ে করেন নুবান। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের একটি বাসায়। ১৯৯৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সেই বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন আসাদ গেটে নিজের ক্যামেরা মেরামত করার উদ্দেশ্যে। আধঘণ্টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা বলে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু আর ফেরেননি।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা এলাকায় অজ্ঞাতনামা আততায়ীরা তাঁকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে গুরুতর আহত করে ফেলে যায়। তেজগাঁও থানার ওসি খবর পেয়ে অচেতন অবস্থায় তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে ভর্তি করান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় তিনি মারা যান।
ঘটনার দিন মোহাম্মদপুরের বাসায় নুবানের স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তাঁর মা, বোন পঞ্চগড়ে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাতে নুবানের বন্ধু মিল্টন একটি ভিডিও ক্যাসেট দেওয়ার জন্য সেই বাসায় যান। সেখান থেকে তেজগাঁও থানায় গিয়ে নুবানের নিখোঁজ হওয়ার খবর দিয়ে একটি জিডি করেন। যদিও ওই সময় নুবান মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নুবান মারা যাওয়ার পর তাঁর শ্বশুর কাজী শামসুল হুদা তেজগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম ছিল না।
তেজগাঁও থানা-পুলিশ সে সময় চার ছিনতাইকারীকে ধরে বলার চেষ্টা করেছিল, এটি ছিনতাইকারীদের কাজ। যদিও নুবানের কাছে ছিনতাই হওয়ার মতো কিছু ছিল না। এরপর মামলা যায় ডিবিতে। সেখানে লোকদেখানো কিছু তদন্ত এবং আরও পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়। পত্রপত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হলে মামলা যায় সিআইডিতে। আবদুল কাহার আকন্দ প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি তদন্তের শুরুতেই শরীয়তপুরের জাজিরার কে এম আলমগীর নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে আরও তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা সেই মামলা তদন্ত করেন।
তখন নুবানের খুনের কারণ হিসেবে দুটি বিষয় সামনে এসেছিল। প্রথমে বলা হয়, এই খুনে নুবানের স্ত্রী কাজী সোহানা নাজনীন ও তাঁর বন্ধু মোহাইমিনুর রহমান মিল্টনের হাত আছে। নুবানের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই সোহানা-মিল্টনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নুবানকে খুন করে পথের কাঁটা সরান তাঁরা। নুবানের শাশুড়ি মেহেরুন্নেসা আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকারও করেছিলেন।
আর দ্বিতীয়টি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নুবানের অবস্থান নেওয়া। সে সময় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং বিভাগের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এতে একজন শিক্ষক চাকরি হারান, আরেকজনকে তদন্তের পর বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় কিছু ছাত্র ও কয়েকজন শিক্ষক নুবানের ওপর রুষ্ট হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দি’ দিয়েছিলেন নুবান। পুলিশ ও চিকিৎসকের উপস্থিতিতে বলেছিলেন, ‘মোরশেদ সব জানে। ঈর্ষা।’ তাঁর এই জবানবন্দির ব্যক্তিটি হলেন নুবানের সহকর্মী প্রভাষক এ কে এম মাহবুব মোরশেদ। কিন্তু পুলিশ তাঁদের কাউকেই কখনো আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাসের মাথায় ১৯৯৬ সালে এ কে এম মাহবুব মোরশেদ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। নুবান মারা যাওয়ার পর মোহাইমিনুর রহমান মিল্টনকে বিয়ে করে বিদেশে চলে যান নুবানের স্ত্রী কাজী সোহানা নাজনীন।
এ মামলা তদন্ত করে ২০০২ সালের ১ জুলাই অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী সুপার মো. আমিনুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে নুবানের স্ত্রী কাজী সোহানা নাজনীনের সম্পর্ক। সোহানা ও তাঁর বর্তমান স্বামী মোহাইমিনুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন এবং হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা প্রভাষক এ কে এম মাহবুব মোরশেদ জানতেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমে মোরশেদের এই বক্তব্য আনা হয়। মোরশেদ বলেন, খুন হওয়ার আগে নুবান আহমেদ বলেছিলেন, কিছু ছাত্র তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন।
নুবান আহমেদ খুন হওয়ার পর তাঁর শ্বশুর কাজী শামসুল হুদা এজাহারে ও সাক্ষ্যে বলেন, নুবানের অবস্থানের কারণে ১৫ জন ছাত্রের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।
মজার ব্যাপার হলো, এই অভিযোগপত্র দেওয়ার কিছুদিন পর ডিভি লটারি পেয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
এরপর বিচার শুরু হয়। মহানগর দায়রা জজ আদালতের মূল বিচারক, ভারপ্রাপ্ত বিচারকসহ অন্তত ১২ জন বিচারক এই মামলার বিচারের কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। সবাই মামলার তদন্তে অবহেলা আর সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি দেখে বিস্মিত হন। অবশেষে ২০১৮ সালের ৫ জুন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। তিনি তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। আদালত বলেন, এ হত্যার তদন্ত ছিল ‘অপ্রতুল’, প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। নুবানের মা, বোনসহ মামলার সাক্ষীদের কেউই সরাসরি হত্যার অভিযোগে কাউকে অভিযুক্ত করেননি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও আরও সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হন।
নুবানের শ্বশুর এবং তাঁর শাশুড়ি মেহেরুন্নেসাও মামলায় সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু তাঁদের জবানবন্দিতে তাঁরা নিজের মেয়ে বা অন্য দুই প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য দেননি।
আদালত বলেছেন, ‘অপরাধীদের হাতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এ ঘৃণ্য অপরাধের বিচার না পাওয়াটাও দুর্ভাগ্যজনক।’
‘আষাঢ়ে নয়’ লেখার আগে কাল ফোন করেছিলাম নুবানের বড় বোন আসফিয়া সাবিনাকে। কথা বলতে গিয়ে তাঁর কণ্ঠ ধরে এসেছে। বললেন, ‘কী হবে আর এ নিয়ে কথা বলে!’
কথা শেষ করে মনটা খারাপ হয়ে গেল। নুবান খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছিল, তারা সব উধাও। শুধু কোথাও কেউ নেই—না অভিযুক্ত, না আপনজন, না ন্যায়বিচার। এমনকি কোনো কথাও নেই।
আরও পড়ুন:
গতকাল শনিবার ঢাকায় পৌঁছার পর সামাজিক মাধ্যম এক্স–এ দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা বাংলাদেশের প্রাপ্য। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী আজ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
১ ঘণ্টা আগেমাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুষম সার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগারের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। এই কর্মসূচির আওতায় ১০টি ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগার দেশের ৪৯ জেলার ৫৬টি উপজেলায় মাটি পরীক্ষা করবে। কৃষকেরা মাত্র ২৫ টাকা ভর্তুকি মূল্যে (প্রকৃ
২ ঘণ্টা আগেমালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার আবার খুলেছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ শ্রমবাজারে এবার প্ল্যান্টেশন অর্থাৎ কৃষি খাতে কর্মী নেওয়া হচ্ছে। তবে এবারও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ জানুয়ারি। জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে এবারও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ
৪ ঘণ্টা আগেছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রসঙ্গে বঙ্গোপসাগর সংলাপে ভারত ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে পরে হাস্যরসের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে উষ্ণতা ছড়িয়েছেন দুপক্ষের আলোচকেরা।
১১ ঘণ্টা আগে