দ্রুত স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ১০
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৭

স্কুল-কলেজ দ্রুত খুলে দেওয়ার নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের দিয়েছেন বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। যার জন্য কিছু ফাইজারের টিকা এরই মধ্যে এসে পৌঁছেছে। আরও পৌঁছাবে। মডার্নার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।' আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। 

সংসদ নেতা বলেন, `তা ছাড়া অন্যান্য টিকাতো আসছে। এরই মধ্যে টাকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা ৬ কোটি টিকার টাকা দিয়ে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আসতে থাকবে। কারণ এগুলো রাখা ও দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা আমাদের নিতে হচ্ছে। সেগুলো আমরা করে যাচ্ছি।' 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, `টিকার কোনো সমস্যা নাই। আমরা যেখান থেকে যতভাবে পারি টিকা নিয়ে আসছি। খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য আমি এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের পরিবারের সদস্যদেরও টিকা দেওয়া হয়। এমনকি আমাদের বিভিন্ন সংস্থা, স্বাস্থ্যকর্মী হতে শুরু করে যারা কাজ করে যাচ্ছে শুধু তাদের না, তাদের বাড়ির কাজের লোকজন, চালকসহ তাদের পরিবারের সবাই যেন টিকা পায় সেই ব্যবস্থাটা নিচ্ছি। যাতে করে কোনোমতে সংক্রমণটা না হতে পারে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, `আমরা সারা পৃথিবীতে দেখতে পাচ্ছি কখনো একেবারেই কমে যাচ্ছে। আবার নতুনভাবে নতুন শক্তিতে এই ভাইরাসটা আসছে। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। 

টিকা দেওয়ার পরেও অনেকের করোনা হচ্ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, `সেটা হয়তো তেমন মারাত্মক হয় না। সেই জন্য সবাইকে অনুরোধ করব একটু সাবধানে থাকতে। কিডনি, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগীসহ যারা অন্যান্য রোগে ভুগছেন তাদের সাবধানে থাকার অনুরোধ করছি। তাঁদের করোনা ভালো হলেও, এর কারণে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাতে পরবর্তীতে জীবন শঙ্কা দেখা দেয়। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, `সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার তা করে যাচ্ছি। অনেকই বক্তব্যে অনেক কিছুই বলেন। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা যদি দেখেন, কোনো দেশের সঙ্গে যদি তুলনা করেন। তাহলে আমাদের এই ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় আমরা যেভাবে এটা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়েছি তা অনেক উন্নত দেশও কিন্তু পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা শুরু থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখানে সবাইকে সজাগ ও সুরক্ষিত থাকতে হবে।' 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, `এখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। তা কমলেও সবাইকে সাবধানে থাকা উচিত। লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধিটা সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ করব। একসঙ্গে বেশি সমাবেশ যাতে না হয়।' 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মশা যেন জন্ম নিতে না পারে, সেই জন্য সবাইকে একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিজেরাও একটু মশারি ব্যবহার করেন। এই ডেঙ্গু মশাটা যার যার ঘরেই বেশি হয়। এখানে শুধু ওষুধ দিলেই হবে না। নিজেদের একটু উদ্যোগ নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। কোথাও যেন বেশি দিন পানি জমে না থাকে। এসি, ফুলের টব, ফুলদানির পানি যেকোনো জায়গায় এই মশা জন্ম নিতে পারে। সেই দিকে সবাইকে নিজের স্বার্থে সজাগ থাকতে হবে। নিয়ম মেনে চলতে হবে। সিটি করপোরেশন ও সরকারের পক্ষ থেকে যা যা উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, তা আমরা নিচ্ছি।' 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পরে তা মোকাবিলার জন্য আমাদের দলের নেতা কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠন মানুষের পাশে আছে। তাঁরা করোনায় মৃতদের লাশ দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেছে। মানুষকে সহযোগিতা করেছে। নেতা কর্মীরা নিজের শারীরিক অবস্থার দিকে না তাকিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মৃত্যুটা দেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতি। যে মানুষগুলো তাঁর সেবা পেত সেটার জন্যও ক্ষতি। আমি জানি না। আমাদের বারবার শোকপ্রস্তাব নিতে হচ্ছে। এটা আমি ঠিক ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, আমি কি বলব। একটার পর একটা মৃত্যুর সংবাদ আমাদের খুব কষ্ট দেয়। কতজন চলে গেছেন, তাদের আমরা আর কোনো দিন দেখব না। 

টানা দ্বিতীয় দিনে শোকপ্রস্তাবের আলোচনায় কষ্টদায়ক উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, শোকের মাস শেষে সংসদ অধিবেশন শুরু করতে হয়েছে শোকপ্রস্তাব দিয়ে। দ্বিতীয় দিনও শোকপ্রস্তাব দিতে হলো। শোকের ব্যথা বোধ হয় আর যাবে না। একের পর এক দুঃসংবাদ নিয়েই বোধ হয় আমাদের চলতে হচ্ছে। এটা সব থেকে দুঃখজনক। আমাদের সবাইকে মনে হয় একটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই সংসদের অনেক সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। গতকালকে (বুধবার) আমরা প্রবীণ সাংসদের জন্য শোকপ্রস্তাব নিতে না নিতেই আজকে আবার ভোরে সংবাদ পেলাম আমাদের সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপন আর নেই। 

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডেপুটি স্পিকারের শরীরটাও খুব খারাপ। তিনি বাহিরে চিকিৎসাধীন আছেন। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। যাতে তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন। 

হাসিবুর রহমান স্বপন কিডনি রোগে ভুগছিলেন জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন করার পর সে কিছুদিন সুস্থ ছিল। এরপর আবার করোনা হয়, সেখান থেকেও ভালো হয়ে যায়। পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। আপনজন ছাড়া বাহিরের কারও থেকে কিডনি নিয়ে যদি তা প্রতিস্থাপন করা হয়, সেটা সাধারণত শরীর গ্রহণ করে না। অনেকই করে, অনেকই টিকতে পারে না। অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাঁকে আমি সব সময় সাবধান করতাম। স্বপন ছিল জনপ্রিয় ও কর্মী বান্ধব। তা ছাড়া অনেক সামাজিক কাজও করেছিল। শাহজাদপুরে একসময় সর্বহারাদের দৌরাত্ম্য ছিল। সেখানে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল। সে আওয়ামী লীগ করতে শুরু করল। আমরা সেখানে অনেক কাজ করেছি। পরে সে জায়গার উন্নতি হয়। 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় জায়গা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নোবেল বিজয়ের পরে তাঁর অর্থ ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে কৃষকদের দিয়েছিলেন। সঙ্গে এখানে একটা গোচারণ ভূমিও করে দিয়েছিলেন। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন বসে। শুরুতেই সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সাবেক সরকার দলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ, সরকার দলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্য আবদুল আজিজ শোকপ্রস্তাব আলোচনায় অংশ নেন। 

পরে সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত