মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
মিরসরাই এক অপার রহস্যঘেরা জায়গার নাম, বিষয়টি অনেকেই জানেন না। এর পরতে পরতে রয়েছে সৌন্দর্য আর রহস্যঘেরা জানা-অজানা বিভিন্ন নামের খুম বা কুম। তেমনি একটি হলো মেলখুম বা মেলকুম। অনেকেই এর হদিস এখনো জানেন না।
বহুদিনের শখ পাহাড়ি পথে মোটরবাইক চালাব। বহুদিনের পুষে রাখা এ শখ এবার চাগিয়ে উঠল মাথায়। তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান।
ছুটছে বাইক চট্টগ্রাম মহাসড়কের বুকে চিরে। দুপুরের পর রওনা দেওয়ায় মিরসরাই পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। তাই আর না এগিয়ে পূর্ব আমবাড়িয়া গ্রামের খোলা এক জমিতে তাঁবু টানিয়ে রাত যাপনের ব্যবস্থা হলো।
ঘণ্টা দেড়েক আগেই খাওয়াদাওয়া সেরেছি। এরপরও এখন ক্ষুধায় পেট চোঁ-চোঁ করছে। পাশেই এক চা-শিঙাড়ার দোকান। রাত বেশ গভীর। তাই গরম-গরম চা বাদে সব শেষ। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চাল, ডাল, মুরগি, পাতিল জোগাড় করে স্টলের চুলায় বসিয়ে দেওয়া হলো খিচুড়ি। কিছুক্ষণ পরেই ঘ্রাণে ঘ্রাণে স্টল ভরপুর। খেতে খেতে রাত প্রায় ১১টা।
এরই মধ্যে জোরারগঞ্জের মেলকুমের কথা মনে পড়ে গেল। তাই বেশিক্ষণ আড্ডা না দিয়ে দ্রুত তাঁবুতে চলে যাই। ঘুম যখন চোখের পাতায় ভর করছে ঠিক তখনই দমকা বাতাসের সঙ্গে ঝুমবৃষ্টি। কিছুক্ষণ লড়াই করে টিকতে না পেরে তাঁবু ফেলেই দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে বন্ধ দোকানঘরগুলোর টিনের ছাউনির নিচে চলে গেলাম। ভ্রমণকালীন সে এক মনে রাখার মতো স্মৃতি।
রাতভর খোশগল্প চলতে চলতে ফজরের আজানের ধ্বনি শোনা গেল। নামাজ শেষ করে আগের রাতে কথা বলে রাখা স্থানীয় এক গাইডকে নিয়ে ছুটলাম মেলকুমের পথে। অল্প সময়ের মধ্যেই মিরসরাইর জোরারগঞ্জ হয়ে রেললাইন পর্যন্ত গিয়ে ব্রেক। এরপর হাঁটা পথ।
এখানকার গ্রামগুলো সুন্দর। চারপাশে নানান সবজির খেত। হাঁটতে হাঁটতে ছোট্ট একটা ঝিরি পার হয়ে ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ি। দৃষ্টির সীমানায় উঁচু উঁচু পাহাড়। দিগন্তছোঁয়া বৃক্ষরাজি। বন্য শূকরের ছুটে চলা। গা ছমছমে পরিবেশ। আমরা ছাড়া আর কোনো জনমানবের দেখা নেই। ঝিরির পানি কেটে প্রায় ঘণ্টাখানেক হাইকিং শেষে দেখা মেলে এক সবুজ প্রান্তরের। এর আশপাশে হয়তো লোকালয় আছে। কিছুক্ষণ জিরিয়ে আবারও হাঁটা। কিছুটা পথ ট্র্যাকিং করার পরেই চোখে পড়ল মেলকুমের প্রবেশদ্বার। এ যেন আলী বাবা চল্লিশ চোর গল্পের সেই চিচিং ফাঁক পাহাড়ের সুড়ঙ্গ!
‘আল্লাহর নাম’ নিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই। এখানে যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ঘটে, আমাদের আর কখনো হয়তো কেউ খুঁজে পাবে না। এরপরও যাই। কেন যাই?
আমরা নির্ভয়ে সরু পাহাড়ের ফাঁকফোকর দিয়ে এগোতে থাকি। কখনো হাঁটুসমান, কখনোবা বুক ছাপিয়ে গলা পর্যন্ত পানি কেটে এগিয়ে যাই। মেলকুমের ভেতরে কোথাও কোথাও দিনের আলো চরমভাবে পরাস্ত। ভৌতিক পরিবেশ। যতই এগোই, ততই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতে থাকে। পায়ের নিচে পানি, পিঠ ঠেকেছে পাহাড়ের দেয়ালে, ওপরে এক ফালি আকাশ। দুই পাশের পাহাড় ওপরে গিয়ে এমনভাবে চেপে গিয়েছে যে বিশাল আকাশটাকেই তখন ঈদের চাঁদের মতো লাগে! যেতে যেতে একসময় পানি এত বেশি যে সাঁতার দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকল না। ভাগ্যিস খুব বেশি সাঁতার কাটতে হয়নি। মিনিট চারেক সাঁতরেই পাথরের স্তূপ পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।
বাধাটা মনে হয় এখন থেকেই শুরু। আমরা আরও এগিয়ে যাই। মেলকুমের অন্দরমহল প্রকৃতির অপার রহস্য। এগোতে এগোতে যখন এর শেষ প্রান্ত দেখার নেশা পুরো তুঙ্গে, তখনই পেছনে রেখে আসা সদস্যের শোরগোল। কে জানে ভূতে নাকি সাপে ধরেছে! দায়িত্ব বলে কথা। অবশ্য তখন না ফিরে উপায়ও ছিল না। কারণ সামনের পথটা দুই পাহাড়ের মধুর আলিঙ্গনে এতটাই সরু, আমাদের দেহগুলো নিশ্চিত আটকে যেত। তাই গায়েব হওয়া থেকে রক্ষা পেতে রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছু হটি।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-চট্টগ্রাম চলাচল করা যেকোনো বাসে উঠে নামতে হবে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে। সেখান থেকে অটোরিকশা নিয়ে রেললাইন। এরপর হাঁটতে হবে।
খাওয়া ও থাকা
স্থানীয় বাজারে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রাতে থাকার দরকার নেই। দিনে দিনে ঘুরে ঢাকা ফেরা যায়। থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে হবে। নয়তো তাঁবু টানিয়ে।
সতর্কতা
যেখানে সেখানে অপচনশীল খাবারের মোড়ক না ফেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন। নয়তো সঙ্গে করে নিয়ে আসুন। উচ্ছ্বাসে মাত্রাতিরিক্ত হইহুল্লোড় করবেন না।
ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
মিরসরাই এক অপার রহস্যঘেরা জায়গার নাম, বিষয়টি অনেকেই জানেন না। এর পরতে পরতে রয়েছে সৌন্দর্য আর রহস্যঘেরা জানা-অজানা বিভিন্ন নামের খুম বা কুম। তেমনি একটি হলো মেলখুম বা মেলকুম। অনেকেই এর হদিস এখনো জানেন না।
বহুদিনের শখ পাহাড়ি পথে মোটরবাইক চালাব। বহুদিনের পুষে রাখা এ শখ এবার চাগিয়ে উঠল মাথায়। তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান।
ছুটছে বাইক চট্টগ্রাম মহাসড়কের বুকে চিরে। দুপুরের পর রওনা দেওয়ায় মিরসরাই পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। তাই আর না এগিয়ে পূর্ব আমবাড়িয়া গ্রামের খোলা এক জমিতে তাঁবু টানিয়ে রাত যাপনের ব্যবস্থা হলো।
ঘণ্টা দেড়েক আগেই খাওয়াদাওয়া সেরেছি। এরপরও এখন ক্ষুধায় পেট চোঁ-চোঁ করছে। পাশেই এক চা-শিঙাড়ার দোকান। রাত বেশ গভীর। তাই গরম-গরম চা বাদে সব শেষ। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চাল, ডাল, মুরগি, পাতিল জোগাড় করে স্টলের চুলায় বসিয়ে দেওয়া হলো খিচুড়ি। কিছুক্ষণ পরেই ঘ্রাণে ঘ্রাণে স্টল ভরপুর। খেতে খেতে রাত প্রায় ১১টা।
এরই মধ্যে জোরারগঞ্জের মেলকুমের কথা মনে পড়ে গেল। তাই বেশিক্ষণ আড্ডা না দিয়ে দ্রুত তাঁবুতে চলে যাই। ঘুম যখন চোখের পাতায় ভর করছে ঠিক তখনই দমকা বাতাসের সঙ্গে ঝুমবৃষ্টি। কিছুক্ষণ লড়াই করে টিকতে না পেরে তাঁবু ফেলেই দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে বন্ধ দোকানঘরগুলোর টিনের ছাউনির নিচে চলে গেলাম। ভ্রমণকালীন সে এক মনে রাখার মতো স্মৃতি।
রাতভর খোশগল্প চলতে চলতে ফজরের আজানের ধ্বনি শোনা গেল। নামাজ শেষ করে আগের রাতে কথা বলে রাখা স্থানীয় এক গাইডকে নিয়ে ছুটলাম মেলকুমের পথে। অল্প সময়ের মধ্যেই মিরসরাইর জোরারগঞ্জ হয়ে রেললাইন পর্যন্ত গিয়ে ব্রেক। এরপর হাঁটা পথ।
এখানকার গ্রামগুলো সুন্দর। চারপাশে নানান সবজির খেত। হাঁটতে হাঁটতে ছোট্ট একটা ঝিরি পার হয়ে ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ি। দৃষ্টির সীমানায় উঁচু উঁচু পাহাড়। দিগন্তছোঁয়া বৃক্ষরাজি। বন্য শূকরের ছুটে চলা। গা ছমছমে পরিবেশ। আমরা ছাড়া আর কোনো জনমানবের দেখা নেই। ঝিরির পানি কেটে প্রায় ঘণ্টাখানেক হাইকিং শেষে দেখা মেলে এক সবুজ প্রান্তরের। এর আশপাশে হয়তো লোকালয় আছে। কিছুক্ষণ জিরিয়ে আবারও হাঁটা। কিছুটা পথ ট্র্যাকিং করার পরেই চোখে পড়ল মেলকুমের প্রবেশদ্বার। এ যেন আলী বাবা চল্লিশ চোর গল্পের সেই চিচিং ফাঁক পাহাড়ের সুড়ঙ্গ!
‘আল্লাহর নাম’ নিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই। এখানে যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ঘটে, আমাদের আর কখনো হয়তো কেউ খুঁজে পাবে না। এরপরও যাই। কেন যাই?
আমরা নির্ভয়ে সরু পাহাড়ের ফাঁকফোকর দিয়ে এগোতে থাকি। কখনো হাঁটুসমান, কখনোবা বুক ছাপিয়ে গলা পর্যন্ত পানি কেটে এগিয়ে যাই। মেলকুমের ভেতরে কোথাও কোথাও দিনের আলো চরমভাবে পরাস্ত। ভৌতিক পরিবেশ। যতই এগোই, ততই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতে থাকে। পায়ের নিচে পানি, পিঠ ঠেকেছে পাহাড়ের দেয়ালে, ওপরে এক ফালি আকাশ। দুই পাশের পাহাড় ওপরে গিয়ে এমনভাবে চেপে গিয়েছে যে বিশাল আকাশটাকেই তখন ঈদের চাঁদের মতো লাগে! যেতে যেতে একসময় পানি এত বেশি যে সাঁতার দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকল না। ভাগ্যিস খুব বেশি সাঁতার কাটতে হয়নি। মিনিট চারেক সাঁতরেই পাথরের স্তূপ পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।
বাধাটা মনে হয় এখন থেকেই শুরু। আমরা আরও এগিয়ে যাই। মেলকুমের অন্দরমহল প্রকৃতির অপার রহস্য। এগোতে এগোতে যখন এর শেষ প্রান্ত দেখার নেশা পুরো তুঙ্গে, তখনই পেছনে রেখে আসা সদস্যের শোরগোল। কে জানে ভূতে নাকি সাপে ধরেছে! দায়িত্ব বলে কথা। অবশ্য তখন না ফিরে উপায়ও ছিল না। কারণ সামনের পথটা দুই পাহাড়ের মধুর আলিঙ্গনে এতটাই সরু, আমাদের দেহগুলো নিশ্চিত আটকে যেত। তাই গায়েব হওয়া থেকে রক্ষা পেতে রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছু হটি।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-চট্টগ্রাম চলাচল করা যেকোনো বাসে উঠে নামতে হবে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে। সেখান থেকে অটোরিকশা নিয়ে রেললাইন। এরপর হাঁটতে হবে।
খাওয়া ও থাকা
স্থানীয় বাজারে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রাতে থাকার দরকার নেই। দিনে দিনে ঘুরে ঢাকা ফেরা যায়। থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে হবে। নয়তো তাঁবু টানিয়ে।
সতর্কতা
যেখানে সেখানে অপচনশীল খাবারের মোড়ক না ফেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন। নয়তো সঙ্গে করে নিয়ে আসুন। উচ্ছ্বাসে মাত্রাতিরিক্ত হইহুল্লোড় করবেন না।
ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
ব্যাগ কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা ভালো। ব্যাগের আকার ও রং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্বে ছাপ রাখে বেশ গভীরভাবে।
১১ ঘণ্টা আগেসংবেদনশীল ত্বকের মানুষ সারা বছর ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ ধরনের ত্বক আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ বা ত্বকের অনুপযুক্ত প্রসাধনীতে প্রভাবিত হতে পারে।
১১ ঘণ্টা আগেশীতের হিমেল হাওয়া থেকে বাঁচতে বাইকারদের পোশাক নিয়ে থাকতে হয় সচেতন। তাই এ সময় বাইকারদের পোশাকে আসে বিশেষ পরিবর্তন। বাইকারদের পোশাক যেমন শীত নিবারক হতে হয়, তেমনি হতে হয় আরামদায়ক। কী কী থাকবে সে পোশাকে?
১১ ঘণ্টা আগেএই ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিখ্যাত ফরাসি আবিষ্কারক লুই অটোইন ডি বোগেনভিলিয়ার নাম। তাঁর নামেই এ গাছের নাম রাখা হয়েছিল বোগেনভিলিয়া। আর এটিকে বাংলায় প্রথম বাগানবিলাস বলে ডেকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কমবেশি সারা বছর ফুল দেখা গেলেও
১২ ঘণ্টা আগে