সাদিকুর রহমান, ঢাকা
কয়েক ঘণ্টার অবস্থানে ঢাকা আর কাঠমান্ডুর জীবনযাপনে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পেলাম না। ব্যস্ত সড়ক, মানুষের ছোটাছুটি, অল্পবিস্তর যানজট—সবই আছে এখানে। নেই কেবল বিদঘুটে গরম, ঘাম আর মানুষের ক্লান্ত, বিক্ষিপ্ত চেহারা। প্রকৃতিতে একধরনের শীতলতা আছে, যা শহর ঘুরে দেখার জন্য বেশ আরামদায়ক। কিন্তু ভিনদেশে গিয়েও সেই একই ধাঁচের শহুরে জীবন দেখায় মন সায় দেয় না। তাই কাঠমান্ডুর থামেল থেকে এক সকালে বাসে উঠে রওনা দিই বান্দিপুরের উদ্দেশে।
বান্দিপুর নেপালের টানাহুন জেলার একটি পাহাড়ি গ্রাম। পোখারা যাওয়ার পথেই পড়ে। এখানে বিকেলে সবুজ পাহাড়ের এক পাশে সূর্য হেলে পড়ে, সেই রোদ অন্য পাশে গিয়ে পড়ে বরফ জমা সাদা হিমালয়ের বুকে। গোধূলিতে সোনালি রোদে চিকচিক করে হিমালয়ের চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট। সেই দৃশ্য শরীর ও মনকে শান্ত করে দেয়। সঙ্গে স্থানীয় নাইয়রি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী খাবার আর সংস্কৃতি বাড়তি পাওনা।
কাঠমান্ডু থেকে প্রাইভেট কার রিজার্ভ করা ছাড়া বান্দিপুর যাওয়ার সরাসরি কোনো যানবাহন নেই। কম খরচে যাওয়ার মাধ্যম ট্যুরিস্ট বাস। পথে সেটি দুই দফায় বদল করতে হয়। কাঠমান্ডুর থামেল থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় এই বাস ছেড়ে যায় পোখারার উদ্দেশে। বান্দিপুর যেতে হলে নামতে হবে সিহারা জেলার ডুমরি বাজারে। এ পর্যন্ত ভাড়া ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার এ যাত্রায় সহযাত্রী ছিলেন নানান দেশের নানান বর্ণের পর্যটক। সবার গন্তব্য পোখারা। বান্দিপুরে যাওয়ার জন্য বেলা দেড়টা নাগাদ ডুমরি বাজারে নামলাম মাত্র দুজন।
ডুমরি থেকে আধা ঘণ্টা পরপর লোকাল বাস যায় বান্দিপুরে। ভাড়া ৫০ রুপি। এবার সহযাত্রীদের সবাই স্থানীয় বাসিন্দা। কারও হাতে বাজারের ব্যাগ, কেউ কাজ শেষে গ্রামে ফিরছেন। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে তাঁদের স্থানীয় ভাষায় আলাপচারিতা কানে সুর হয়ে বাজছিল।
হিমালয়ের কোলঘেঁষা এ গ্রামে প্রথম দিনের বিকেল আর সন্ধ্যা কাটল পাড়া বেড়িয়ে। কমিউনিটি ট্যুরিজমের অনন্য উদাহরণ এই গ্রাম। প্রতিটি বাড়ির ওপরতলায় স্থানীয়দের বাস, নিচতলা আর বারান্দাজুড়ে বাহারি সব পণ্য, খাবারের দোকান আর বার। খেলার মাঠ, স্কুল এমনকি হাসপাতালও সাজানো-গোছানো। মূলত পর্যটনশিল্পকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে স্থানীয়দের জীবিকা। এখানে ইউরোপীয় পর্যটকেরা আসেন হাইকিং করতে। কাঁধে ব্যাগ আর হাতে লাঠি নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়ান গ্রামের পথ ধরে। সন্ধ্যায় তাঁদের ভিড়ে জমজমাট হয় স্থানীয় বারগুলো।
আঠারো শতকের দিকে তিব্বতের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল বান্দিপুর। ব্যবসায়ীরা বিশ্রাম নিতেন এই গ্রামে। যার নমুনা এখনো দেখা যায়। গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি ও হোটেলের মালিকানায় আছেন ভারতীয়রা। তবে উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে যোগাযোগের জন্য একটি মহাসড়ক নির্মিত হলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বান্দিপুর। তবে সেটিই যেন শাপে বর হয়েছে স্থানীয়দের। বহিরাগতদের প্রভাবমুক্ত হয়ে নাইয়রিরা এখনো তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখেছে। তাই বান্দিপুরকে বলা হয় নাইয়রি সংস্কৃতির জীবন্ত জাদুঘর।
দ্বিতীয় দিন সকালে স্থানীয় বাজার ঘুরে যাই থানিমাই পাহাড়ে। গ্রামের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় এটি। সেখান থেকে পুরো গ্রাম বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। গ্রামের পশুপালকেরা এই পাহাড়ে আসেন ছাগল ও ভেড়া চরাতে। এ ছাড়া আছে ছোট্ট একটি মন্দির। এর নামানুসারেই স্থানীয় ও পর্যটকদের কাছে পাহাড়টি পরিচিত থানিমাই নামে। এর আসল নাম গুরুংচে পাহাড়।
বান্দিপুর বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে স্থানীয় বিদ্যালয়। পাহাড়ের নিচের দিকের গা কেটে ইট বিছিয়ে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। একটু ওপরের দিকের সিঁড়ি পাথরের। আছে রেলিং আর একটু পরপর বিশ্রাম নেওয়ার বেঞ্চ। সঙ্গে শিশুরা থাকলে তাদের নিয়েও উঠতে পারবেন এই পাহাড়ে।
চূড়ায় উঠতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি প্যানারোমিক ভিউ মন উতলা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। নিচে বান্দিপুর গ্রাম, মারসিয়াংদি উপত্যকা, পাশাপাশি অন্নপূর্ণা, ধলাগিরি ও মানাসলু পর্বতসহ দিগন্তবিস্তৃত হিমালয়। ভোরের আগে বা সন্ধ্যায় থানিমাই ভিউ পয়েন্ট হাইকিং করার আদর্শ সময়। দিনের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা বেশি থাকে।
থানিমাই একটি ছোট হিন্দু মন্দির। সেখানে একই নামে এক দেবীর পূজা করা হয়। স্থানীয়রা থানিমাইয়ে প্রার্থনা, ধ্যান, ধূপকাঠি জ্বালাতে আসে। তখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী চারপাশে রঙিন পতাকা টাঙানো হয়।
গ্রামীণ নেপালের খাঁটি স্বাদ নিতে পোখারা যাওয়ার পথে একবার হলেও থামুন এই বান্দিপুরে। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে স্থানীয়দের রীতি পালন অনুষ্ঠানেরও দেখা পেয়ে যেতে পারেন।
কয়েক ঘণ্টার অবস্থানে ঢাকা আর কাঠমান্ডুর জীবনযাপনে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পেলাম না। ব্যস্ত সড়ক, মানুষের ছোটাছুটি, অল্পবিস্তর যানজট—সবই আছে এখানে। নেই কেবল বিদঘুটে গরম, ঘাম আর মানুষের ক্লান্ত, বিক্ষিপ্ত চেহারা। প্রকৃতিতে একধরনের শীতলতা আছে, যা শহর ঘুরে দেখার জন্য বেশ আরামদায়ক। কিন্তু ভিনদেশে গিয়েও সেই একই ধাঁচের শহুরে জীবন দেখায় মন সায় দেয় না। তাই কাঠমান্ডুর থামেল থেকে এক সকালে বাসে উঠে রওনা দিই বান্দিপুরের উদ্দেশে।
বান্দিপুর নেপালের টানাহুন জেলার একটি পাহাড়ি গ্রাম। পোখারা যাওয়ার পথেই পড়ে। এখানে বিকেলে সবুজ পাহাড়ের এক পাশে সূর্য হেলে পড়ে, সেই রোদ অন্য পাশে গিয়ে পড়ে বরফ জমা সাদা হিমালয়ের বুকে। গোধূলিতে সোনালি রোদে চিকচিক করে হিমালয়ের চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট। সেই দৃশ্য শরীর ও মনকে শান্ত করে দেয়। সঙ্গে স্থানীয় নাইয়রি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী খাবার আর সংস্কৃতি বাড়তি পাওনা।
কাঠমান্ডু থেকে প্রাইভেট কার রিজার্ভ করা ছাড়া বান্দিপুর যাওয়ার সরাসরি কোনো যানবাহন নেই। কম খরচে যাওয়ার মাধ্যম ট্যুরিস্ট বাস। পথে সেটি দুই দফায় বদল করতে হয়। কাঠমান্ডুর থামেল থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় এই বাস ছেড়ে যায় পোখারার উদ্দেশে। বান্দিপুর যেতে হলে নামতে হবে সিহারা জেলার ডুমরি বাজারে। এ পর্যন্ত ভাড়া ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার এ যাত্রায় সহযাত্রী ছিলেন নানান দেশের নানান বর্ণের পর্যটক। সবার গন্তব্য পোখারা। বান্দিপুরে যাওয়ার জন্য বেলা দেড়টা নাগাদ ডুমরি বাজারে নামলাম মাত্র দুজন।
ডুমরি থেকে আধা ঘণ্টা পরপর লোকাল বাস যায় বান্দিপুরে। ভাড়া ৫০ রুপি। এবার সহযাত্রীদের সবাই স্থানীয় বাসিন্দা। কারও হাতে বাজারের ব্যাগ, কেউ কাজ শেষে গ্রামে ফিরছেন। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে তাঁদের স্থানীয় ভাষায় আলাপচারিতা কানে সুর হয়ে বাজছিল।
হিমালয়ের কোলঘেঁষা এ গ্রামে প্রথম দিনের বিকেল আর সন্ধ্যা কাটল পাড়া বেড়িয়ে। কমিউনিটি ট্যুরিজমের অনন্য উদাহরণ এই গ্রাম। প্রতিটি বাড়ির ওপরতলায় স্থানীয়দের বাস, নিচতলা আর বারান্দাজুড়ে বাহারি সব পণ্য, খাবারের দোকান আর বার। খেলার মাঠ, স্কুল এমনকি হাসপাতালও সাজানো-গোছানো। মূলত পর্যটনশিল্পকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে স্থানীয়দের জীবিকা। এখানে ইউরোপীয় পর্যটকেরা আসেন হাইকিং করতে। কাঁধে ব্যাগ আর হাতে লাঠি নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়ান গ্রামের পথ ধরে। সন্ধ্যায় তাঁদের ভিড়ে জমজমাট হয় স্থানীয় বারগুলো।
আঠারো শতকের দিকে তিব্বতের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল বান্দিপুর। ব্যবসায়ীরা বিশ্রাম নিতেন এই গ্রামে। যার নমুনা এখনো দেখা যায়। গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি ও হোটেলের মালিকানায় আছেন ভারতীয়রা। তবে উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে যোগাযোগের জন্য একটি মহাসড়ক নির্মিত হলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বান্দিপুর। তবে সেটিই যেন শাপে বর হয়েছে স্থানীয়দের। বহিরাগতদের প্রভাবমুক্ত হয়ে নাইয়রিরা এখনো তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখেছে। তাই বান্দিপুরকে বলা হয় নাইয়রি সংস্কৃতির জীবন্ত জাদুঘর।
দ্বিতীয় দিন সকালে স্থানীয় বাজার ঘুরে যাই থানিমাই পাহাড়ে। গ্রামের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় এটি। সেখান থেকে পুরো গ্রাম বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। গ্রামের পশুপালকেরা এই পাহাড়ে আসেন ছাগল ও ভেড়া চরাতে। এ ছাড়া আছে ছোট্ট একটি মন্দির। এর নামানুসারেই স্থানীয় ও পর্যটকদের কাছে পাহাড়টি পরিচিত থানিমাই নামে। এর আসল নাম গুরুংচে পাহাড়।
বান্দিপুর বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে স্থানীয় বিদ্যালয়। পাহাড়ের নিচের দিকের গা কেটে ইট বিছিয়ে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। একটু ওপরের দিকের সিঁড়ি পাথরের। আছে রেলিং আর একটু পরপর বিশ্রাম নেওয়ার বেঞ্চ। সঙ্গে শিশুরা থাকলে তাদের নিয়েও উঠতে পারবেন এই পাহাড়ে।
চূড়ায় উঠতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি প্যানারোমিক ভিউ মন উতলা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। নিচে বান্দিপুর গ্রাম, মারসিয়াংদি উপত্যকা, পাশাপাশি অন্নপূর্ণা, ধলাগিরি ও মানাসলু পর্বতসহ দিগন্তবিস্তৃত হিমালয়। ভোরের আগে বা সন্ধ্যায় থানিমাই ভিউ পয়েন্ট হাইকিং করার আদর্শ সময়। দিনের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা বেশি থাকে।
থানিমাই একটি ছোট হিন্দু মন্দির। সেখানে একই নামে এক দেবীর পূজা করা হয়। স্থানীয়রা থানিমাইয়ে প্রার্থনা, ধ্যান, ধূপকাঠি জ্বালাতে আসে। তখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী চারপাশে রঙিন পতাকা টাঙানো হয়।
গ্রামীণ নেপালের খাঁটি স্বাদ নিতে পোখারা যাওয়ার পথে একবার হলেও থামুন এই বান্দিপুরে। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে স্থানীয়দের রীতি পালন অনুষ্ঠানেরও দেখা পেয়ে যেতে পারেন।
দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সিলেট যেন এক মহারানি। চা-বাগান, পাহাড়, নদী, ঝরনা, বিল কী নেই এ জেলায়। এ জেলারই এক উপজেলা জৈন্তাপুর। এখানে দেখা যাবে নীল পানির সারি নদী, চা-বাগান আর লাল শাপলার বিল। শীতে বেরিয়ে পড়বেন না কি?...
৩ ঘণ্টা আগেদিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
৪ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
৪ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
৪ দিন আগে