মো. আশিকুর রহমান
উপাচার্য হিসেবে যোগদানের ছয় মাস সম্পন্ন করেছেন। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
আগামী চার বছরের মধ্যে বিডিইউকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে চাই। আমি সত্যিকার একটা ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বানিয়ে চলে আসতে চাই। আমি আমার ধ্যান-জ্ঞান দিয়ে চেষ্টা করছি। বিডিইউর শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্নাতক শেষ করার পর যেন গর্ব করে বলতে পারেন, আমি বিডিইউর গ্র্যাজুয়েট। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সে জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
আমি ঠিক যেভাবে করতে চাচ্ছিলাম, সেভাবে করতে পারছি না, এটা বললে ভুল হবে। যেগুলো আমার হাতে ছিল, সেগুলো আমি সময়মতো করেছি। তবে একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জমি অধিগ্রহণ, সরকারি অনুমোদনের কিছু বিষয় তো থাকেই। যেমন নতুন তিনটি বিভাগ এই শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করতে চাইলেও সেটা আগামী শিক্ষাবর্ষে চালু করতে হচ্ছে। সেই তিনটি বিভাগ হচ্ছে—আমি যে কারিকুলামে করতে চেয়েছি, সেই কারিকুলামেই হচ্ছে। দশটি দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটি করেছি। কিছুটা হয়তো বিলম্ব হচ্ছে।
আপনার নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাই
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নেতৃত্বের গুণাবলি, যোগাযোগ দক্ষতা, সমন্বয় সাধন দক্ষতা, স্মার্টলি কাজ করার দক্ষতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দক্ষতাসহ আরও অনেক দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এসব দক্ষতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে আমি আসার পর নতুন আটটি ক্লাব নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা ডিভাইস ডেভেলপ করছে, স্পোর্টস উইক আয়োজনসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে দারুণ কাজ করছে। আমাদের অফিসের কোনো সিস্টেম ছিল না, আমি একটা সমন্বিত নিয়ম করেছি। এখন সবাই জানে তার কাজ কী এবং তাঁরা নিজের কাজ নিজের মতো করছেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ওপেন বা ক্লোজ ক্রেডিট কোনো কিছু না করে খিচুড়ির মতো একটা বিধি ছিল, সেটার অনুমোদন ছিল না। আমার পূর্ণাঙ্গ বিধি প্রণয়ন করেছি এবং সিন্ডিকেট অনুমোদন করেছি। অর্গানোগ্রাম সিন্ডিকেটে পাস করেছি। দুটোই ইউজিসিতে সাবমিট করা হবে এখন। আমাদের ডেভেলপড সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোনো শিক্ষক ক্লাসে দেরিতে গেলে বা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ক্লাস শেষ করলে সফটওয়্যার এসএমএস করে আমাকে জানিয়ে দেবে। কোন শিক্ষক কী পড়ালেন, ভিডিও এবং ক্লাস ম্যাটেরিয়ালস সবটা অনলাইনে থেকে যাবে। সব ক্লাস টেস্ট অনলাইনে নিতে হবে, কাগজে কোনো ক্লাস টেস্ট নেওয়া যাবে না। কোনো অ্যাসাইনমেন্ট কাগজে নেওয়া যাবে না। এতে শিক্ষকেরা নিজেদের ও শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গড়ে তুলতে পারবেন। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, জুলাই মাস থেকে পুরোদমে নির্ভুলভাবে কাজ শুরু করতে পারব। ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছি।
একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে যদি সবিস্তারে বলতেন
একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের মূল বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি। আমরা ২০৪১ সালের স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ২০৪১ সালে মূলত প্রধানমন্ত্রীর তিনটি টার্গেট। প্রথমত, বাংলাদেশ স্মার্ট হবে, বাংলাদেশের জনগণকে স্মার্ট হতে হবে। একটা দেশ তো কখনো স্মার্ট হয় না; দেশের জনগণ স্মার্ট হয়, সিস্টেম স্মার্ট, সোসাইটি স্মার্ট হয়। সিস্টেম, সোসাইটি, গভর্নমেন্ট যা-ই স্মার্ট হোক না কেন, জনগণকে আগে স্মার্ট হতে হবে। সেই জনগণকে আমাদের তৈরি করতে হবে। যে জনগণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বুঝবে, যে জনগণ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বুঝবে, যে জনগণ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। দ্বিতীয়ত, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ধনী দেশ হবে। তৃতীয়ত, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ টেকনোলজিকে নেতৃত্ব দেবে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে, এই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। আমি যদি স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করি, তাহলে আমার সোসাইটি স্মার্ট হবে, ইকোনমি স্মার্ট হবে, গভর্নমেন্ট স্মার্ট হবে। যখন এগুলো স্মার্ট হবে, দেশ স্বাভাবিকভাবেই ধনী দেশ হয়ে যাবে। আর যখন জনগণ স্মার্ট হবে, দেশ ধনী হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশ প্রযুক্তিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। স্মার্ট জনগণ তৈরির জন্য এবং সমস্ত টেকনোলজি বাংলাদেশে আনার জন্য আমাকে কীভাবে জনবল তৈরি করতে হবে, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা পাঁচটি ফ্যাকাল্টির চিন্তা করছি। এগুলো হলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, সিকিউরিটি অ্যান্ড কমিউনিকেশন, সফটওয়্যার অ্যান্ড মেশিন লার্নিং, সাইবার ফিজিক্যাল সিস্টেম, লাইফ সায়েন্স।
এই সিদ্ধান্তগুলো কি আপনার মস্তিষ্কপ্রসূত?
এর আগে যেহেতু মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এনআইডি এবং ইভিএম তৈরি করাসহ অনেকগুলো ন্যাশনাল পলিসির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, আমার কাছে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা পার্ট হয়ে গেছে। আমাদের এই ৫ ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৭টি ডিপার্টমেন্ট থাকবে। এসব ডিপার্টমেন্ট করতে পারলে আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমবে। সব টেকনোলজি আমাদের এখানে তৈরি হবে। আমরা বিদেশে থেকে কোনো মেশিন কিনব না, বিদেশ থেকে কোনো ম্যানপাওয়ার হায়ার করব না, বিদেশ থেকে কোনো সফটওয়্যার কিনব না। এখানে মেশিন, ম্যানপাওয়ার ও সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। আমরা আমাদের মেশিন ও সফটওয়্যার বিদেশে বিক্রি করব। আমাদের ম্যানপাওয়ার বিদেশে যাবে। আমরা এভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব ইনশা আল্লাহ। আমাদের এই ১৭টি বিভাগের মধ্যে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ফ্যাকাল্টির অধীনে আগে আইসিটি অ্যান্ড এডুকেশন বিভাগ ছিল। ইন্টারন্যাশনাল ডোমেইনের সঙ্গে কোপআপ করতে না পারায় এটাকে পরিবর্তন করে এডুকেশনাল টেকনোলজি বানিয়েছি এবং ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপার্ট ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সপার্টদের সমন্বয়ে পুরো কারিকুলাম পরিবর্তন করেছি। এভাবে আমরা মোট পাঁচটি বিভাগের কারিকুলাম চেঞ্জ করেছি।
আজকের পত্রিকা: বলা হয়ে থাকে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয়। এ ক্ষেত্রে আপনার ভাবনা শুনতে চাই?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: আমাদের বর্তমান যে শিক্ষাব্যবস্থা সেটা পৃথিবীতে টিকবে না। একটা ছেলে বা মেয়ে মোবাইল ব্যবহার করে ইউটিউবে ঢুকলেই আনলিমিটেড ভিডিও পেয়ে যাচ্ছে, তথ্যনির্ভর ও সময়োপযোগী ক্লাস লেকচার পাচ্ছে, সেই শিক্ষার্থী যখন আমাদের দেশের ক্লাসগুলোতে ঢুকছে, তাকে আমরা হোয়াইট বোর্ডে মার্কার দিয়ে লিখে দিচ্ছি আর সে মনোযোগ দিয়ে শুনবে, এই কল্পনা করাটা আসলে যুক্তিসংগত নয়। আমাদের অনেকেই বলে, আজকালকার ছেলেমেয়েরা মনোযোগী নয়, তারা পড়াশোনা করতে চায় না, তারা মোবাইলে-ল্যাপটপে বেশি সময় দেয়। আমি বলব, এই ডিফিকাল্টিজ আমরা যারা এডুকেশনিস্ট আছি তাদের। আমরা যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারিনি। একটা আনইন্টারেস্টেড এডুকেশন সিস্টেম, সিজিপিএ ও সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। এই শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে দেশকে উন্নত করা সম্ভব নয়, স্মার্ট বাংলাদেশ বানানো সম্ভব নয়। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত? এটা নিয়ে কাজ করবে এডুকেশনাল টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট।
আজকের পত্রিকা: বাকি বিভাগগুলো সম্পর্কেও জানতে চাই?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: আমরা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ফ্যাকাল্টির অধীনে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স নামে আরেকটা ডিপার্টমেন্ট খুলব। আপনারা লক্ষ করে দেখবেন যে ১০ বছর আগে বিবিএ, এমবিএর যে চাহিদা ছিল, আজ তা অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু কেন কমে গেছে, সেটার কারণ অনুসন্ধান তো করা উচিত। এমন তো নয় যে পৃথিবী থেকে বিজনেস কমে গেছে। মূল বিষয়টা হচ্ছে, এখন বিজনেস হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর। সে কারণে কম্পিউটার টেকনোলজি ও বিজনেস দুটোই দরকার। দুটোকেই সমন্বয় করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, যারা প্রযুক্তি বোঝে, তারা বিজনেস বুঝছে না, আবার যারা বিজনেস বোঝে, তারা টেকনোলজি বুঝছে না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির দরকার এমন এক ব্যক্তি যে প্রযুক্তি ও ব্যবসা দুটোই বোঝে। এ জন্য আমরা বিজনেস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামে একটা সাবজেক্ট খুলছি।
একচোরিয়াল সায়েন্স নামে আরও একটি বিভাগ আমরা খুলব। এখন যে ফাইন্যান্স শেখানো হয়, তা এই প্রযুক্তির যুগে অচল। একচোরিয়াল সায়েন্স প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি, ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন বিষয় পড়াবে। সিকিউরিটি অ্যান্ড কমিউনিকেশন ফ্যাকাল্টির অধীনে সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ চালু করব। এটা হাইডিমান্ডিং সাবজেক্ট। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি এই ডিপার্টমেন্টের গ্র্যাজুয়েট প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এই সাবজেক্টই নেই। আমরা খুলছি এই সাবজেক্ট।
সফটওয়্যার অ্যান্ড মেশিন ফ্যাকাল্টির অধীনে ইতিমধ্যে দুটো বিভাগের অনুমোদন পেয়েছি। এর মধ্যে একটা হচ্ছে, ডেটা সায়েন্স। বর্তমানে পুরো পৃথিবীই ডেটার ওপর নির্ভরশীল। ডেটা অ্যানালাইসিস ছাড়া এখন বাণিজ্য সম্ভব নয়। সত্যি বলতে কি, ডেটা অ্যানালাইসিস ছাড়া এখনকার পৃথিবীতে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ খুলছি। বর্তমানে বাংলাদেশে ২০ হাজারের বেশি চাকরির সুযোগ করছে এ ক্ষেত্রে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো গ্র্যাজুয়েট নেই, আমরা গ্র্যাজুয়েট তৈরি করব। ক্লাউড কম্পিউটিং, এখন বিজনেস প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড কম্পিউটিং ছাড়া কাজ করতে পারে না। এই সেক্টরেও এখন প্রচুর চাকরির চাহিদা রয়েছে। আমরা নিজেরা গেম ডেভেলপ করব। বিদেশের গেম আমরা খেলব না, নিজেদের গেম খেলব। এখন মাইক্রোচিপ সব বিদেশে থেকে আনতে হয়। আমরা চাই না বিদেশের মাইক্রোচিপ এ দেশে ব্যবহার হোক। আমরা আমাদের নিজেদের মানসম্মত মাইক্রোচিপ তৈরি করতে চাই। বিদেশ থেকে কিছু আনব না। আমরা শতভাগ স্বনির্ভরতা চাই। এমন ১৭টি বিভাগ আমরা চিন্তা করছি। এই ১৭টি বিভাগ যদি খুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে কোনো দেশের কাছে প্রযুক্তির জন্য যেতে হবে না।
আজকের পত্রিকা: বিডিইউ স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম গ্রহণে কি বিশেষ নজর দিয়েছে?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম ইতিমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি। আমাদের টিউটাবেসড এডুকেশন সিস্টেম। আগে যে তিন ঘণ্টা ক্লাস হতো, এখন সেটা দুই ঘণ্টা করে দুটো ক্লাস হয়, পরে টিউটোরিয়াল ক্লাস। ওই টিউটোরিয়াল ক্লাসে শিক্ষার্থীরা লেকচার ক্লাসে যা শিখল তার রিয়াল লাইফে অ্যাপ্লাই করতে পারল কি না বা বাস্তবজীবনে কীভাবে কাজে লাগাবে, নতুন কী কী উদ্ভাবন করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবে। প্রতিটি ক্লাস শেষে এমন দুই ঘণ্টা করে আলোচনা হবে। আর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে হাতেকলমে শিক্ষা তো রয়েছেই। আমাদের লেকচার ক্লাসগুলোতে অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউএসএসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকেরা ক্লাস নিতে সম্মত হয়েছেন। তাঁরা অনলাইনে ক্লাস নেবেন। টিউটোরিয়াল ও ল্যাব ক্লাসগুলো বিভাগের শিক্ষকেরা নেবেন।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের সফট স্কিল বিকাশে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: আমাদের শিক্ষার্থীরা সফট স্কিলে পিছিয়ে রয়েছে। নিজেদের মার্কেটিং, নিজেদের প্রেজেন্টেশনে ঘাটতি রয়েছে। আমরা সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য ওয়াদানি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তাদের ৯০টি প্রেজেন্টেশন মডিউল আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছি। শিক্ষার্থীরা প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে এই মডিউলগুলো শেষ করবে। সময় ব্যবস্থাপনা কিংবা নতুন কিছু উদ্ভাবন কীভাবে করা যায়, কীভাবে সিভি লিখতে হবে, চাকরির সাক্ষাৎকারে বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে কীভাবে, সব এখানে শেখানো হচ্ছে। আমরা থার্ড ইয়ারে ক্যাপসট্রম প্রজেক্ট নিচ্ছি। যে শিক্ষার্থী রোবটিকসে পড়ে, সে হয়তো ভাবছে, আমি এমন একটা রোবট বানাতে পারি যে খাবার পরিবেশন করে। তার মাথায় একটা আইডিয়া এল, সেই কনসেপ্টকে সে ডেভেলপ করবে। সেটা ইমপ্লিমেন্ট করে অ্যাপ্লাই করে দেখাবে। এক বছরে সে একই কাজ করবে। এখানে আমরা ক্লাসটেস্ট ওরিয়েন্টেড নই, সব সময় অ্যাসেসমেন্ট হবে। রিয়াল লাইফ অ্যাপ্লিকেশনের দিকে আমরা ফোকাস করছি।
উপাচার্য হিসেবে যোগদানের ছয় মাস সম্পন্ন করেছেন। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
আগামী চার বছরের মধ্যে বিডিইউকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে চাই। আমি সত্যিকার একটা ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বানিয়ে চলে আসতে চাই। আমি আমার ধ্যান-জ্ঞান দিয়ে চেষ্টা করছি। বিডিইউর শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্নাতক শেষ করার পর যেন গর্ব করে বলতে পারেন, আমি বিডিইউর গ্র্যাজুয়েট। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সে জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
আমি ঠিক যেভাবে করতে চাচ্ছিলাম, সেভাবে করতে পারছি না, এটা বললে ভুল হবে। যেগুলো আমার হাতে ছিল, সেগুলো আমি সময়মতো করেছি। তবে একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জমি অধিগ্রহণ, সরকারি অনুমোদনের কিছু বিষয় তো থাকেই। যেমন নতুন তিনটি বিভাগ এই শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করতে চাইলেও সেটা আগামী শিক্ষাবর্ষে চালু করতে হচ্ছে। সেই তিনটি বিভাগ হচ্ছে—আমি যে কারিকুলামে করতে চেয়েছি, সেই কারিকুলামেই হচ্ছে। দশটি দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটি করেছি। কিছুটা হয়তো বিলম্ব হচ্ছে।
আপনার নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাই
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নেতৃত্বের গুণাবলি, যোগাযোগ দক্ষতা, সমন্বয় সাধন দক্ষতা, স্মার্টলি কাজ করার দক্ষতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দক্ষতাসহ আরও অনেক দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এসব দক্ষতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে আমি আসার পর নতুন আটটি ক্লাব নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা ডিভাইস ডেভেলপ করছে, স্পোর্টস উইক আয়োজনসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে দারুণ কাজ করছে। আমাদের অফিসের কোনো সিস্টেম ছিল না, আমি একটা সমন্বিত নিয়ম করেছি। এখন সবাই জানে তার কাজ কী এবং তাঁরা নিজের কাজ নিজের মতো করছেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ওপেন বা ক্লোজ ক্রেডিট কোনো কিছু না করে খিচুড়ির মতো একটা বিধি ছিল, সেটার অনুমোদন ছিল না। আমার পূর্ণাঙ্গ বিধি প্রণয়ন করেছি এবং সিন্ডিকেট অনুমোদন করেছি। অর্গানোগ্রাম সিন্ডিকেটে পাস করেছি। দুটোই ইউজিসিতে সাবমিট করা হবে এখন। আমাদের ডেভেলপড সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোনো শিক্ষক ক্লাসে দেরিতে গেলে বা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ক্লাস শেষ করলে সফটওয়্যার এসএমএস করে আমাকে জানিয়ে দেবে। কোন শিক্ষক কী পড়ালেন, ভিডিও এবং ক্লাস ম্যাটেরিয়ালস সবটা অনলাইনে থেকে যাবে। সব ক্লাস টেস্ট অনলাইনে নিতে হবে, কাগজে কোনো ক্লাস টেস্ট নেওয়া যাবে না। কোনো অ্যাসাইনমেন্ট কাগজে নেওয়া যাবে না। এতে শিক্ষকেরা নিজেদের ও শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গড়ে তুলতে পারবেন। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, জুলাই মাস থেকে পুরোদমে নির্ভুলভাবে কাজ শুরু করতে পারব। ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছি।
একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে যদি সবিস্তারে বলতেন
একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের মূল বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি। আমরা ২০৪১ সালের স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ২০৪১ সালে মূলত প্রধানমন্ত্রীর তিনটি টার্গেট। প্রথমত, বাংলাদেশ স্মার্ট হবে, বাংলাদেশের জনগণকে স্মার্ট হতে হবে। একটা দেশ তো কখনো স্মার্ট হয় না; দেশের জনগণ স্মার্ট হয়, সিস্টেম স্মার্ট, সোসাইটি স্মার্ট হয়। সিস্টেম, সোসাইটি, গভর্নমেন্ট যা-ই স্মার্ট হোক না কেন, জনগণকে আগে স্মার্ট হতে হবে। সেই জনগণকে আমাদের তৈরি করতে হবে। যে জনগণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বুঝবে, যে জনগণ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বুঝবে, যে জনগণ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। দ্বিতীয়ত, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ধনী দেশ হবে। তৃতীয়ত, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ টেকনোলজিকে নেতৃত্ব দেবে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে, এই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। আমি যদি স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করি, তাহলে আমার সোসাইটি স্মার্ট হবে, ইকোনমি স্মার্ট হবে, গভর্নমেন্ট স্মার্ট হবে। যখন এগুলো স্মার্ট হবে, দেশ স্বাভাবিকভাবেই ধনী দেশ হয়ে যাবে। আর যখন জনগণ স্মার্ট হবে, দেশ ধনী হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশ প্রযুক্তিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। স্মার্ট জনগণ তৈরির জন্য এবং সমস্ত টেকনোলজি বাংলাদেশে আনার জন্য আমাকে কীভাবে জনবল তৈরি করতে হবে, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা পাঁচটি ফ্যাকাল্টির চিন্তা করছি। এগুলো হলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, সিকিউরিটি অ্যান্ড কমিউনিকেশন, সফটওয়্যার অ্যান্ড মেশিন লার্নিং, সাইবার ফিজিক্যাল সিস্টেম, লাইফ সায়েন্স।
এই সিদ্ধান্তগুলো কি আপনার মস্তিষ্কপ্রসূত?
এর আগে যেহেতু মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এনআইডি এবং ইভিএম তৈরি করাসহ অনেকগুলো ন্যাশনাল পলিসির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, আমার কাছে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা পার্ট হয়ে গেছে। আমাদের এই ৫ ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৭টি ডিপার্টমেন্ট থাকবে। এসব ডিপার্টমেন্ট করতে পারলে আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমবে। সব টেকনোলজি আমাদের এখানে তৈরি হবে। আমরা বিদেশে থেকে কোনো মেশিন কিনব না, বিদেশ থেকে কোনো ম্যানপাওয়ার হায়ার করব না, বিদেশ থেকে কোনো সফটওয়্যার কিনব না। এখানে মেশিন, ম্যানপাওয়ার ও সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। আমরা আমাদের মেশিন ও সফটওয়্যার বিদেশে বিক্রি করব। আমাদের ম্যানপাওয়ার বিদেশে যাবে। আমরা এভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব ইনশা আল্লাহ। আমাদের এই ১৭টি বিভাগের মধ্যে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ফ্যাকাল্টির অধীনে আগে আইসিটি অ্যান্ড এডুকেশন বিভাগ ছিল। ইন্টারন্যাশনাল ডোমেইনের সঙ্গে কোপআপ করতে না পারায় এটাকে পরিবর্তন করে এডুকেশনাল টেকনোলজি বানিয়েছি এবং ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপার্ট ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সপার্টদের সমন্বয়ে পুরো কারিকুলাম পরিবর্তন করেছি। এভাবে আমরা মোট পাঁচটি বিভাগের কারিকুলাম চেঞ্জ করেছি।
আজকের পত্রিকা: বলা হয়ে থাকে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয়। এ ক্ষেত্রে আপনার ভাবনা শুনতে চাই?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: আমাদের বর্তমান যে শিক্ষাব্যবস্থা সেটা পৃথিবীতে টিকবে না। একটা ছেলে বা মেয়ে মোবাইল ব্যবহার করে ইউটিউবে ঢুকলেই আনলিমিটেড ভিডিও পেয়ে যাচ্ছে, তথ্যনির্ভর ও সময়োপযোগী ক্লাস লেকচার পাচ্ছে, সেই শিক্ষার্থী যখন আমাদের দেশের ক্লাসগুলোতে ঢুকছে, তাকে আমরা হোয়াইট বোর্ডে মার্কার দিয়ে লিখে দিচ্ছি আর সে মনোযোগ দিয়ে শুনবে, এই কল্পনা করাটা আসলে যুক্তিসংগত নয়। আমাদের অনেকেই বলে, আজকালকার ছেলেমেয়েরা মনোযোগী নয়, তারা পড়াশোনা করতে চায় না, তারা মোবাইলে-ল্যাপটপে বেশি সময় দেয়। আমি বলব, এই ডিফিকাল্টিজ আমরা যারা এডুকেশনিস্ট আছি তাদের। আমরা যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারিনি। একটা আনইন্টারেস্টেড এডুকেশন সিস্টেম, সিজিপিএ ও সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। এই শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে দেশকে উন্নত করা সম্ভব নয়, স্মার্ট বাংলাদেশ বানানো সম্ভব নয়। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত? এটা নিয়ে কাজ করবে এডুকেশনাল টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট।
আজকের পত্রিকা: বাকি বিভাগগুলো সম্পর্কেও জানতে চাই?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: আমরা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ফ্যাকাল্টির অধীনে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স নামে আরেকটা ডিপার্টমেন্ট খুলব। আপনারা লক্ষ করে দেখবেন যে ১০ বছর আগে বিবিএ, এমবিএর যে চাহিদা ছিল, আজ তা অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু কেন কমে গেছে, সেটার কারণ অনুসন্ধান তো করা উচিত। এমন তো নয় যে পৃথিবী থেকে বিজনেস কমে গেছে। মূল বিষয়টা হচ্ছে, এখন বিজনেস হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর। সে কারণে কম্পিউটার টেকনোলজি ও বিজনেস দুটোই দরকার। দুটোকেই সমন্বয় করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, যারা প্রযুক্তি বোঝে, তারা বিজনেস বুঝছে না, আবার যারা বিজনেস বোঝে, তারা টেকনোলজি বুঝছে না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির দরকার এমন এক ব্যক্তি যে প্রযুক্তি ও ব্যবসা দুটোই বোঝে। এ জন্য আমরা বিজনেস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামে একটা সাবজেক্ট খুলছি।
একচোরিয়াল সায়েন্স নামে আরও একটি বিভাগ আমরা খুলব। এখন যে ফাইন্যান্স শেখানো হয়, তা এই প্রযুক্তির যুগে অচল। একচোরিয়াল সায়েন্স প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি, ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন বিষয় পড়াবে। সিকিউরিটি অ্যান্ড কমিউনিকেশন ফ্যাকাল্টির অধীনে সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ চালু করব। এটা হাইডিমান্ডিং সাবজেক্ট। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি এই ডিপার্টমেন্টের গ্র্যাজুয়েট প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এই সাবজেক্টই নেই। আমরা খুলছি এই সাবজেক্ট।
সফটওয়্যার অ্যান্ড মেশিন ফ্যাকাল্টির অধীনে ইতিমধ্যে দুটো বিভাগের অনুমোদন পেয়েছি। এর মধ্যে একটা হচ্ছে, ডেটা সায়েন্স। বর্তমানে পুরো পৃথিবীই ডেটার ওপর নির্ভরশীল। ডেটা অ্যানালাইসিস ছাড়া এখন বাণিজ্য সম্ভব নয়। সত্যি বলতে কি, ডেটা অ্যানালাইসিস ছাড়া এখনকার পৃথিবীতে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ খুলছি। বর্তমানে বাংলাদেশে ২০ হাজারের বেশি চাকরির সুযোগ করছে এ ক্ষেত্রে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো গ্র্যাজুয়েট নেই, আমরা গ্র্যাজুয়েট তৈরি করব। ক্লাউড কম্পিউটিং, এখন বিজনেস প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড কম্পিউটিং ছাড়া কাজ করতে পারে না। এই সেক্টরেও এখন প্রচুর চাকরির চাহিদা রয়েছে। আমরা নিজেরা গেম ডেভেলপ করব। বিদেশের গেম আমরা খেলব না, নিজেদের গেম খেলব। এখন মাইক্রোচিপ সব বিদেশে থেকে আনতে হয়। আমরা চাই না বিদেশের মাইক্রোচিপ এ দেশে ব্যবহার হোক। আমরা আমাদের নিজেদের মানসম্মত মাইক্রোচিপ তৈরি করতে চাই। বিদেশ থেকে কিছু আনব না। আমরা শতভাগ স্বনির্ভরতা চাই। এমন ১৭টি বিভাগ আমরা চিন্তা করছি। এই ১৭টি বিভাগ যদি খুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে কোনো দেশের কাছে প্রযুক্তির জন্য যেতে হবে না।
আজকের পত্রিকা: বিডিইউ স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম গ্রহণে কি বিশেষ নজর দিয়েছে?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম ইতিমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি। আমাদের টিউটাবেসড এডুকেশন সিস্টেম। আগে যে তিন ঘণ্টা ক্লাস হতো, এখন সেটা দুই ঘণ্টা করে দুটো ক্লাস হয়, পরে টিউটোরিয়াল ক্লাস। ওই টিউটোরিয়াল ক্লাসে শিক্ষার্থীরা লেকচার ক্লাসে যা শিখল তার রিয়াল লাইফে অ্যাপ্লাই করতে পারল কি না বা বাস্তবজীবনে কীভাবে কাজে লাগাবে, নতুন কী কী উদ্ভাবন করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবে। প্রতিটি ক্লাস শেষে এমন দুই ঘণ্টা করে আলোচনা হবে। আর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে হাতেকলমে শিক্ষা তো রয়েছেই। আমাদের লেকচার ক্লাসগুলোতে অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউএসএসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকেরা ক্লাস নিতে সম্মত হয়েছেন। তাঁরা অনলাইনে ক্লাস নেবেন। টিউটোরিয়াল ও ল্যাব ক্লাসগুলো বিভাগের শিক্ষকেরা নেবেন।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের সফট স্কিল বিকাশে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম: আমাদের শিক্ষার্থীরা সফট স্কিলে পিছিয়ে রয়েছে। নিজেদের মার্কেটিং, নিজেদের প্রেজেন্টেশনে ঘাটতি রয়েছে। আমরা সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য ওয়াদানি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তাদের ৯০টি প্রেজেন্টেশন মডিউল আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছি। শিক্ষার্থীরা প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে এই মডিউলগুলো শেষ করবে। সময় ব্যবস্থাপনা কিংবা নতুন কিছু উদ্ভাবন কীভাবে করা যায়, কীভাবে সিভি লিখতে হবে, চাকরির সাক্ষাৎকারে বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে কীভাবে, সব এখানে শেখানো হচ্ছে। আমরা থার্ড ইয়ারে ক্যাপসট্রম প্রজেক্ট নিচ্ছি। যে শিক্ষার্থী রোবটিকসে পড়ে, সে হয়তো ভাবছে, আমি এমন একটা রোবট বানাতে পারি যে খাবার পরিবেশন করে। তার মাথায় একটা আইডিয়া এল, সেই কনসেপ্টকে সে ডেভেলপ করবে। সেটা ইমপ্লিমেন্ট করে অ্যাপ্লাই করে দেখাবে। এক বছরে সে একই কাজ করবে। এখানে আমরা ক্লাসটেস্ট ওরিয়েন্টেড নই, সব সময় অ্যাসেসমেন্ট হবে। রিয়াল লাইফ অ্যাপ্লিকেশনের দিকে আমরা ফোকাস করছি।
ব্যাগ কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা ভালো। ব্যাগের আকার ও রং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্বে ছাপ রাখে বেশ গভীরভাবে।
১৯ ঘণ্টা আগেসংবেদনশীল ত্বকের মানুষ সারা বছর ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ ধরনের ত্বক আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ বা ত্বকের অনুপযুক্ত প্রসাধনীতে প্রভাবিত হতে পারে।
১৯ ঘণ্টা আগেশীতের হিমেল হাওয়া থেকে বাঁচতে বাইকারদের পোশাক নিয়ে থাকতে হয় সচেতন। তাই এ সময় বাইকারদের পোশাকে আসে বিশেষ পরিবর্তন। বাইকারদের পোশাক যেমন শীত নিবারক হতে হয়, তেমনি হতে হয় আরামদায়ক। কী কী থাকবে সে পোশাকে?
১৯ ঘণ্টা আগেএই ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিখ্যাত ফরাসি আবিষ্কারক লুই অটোইন ডি বোগেনভিলিয়ার নাম। তাঁর নামেই এ গাছের নাম রাখা হয়েছিল বোগেনভিলিয়া। আর এটিকে বাংলায় প্রথম বাগানবিলাস বলে ডেকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কমবেশি সারা বছর ফুল দেখা গেলেও
১৯ ঘণ্টা আগে