গোলাম ওয়াদুদ
অনেক দিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাতো না।
- পাহাড় চূড়ায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো সবার পাহাড় কেনার শখ না থাকলেও, পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার শখ অনেকেরই আছে। সেই শখ মেটাতেই পাহাড়ের সঙ্গে মিতালি করতে গিয়েছিলাম বান্দরবান। প্রথমবার যাঁরা পাহাড়ে উঠতে চান, বান্দরবানের মারাইথং পাহাড়টি তাঁদের জন্য ভালো। উচ্চতা ১ হাজার ৬৪০ ফুট। বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড় এটি।
বলে রাখা ভালো, যাঁরা নতুন, তাঁদের এই পাহাড়ে ওঠা অনেকটা কষ্টের হবে। কিন্তু সৌন্দর্য সেই কষ্ট নিমেষেই দূর করে দেবে।
সকাল সকাল আলীকদমে বাস থেকে নেমে গাইডের সঙ্গে দেখা। তারপর একটি রিসোর্ট টাইপের বাড়িতে খানিক বিশ্রাম নিয়ে, খেয়ে, আশপাশ ঘোরা হলো। ঠিক হলো দুপুরের পর পাহাড়ে ওঠা হবে। গাইড জানালেন, তাঁর উঠতে এক ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু আমার লাগতে পারে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। খুব সহজেই ওঠা যাবে—গাইড এমন সাহস দিলেও ওঠার সময় আমার অবস্থা সঙিন। পাহাড়ের ঢালে ঢালে কিছুক্ষণ অন্তর জিরিয়ে নিয়ে তারপর এগিয়ে যাচ্ছি চূড়ার দিকে। অথচ পাহাড়ি শিশুরা কী নিমেষেই উঠে যায় পাহাড়ের চূড়ায়! এ পথে খাড়া পাহাড়ের ঢালে দেখা মিলবে পাহাড়ি পল্লি আর পর্যটকদের জন্য বানিয়ে রাখা টং দোকান। সেখানে কলা, পেঁপে, তেঁতুলসহ কিছু খাবার পাওয়া যায়। তবে পানির বেশ সংকট।
পাহাড়ি বাড়িগুলো দেখতে অন্য রকম। উঁচু-নিচু জায়গাতেই তোলা হয়েছে ঘর। আমাকে সবচেয়ে অবাক করেছেন পাহাড়ি নারীরা। পিঠে কাঠ, পানি বা অন্য সামগ্রী এবং কোলে শিশু নিয়ে তাঁরা উঠে যাচ্ছেন হাজার ফুট উঁচুতে। আর আমি কোনো রকম বোঝা ছাড়াই দশ-পনেরো মিনিট পর পর জিরিয়ে পাহাড়ে উঠছি।
যা-ই হোক, একসময় সে কষ্টসাধ্য পথ শেষ হলো দুই-আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায়। চূড়ায় উঠে পথের সব কষ্ট নিমেষেই উধাও! এখানে যেন সৌন্দর্যের মেলা বসেছে! সমতলের শহুরে মানুষের কাছে সে অন্য রকম অনুভূতি। মনে হচ্ছিল, আমি এখন জাগতিক সবকিছুর ধরাছোঁয়ার বাইরে। যত দূর দৃষ্টি যায় তত দূর আমার। আমিই এই রাজ্যের রাজা। এবার আমার সত্যিই মনে হলো, আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই। তার চূড়ায় একটা ছোট্ট ঘর আর আমি।
যা-ই হোক, চূড়া থেকে যেদিকে তাকাই শুধুই ছোট-বড় পাহাড় চোখে পড়ে। ওপর থেকে মনে হয় সবুজের বিছানা। পাহাড় থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার অপার্থিব দৃশ্য চোখে লেগে আছে এখনো।
রাতে পাহাড়ের চূড়ায় তাঁবু খাঁটিয়ে কাটানোর ব্যবস্থা হলো। শীতল একটা পরিবেশ। এই তাঁবুর নিচে বসে পুরো রাত আকাশের সঙ্গে গল্প করে কাটানো যায়। চূড়ায় বসে আকাশের সঙ্গে গল্প করতে করতে ভোরের দেখা মিলবে। সে এক অন্য রকম ভোর।
পাহাড়ে সূর্যোদয় যাঁরা দেখেননি, তাঁদের হয়তো অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যাবে। মেঘ ভেদ করে সূর্য ধীরে ধীরে উঁকি দেবে। ঠিক লুকোচুরি খেলার মতো। তারপর মনে হবে, সূর্য যেন হাতের মুঠোয়। পাহাড়, আকাশ, সূর্য—সবই নিজের মনে হবে। চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধমন্দির। এটি পাহাড়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। দেড় হাজার ফুট উঁচুতে উঠে সেখানকার মানুষ উপাসনা করে। বিষয়টা ভাবতেই ভালো লাগে।
সকালের পাহাড় দেখে সমতলে ফেরার পালা। ওঠার সময় যেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগেছিল, সেখানে নামতে অর্ধেক সময় লেগেছে। মনে হয়, এক রাতের বদৌলতে পাহাড়ের মানুষ হয়ে উঠেছিলাম! সমতলে এসে বারবার মনে পড়ছিল চূড়ার কথা। পাহাড়চূড়ার প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের খোরাক জোগায়। জীবন উপলব্ধি করতে শেখায়। সেই সব অপার্থিব দৃশ্য বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠে নামতে হবে কক্সবাজারের চকরিয়ার নতুন বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে আলীকদমের গাড়িতে সরাসরি আলীকদম পৌঁছে যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন
সেখানে কক্সবাজারের মতো ভালো থাকার ব্যবস্থা নেই। গাইডের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকতে হবে। অথবা পাহাড়ে তাঁবুতেও থাকতে পারেন। স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু গেস্ট রুম করেছেন, সেখানেও থাকতে পারেন। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খাবার পাওয়া যাবে। সেটা গাইড ব্যবস্থা করবেন।
টিপস
অনেক দিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাতো না।
- পাহাড় চূড়ায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো সবার পাহাড় কেনার শখ না থাকলেও, পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার শখ অনেকেরই আছে। সেই শখ মেটাতেই পাহাড়ের সঙ্গে মিতালি করতে গিয়েছিলাম বান্দরবান। প্রথমবার যাঁরা পাহাড়ে উঠতে চান, বান্দরবানের মারাইথং পাহাড়টি তাঁদের জন্য ভালো। উচ্চতা ১ হাজার ৬৪০ ফুট। বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড় এটি।
বলে রাখা ভালো, যাঁরা নতুন, তাঁদের এই পাহাড়ে ওঠা অনেকটা কষ্টের হবে। কিন্তু সৌন্দর্য সেই কষ্ট নিমেষেই দূর করে দেবে।
সকাল সকাল আলীকদমে বাস থেকে নেমে গাইডের সঙ্গে দেখা। তারপর একটি রিসোর্ট টাইপের বাড়িতে খানিক বিশ্রাম নিয়ে, খেয়ে, আশপাশ ঘোরা হলো। ঠিক হলো দুপুরের পর পাহাড়ে ওঠা হবে। গাইড জানালেন, তাঁর উঠতে এক ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু আমার লাগতে পারে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। খুব সহজেই ওঠা যাবে—গাইড এমন সাহস দিলেও ওঠার সময় আমার অবস্থা সঙিন। পাহাড়ের ঢালে ঢালে কিছুক্ষণ অন্তর জিরিয়ে নিয়ে তারপর এগিয়ে যাচ্ছি চূড়ার দিকে। অথচ পাহাড়ি শিশুরা কী নিমেষেই উঠে যায় পাহাড়ের চূড়ায়! এ পথে খাড়া পাহাড়ের ঢালে দেখা মিলবে পাহাড়ি পল্লি আর পর্যটকদের জন্য বানিয়ে রাখা টং দোকান। সেখানে কলা, পেঁপে, তেঁতুলসহ কিছু খাবার পাওয়া যায়। তবে পানির বেশ সংকট।
পাহাড়ি বাড়িগুলো দেখতে অন্য রকম। উঁচু-নিচু জায়গাতেই তোলা হয়েছে ঘর। আমাকে সবচেয়ে অবাক করেছেন পাহাড়ি নারীরা। পিঠে কাঠ, পানি বা অন্য সামগ্রী এবং কোলে শিশু নিয়ে তাঁরা উঠে যাচ্ছেন হাজার ফুট উঁচুতে। আর আমি কোনো রকম বোঝা ছাড়াই দশ-পনেরো মিনিট পর পর জিরিয়ে পাহাড়ে উঠছি।
যা-ই হোক, একসময় সে কষ্টসাধ্য পথ শেষ হলো দুই-আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায়। চূড়ায় উঠে পথের সব কষ্ট নিমেষেই উধাও! এখানে যেন সৌন্দর্যের মেলা বসেছে! সমতলের শহুরে মানুষের কাছে সে অন্য রকম অনুভূতি। মনে হচ্ছিল, আমি এখন জাগতিক সবকিছুর ধরাছোঁয়ার বাইরে। যত দূর দৃষ্টি যায় তত দূর আমার। আমিই এই রাজ্যের রাজা। এবার আমার সত্যিই মনে হলো, আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই। তার চূড়ায় একটা ছোট্ট ঘর আর আমি।
যা-ই হোক, চূড়া থেকে যেদিকে তাকাই শুধুই ছোট-বড় পাহাড় চোখে পড়ে। ওপর থেকে মনে হয় সবুজের বিছানা। পাহাড় থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার অপার্থিব দৃশ্য চোখে লেগে আছে এখনো।
রাতে পাহাড়ের চূড়ায় তাঁবু খাঁটিয়ে কাটানোর ব্যবস্থা হলো। শীতল একটা পরিবেশ। এই তাঁবুর নিচে বসে পুরো রাত আকাশের সঙ্গে গল্প করে কাটানো যায়। চূড়ায় বসে আকাশের সঙ্গে গল্প করতে করতে ভোরের দেখা মিলবে। সে এক অন্য রকম ভোর।
পাহাড়ে সূর্যোদয় যাঁরা দেখেননি, তাঁদের হয়তো অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যাবে। মেঘ ভেদ করে সূর্য ধীরে ধীরে উঁকি দেবে। ঠিক লুকোচুরি খেলার মতো। তারপর মনে হবে, সূর্য যেন হাতের মুঠোয়। পাহাড়, আকাশ, সূর্য—সবই নিজের মনে হবে। চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধমন্দির। এটি পাহাড়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। দেড় হাজার ফুট উঁচুতে উঠে সেখানকার মানুষ উপাসনা করে। বিষয়টা ভাবতেই ভালো লাগে।
সকালের পাহাড় দেখে সমতলে ফেরার পালা। ওঠার সময় যেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগেছিল, সেখানে নামতে অর্ধেক সময় লেগেছে। মনে হয়, এক রাতের বদৌলতে পাহাড়ের মানুষ হয়ে উঠেছিলাম! সমতলে এসে বারবার মনে পড়ছিল চূড়ার কথা। পাহাড়চূড়ার প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের খোরাক জোগায়। জীবন উপলব্ধি করতে শেখায়। সেই সব অপার্থিব দৃশ্য বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠে নামতে হবে কক্সবাজারের চকরিয়ার নতুন বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে আলীকদমের গাড়িতে সরাসরি আলীকদম পৌঁছে যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন
সেখানে কক্সবাজারের মতো ভালো থাকার ব্যবস্থা নেই। গাইডের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকতে হবে। অথবা পাহাড়ে তাঁবুতেও থাকতে পারেন। স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু গেস্ট রুম করেছেন, সেখানেও থাকতে পারেন। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খাবার পাওয়া যাবে। সেটা গাইড ব্যবস্থা করবেন।
টিপস
ব্যাগ কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা ভালো। ব্যাগের আকার ও রং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্বে ছাপ রাখে বেশ গভীরভাবে।
১ দিন আগেসংবেদনশীল ত্বকের মানুষ সারা বছর ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ ধরনের ত্বক আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ বা ত্বকের অনুপযুক্ত প্রসাধনীতে প্রভাবিত হতে পারে।
১ দিন আগেশীতের হিমেল হাওয়া থেকে বাঁচতে বাইকারদের পোশাক নিয়ে থাকতে হয় সচেতন। তাই এ সময় বাইকারদের পোশাকে আসে বিশেষ পরিবর্তন। বাইকারদের পোশাক যেমন শীত নিবারক হতে হয়, তেমনি হতে হয় আরামদায়ক। কী কী থাকবে সে পোশাকে?
১ দিন আগেএই ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিখ্যাত ফরাসি আবিষ্কারক লুই অটোইন ডি বোগেনভিলিয়ার নাম। তাঁর নামেই এ গাছের নাম রাখা হয়েছিল বোগেনভিলিয়া। আর এটিকে বাংলায় প্রথম বাগানবিলাস বলে ডেকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কমবেশি সারা বছর ফুল দেখা গেলেও
১ দিন আগে