মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
খুম খুম খুম অমিয়াখুম। এটি স্থানীয় শব্দ। যাঁরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য অমিয়াখুম ভালো ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে।
ভ্রমণবিষয়ক ফিচার লেখক এক পরিচিতজনের মাধ্যমে অমিয়াখুমের সৌন্দর্যের বর্ণনা যখন জানতে পারি, তখন থেকেই সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু। অনেকেই মনে করেন, দু-চারবার বান্দরবান গেলে সবকিছু ঘুরে দেখা সম্ভব। আসলে কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এটি এমন একটি জেলা, যার পরতে পরতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আর তা করতে আপনাকে বান্দরবান যেতে হবে অনেকবার।
আমাদের এবারের অভিযান ছিল বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলের প্রকৃতি ও মানুষ দেখা। যত বেশি দুর্গম অঞ্চলে যাওয়া যাবে, ততই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতে হবে। আরও বেশি পাহাড়ি মানুষের যাপিত জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা নেওয়া যাবে। সে আশায়ই পাঁচ বন্ধু মিলে এবার তিন রাত, দুই দিন পার করে গিয়েছিলাম সৌন্দর্যের রানি অমিয়াখুম। এর মধ্যে যাওয়া ও ঢাকায় ফেরার সময় দুই রাত কাটিয়েছিলাম ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী-অধ্যুষিত যিন্নাপাড়ায়।
রাতে সেই পাড়ার বাসিন্দা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিলাসের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানকার নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সবাই স্কুল-কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চলনে-বলনে আধুনিক অথচ পাড়ায় স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। বিলাসের কথা প্রসঙ্গে বোঝা গেল, তাঁদের জীবনযাপন প্রাকৃতিক। সেখানে ঘরের ভেতর টকটক নামক প্রাণীর বিচরণ সারা রাত। ঘুম হারাম হতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে বিষয়টিতে।
পথে যেতে যেতে
খুব সকালে রওনা হতে হলো গন্তব্যে। বাঁশের লাঠি সম্বল করে হেঁটে যাচ্ছি একের পর এক পাহাড় ডিঙিয়ে, পথে বিশ্রাম নিলাম বছর পাঁচেক আগে গড়ে ওঠা অতিরামপাড়ায়। সেখান থেকে তাজিংডং পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অতিরামপাড়া পেছনে ফেলে আবার হাঁটছি। বিশাল বিশাল পাহাড়, জঙ্গল, ঝিরি মাড়িয়ে হেঁটেই চলছি। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সঙ্গী ছিল উজাড় করে দেওয়া প্রকৃতি আর বুনো ফুলের সৌরভ। মাঝেমধ্যে জনমানবহীন পাহাড়ে গড়ে তোলা জুম ঘরে বিশ্রাম। এরই মধ্যে দু-চারটা জোঁক দেহের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছে। বন্ধুরা জোঁকের ভয়ে দ্রুত হেঁটেও শেষ রক্ষা পায়নি। তাদের কারও কারও ব্রেক ড্যান্স ভ্রমণে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।
সুন্দর যেখানে ভয়ংকর
অমিয়াখুম যাওয়ার পথের চারপাশের প্রকৃতি খুবই সুন্দর। উদার করে দেওয়া প্রকৃতির পরশে পাহাড়গুলোও খুব সুন্দর সাজে সেজে আছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হাঁটার পর পাহাড়ের ওপর থেকে অমিয়াখুম প্রপাতের পানির নিয়মিত ছন্দের শব্দ ভেসে এল। এবার খাড়া এক পাহাড় থেকে নিচে নামছি।
একটু এদিক-সেদিক হলেই আলুর দম! প্রকৃতি এখানে ভয়ংকর সুন্দর। খুব সাবধানে নেমে প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটার পর পেয়ে গেলাম সেই মহা আনন্দের ক্ষণ। দুই পাশে দিগন্তছোঁয়া খাড়া পাহাড়। সেই পাহাড়ে বড় বড় গাছ, নিচে বিশাল বিশাল হরেক আকৃতির পাথর, তার মাঝে বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায় অমিয়াখুম জলপ্রপাত। এখানকার পাথুরে পাহাড় এমনভাবে খাঁজকাটা, দেখে মনে হয় কোনো ডিজাইনার বেশ যত্ন নিয়ে এ সৌন্দর্য তৈরি করেছেন।
সেখানে সবুজে ভরা সারি সারি পাহাড়। কান পাতলেই শোনা যায় ঝরনা আর হাজারো পাখির গান। উচ্চতা যা–ই হোক, আদ্যিকালের সেসব পাহাড়ে আছে রোমাঞ্চ। আছে অভিযাত্রার অ্যাড্রিনালিন রাশ। আছে সরল পাহাড়ি মানুষ আর তাদের প্রাকৃতিক জীবনযাপন। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের দেশেই আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে অমিয়াখুম।
প্রকৃতির খেয়ালে পানি পড়ার দৃশ্য বর্ণনাতীত। হৃদয়ছোঁয়া প্রপাতের ছন্দময় শব্দ ভ্রমণের সব ক্লান্তি দূর করে দেয় নিমেষেই। এত সুন্দর জলপ্রপাত অথচ এ দেশের অনেকেই তা জানেন না। না জানার কারণে কৃত্রিম জলপ্রপাত দেখার জন্যই এ দেশের পর্যটকেরা বিদেশে পাড়ি জমান। অমিয়াখুমের জলে মন ভরে অবগাহন করা হলো। অতঃপর মুগ্ধতার আবেশে দুপুরকে বিকেল ভেবে ফেরার পালা।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে বাসে বা চাঁদের গাড়িতে থানচি। সেখান থেকে ট্রলারে রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে হেঁটে যিন্নাপাড়া বা অতিরামপাড়া। সেখান থেকে ঘণ্টা পাঁচেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অমিয়াখুম। আবার রেমাক্রি থেকে থুইসাপাড়া হয়েও অমিয়াখুম যাওয়া যায়।
খাওয়া-থাকা
পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। জুম চালের ভাত আর মোরগ ভুনা খেতে হলে গাইডের সঙ্গে আলাপ করে নিতে হবে।
রোমাঞ্চকর অমিয়াখুম ট্রেইল করতে খরচ হবে জনপ্রতি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় রাত কাটাবেন যিন্নাপাড়ায়। মাথাপিছু থাকা-খাওয়া বাবদ ব্যয় হবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
লেখক: চিফ অর্গানাইজার, দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
খুম খুম খুম অমিয়াখুম। এটি স্থানীয় শব্দ। যাঁরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য অমিয়াখুম ভালো ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে।
ভ্রমণবিষয়ক ফিচার লেখক এক পরিচিতজনের মাধ্যমে অমিয়াখুমের সৌন্দর্যের বর্ণনা যখন জানতে পারি, তখন থেকেই সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু। অনেকেই মনে করেন, দু-চারবার বান্দরবান গেলে সবকিছু ঘুরে দেখা সম্ভব। আসলে কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এটি এমন একটি জেলা, যার পরতে পরতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আর তা করতে আপনাকে বান্দরবান যেতে হবে অনেকবার।
আমাদের এবারের অভিযান ছিল বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলের প্রকৃতি ও মানুষ দেখা। যত বেশি দুর্গম অঞ্চলে যাওয়া যাবে, ততই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতে হবে। আরও বেশি পাহাড়ি মানুষের যাপিত জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা নেওয়া যাবে। সে আশায়ই পাঁচ বন্ধু মিলে এবার তিন রাত, দুই দিন পার করে গিয়েছিলাম সৌন্দর্যের রানি অমিয়াখুম। এর মধ্যে যাওয়া ও ঢাকায় ফেরার সময় দুই রাত কাটিয়েছিলাম ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী-অধ্যুষিত যিন্নাপাড়ায়।
রাতে সেই পাড়ার বাসিন্দা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিলাসের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানকার নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সবাই স্কুল-কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চলনে-বলনে আধুনিক অথচ পাড়ায় স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। বিলাসের কথা প্রসঙ্গে বোঝা গেল, তাঁদের জীবনযাপন প্রাকৃতিক। সেখানে ঘরের ভেতর টকটক নামক প্রাণীর বিচরণ সারা রাত। ঘুম হারাম হতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে বিষয়টিতে।
পথে যেতে যেতে
খুব সকালে রওনা হতে হলো গন্তব্যে। বাঁশের লাঠি সম্বল করে হেঁটে যাচ্ছি একের পর এক পাহাড় ডিঙিয়ে, পথে বিশ্রাম নিলাম বছর পাঁচেক আগে গড়ে ওঠা অতিরামপাড়ায়। সেখান থেকে তাজিংডং পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অতিরামপাড়া পেছনে ফেলে আবার হাঁটছি। বিশাল বিশাল পাহাড়, জঙ্গল, ঝিরি মাড়িয়ে হেঁটেই চলছি। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সঙ্গী ছিল উজাড় করে দেওয়া প্রকৃতি আর বুনো ফুলের সৌরভ। মাঝেমধ্যে জনমানবহীন পাহাড়ে গড়ে তোলা জুম ঘরে বিশ্রাম। এরই মধ্যে দু-চারটা জোঁক দেহের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছে। বন্ধুরা জোঁকের ভয়ে দ্রুত হেঁটেও শেষ রক্ষা পায়নি। তাদের কারও কারও ব্রেক ড্যান্স ভ্রমণে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।
সুন্দর যেখানে ভয়ংকর
অমিয়াখুম যাওয়ার পথের চারপাশের প্রকৃতি খুবই সুন্দর। উদার করে দেওয়া প্রকৃতির পরশে পাহাড়গুলোও খুব সুন্দর সাজে সেজে আছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হাঁটার পর পাহাড়ের ওপর থেকে অমিয়াখুম প্রপাতের পানির নিয়মিত ছন্দের শব্দ ভেসে এল। এবার খাড়া এক পাহাড় থেকে নিচে নামছি।
একটু এদিক-সেদিক হলেই আলুর দম! প্রকৃতি এখানে ভয়ংকর সুন্দর। খুব সাবধানে নেমে প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটার পর পেয়ে গেলাম সেই মহা আনন্দের ক্ষণ। দুই পাশে দিগন্তছোঁয়া খাড়া পাহাড়। সেই পাহাড়ে বড় বড় গাছ, নিচে বিশাল বিশাল হরেক আকৃতির পাথর, তার মাঝে বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায় অমিয়াখুম জলপ্রপাত। এখানকার পাথুরে পাহাড় এমনভাবে খাঁজকাটা, দেখে মনে হয় কোনো ডিজাইনার বেশ যত্ন নিয়ে এ সৌন্দর্য তৈরি করেছেন।
সেখানে সবুজে ভরা সারি সারি পাহাড়। কান পাতলেই শোনা যায় ঝরনা আর হাজারো পাখির গান। উচ্চতা যা–ই হোক, আদ্যিকালের সেসব পাহাড়ে আছে রোমাঞ্চ। আছে অভিযাত্রার অ্যাড্রিনালিন রাশ। আছে সরল পাহাড়ি মানুষ আর তাদের প্রাকৃতিক জীবনযাপন। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের দেশেই আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে অমিয়াখুম।
প্রকৃতির খেয়ালে পানি পড়ার দৃশ্য বর্ণনাতীত। হৃদয়ছোঁয়া প্রপাতের ছন্দময় শব্দ ভ্রমণের সব ক্লান্তি দূর করে দেয় নিমেষেই। এত সুন্দর জলপ্রপাত অথচ এ দেশের অনেকেই তা জানেন না। না জানার কারণে কৃত্রিম জলপ্রপাত দেখার জন্যই এ দেশের পর্যটকেরা বিদেশে পাড়ি জমান। অমিয়াখুমের জলে মন ভরে অবগাহন করা হলো। অতঃপর মুগ্ধতার আবেশে দুপুরকে বিকেল ভেবে ফেরার পালা।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে বাসে বা চাঁদের গাড়িতে থানচি। সেখান থেকে ট্রলারে রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে হেঁটে যিন্নাপাড়া বা অতিরামপাড়া। সেখান থেকে ঘণ্টা পাঁচেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অমিয়াখুম। আবার রেমাক্রি থেকে থুইসাপাড়া হয়েও অমিয়াখুম যাওয়া যায়।
খাওয়া-থাকা
পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। জুম চালের ভাত আর মোরগ ভুনা খেতে হলে গাইডের সঙ্গে আলাপ করে নিতে হবে।
রোমাঞ্চকর অমিয়াখুম ট্রেইল করতে খরচ হবে জনপ্রতি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় রাত কাটাবেন যিন্নাপাড়ায়। মাথাপিছু থাকা-খাওয়া বাবদ ব্যয় হবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
লেখক: চিফ অর্গানাইজার, দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
ব্যাগ কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা ভালো। ব্যাগের আকার ও রং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্বে ছাপ রাখে বেশ গভীরভাবে।
১ দিন আগেসংবেদনশীল ত্বকের মানুষ সারা বছর ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ ধরনের ত্বক আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ বা ত্বকের অনুপযুক্ত প্রসাধনীতে প্রভাবিত হতে পারে।
১ দিন আগেশীতের হিমেল হাওয়া থেকে বাঁচতে বাইকারদের পোশাক নিয়ে থাকতে হয় সচেতন। তাই এ সময় বাইকারদের পোশাকে আসে বিশেষ পরিবর্তন। বাইকারদের পোশাক যেমন শীত নিবারক হতে হয়, তেমনি হতে হয় আরামদায়ক। কী কী থাকবে সে পোশাকে?
১ দিন আগেএই ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিখ্যাত ফরাসি আবিষ্কারক লুই অটোইন ডি বোগেনভিলিয়ার নাম। তাঁর নামেই এ গাছের নাম রাখা হয়েছিল বোগেনভিলিয়া। আর এটিকে বাংলায় প্রথম বাগানবিলাস বলে ডেকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কমবেশি সারা বছর ফুল দেখা গেলেও
১ দিন আগে