ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ক্রমাগত হারে বেড়ে যাওয়া। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে একসময় পৃথিবীতে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়। আর জলবায়ুর পরিবর্তনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ঠিক রাখার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ—পরিবেশদূষণ। এর জন্য মানুষের কৃতকর্ম অনেকাংশে দায়ী। আল্লাহ তাআলা কখনো বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য বিপদাপদ দিলেও স্বাভাবিকভাবে এমনিতেই দুর্যোগ বা বিপদাপদ দেন না; বরং মানুষ তাদের নিজেদের কৃতকর্মের কারণেই এসব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের ফলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম: ৪১)
ইসলামে এমন অনেক বিধান রয়েছে, যা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বড় ভূমিকা রাখবে; বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে এসব বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোর দিলে মুসলমানদের দৈনন্দিন ধর্মীয় মূল্যবোধ সুরক্ষার পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্তভাবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দারুণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এখানে তেমন কয়েকটি শিষ্টাচারের কথা তুলে ধরা হলো:
দূষণমুক্ত পরিবেশ
মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন বাতাস প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পক্ষান্তরে দূষিত বাতাস স্বল্প সময়ে প্রকৃতির নির্মলতা নষ্ট করে। বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, পরিবেশ ও সম্পদ নষ্ট হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। তাই পরিবেশদূষণ থেকে মুক্ত থাকতে ইসলামের বিভিন্ন বিধান রয়েছে। যেমন:
» খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতে নিষেধ করে ইসলাম। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অভিশাপ ডেকে আনে এমন তিন কাজ থেকে বিরত থাকো। তা হলো, চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার মোড়ে বা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা।’ (আবু দাউদ: ২৬)
» বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলার কথা বলেছে ইসলাম। মানুষ মারা গেলে যত দ্রুত সম্ভব সমাহিত করে দেওয়ার বিধান রয়েছে। ময়লা-আবর্জনা, মরা-পচা ও দুর্গন্ধময় বস্তু মাটিতে পুঁতে ফেলার তাগিদও এসেছে। পবিত্র কোরআন থেকেই এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আদম (আ.)-এর ছেলে কাবিল ভাই হাবিলকে হত্যা করার পর মৃতদেহ কী করবে, তা বুঝতে না পারলে আল্লাহ দুটি কাক পাঠান এবং দাফনের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। (সুরা মায়েদা: ৩১) হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বর্জ্য পুঁতে ফেলার আদেশ দিতেন। (আখলাকুন নবী, পৃ. ৩৫৯)
» দুর্গন্ধ পরিহারের নির্দেশ দেয় ইসলাম। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং ঘরে বসে থাকে।’ (বুখারি: ৫৪৫২)
» হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) যখন হাঁচি দিতেন, তখন এক টুকরো কাপড় বা নিজ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলতেন এবং নিচের দিকে হয়ে আওয়াজ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৫)
» পানি পবিত্র, নিরাপদ ও দূষণমুক্ত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে সেখানে যেন গোসল না করে।’ (বুখারি: ২৩৬; মুসলিম: ৬৮২)
ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার
ভূমির যথাযথ ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত হলে পরিবেশের ভারসাম্য সহজেই ফিরে আসবে। এ জন্য কৃষিজমিতে চাষাবাদ করতে হবে। অকৃষিজমিতে ঘরবাড়ি, খামার, বাণিজ্যিক অথবা অবাণিজ্যিক স্থাপনা অথবা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করতে হবে। জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হাদিসে বারবার বলা হয়েছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার কাছে জমি আছে, সে যেন তা (নিজে) চাষাবাদ করে। যদি সে (নিজে) চাষাবাদ না করে, তবে যেন তার কোনো ভাইকে চাষাবাদ করতে দেয়।’ (মুসলিম: ৩৭৭৩)
বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন
বৃক্ষ-তরুলতা প্রকৃতির প্রাণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান। কাজেই ব্যাপক হারে বৃক্ষ রোপণ এবং সেগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃক্ষরোপণ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। এটিকে সদকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মুসলমান কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, তারপর তা থেকে কোনো মানুষ, পশু বা পাখি ভক্ষণ করে, এর বিনিময়ে কেয়ামতে তার জন্য একটি সদকার সওয়াব রয়েছে।’ (মুসলিম: ৪০৫৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৪৭৯; মুসনাদ আহমদ: ১৮৩)
প্রয়োজন ছাড়া গাছ কাটার শাস্তি সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (বায়হাকি: ১৪০)
প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার
জীবন ধারণের মূল উপাদানগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সহজলভ্য বলে অপচয় ও অপব্যবহার করা যাবে না। বর্ষায় চারদিকে পানি বেড়ে গেলেও পানির অপচয় ও অপব্যবহার রোধ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যখন তিনি অজু করছিলেন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘কেন এই অপচয়?’ সাদ (রা.) বললেন, ‘অজুতেও কি অপচয় হয়?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, এমনকি বহতা নদীতে অজু করলেও।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫)
জীবজন্তুর প্রতি দয়া
পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার জন্য জীববৈচিত্র্য ধ্বংস অনেকাংশে দায়ী। এ জন্য বন্য ও গৃহপালিত পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন ও দয়াশীল আচরণ করতে হবে। কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ। প্রত্যেক দয়ার্দ্র হৃদয়ের অধিকারীর জন্য পুরস্কার আছে।’ (বুখারি: ৫৬৬৩)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ক্রমাগত হারে বেড়ে যাওয়া। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে একসময় পৃথিবীতে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়। আর জলবায়ুর পরিবর্তনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ঠিক রাখার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ—পরিবেশদূষণ। এর জন্য মানুষের কৃতকর্ম অনেকাংশে দায়ী। আল্লাহ তাআলা কখনো বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য বিপদাপদ দিলেও স্বাভাবিকভাবে এমনিতেই দুর্যোগ বা বিপদাপদ দেন না; বরং মানুষ তাদের নিজেদের কৃতকর্মের কারণেই এসব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের ফলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম: ৪১)
ইসলামে এমন অনেক বিধান রয়েছে, যা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বড় ভূমিকা রাখবে; বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে এসব বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোর দিলে মুসলমানদের দৈনন্দিন ধর্মীয় মূল্যবোধ সুরক্ষার পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্তভাবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দারুণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এখানে তেমন কয়েকটি শিষ্টাচারের কথা তুলে ধরা হলো:
দূষণমুক্ত পরিবেশ
মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন বাতাস প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পক্ষান্তরে দূষিত বাতাস স্বল্প সময়ে প্রকৃতির নির্মলতা নষ্ট করে। বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, পরিবেশ ও সম্পদ নষ্ট হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। তাই পরিবেশদূষণ থেকে মুক্ত থাকতে ইসলামের বিভিন্ন বিধান রয়েছে। যেমন:
» খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতে নিষেধ করে ইসলাম। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অভিশাপ ডেকে আনে এমন তিন কাজ থেকে বিরত থাকো। তা হলো, চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার মোড়ে বা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা।’ (আবু দাউদ: ২৬)
» বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলার কথা বলেছে ইসলাম। মানুষ মারা গেলে যত দ্রুত সম্ভব সমাহিত করে দেওয়ার বিধান রয়েছে। ময়লা-আবর্জনা, মরা-পচা ও দুর্গন্ধময় বস্তু মাটিতে পুঁতে ফেলার তাগিদও এসেছে। পবিত্র কোরআন থেকেই এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আদম (আ.)-এর ছেলে কাবিল ভাই হাবিলকে হত্যা করার পর মৃতদেহ কী করবে, তা বুঝতে না পারলে আল্লাহ দুটি কাক পাঠান এবং দাফনের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। (সুরা মায়েদা: ৩১) হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বর্জ্য পুঁতে ফেলার আদেশ দিতেন। (আখলাকুন নবী, পৃ. ৩৫৯)
» দুর্গন্ধ পরিহারের নির্দেশ দেয় ইসলাম। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং ঘরে বসে থাকে।’ (বুখারি: ৫৪৫২)
» হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) যখন হাঁচি দিতেন, তখন এক টুকরো কাপড় বা নিজ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলতেন এবং নিচের দিকে হয়ে আওয়াজ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৫)
» পানি পবিত্র, নিরাপদ ও দূষণমুক্ত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে সেখানে যেন গোসল না করে।’ (বুখারি: ২৩৬; মুসলিম: ৬৮২)
ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার
ভূমির যথাযথ ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত হলে পরিবেশের ভারসাম্য সহজেই ফিরে আসবে। এ জন্য কৃষিজমিতে চাষাবাদ করতে হবে। অকৃষিজমিতে ঘরবাড়ি, খামার, বাণিজ্যিক অথবা অবাণিজ্যিক স্থাপনা অথবা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করতে হবে। জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হাদিসে বারবার বলা হয়েছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার কাছে জমি আছে, সে যেন তা (নিজে) চাষাবাদ করে। যদি সে (নিজে) চাষাবাদ না করে, তবে যেন তার কোনো ভাইকে চাষাবাদ করতে দেয়।’ (মুসলিম: ৩৭৭৩)
বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন
বৃক্ষ-তরুলতা প্রকৃতির প্রাণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান। কাজেই ব্যাপক হারে বৃক্ষ রোপণ এবং সেগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃক্ষরোপণ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। এটিকে সদকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মুসলমান কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, তারপর তা থেকে কোনো মানুষ, পশু বা পাখি ভক্ষণ করে, এর বিনিময়ে কেয়ামতে তার জন্য একটি সদকার সওয়াব রয়েছে।’ (মুসলিম: ৪০৫৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৪৭৯; মুসনাদ আহমদ: ১৮৩)
প্রয়োজন ছাড়া গাছ কাটার শাস্তি সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (বায়হাকি: ১৪০)
প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার
জীবন ধারণের মূল উপাদানগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সহজলভ্য বলে অপচয় ও অপব্যবহার করা যাবে না। বর্ষায় চারদিকে পানি বেড়ে গেলেও পানির অপচয় ও অপব্যবহার রোধ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যখন তিনি অজু করছিলেন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘কেন এই অপচয়?’ সাদ (রা.) বললেন, ‘অজুতেও কি অপচয় হয়?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, এমনকি বহতা নদীতে অজু করলেও।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫)
জীবজন্তুর প্রতি দয়া
পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার জন্য জীববৈচিত্র্য ধ্বংস অনেকাংশে দায়ী। এ জন্য বন্য ও গৃহপালিত পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন ও দয়াশীল আচরণ করতে হবে। কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ। প্রত্যেক দয়ার্দ্র হৃদয়ের অধিকারীর জন্য পুরস্কার আছে।’ (বুখারি: ৫৬৬৩)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম হয় এবং আবহাওয়া থাকে শীতল, যা রোজা রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী সময়। অপর দিকে শীতের রাত অনেক দীর্ঘ হয়, ফলে রাতের প্রথম প্রহরে ঘুমিয়ে নিয়ে শেষ প্রহরে আল্লাহর ইবাদত ও তাহাজ্জুদে মগ্ন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে হাদিসে শীতকালকে ইবাদতের বসন্তক
১১ ঘণ্টা আগেআল্লাহ মানুষকে দুভাবে পরীক্ষা করেন। বিপদ দিয়ে এবং নিয়ামত দিয়ে। নিয়ামতের পরীক্ষা বিপদের পরীক্ষার চেয়ে কঠিন। বিপদের সময় মানুষ আল্লাহর স্মরণ করে; তার সাহায্য প্রার্থনা করে।
১ দিন আগেসমাজের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকা চাই। পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও মজবুত সম্পর্ক তৈরি করতে মহানবী (সা.) ৬টি কর্তব্যের কথা বলেছেন, যা পালন
২ দিন আগেএখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
৩ দিন আগে