গাজায় ফোন চার্জ দিতে পারাই আরেক যুদ্ধ, ভরসা সূর্যালোক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩: ৩৭

গাজার হাসপাতালগুলোর সামনে এখন সব সময় লোকজনের জটলা থাকে। সবার হাতে মোবাইল ফোন আর চার্জার অ্যাডাপ্টর। চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের চেয়ে এই লোকদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাঁরা দৈনিক জড়ো হন মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন গাজায় এখন হাসপাতালের বিদ্যুৎই মোবাইল চার্জ দেওয়ার একমাত্র উপায়। 

যুদ্ধকবলিত গাজায় একটা সচল ফোন কোনো জীবন রক্ষাকারী বস্তুর চেয়ে কম নয়! ইসরায়েলি বোমা হামলার পর স্বজনদের খোঁজ নেওয়া, খাবার ও পানির খোঁজ করা এবং অন্ধকারে তাঁবুতে আলো জ্বালার একমাত্র ভরসা এ মোবাইল ফোন। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে সেই মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র। 

উত্তর গাজার আল-শাতি শরণার্থীশিবির থেকে দক্ষিণ গাজার রাফায় তাঁবুতে এসে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ আবু খেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন এখানে ফোন চার্জ দিতে আসি এবং তিন থেকে চার ঘণ্টা অপচয় করি। মোবাইল ফোন পূর্ণ চার্জ করা এখন স্বপ্ন। আপনি শুধু ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দিতে পারবেন, সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ।’ 

মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য রাফার এমিরাতি হাসপাতালের বাইরের জায়গাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ, সেখানে বিনা মূল্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জ করা যায়। এ হাসপাতালে বাস্তুচ্যুত মানুষদের ডিভাইস চার্জের সুযোগ দেওয়া হয়। হাসপাতালের পাওয়ার সকেটগুলোর বিদ্যুতের উৎস সৌরবিদ্যুৎ বা জ্বালানি থাকলে জেনারেটর। 

কিছু পরিবার বা ছোট ব্যবসায়ী, যাদের সৌর প্যানেল রয়েছে, তাঁরা মানুষকে ডিভাইস চার্জ করার সুযোগ দেন। তবে প্রায়ই এর জন্য ফি দিতে হয়, যা সবার সামর্থ্যের মধ্যে নেই। 

আবু খেতা বলেন, ‘আমার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব নাজুক। তাই আমাকে বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। আমাকে বিনা মূল্যে হাসপাতাল বা দোকানে চার্জ দিতে হচ্ছে।’ 

শুধু যে মোবাইল ফোনেরই নিয়মিত চার্জ প্রয়োজন এমনটা নয়। রাফায় একটি সেলুনের মালিক মোহাম্মদ আবু ত্বহা বলেন, কাজের ফাঁকে বৈদ্যুতিক রেজর চার্জ করার জন্য তিনি বাড়ির একটি সোলার প্যানেলের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার চুল কাটার পর আমি আমার ভাইয়ের ছেলেকে রেজর চার্জ করার জন্য পাঠাই। গ্রাহকদের বলে রাখি, রোদ থাকলে আমি কাজ করতে পারব, না থাকলে পারব না।’ 

রাফায় এক দরজি সেলাই মেশিন চালানোর জন্য শিশুদের ভাঙা বাইসাইকেল থেকে প্যাডেল ডায়নামো তৈরি করেছেন। 

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তীব্র খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ এবং ওষুধের সংকটের কারণে গাজায় সৃষ্টি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। খাবার বা পানির খোঁজ করার মতোই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে ফোন চার্জ করা। 

এমিরাতি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষমাণ মাহমুদ মারুফ বলেন, ‘আমরা এখানে চার্জ দিতে এসেছিলাম, কিন্তু কোনো জায়গা ফাঁকা নেই।’ 

উত্তর গাজার জাবালিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত মারুফ গাড়ির ব্যাটারিসদৃশ একটি ব্যাটারি সঙ্গে করে এনেছেন। মোবাইল ফোনের পাশাপাশি মানুষ এমন সব ব্যাটারি চার্জে দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন, যা ব্যবহার করে তাঁরা তাঁবুতে বিভিন্ন ডিভাইস চালাতে পারবেন। 

হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকেরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পালাক্রমে প্রত্যেককে চার্জে দেওয়ার সুযোগ করে দেন। এতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়, সেই ব্যবস্থা তাঁরা করেন। তবে চাহিদা এতই বেশি যে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হয় না। 

মারুফ বলেন, সন্তানদের চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করার জন্য তাঁর ব্যাটারি চার্জ করা প্রয়োজন। তাঁর সন্তানের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যের পরও সালমা হত্যায় নিজ ভাষ্য়ে অনড় র‍্যাব

ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে: সারজিস আলম

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য ডাক্তারের তদবিরের ঘোষণা

এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

বাংলাদেশ সিরিজের আগে ধাক্কা খেয়েই চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত