অনলাইন ডেস্ক
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকাদের মধ্যে যিনি সারা বিশ্বে দ্বিতীয়, আর যুক্তরাজ্যে শীর্ষে। সাত দশক রানির ভূমিকায় থাকা এলিজাবেথ আর কিছুদিন বেঁচে থাকলেই সিংহাসনে অবস্থানকাল বিচারে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতেন। এই এত দীর্ঘ সময় যিনি সিংহাসনে থাকলেন, তাঁর কিন্তু এত দূর আসার কথাই ছিল না। কিন্তু ছোট্ট লিলিবেট থেকে রানির আসন নেওয়াটাই যেন তাঁর জন্য অবধারিত ছিল।
১৯২৬ সালে লন্ডনের মেফেয়ারে জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল এলিজাবেথ আলেক্সান্দ্রা মেরি উইন্ডসর। তারিখটি ছিল ২১ এপ্রিল। পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আদরের লিলিবেট নামেই পরিচিত ছিল। সেই লিলিবেট একদিন রানি হবে, তা সে সময় কেউ ভাবতেও পারেনি। অভিজাত রাজপরিবারের জন্ম হলেও সিংহাসনের উত্তরসূরিদের মধ্যে তার অবস্থান ছিল অনেক পরে।
কিন্তু কতভাবেই না ভাগ্যের বাঁকবদল হয়। রাজা পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় ছেলে ডিউক অব ইয়র্ক আলবার্ট ও লেডি এলিজাবেথ বোস-লিয়নের ঘরে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম হওয়া লিলিবেটের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল দাদা পঞ্চম জর্জ ও বাবা আলবার্টের। সে সময় সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে ছিলেন পঞ্চম জর্জের প্রথম সন্তান অষ্টম এডওয়ার্ড। সিংহাসন থেকে বেশ দূরেই ছিলেন লিলিবেট।
লিলিবেট ও ১৯৩০ সালে জন্ম নেওয়া তার ছোট বোন মার্গারেটের শিক্ষা হয়েছে ঘরেই। বেশ আদুরে পরিবেশেই তারা বেড়ে উঠেছে। কোনো স্কুলে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রথাগত শিক্ষা না নিলেও এলিজাবেথের বিভিন্ন ভাষায় দখল ছিল ঈর্ষণীয়। আর সাংবিধানিক ইতিহাস নিয়ে করেছেন বিস্তর পড়াশোনা। রাজকীয় পরিবারে বেড়ে ওঠায় একটা সঙ্গীহীনতার সংকট থেকেই যায়। লিলিবেট ও মার্গারেটের এই সঙ্গীহীনতা কাটাতে বাকিংহাম প্রাসাদে গঠন করা হয় একটি বিশেষ গার্লস গাইড কোম্পানি, যাতে তারা সমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশাটা করতে পারে।
সব ঠিকঠাক চলছিল। ১৯৩৬ সালে পঞ্চম জর্জ মারা গেলে তাঁর বড় ছেলে ডেভিড অষ্টম এডওয়ার্ড নাম নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন। লিলিবেটের বয়স তখন ১০ বছর। সিংহাসন তখনো তার থেকে বহু দূর। এই দূরত্বের একটা স্বস্তিও হয়তো ছিল। কিন্তু তা টিকল না বেশি দিন। গোল বাধল অষ্টম এডওয়ার্ডের বিয়ে নিয়ে। দুবার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া মার্কিন ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করায় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পক্ষগুলো তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হয়। বিষয়টি ক্রমেই জটিল আকার নেয়। অষ্টম এডওয়ার্ড থেকে লিলিবেটের কাকা আবার ডেভিডে পরিণত হন। অনেকটা আকস্মিকভাবেই বাবা ডিউক অব ইয়র্ক আলবার্টের মাথায় ওঠে মুকুট, নাম হয় ষষ্ঠ জর্জ। চকিতেই বলা যায় লিলিবেট হয়ে যান সিংহাসনের উত্তরসূরি।
ষষ্ঠ জর্জ সিংহাসনে যখন বসলেন, তখন গোটা বিশ্ব ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে। তিরিশের মন্দার সেই সময়ে বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চল উত্তেজনাময়। বিশেষত ইউরোপ তখন রাজনৈতিক উত্তেজনার তুঙ্গে। তিন বছরের মধ্যেই জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় ব্রিটেন, যা পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়। সেই সংকট সময়ে রানি এলিজাবেথকে নিয়ে রাজতন্ত্রে মানুষের আস্থা ফেরাতে কাজে নামেন পঞ্চম জর্জ। লিলিবেট, যিনি উত্তরসূরি হওয়ার মধ্য দিয়ে সবার কাছে দ্বিতীয় এলিজাবেথ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন কেবল, তিনি তখন একটু একটু শিখছেন এই কলাকৌশল।
রাজা ও রানির সঙ্গে ডার্টমাউথে রয়্যাল নেভি কলেজে গেলেন ১৩ বছর বয়সী রাজকুমারী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেখানে তাঁকে ও তাঁর বোন মার্গারেটকে সঙ্গ দিলেন তাঁর দূর সম্পর্কের ভাই এবং নেভাল কলেজের ক্যাডেট প্রিন্স ফিলিপ অব গ্রিস। এই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ, যা পরে নিয়মিত যোগাযোগে পরিণত হয়। ১৮ বছরের পড়তে পড়তেই ফিলিপের প্রেমে পড়ে গেলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাজকুমারীর ঘরে তখন ফিলিপের ছবি শোভা পায়। দুজন দেওয়া-নেওয়া করেন চিঠি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাজা পঞ্চম জর্জকে ফিলিপকে বিয়ের ইচ্ছার কথা জানালেন রাজকন্যা। কিন্তু বিদেশি রক্ত শরীরে বহনকারী ফিলিপের সঙ্গে বিয়েটা এত সহজ ছিল না। উপরন্তু বাবা তাঁর এই মেয়ের ওপর অনেকটাই আস্থা রাখতেন। তিনি কোনোভাবেই মেয়েকে দূরে কোথাও পাঠাতে চাইছিলেন না। অনেক জলঘোলার পর অবশেষে প্রণয়েরই জয় হলো। ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বিয়ে হয় দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও ফিলিপের। এর মধ্য দিয়ে ফিলিপ নতুন নাম পেলেন; ডিউক অব এডিনবার্গ। তখনো তিনি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা।
বিয়ের পর অল্প কিছুদিনের জন্য ফিলিপের কর্মস্থল ঠিক করা হলো মাল্টায়, যা ছিল আদতে নতুন দম্পতির নিভৃতে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ, যাতে তাঁরা তুলনামূলক সাধারণ জীবন অন্তত কিছুদিন উপভোগ করতে পারেন। ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় প্রথম সন্তান চার্লসের। ১৯৫০ সালে কোলজুড়ে আসে চার্লসের বোন অ্যান। এদিকে রাজা পঞ্চম জর্জের শরীর ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। প্রচুর ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৫২ সাল। ফিলিপসহ ভ্রমণে যাবেন তখনকার ২৫ বছর বয়সী তরুণী এলিজাবেথ। চিকিৎসকের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে এই যুগলকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে গেলেন রাজা পঞ্চম জর্জ। এটিই ছিল বাবাকে শেষবারের মতো দেখা। বাবার মৃত্যুসংবাদ যখন এলিজাবেথ পেলেন, তখন তিনি কেনিয়াতে। দ্রুতই ফিরলেন লন্ডনে। এই ফেরা তাঁর তুলনামূলক সাধারণ জীবন থেকে প্রাসাদে ফেরাই বলতে হবে। অনেকটা আকস্মিকভাবেই তিনি হয়ে গেলেন ব্রিটেনের রানি। তাও এমন এক সময়ে যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কমনওয়েলথে রূপান্তরিত হচ্ছে। যখন ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হওয়া আর কোনো ঘটনা নয়। চারদিকে নানা গুঞ্জন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ছে। নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সব মিলিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক ক্রান্তিলগ্নে মুকুট মাথায় উঠল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। সেই জুনে যখন রানির অভিষেক হয়, তখন তাঁর শপথগ্রহণ দেখতে কোটি কোটি লোক টিভি সেটের সামনে গোল হয়ে বসেছিল। কেউ আশায়, কেউ কৌতূহলে।
তার আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন নিশ্চিত হয়ে গেছে। ১৯৫৩ সালে রানি বের হলেন কমনওয়েলথ সফরে। তত দিনে ভারতসহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বহু অংশ স্বাধীন দেশে পরিণত হয়েছে। সেই শুরু, তারপর ৭০ বছর একটানা শাসন। এর মধ্যে ইউরোপ এক ছাতার তলায় এসেছে, আবার ব্রিটেনের বিযুক্তির মধ্য দিয়ে তা ভেঙেও গেছে। এই সময়ের মধ্যে অজস্র যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এক ধ্রুব অভিভাবক হিসেবে যেন ছিলেন। ১৪ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর শাসন তিনি দেখেছেন, ১৫ তম জনকে অনুমোদন দিয়ে তবে গেছেন। সারা জীবন যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তার নজির রেখে গেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুন:
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকাদের মধ্যে যিনি সারা বিশ্বে দ্বিতীয়, আর যুক্তরাজ্যে শীর্ষে। সাত দশক রানির ভূমিকায় থাকা এলিজাবেথ আর কিছুদিন বেঁচে থাকলেই সিংহাসনে অবস্থানকাল বিচারে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতেন। এই এত দীর্ঘ সময় যিনি সিংহাসনে থাকলেন, তাঁর কিন্তু এত দূর আসার কথাই ছিল না। কিন্তু ছোট্ট লিলিবেট থেকে রানির আসন নেওয়াটাই যেন তাঁর জন্য অবধারিত ছিল।
১৯২৬ সালে লন্ডনের মেফেয়ারে জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল এলিজাবেথ আলেক্সান্দ্রা মেরি উইন্ডসর। তারিখটি ছিল ২১ এপ্রিল। পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আদরের লিলিবেট নামেই পরিচিত ছিল। সেই লিলিবেট একদিন রানি হবে, তা সে সময় কেউ ভাবতেও পারেনি। অভিজাত রাজপরিবারের জন্ম হলেও সিংহাসনের উত্তরসূরিদের মধ্যে তার অবস্থান ছিল অনেক পরে।
কিন্তু কতভাবেই না ভাগ্যের বাঁকবদল হয়। রাজা পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় ছেলে ডিউক অব ইয়র্ক আলবার্ট ও লেডি এলিজাবেথ বোস-লিয়নের ঘরে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম হওয়া লিলিবেটের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল দাদা পঞ্চম জর্জ ও বাবা আলবার্টের। সে সময় সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে ছিলেন পঞ্চম জর্জের প্রথম সন্তান অষ্টম এডওয়ার্ড। সিংহাসন থেকে বেশ দূরেই ছিলেন লিলিবেট।
লিলিবেট ও ১৯৩০ সালে জন্ম নেওয়া তার ছোট বোন মার্গারেটের শিক্ষা হয়েছে ঘরেই। বেশ আদুরে পরিবেশেই তারা বেড়ে উঠেছে। কোনো স্কুলে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রথাগত শিক্ষা না নিলেও এলিজাবেথের বিভিন্ন ভাষায় দখল ছিল ঈর্ষণীয়। আর সাংবিধানিক ইতিহাস নিয়ে করেছেন বিস্তর পড়াশোনা। রাজকীয় পরিবারে বেড়ে ওঠায় একটা সঙ্গীহীনতার সংকট থেকেই যায়। লিলিবেট ও মার্গারেটের এই সঙ্গীহীনতা কাটাতে বাকিংহাম প্রাসাদে গঠন করা হয় একটি বিশেষ গার্লস গাইড কোম্পানি, যাতে তারা সমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশাটা করতে পারে।
সব ঠিকঠাক চলছিল। ১৯৩৬ সালে পঞ্চম জর্জ মারা গেলে তাঁর বড় ছেলে ডেভিড অষ্টম এডওয়ার্ড নাম নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন। লিলিবেটের বয়স তখন ১০ বছর। সিংহাসন তখনো তার থেকে বহু দূর। এই দূরত্বের একটা স্বস্তিও হয়তো ছিল। কিন্তু তা টিকল না বেশি দিন। গোল বাধল অষ্টম এডওয়ার্ডের বিয়ে নিয়ে। দুবার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া মার্কিন ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করায় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পক্ষগুলো তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হয়। বিষয়টি ক্রমেই জটিল আকার নেয়। অষ্টম এডওয়ার্ড থেকে লিলিবেটের কাকা আবার ডেভিডে পরিণত হন। অনেকটা আকস্মিকভাবেই বাবা ডিউক অব ইয়র্ক আলবার্টের মাথায় ওঠে মুকুট, নাম হয় ষষ্ঠ জর্জ। চকিতেই বলা যায় লিলিবেট হয়ে যান সিংহাসনের উত্তরসূরি।
ষষ্ঠ জর্জ সিংহাসনে যখন বসলেন, তখন গোটা বিশ্ব ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে। তিরিশের মন্দার সেই সময়ে বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চল উত্তেজনাময়। বিশেষত ইউরোপ তখন রাজনৈতিক উত্তেজনার তুঙ্গে। তিন বছরের মধ্যেই জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় ব্রিটেন, যা পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়। সেই সংকট সময়ে রানি এলিজাবেথকে নিয়ে রাজতন্ত্রে মানুষের আস্থা ফেরাতে কাজে নামেন পঞ্চম জর্জ। লিলিবেট, যিনি উত্তরসূরি হওয়ার মধ্য দিয়ে সবার কাছে দ্বিতীয় এলিজাবেথ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন কেবল, তিনি তখন একটু একটু শিখছেন এই কলাকৌশল।
রাজা ও রানির সঙ্গে ডার্টমাউথে রয়্যাল নেভি কলেজে গেলেন ১৩ বছর বয়সী রাজকুমারী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেখানে তাঁকে ও তাঁর বোন মার্গারেটকে সঙ্গ দিলেন তাঁর দূর সম্পর্কের ভাই এবং নেভাল কলেজের ক্যাডেট প্রিন্স ফিলিপ অব গ্রিস। এই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ, যা পরে নিয়মিত যোগাযোগে পরিণত হয়। ১৮ বছরের পড়তে পড়তেই ফিলিপের প্রেমে পড়ে গেলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাজকুমারীর ঘরে তখন ফিলিপের ছবি শোভা পায়। দুজন দেওয়া-নেওয়া করেন চিঠি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাজা পঞ্চম জর্জকে ফিলিপকে বিয়ের ইচ্ছার কথা জানালেন রাজকন্যা। কিন্তু বিদেশি রক্ত শরীরে বহনকারী ফিলিপের সঙ্গে বিয়েটা এত সহজ ছিল না। উপরন্তু বাবা তাঁর এই মেয়ের ওপর অনেকটাই আস্থা রাখতেন। তিনি কোনোভাবেই মেয়েকে দূরে কোথাও পাঠাতে চাইছিলেন না। অনেক জলঘোলার পর অবশেষে প্রণয়েরই জয় হলো। ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বিয়ে হয় দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও ফিলিপের। এর মধ্য দিয়ে ফিলিপ নতুন নাম পেলেন; ডিউক অব এডিনবার্গ। তখনো তিনি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা।
বিয়ের পর অল্প কিছুদিনের জন্য ফিলিপের কর্মস্থল ঠিক করা হলো মাল্টায়, যা ছিল আদতে নতুন দম্পতির নিভৃতে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ, যাতে তাঁরা তুলনামূলক সাধারণ জীবন অন্তত কিছুদিন উপভোগ করতে পারেন। ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় প্রথম সন্তান চার্লসের। ১৯৫০ সালে কোলজুড়ে আসে চার্লসের বোন অ্যান। এদিকে রাজা পঞ্চম জর্জের শরীর ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। প্রচুর ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৫২ সাল। ফিলিপসহ ভ্রমণে যাবেন তখনকার ২৫ বছর বয়সী তরুণী এলিজাবেথ। চিকিৎসকের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে এই যুগলকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে গেলেন রাজা পঞ্চম জর্জ। এটিই ছিল বাবাকে শেষবারের মতো দেখা। বাবার মৃত্যুসংবাদ যখন এলিজাবেথ পেলেন, তখন তিনি কেনিয়াতে। দ্রুতই ফিরলেন লন্ডনে। এই ফেরা তাঁর তুলনামূলক সাধারণ জীবন থেকে প্রাসাদে ফেরাই বলতে হবে। অনেকটা আকস্মিকভাবেই তিনি হয়ে গেলেন ব্রিটেনের রানি। তাও এমন এক সময়ে যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কমনওয়েলথে রূপান্তরিত হচ্ছে। যখন ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হওয়া আর কোনো ঘটনা নয়। চারদিকে নানা গুঞ্জন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ছে। নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সব মিলিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক ক্রান্তিলগ্নে মুকুট মাথায় উঠল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। সেই জুনে যখন রানির অভিষেক হয়, তখন তাঁর শপথগ্রহণ দেখতে কোটি কোটি লোক টিভি সেটের সামনে গোল হয়ে বসেছিল। কেউ আশায়, কেউ কৌতূহলে।
তার আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন নিশ্চিত হয়ে গেছে। ১৯৫৩ সালে রানি বের হলেন কমনওয়েলথ সফরে। তত দিনে ভারতসহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বহু অংশ স্বাধীন দেশে পরিণত হয়েছে। সেই শুরু, তারপর ৭০ বছর একটানা শাসন। এর মধ্যে ইউরোপ এক ছাতার তলায় এসেছে, আবার ব্রিটেনের বিযুক্তির মধ্য দিয়ে তা ভেঙেও গেছে। এই সময়ের মধ্যে অজস্র যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এক ধ্রুব অভিভাবক হিসেবে যেন ছিলেন। ১৪ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর শাসন তিনি দেখেছেন, ১৫ তম জনকে অনুমোদন দিয়ে তবে গেছেন। সারা জীবন যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তার নজির রেখে গেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুন:
ইউটিউবে ‘রডিকুলাস’ নামে নিজের একটি পডকাস্টে দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বাসিন্দা রোসানা পানসিনো। পাঁচ বছর আগে লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা মারা গিয়েছিলেন। এবার তিনি মৃত বাবার ছাইভস্ম গাঁজার সঙ্গে মিশিয়ে ধূমপান করে উড়িয়ে দিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত দূরপাল্লার ATACMS ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মাটিতে হামলা করতে ইউক্রেনকে অনুমতি দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের জের ধরে ইতিমধ্যেই মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে।
৬ ঘণ্টা আগেভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অনুষ্ঠিত একটি স্বদেশি মেলা থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার অভিযোগ উঠেছে। উচ্ছেদের শিকার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের দামোহ জেলার একটি মাঠে আয়োজিত ওই মেলায় অংশ নিতে গিলে ‘মুসলিমদের অনুমতি নেই’ উল্লেখ করে তাঁদের বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
৮ ঘণ্টা আগেওমরাহ পালনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার জনকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আরব আমিরাত ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ।
৮ ঘণ্টা আগে