সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবীসহ ৩৮ ভারতীয়ের ফোনে আড়িপাতা হয়েছিল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২১, ১৬: ৩৬

নজরদারি নিয়ে আলোচনা নতুন না হলেও একে এই সময়ে সামনে নিয়ে এসেছে ‘পেগাসাস’। গতকাল রোববার প্রথম এ বিষয়ে তথ্য সামনে আসে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে আড়িপাতার আওতায় থাকা ৫০ হাজার নম্বরের কথা উল্লেখ করা হলেও তেমন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। আজ সোমবার অবশ্য সংবাদমাধ্যমটি এ বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে, যেখানে ভারতের ৩৮ সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ, আইনজীবির নম্বর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। 

দা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া ফোন নম্বরের তালিকায় আজারবাইজানের ৪৮, ভারতের ৩৮, মরক্কোর ৩৮, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১২ জন সাংবাদিক রয়েছেন। 

 ১৫ জন সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁরা তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়টি দাবি করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ভারতের দ্য ওয়্যার পত্রিকার সহপ্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধার্থ ভারাদারাজন ও প্রতিবেদক প্রাণঞ্জয় গুহঠাকুরতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে তিনি সংবাদ করেছিলেন। 

দ্য ওয়্যারের এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস হওয়া ফোন নম্বরের তালিকায় তাঁদের দুজন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির একজন কূটনৈতিক সম্পাদক ও দুজন নিয়মিত প্রদায়ক রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন হলেন রোহিনী সিং, যিনি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ–এর ছেলে জয় শাহ ও ব্যবসায়ী নিখিল মার্চেন্টের ব্যবসা নিয়ে একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন। 

তালিকায় রয়েছেন মরক্কোর সাংবাদিক ওমর রাদি। পুরস্কার বিজয়ী আজারবাইজানের অনুসন্ধানী সাংবাদিক খাদিজা ইসমাইলোভাও রয়েছেন তালিকায়। সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি ও তাঁর বাগদত্তার ফোনেও আড়ি পাতা হয়েছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, খাশোগির ওপর আগে থেকেই নজর রাখা হয়েছিল। আর এভাবেই তাঁর গতিবিধি শনাক্ত করে শেষ পর্যন্ত তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। 

পেগাসাস ব্যবহার করে আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সব মেসেজ, ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড বের করা যায়। এই স্পাইওয়্যারের ব্যবহার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। সৌদি আরব, আরব আমিরাত তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে বাহরাইন। এ ছাড়া আজারবাইজান, হাঙ্গেরি, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডার বিভিন্ন সাংবাদিককে টার্গেট করে নজরদারি চালানো হয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে। 

আর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সম্পাদক রওলা খালাফের ওপর নিজরদারির বিষয়টি গতকালের খবরেই উঠে এসেছিল। এ ছাড়া সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ফ্রান্স ২৪, ইকোনমিস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, আল জাজিরা, ব্লুমবার্গ, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসেস (এএফপি), আমেরিকা ভয়েস, এপি ও রয়টার্সসহ ১৮০ জন সাংবাদিকের কথা বলা হয়েছে। 

ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে করা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বের অন্তত ১০টি দেশের সরকার এই বিশেষ সফটওয়্যার তাদের নজরদারির কাজে ব্যবহার করেছে। এখন পর্যন্ত যে ৫০ হাজার নম্বর হাতে পাওয়া গেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর রয়েছে মেক্সিকোর। দেশটির একাধিক সরকারি সংস্থা ইসরায়েলের কাছ থেকে ‘পেগাসাস’ কিনেছে। এর পরেই রয়েছে মরক্কো ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুটি দেশেরই ১০ হাজার করে নম্বর রয়েছে। 

বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশের নম্বর রয়েছে ফাঁস হওয়া তালিকায়। এর মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোর অন্তত ১ হাজার নম্বর রয়েছে। তবে তাদের নম্বরে আড়ি পাততে কারা চেয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এই তালিকায় থাকা ফোন নম্বরগুলোর সবগুলোতে আড়িপাতা হয়েছিল কিনা, তা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়া এটি বলা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত