শিশু চিকিৎসায় নির্ভরতার প্রতীক

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩১
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ৪০

পেশায় ভ্যানচালক আল আমিন তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে আসেন জেলা সদরের মাতৃসদন হাসপাতালে। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হলে চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটির বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ‘বড় হাসপাতালে’ স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। আল আমিনের পরিবার নবজাতককে দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়ার অরবিন্দ শিশু হাসপাতালে ভর্তি করায়। তিন দিন পর সুস্থ করে শিশুটিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তুলে দেয় পরিবারের হাতে। এই তিন দিনের চিকিৎসায় বিল আসে ৩ হাজার ৫৩০ টাকা। ভ্যানচালক আল আমিন পুরো টাকা পরিশোধ করতে অপারগতা জানালে হাসপাতালের জাকাত ফান্ড থেকে তা পরিশোধ করে দেওয়া হয়।

দিনাজপুরের অরবিন্দ শিশু হাসপাতালের ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেক। শিশু চিকিৎসা এবং মানবসেবা—দুটি ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানটি বৃহত্তর দিনাজপুরের মানুষের কাছে প্রশংসিত। প্রতিষ্ঠানটি দিনাজপুর ছাড়াও পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার শিশুদের চিকিৎসায় অনন্য অবদান রাখছে।

অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল মূলত জনসেবা ও মানবকল্যাণে নিয়োজিত অলাভজনক একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কয়েকজন সমাজসেবীর প্রচেষ্টায় এবং সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তায় ১৯৮৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

চমৎকার ব্যবস্থাপনা এবং নিবিড় সেবার কারণে অরবিন্দ শিশু হাসপাতালে বর্তমানে বহির্বিভাগে বছরে প্রায় ২৫ হাজার এবং অন্তর্বিভাগে ১৫ হাজারের বেশি শিশু তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। নামমাত্র ফি নিয়ে এখানে যেমন শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়, তেমনি দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বর্তমানে দিনাজপুরের ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ এখানে মোট ১২০ জন চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।

বলা হয়, জটিল গর্ভাবস্থায় প্রসবোত্তর নবজাতক ও মায়ের চিকিৎসা, আপৎকালীন চিকিৎসা ইত্যাদি একই ছাদের নিচে হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই অরবিন্দ শিশু হাসপাতালে শিশুদের সঙ্গে মাতৃসেবা একীভূত করার জন্য আলাদা একটি ম্যাটারনিটি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে স্বল্প পরিসরে পরিচালনা করা হচ্ছে। ১০ জন গাইনি চিকিৎসক এখানে গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সেবা দিচ্ছেন।

অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম কবির বলেছেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর ধরে অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল দিনাজপুরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলার শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে এনআইসিইউ সুবিধাসহ আরও ব্যাপক পরিসরে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। সাধারণ সেবার পাশাপাশি শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন শুরু করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত