খুলনায় গত আট বছরে বন্ধ হওয়া সরকারি-বেসরকারি ১৫টি পাটকলের একটিও চালু হয়নি। শ্রমিকেরা এখনো তাঁদের বকেয়া বেতন-ভাতা পাননি। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। এ ছাড়া পাটকল বন্ধের সময় আবারও চালুর আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

এদিকে দাবি আদায়ে শ্রমিকেরা রাজপথে কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন। গত আট বছরে খুলনায় একের পর এক বন্ধ হয়েছে বেসরকারি এ্যাজাক্স, আফিল, মহাসিন, জুট স্পিনার্স, শাহনেওয়াজ, ট্রান্সওয়েশন ফাইবার্স জুট মিল। ২০২০ সালের জুলাইতে বন্ধ হয় সরকারি প্লাটিনাম, খালিশপুর, স্টার, ক্রিসেন্ট, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, আলীম, জেজেআই ও কার্পেটিং মিল।

বন্ধের সময় এক মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ এবং দ্রুত চালুর আশ্বাস দিলেও তা হয়নি। বকেয়াও বুঝে পাননি সম্পূর্ণ। সরকারি মিলগুলোতে কর্মরত ছিলেন ২৫ হাজার শ্রমিক। নগদ পাওনা পেলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের বানান ভুলের কারণে সঞ্চয়পত্রের টাকা পাননি চার হাজার শ্রমিক। অপর দিকে বন্ধ হওয়া বেসরকারি ৬টি পাটকলে কর্মরত ১৫ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ১২ হাজার এখনো বকেয়া বুঝে পাননি। বকেয়ার দাবিতে তাঁরা রাজপথে বিভিন্ন সময় করেছেন আন্দোলন।

এ ব্যাপারে প্লাটিনাম মিলের শ্রমিক নুর ইসলাম বলেন, বন্ধের সময় এক মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের কথা ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওনার পুরোটা পাননি। তিন মাসের মধ্যে মিলটি চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রক্রিয়া শুরু হয়নি আজও। কবে হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

এ্যাজাক্স জুট মিল শ্রমিক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘মিলটি বন্ধ হয়েছে ২০১৪ সালে। বন্ধের সময় কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছিল এক মাসের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ করবে। কিন্তু আট বছরেও বকেয়া দেয়নি। চালু হয়নি মিল। বকেয়ার দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে গেলেও লাভ হয়নি। শুধু আশ্বাস মিলেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছি, ঠিকমতো সংসার চলে না।’

এদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, দাবি আদায়ে রাজপথে কঠোর কর্মসূচির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে পাটসুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ এবং মিলগুলো চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। দাবি আদায়ে সামনে কঠোর কর্মসূচি দেব।’ অপর দিকে বেসরকারি পাটসুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রসুল বলেন, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথ, রেলপথ অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় শ্রমদপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি পাটকলগুলোর শ্রমিকদের নগদ পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। নামের ত্রুটিসহ বিভিন্ন কারণে কিছু শ্রমিকের টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এ ছাড়া বেসরকারি বন্ধ মিলগুলোর শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার বিষয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুত তাঁদের পাওনা আদায়ের।

এদিকে উৎপাদন বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের দাবিতে গত সপ্তাহেও সমাবেশ করেছে শ্রমিকেরা। খুলনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিসের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ সমাবেশ হয়। এ সময় তারা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাটকল কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য ডালিম কাজী।