জাহীদ রেজা নূর
দেশে ফিরে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই অপূর্ব ভাষণটির কথা সবাই জানে। ভাষণটি কেউ চাইলেই পড়ে ফেলতে পারবেন অন্তর্জালে। অনবদ্য সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত বিষয়েই না কথা বলেছেন। বাঙালির বীরত্বের কথা বলতে বলতে তিনি বিশ্বের নানা দেশের মানুষের কথাও বলেছেন, যাঁরা বাংলার স্বাধীনতাসংগ্রামকে সমর্থন করেছিলেন।
এ কথা এখন সবাই জানেন, বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল মিয়ানওয়ালি জেলে। এ কথাও কেউ কেউ জানেন যে এই জেলখানাটি ছিল জেনারেল নিয়াজীর শহরে। ১৬ ডিসেম্বর যৌথ কমান্ডের কাছে নিয়াজী যখন আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধুর দেখভাল করা জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বুঝেছিলেন যে এখানে বঙ্গবন্ধু আর নিরাপদ নন। নিয়াজীর শহরের বন্দীরা বঙ্গবন্ধুর জীবনকে ঝুঁকির মুখে নিয়ে যেতে পারে। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৬ ডিসেম্বরের পরপরই চলে গেলেন এমন এক গোপন জায়গায়, যেখানে একটি বড় প্রকল্পের কাজ হচ্ছিল। সেই প্রকল্পে ফাঁকা বাংলায় থাকতে দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধুকে এবং ২৬ ডিসেম্বর একটি হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আসা হলো শিহালায়। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো।
বঙ্গবন্ধু প্রথমে ভেবেছিলেন, ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর মতো ডিটেনশনে আছেন। ভুট্টো পরিষ্কার করে বললেন, তিনি এখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।
বঙ্গবন্ধু হাসতে হাসতে বললেন, ‘আপনি কী করে প্রেসিডেন্ট হলেন, যেখানে জাতীয় পরিষদে আপনার চেয়ে দ্বিগুণ আসন আমি লাভ করেছি!’
বঙ্গবন্ধু তখনো জানতেন না এ সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে। তাদের দাম্ভিক উচ্চারণ নিঃশেষিত। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তারা পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে এসেছে। এখন পূর্ব পাকিস্তানের নাম বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর এই না জানার সুযোগ নিয়ে ভুট্টো বলার চেষ্টা করছিলেন, এখনো সময় আছে একসঙ্গে থাকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই।’
ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে সে আশ্বাস দিলেন। কিন্তু তাঁর যাত্রাপথ নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। শেষে ভুট্টো করাচি থেকে একটি উড়োজাহাজ আনার নির্দেশ দিলেন। বঙ্গবন্ধুকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত এস্কর্ট করে আনলেন ভুট্টো। ঠিক হয়েছিল লন্ডন পৌঁছানোর এক ঘণ্টা আগপর্যন্ত এই বিমান ভ্রমণ সম্পর্কে কোনো ঘোষণা দেওয়া হবে না। যেসব দেশের ওপর দিয়ে বিমানটি যাবে তাদের বলা হবে এটি পাকিস্তানের কৌশলগত কার্গো বহনকারী একটি বিমান। বঙ্গবন্ধু লন্ডন পৌঁছেছিলেন ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে।
ততক্ষণে ব্রিটিশ সরকার জেনে গেছে, এই বিমানে করে এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধুর পরনে ছিল সাদা হাওয়াই শার্টের ওপর ধূসর রঙের স্যুট এবং তার ওপর ওভারকোট।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের ইয়ান সাদারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা ও আবাসের ব্যবস্থা করার দায়িত্বে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু চাইছিলেন আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে, কিন্তু আবু সাঈদ চৌধুরী রওনা হয়ে গেছেন ঢাকার পথে। রেজাউল করিম তখন ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বে। টেলিফোনে তিনি জানলেন বঙ্গবন্ধু লন্ডনে এসেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি রওনা দিলেন হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশে।
বঙ্গবন্ধুকে রাখা হলো ক্ল্যারিজেস হোটেলে। বলা হলো, দুপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন।
এদিকে ঢাকায় পৌঁছে গেল বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংবাদ। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, কর্নেল ওসমানী, কে এম ওবায়দুর রহমান, শেখ মণি, সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ পৌঁছে গেলেন বেগম মুজিবের তখনকার আবাসস্থল ১৮ নম্বরের বাড়িতে।
বঙ্গবন্ধু ফোন করলেন। ফোন ধরেছিলেন সৈয়দ শাজাহান। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, ‘সিরাজকে নাকি ওরা মেরে ফেলেছে?’
লন্ডনেই বঙ্গবন্ধু তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছিলেন। খবরটি শোনার পর তিনি বলে ওঠেন, ‘আহ!’
এরপর তিনি তাজউদ্দীন আহমদকে বলেন, ‘হ্যালো তাজউদ্দীন, আমার দেশবাসী কেমন আছে? আমি এখন সাংবাদিকদ্বারা পরিবেষ্টিত। আমি তাদের কাছে কী বলব? পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কি আমার দেশবাসীকে হত্যা করেছে?’
তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে জানান যে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং অসংখ্য লোক দেশছাড়া হয়েছে। সব রকমের দুঃখ-কষ্ট সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনসাধারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অবিচল আস্থা রেখে দেশকে মুক্ত করার জন্য অস্ত্র ধারণ করেছে। নেতার প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাস এখনো অক্ষুণ্ন রয়েছে।
৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর টেলিফোনে আলাপ হয়। বঙ্গবন্ধু যখন বলেন, আমি আপনার নিকট একান্ত কৃতজ্ঞ, তখন ভারতীয় নেত্রী বলেন, ‘কিন্তু আসলে আমরাই আপনার নিকট কৃতজ্ঞ, কারণ আপনি আপনার দেশবাসীকে স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রেরণা দিয়েছেন।’
বেগম মুজিব যখন তাঁর স্বামীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা শুরু করেন, তখন তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিবকে জানান, তিনি পরে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা সম্পর্কে বেগম মুজিবকে অবহিত করবেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কথা বলেছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি এবং তোফায়েল আহমেদের সঙ্গেও।
লন্ডনে সেদিন বিরোধীদলীয় নেতা হ্যারল্ড উইলসন এবং বিবিসির ডেভিড ফ্রস্ট এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছিলেন লন্ডনের বাইরে। সন্ধ্যায় তিনি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। এডওয়ার্ড হিথ যখন বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা কি আপনার জন্য আর কিছু করতে পারি?’
উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমার প্রতি আরেকটি আনুকূল্য দেখাতে পারেন, যদি আপনি অনুগ্রহ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে একটি বিমান ব্যবহার করতে দেন।’
এডওয়ার্ড হিথ তখনই তাঁর সচিবকে বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিমানটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব কি না। সচিব জানান, পরদিন সকাল ৭টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিমান প্রস্তুত থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুরোধ করেছিলেন, স্বদেশে যাওয়ার পথে তিনি যেন একটু ভারতে আসেন। পরদিন দিনের আলো থাকতে থাকতে ঢাকায় পৌঁছাতে হলে ভারতে ছোট্ট একটা যাত্রাবিরতি করে বেলা ৩টার মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছানো সম্ভব এবং সেটা হতে পারে দিল্লিতে, কলকাতায় নয়। বঙ্গবন্ধু বললেন, তাহলে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর হবে কলকাতায়। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন।
দিল্লি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরের পাশেই একটি উন্মুক্ত জায়গায় জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। যাত্রাবিরতি ছিল দেড় ঘণ্টার। বঙ্গবন্ধু সেখানে বাংলায় সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছিলেন।
ঢাকা বিমানবন্দরে এক অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি খোলা জিপে করে তাঁকে নিয়ে আসা হয় রেসকোর্স ময়দানে। সেই রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে উচ্চারিত হয়েছিল সাতই মার্চের ভাষণ, সেই রেসকোর্স ময়দান, যেখানে রচিত হয়েছিল পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের কাব্য।
বঙ্গবন্ধু অনেক কথার মধ্যে সেদিন বললেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “সাত কোটি মানুষের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি ক’রে মানুষ কর নি।” কবিগুরু আজ মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ।’
জাহীদ রেজা নূর: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দেশে ফিরে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই অপূর্ব ভাষণটির কথা সবাই জানে। ভাষণটি কেউ চাইলেই পড়ে ফেলতে পারবেন অন্তর্জালে। অনবদ্য সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত বিষয়েই না কথা বলেছেন। বাঙালির বীরত্বের কথা বলতে বলতে তিনি বিশ্বের নানা দেশের মানুষের কথাও বলেছেন, যাঁরা বাংলার স্বাধীনতাসংগ্রামকে সমর্থন করেছিলেন।
এ কথা এখন সবাই জানেন, বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল মিয়ানওয়ালি জেলে। এ কথাও কেউ কেউ জানেন যে এই জেলখানাটি ছিল জেনারেল নিয়াজীর শহরে। ১৬ ডিসেম্বর যৌথ কমান্ডের কাছে নিয়াজী যখন আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধুর দেখভাল করা জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বুঝেছিলেন যে এখানে বঙ্গবন্ধু আর নিরাপদ নন। নিয়াজীর শহরের বন্দীরা বঙ্গবন্ধুর জীবনকে ঝুঁকির মুখে নিয়ে যেতে পারে। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৬ ডিসেম্বরের পরপরই চলে গেলেন এমন এক গোপন জায়গায়, যেখানে একটি বড় প্রকল্পের কাজ হচ্ছিল। সেই প্রকল্পে ফাঁকা বাংলায় থাকতে দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধুকে এবং ২৬ ডিসেম্বর একটি হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আসা হলো শিহালায়। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো।
বঙ্গবন্ধু প্রথমে ভেবেছিলেন, ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর মতো ডিটেনশনে আছেন। ভুট্টো পরিষ্কার করে বললেন, তিনি এখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।
বঙ্গবন্ধু হাসতে হাসতে বললেন, ‘আপনি কী করে প্রেসিডেন্ট হলেন, যেখানে জাতীয় পরিষদে আপনার চেয়ে দ্বিগুণ আসন আমি লাভ করেছি!’
বঙ্গবন্ধু তখনো জানতেন না এ সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে। তাদের দাম্ভিক উচ্চারণ নিঃশেষিত। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তারা পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে এসেছে। এখন পূর্ব পাকিস্তানের নাম বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর এই না জানার সুযোগ নিয়ে ভুট্টো বলার চেষ্টা করছিলেন, এখনো সময় আছে একসঙ্গে থাকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই।’
ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে সে আশ্বাস দিলেন। কিন্তু তাঁর যাত্রাপথ নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। শেষে ভুট্টো করাচি থেকে একটি উড়োজাহাজ আনার নির্দেশ দিলেন। বঙ্গবন্ধুকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত এস্কর্ট করে আনলেন ভুট্টো। ঠিক হয়েছিল লন্ডন পৌঁছানোর এক ঘণ্টা আগপর্যন্ত এই বিমান ভ্রমণ সম্পর্কে কোনো ঘোষণা দেওয়া হবে না। যেসব দেশের ওপর দিয়ে বিমানটি যাবে তাদের বলা হবে এটি পাকিস্তানের কৌশলগত কার্গো বহনকারী একটি বিমান। বঙ্গবন্ধু লন্ডন পৌঁছেছিলেন ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে।
ততক্ষণে ব্রিটিশ সরকার জেনে গেছে, এই বিমানে করে এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধুর পরনে ছিল সাদা হাওয়াই শার্টের ওপর ধূসর রঙের স্যুট এবং তার ওপর ওভারকোট।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের ইয়ান সাদারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা ও আবাসের ব্যবস্থা করার দায়িত্বে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু চাইছিলেন আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে, কিন্তু আবু সাঈদ চৌধুরী রওনা হয়ে গেছেন ঢাকার পথে। রেজাউল করিম তখন ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বে। টেলিফোনে তিনি জানলেন বঙ্গবন্ধু লন্ডনে এসেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি রওনা দিলেন হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশে।
বঙ্গবন্ধুকে রাখা হলো ক্ল্যারিজেস হোটেলে। বলা হলো, দুপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন।
এদিকে ঢাকায় পৌঁছে গেল বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংবাদ। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, কর্নেল ওসমানী, কে এম ওবায়দুর রহমান, শেখ মণি, সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ পৌঁছে গেলেন বেগম মুজিবের তখনকার আবাসস্থল ১৮ নম্বরের বাড়িতে।
বঙ্গবন্ধু ফোন করলেন। ফোন ধরেছিলেন সৈয়দ শাজাহান। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, ‘সিরাজকে নাকি ওরা মেরে ফেলেছে?’
লন্ডনেই বঙ্গবন্ধু তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছিলেন। খবরটি শোনার পর তিনি বলে ওঠেন, ‘আহ!’
এরপর তিনি তাজউদ্দীন আহমদকে বলেন, ‘হ্যালো তাজউদ্দীন, আমার দেশবাসী কেমন আছে? আমি এখন সাংবাদিকদ্বারা পরিবেষ্টিত। আমি তাদের কাছে কী বলব? পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কি আমার দেশবাসীকে হত্যা করেছে?’
তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে জানান যে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং অসংখ্য লোক দেশছাড়া হয়েছে। সব রকমের দুঃখ-কষ্ট সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনসাধারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অবিচল আস্থা রেখে দেশকে মুক্ত করার জন্য অস্ত্র ধারণ করেছে। নেতার প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাস এখনো অক্ষুণ্ন রয়েছে।
৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর টেলিফোনে আলাপ হয়। বঙ্গবন্ধু যখন বলেন, আমি আপনার নিকট একান্ত কৃতজ্ঞ, তখন ভারতীয় নেত্রী বলেন, ‘কিন্তু আসলে আমরাই আপনার নিকট কৃতজ্ঞ, কারণ আপনি আপনার দেশবাসীকে স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রেরণা দিয়েছেন।’
বেগম মুজিব যখন তাঁর স্বামীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা শুরু করেন, তখন তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিবকে জানান, তিনি পরে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা সম্পর্কে বেগম মুজিবকে অবহিত করবেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কথা বলেছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি এবং তোফায়েল আহমেদের সঙ্গেও।
লন্ডনে সেদিন বিরোধীদলীয় নেতা হ্যারল্ড উইলসন এবং বিবিসির ডেভিড ফ্রস্ট এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছিলেন লন্ডনের বাইরে। সন্ধ্যায় তিনি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। এডওয়ার্ড হিথ যখন বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা কি আপনার জন্য আর কিছু করতে পারি?’
উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমার প্রতি আরেকটি আনুকূল্য দেখাতে পারেন, যদি আপনি অনুগ্রহ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে একটি বিমান ব্যবহার করতে দেন।’
এডওয়ার্ড হিথ তখনই তাঁর সচিবকে বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিমানটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব কি না। সচিব জানান, পরদিন সকাল ৭টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিমান প্রস্তুত থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুরোধ করেছিলেন, স্বদেশে যাওয়ার পথে তিনি যেন একটু ভারতে আসেন। পরদিন দিনের আলো থাকতে থাকতে ঢাকায় পৌঁছাতে হলে ভারতে ছোট্ট একটা যাত্রাবিরতি করে বেলা ৩টার মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছানো সম্ভব এবং সেটা হতে পারে দিল্লিতে, কলকাতায় নয়। বঙ্গবন্ধু বললেন, তাহলে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর হবে কলকাতায়। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন।
দিল্লি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরের পাশেই একটি উন্মুক্ত জায়গায় জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। যাত্রাবিরতি ছিল দেড় ঘণ্টার। বঙ্গবন্ধু সেখানে বাংলায় সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছিলেন।
ঢাকা বিমানবন্দরে এক অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি খোলা জিপে করে তাঁকে নিয়ে আসা হয় রেসকোর্স ময়দানে। সেই রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে উচ্চারিত হয়েছিল সাতই মার্চের ভাষণ, সেই রেসকোর্স ময়দান, যেখানে রচিত হয়েছিল পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের কাব্য।
বঙ্গবন্ধু অনেক কথার মধ্যে সেদিন বললেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “সাত কোটি মানুষের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি ক’রে মানুষ কর নি।” কবিগুরু আজ মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ।’
জাহীদ রেজা নূর: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে