নৌকার হারে ‘গণপদত্যাগ’

আজিজুর রহমান, চৌগাছা
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৫: ২০
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ২০: ১৯

যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা গণপদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গত ১১ নভেম্বরের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। এর পেছনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দায়ী করে ইউনিয়ন কমিটির নেতারা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

আজ শুক্রবার এই গণপদত্যাগ করবেন বলে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। একটি বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ করে তাঁরা গণপদত্যাগ করবেন বলেও জানা গেছে।

ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মামুন কবীর।

নির্বাচনে তিনি প্রায় চার হাজার ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুল হাসানের নিকট পরাজিত হন।

নির্বাচনে নৌকার এই পরাজয়ের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দায়ী করে নৌকার প্রার্থী মামুন কবীরের নেতৃত্বে উনিয়ন আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতারা পদত্যাগ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গত বুধবার ইউনিয়নের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ করে এই গণপদত্যাগ করার কথা থাকলেও সেটি শুক্রবার বিকেল চারটায় এই অনুষ্ঠান করা হবে বলে নৌকার পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুন কবীর আজকের পত্রিকাকে জানান।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রথম দিকে ইউনিয়নে কয়েকটি পথসভা করে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। কিন্তু নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা ওই ইউনিয়নে নৌকার ভোট চাইতেও যাননি।

 কোনো কোনো নেতা গোপনে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে নৌকার পরাজয় ত্বরান্বিত করেন। এসব কারণে তাঁরা এই গণপদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাকিমপুর ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকার পরাজিত প্রার্থীদের নেতৃত্বে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা গণপদত্যাগ করতে পারেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নৌকার প্রার্থীকে ষড়যন্ত্র করে সূক্ষ্ম কারচুপি করে ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে বলে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন স্বরুপদাহ ইউনিয়নের নৌকার পরাজিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সানোয়ার হোসেন বকুল।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সানোয়ার হোসেন বকুল বলেন, ‘আমি গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত স্বরুপদাহ ইউনিয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিই। ইউনিয়নবাসী আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু একটি বিশেষ মহল গভীর ষড়যন্ত্র করে সূক্ষ্ম কারচুপি করে ফলাফল পরিবর্তন করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই বিশেষ মহলটি আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে তাঁদের মদদে নৌকা প্রতীকের সিল মারা ভোট বাতিল দেখানোসহ নৌকা প্রতীকের ব্যালট বান্ডিলের ওপর বা নিচে আনারসের ব্যালট মুখপাত করে শত শত নৌকা প্রতীকের ভোট চুরি করা হয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমার বিজয় ছিনিয়ে নিতে সাঞ্চাডাঙ্গা কাকুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫০ ভোট, খড়িঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৪, বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩২, টেঙ্গুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৮২, স্বরুপদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৪, মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৮, দিঘড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩২, মাসিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪০ ও গয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৭২টি নৌকার ভোট বাতিল দেখানোসহ নৌকায় সীলমারা ব্যালটও চুরি করা হয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে হোসেন বকুল আরও বলেন, ‘সরকারের একজন স্থানীয় প্রতিনিধি আনারস প্রতীকের প্রার্থীর আত্মীয় হওয়ায় ভোটের দিন আনারস প্রতীকের সমর্থকেরা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হানা দেয়।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘তাঁরা কেন্দ্র থেকে নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে দখল করে। সেই কেন্দ্রগুলো হলো দিঘড়ী, খড়িঞ্চা, গয়ড়া, টেঙ্গুরপুর, স্বরুপদাহ, সাঞ্চাডাঙ্গা। সংবাদ পেয়ে আমি ওই কেন্দ্রে গেলে সন্ত্রাসীরা আমাকে ও আমার লোকজনকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। আমি কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের জানালে তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। ভোট পুনঃগণনা না হওয়া পর্যন্ত এই ইউনিয়নের গেজেট প্রকাশ বন্ধ রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত