স্বাতী চৌধুরী
সম্প্রতি হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে আদালতের রুল জারি করায় বিপক্ষের বন্ধুরা ভীষণ ক্ষিপ্ত। তাই যাঁরা হিন্দু আইন সংস্কার চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সংরক্ষণবাদী হিন্দু নেতারা বিষোদ্গার করেই চলেছেন এবং অত্যন্ত সুকৌশলে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ও বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়টিকে হিন্দুধর্মের ওপর আঘাত বলে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
বাবার সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকারের প্রসঙ্গ এলেই যে হাস্যকর অজুহাতটি তাঁরা দিয়ে থাকেন তা হলো, হিন্দু মেয়ে সম্পত্তির অধিকার পেলে তাঁদের বিয়ে করে হিন্দুর সম্পত্তি মুসলমান ছেলেরা দখল করে নেবেন। মনে হয় যেন হিন্দু ছেলেরা নন, হিন্দু মেয়েরাই কেবল বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হন! তা মেয়েরা সম্পত্তির মালিক হলে ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে যদি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তো ছেলেদের বেলাতেও সেই একই আশঙ্কা থাকে। তাহলে হিন্দু ছেলেদেরও বাবার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত! কিন্তু তা তো হচ্ছে না। হিন্দু ছেলেরা মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে বাবার সম্পত্তিতে ছেলেদের উত্তরাধিকার তো বহাল তবিয়তে থাকছে! আসলে অজুহাত বিশৃঙ্খলা তৈরি করার, যাতে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা না হয়। যাঁরা হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা বলছেন, আগে হিন্দু নারীর নিরাপত্তা দেন, সংখ্যালঘু কমিশন করুন, তারপর তাঁদের অধিকারের কথা ভাবুন। হ্যাঁ, তাঁরা সংখ্যালঘুর অধিকার ও নারীর নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আন্দোলন করুন, কিন্তু এর সঙ্গে হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষার কী সম্পর্ক? আসলে মৌলবাদী হিন্দু জোটের স্বার্থলোভী মূর্খ নেতারা নারীর অধিকারে ভয় পান।
পৃথিবীর সব ধর্মীয় আইনই নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে কমবেশি বঞ্চিত করেছে। কারণ এসব আইন তৈরি করেছে পিতৃতন্ত্র। পিতৃতন্ত্রের দোসর মৌলবাদ। মৌলবাদ ও পিতৃতন্ত্র সাধারণ মানুষকে ধর্মের টুপি পরিয়ে পুরুষের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ রাখতে চায়। পিতৃতন্ত্রের ধারক-বাহকেরা সাধারণ মানুষের মাঝে ধর্মান্ধতা, লোভ ও স্বার্থপরতা জিইয়ে রেখে বিভেদের দেয়াল মজবুত রাখেন। তাঁরা জানেন মানুষ যত বেশি লোভী, স্বার্থপর ও ধর্মান্ধ হবে, তাদের মাঝে তত বেশি বিভেদ থাকবে আর তাতে বিভক্ত মানুষকে শোষণ করা সহজ হবে।
আদালতের রুলে সরকারকে হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষায় সম্পত্তিতে সমান অধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ও সন্তানের অভিভাবকত্ব বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলাটা হিন্দুত্ববাদীরা মূলত মেনে নিতে পারছে না। কবি সুফিয়া কামাল বলেছিলেন, ‘নারী মুক্তি মানেই মানবমুক্তি’। নারীর মানব হয়ে ওঠা তখনই সম্ভব, যখন সব কুসংস্কার পশ্চাৎপদতার বেড়াজাল থেকে নারীর মুক্তি ঘটে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে মুক্ত নারীর পক্ষেই সম্ভব মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা থেকে মুক্ত করা। মানুষের জন্মের সূতিকাগার যে ঘর, যে পরিবার, যা শিক্ষার এবং সভ্যতারও সূতিকাগার বটে, সেই গৃহে নারীকে অধিকারহীন ও অবদমিত রেখে পৃথিবীর কোথাও কারও মুক্তি ঘটতে পারে না। তাই আজ যাঁরা নারী অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আতঙ্কিত প্রতিবন্ধকতাকারী, তাঁরা হয় নিতান্ত মূর্খ, নয়তো ধূর্ত—এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
পিতৃতন্ত্রের বাহকেরা জানে নারীকে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখলে তাকে চিরকাল দাসত্বের নিগড়ে আটকে রাখা যাবে। দাসপ্রথা উঠে গেছে অনেক দিন, এখন নারী যদি নিজের দেহ ও সম্পদ সম্পত্তির পূর্ণ মালিক হয়ে যান, তো পুরুষতন্ত্র আর দাস বানাবে কাকে? তাঁকে সাত জীবনের জন্য কোনো পুরুষের অধীন রেখে, তাঁকে সম্পত্তির অধিকার না দিয়ে, তাঁর গর্ভে তাঁরই রক্ত-মাংসে গঠিত সন্তানের অভিভাবকত্ব থেকে বঞ্চিত করে, তাঁর জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার কোনো না কোনো পুরুষের কাছে গচ্ছিত রেখে তাই নারীকে চিরদিনের দাস বানিয়ে রাখার এই অপচেষ্টা। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা মূর্খও বটে। না হলে এই সোজা হিসাব তাঁরা বোঝেন না কেন যে নারী-পুরুষ একই মা-বাবার সন্তান, একই প্রক্রিয়ায় তাঁদের জন্ম এবং নারী বা পুরুষ হওয়ার জন্য না তাঁদের নিজের, না মা-বাবাও কারও হাত আছে। তাহলে কেন ব্যবসা ও বাবার সম্পত্তির অধিকার থেকে নারী বঞ্চিত হবেন? কেন তিনি পুরুষের ওপর নির্ভরশীল থাকবেন, যেখানে তাঁর পুরুষের মতোই বুদ্ধি, জ্ঞান ও কর্মক্ষমতা রয়েছে?
মূর্খ লোকেরা বোঝেন না—নারীকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে শুধু নারী নন, তাতে পুরুষেরাও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হন। একজন নারীর জীবন তো তাঁর একক জীবন নয়। তাঁকে কেন্দ্র করে আরও অনেক জীবন আবর্তিত হয়, বিশেষ করে তাঁর সন্তানসন্ততি যাদের মধ্যে পুরুষও থাকে। সম্পদহীনতার কারণে নারী যখন অভাব-অনটনে বিপর্যস্ত হন, তখন তাঁর ছেলেমেয়ে সবার জীবনই বিপর্যস্ত হয়। এমন জীবন যখন হয় কোনো কোটিপতির কন্যার; যে শুধু কন্যা হওয়ার কারণে তাঁর বাবার সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আর তাঁর ভাই ও ভাইয়ের সন্তানেরা রাজার মতো জীবন কাটাচ্ছেন! আমাদের প্রায় সবার আশপাশে এমন অনেক হতভাগা কন্যাসন্তান আছে, যারা বাবার সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজেরা ভিখারির মতো জীবন কাটায়। যাদের বাবার সম্পত্তি নেই, সেখানে ভাইবোনের কারোরই পাওয়ার কিছু থাকে না। কিন্তু যেখানে অনেক আছে, সেখানে শুধু নারী হওয়ার অপরাধে একই বাবার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি সেই সম্পত্তির ভাগ পাবেন না, এমন বর্বর আইন যারা বহাল রাখতে চায়, তারাও কি বর্বর নয়?
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তিতে এক পুত্রের অধিকার দুই কন্যা পান। এ নিয়ম অনুযায়ী ভাইয়েরা সম্পত্তি ভাগ করে নিলেও বোনের প্রাপ্য দিতে অধিকাংশ পরিবারে নানা আপত্তি ওঠে। বোন তাঁর ভাগ নিলে ভাইয়েরা বেজার হন, কিন্তু ভাই যখন নেন, তখন তা হয় না। যে জন্য আইনে থাকা সত্ত্বেও বোন তাঁর প্রাপ্য অধিকারটুকু পান না। বোনকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে না দেওয়ার কারণ পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পিতৃতন্ত্র ভাবতেই পারে না নারীর সম্পত্তির দরকার আছে। সে মনে করে নারী শুধু খাটবেন আর জীবনের সক্ষল ক্ষেত্রে কোনো না কোনো পুরুষের ওপর নির্ভরশীল থাকবেন। তাই তাঁকে কোথাও কাগজে-কলমে অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়া হয়, কোথাও একেবারেই না।
নারীর অধিকার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালুর দাবিতে আন্দোলন করছে। অভিন্ন পারিবারিক আইনে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সব ধর্মের নারী-পুরুষের জন্য একইরকম আইন থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। বলা আছে ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গীয় পরিচয়ের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। তা ছাড়া, সরকার সিডও বা নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদে স্বাক্ষর করেও নারীর জীবনের বৈষম্য বিলোপ করতে চুক্তিবদ্ধ। প্রচলিত হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিরাজমান বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা সিডও সনদ ও বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কাজেই সরকারের উচিত মোল্লা, পুরোহিত ও স্বার্থান্ধ সমাজপতিদের কূটচাল উপেক্ষা করে অবিলম্বে আদালতের নির্দেশ মান্য করে নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের দাবি—নারী অধিকার সুরক্ষার নিমিত্ত অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
সম্প্রতি হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে আদালতের রুল জারি করায় বিপক্ষের বন্ধুরা ভীষণ ক্ষিপ্ত। তাই যাঁরা হিন্দু আইন সংস্কার চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সংরক্ষণবাদী হিন্দু নেতারা বিষোদ্গার করেই চলেছেন এবং অত্যন্ত সুকৌশলে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ও বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়টিকে হিন্দুধর্মের ওপর আঘাত বলে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
বাবার সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকারের প্রসঙ্গ এলেই যে হাস্যকর অজুহাতটি তাঁরা দিয়ে থাকেন তা হলো, হিন্দু মেয়ে সম্পত্তির অধিকার পেলে তাঁদের বিয়ে করে হিন্দুর সম্পত্তি মুসলমান ছেলেরা দখল করে নেবেন। মনে হয় যেন হিন্দু ছেলেরা নন, হিন্দু মেয়েরাই কেবল বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হন! তা মেয়েরা সম্পত্তির মালিক হলে ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে যদি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তো ছেলেদের বেলাতেও সেই একই আশঙ্কা থাকে। তাহলে হিন্দু ছেলেদেরও বাবার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত! কিন্তু তা তো হচ্ছে না। হিন্দু ছেলেরা মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে বাবার সম্পত্তিতে ছেলেদের উত্তরাধিকার তো বহাল তবিয়তে থাকছে! আসলে অজুহাত বিশৃঙ্খলা তৈরি করার, যাতে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা না হয়। যাঁরা হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা বলছেন, আগে হিন্দু নারীর নিরাপত্তা দেন, সংখ্যালঘু কমিশন করুন, তারপর তাঁদের অধিকারের কথা ভাবুন। হ্যাঁ, তাঁরা সংখ্যালঘুর অধিকার ও নারীর নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আন্দোলন করুন, কিন্তু এর সঙ্গে হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষার কী সম্পর্ক? আসলে মৌলবাদী হিন্দু জোটের স্বার্থলোভী মূর্খ নেতারা নারীর অধিকারে ভয় পান।
পৃথিবীর সব ধর্মীয় আইনই নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে কমবেশি বঞ্চিত করেছে। কারণ এসব আইন তৈরি করেছে পিতৃতন্ত্র। পিতৃতন্ত্রের দোসর মৌলবাদ। মৌলবাদ ও পিতৃতন্ত্র সাধারণ মানুষকে ধর্মের টুপি পরিয়ে পুরুষের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ রাখতে চায়। পিতৃতন্ত্রের ধারক-বাহকেরা সাধারণ মানুষের মাঝে ধর্মান্ধতা, লোভ ও স্বার্থপরতা জিইয়ে রেখে বিভেদের দেয়াল মজবুত রাখেন। তাঁরা জানেন মানুষ যত বেশি লোভী, স্বার্থপর ও ধর্মান্ধ হবে, তাদের মাঝে তত বেশি বিভেদ থাকবে আর তাতে বিভক্ত মানুষকে শোষণ করা সহজ হবে।
আদালতের রুলে সরকারকে হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষায় সম্পত্তিতে সমান অধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ও সন্তানের অভিভাবকত্ব বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলাটা হিন্দুত্ববাদীরা মূলত মেনে নিতে পারছে না। কবি সুফিয়া কামাল বলেছিলেন, ‘নারী মুক্তি মানেই মানবমুক্তি’। নারীর মানব হয়ে ওঠা তখনই সম্ভব, যখন সব কুসংস্কার পশ্চাৎপদতার বেড়াজাল থেকে নারীর মুক্তি ঘটে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে মুক্ত নারীর পক্ষেই সম্ভব মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা থেকে মুক্ত করা। মানুষের জন্মের সূতিকাগার যে ঘর, যে পরিবার, যা শিক্ষার এবং সভ্যতারও সূতিকাগার বটে, সেই গৃহে নারীকে অধিকারহীন ও অবদমিত রেখে পৃথিবীর কোথাও কারও মুক্তি ঘটতে পারে না। তাই আজ যাঁরা নারী অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আতঙ্কিত প্রতিবন্ধকতাকারী, তাঁরা হয় নিতান্ত মূর্খ, নয়তো ধূর্ত—এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
পিতৃতন্ত্রের বাহকেরা জানে নারীকে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখলে তাকে চিরকাল দাসত্বের নিগড়ে আটকে রাখা যাবে। দাসপ্রথা উঠে গেছে অনেক দিন, এখন নারী যদি নিজের দেহ ও সম্পদ সম্পত্তির পূর্ণ মালিক হয়ে যান, তো পুরুষতন্ত্র আর দাস বানাবে কাকে? তাঁকে সাত জীবনের জন্য কোনো পুরুষের অধীন রেখে, তাঁকে সম্পত্তির অধিকার না দিয়ে, তাঁর গর্ভে তাঁরই রক্ত-মাংসে গঠিত সন্তানের অভিভাবকত্ব থেকে বঞ্চিত করে, তাঁর জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার কোনো না কোনো পুরুষের কাছে গচ্ছিত রেখে তাই নারীকে চিরদিনের দাস বানিয়ে রাখার এই অপচেষ্টা। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা মূর্খও বটে। না হলে এই সোজা হিসাব তাঁরা বোঝেন না কেন যে নারী-পুরুষ একই মা-বাবার সন্তান, একই প্রক্রিয়ায় তাঁদের জন্ম এবং নারী বা পুরুষ হওয়ার জন্য না তাঁদের নিজের, না মা-বাবাও কারও হাত আছে। তাহলে কেন ব্যবসা ও বাবার সম্পত্তির অধিকার থেকে নারী বঞ্চিত হবেন? কেন তিনি পুরুষের ওপর নির্ভরশীল থাকবেন, যেখানে তাঁর পুরুষের মতোই বুদ্ধি, জ্ঞান ও কর্মক্ষমতা রয়েছে?
মূর্খ লোকেরা বোঝেন না—নারীকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে শুধু নারী নন, তাতে পুরুষেরাও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হন। একজন নারীর জীবন তো তাঁর একক জীবন নয়। তাঁকে কেন্দ্র করে আরও অনেক জীবন আবর্তিত হয়, বিশেষ করে তাঁর সন্তানসন্ততি যাদের মধ্যে পুরুষও থাকে। সম্পদহীনতার কারণে নারী যখন অভাব-অনটনে বিপর্যস্ত হন, তখন তাঁর ছেলেমেয়ে সবার জীবনই বিপর্যস্ত হয়। এমন জীবন যখন হয় কোনো কোটিপতির কন্যার; যে শুধু কন্যা হওয়ার কারণে তাঁর বাবার সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আর তাঁর ভাই ও ভাইয়ের সন্তানেরা রাজার মতো জীবন কাটাচ্ছেন! আমাদের প্রায় সবার আশপাশে এমন অনেক হতভাগা কন্যাসন্তান আছে, যারা বাবার সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজেরা ভিখারির মতো জীবন কাটায়। যাদের বাবার সম্পত্তি নেই, সেখানে ভাইবোনের কারোরই পাওয়ার কিছু থাকে না। কিন্তু যেখানে অনেক আছে, সেখানে শুধু নারী হওয়ার অপরাধে একই বাবার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি সেই সম্পত্তির ভাগ পাবেন না, এমন বর্বর আইন যারা বহাল রাখতে চায়, তারাও কি বর্বর নয়?
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তিতে এক পুত্রের অধিকার দুই কন্যা পান। এ নিয়ম অনুযায়ী ভাইয়েরা সম্পত্তি ভাগ করে নিলেও বোনের প্রাপ্য দিতে অধিকাংশ পরিবারে নানা আপত্তি ওঠে। বোন তাঁর ভাগ নিলে ভাইয়েরা বেজার হন, কিন্তু ভাই যখন নেন, তখন তা হয় না। যে জন্য আইনে থাকা সত্ত্বেও বোন তাঁর প্রাপ্য অধিকারটুকু পান না। বোনকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে না দেওয়ার কারণ পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পিতৃতন্ত্র ভাবতেই পারে না নারীর সম্পত্তির দরকার আছে। সে মনে করে নারী শুধু খাটবেন আর জীবনের সক্ষল ক্ষেত্রে কোনো না কোনো পুরুষের ওপর নির্ভরশীল থাকবেন। তাই তাঁকে কোথাও কাগজে-কলমে অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়া হয়, কোথাও একেবারেই না।
নারীর অধিকার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালুর দাবিতে আন্দোলন করছে। অভিন্ন পারিবারিক আইনে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সব ধর্মের নারী-পুরুষের জন্য একইরকম আইন থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। বলা আছে ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গীয় পরিচয়ের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। তা ছাড়া, সরকার সিডও বা নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদে স্বাক্ষর করেও নারীর জীবনের বৈষম্য বিলোপ করতে চুক্তিবদ্ধ। প্রচলিত হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিরাজমান বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা সিডও সনদ ও বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কাজেই সরকারের উচিত মোল্লা, পুরোহিত ও স্বার্থান্ধ সমাজপতিদের কূটচাল উপেক্ষা করে অবিলম্বে আদালতের নির্দেশ মান্য করে নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের দাবি—নারী অধিকার সুরক্ষার নিমিত্ত অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে