চট্টগ্রাম মহানগরীতে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইয়ের ঘটনা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গত বছরের অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, নগরীতে প্রতি মাসে গড়ে ১২টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু এরপরও অজানা শঙ্কা নিয়ে ভোর ও রাতে চলাচল করতে হয় জনসাধারণকে।

সিএমপির অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত বছর ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয় ১৪৬টি। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় সর্বাধিক ৩৯টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়। এরপর রয়েছে ডবলমুরিং থানা। একই সময় ৮০টি ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনাও ঘটেছিল। অথচ এর আগের বছর নগরীর ১৬ থানায় ১০৭টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনায় ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিদের ছুরিকাঘাত করেন দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

সর্বশেষ গত রোববার ভোরে নগরীর আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কে মো. সুমন (২৫) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে সবকিছু নিয়ে যান ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই যুবকের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে পরদিন সোমবার চারজনকে গ্রেপ্তার করে খুলশী থানা-পুলিশ। তাঁরা হলেন মোবারক হোসেন (২৬), হারুন উর রশিদ (৫৮), মো. মহিউদ্দিন (২৫) ও মো. রিদোয়ান (২৭)।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, সুমন একজন সাউন্ড ও লাইটিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। রোববার ভোরে জিইসি মোড়ের ফ্লাইওভারের ওপর ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি। একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আসা চার ব্যক্তি সুমনের গতি রোধ করেন।

পরে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় পুলিশের টহলরত একটি দল তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালে ভর্তি করে।

পুলিশ জানায়, ওই যুবককে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুমনের বাবা মো. আবুল কালাম গত মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুমনের অবস্থা এখনো ভালো নয়। ভালোভাবে কথা বলতে পারছে না। তার গলা, বুকে ও ঊরুতে একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তার পকেটে প্রায় ৯ হাজার টাকা ছিল। সেই টাকা নেওয়ার জন্য আমার ছেলেকে এভাবে ছুরি মেরেছিল তারা।’

সুমনের বাবা জানান, ঘটনার দিন ওয়াসা মোড়ে একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান শেষে মালামালগুলো একটি ভ্যানগাড়িতে তুলে দিয়ে তাঁর পিছু পিছু হেঁটে আসছিলেন সুমন। এর মধ্যেই সুমন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সোমবার চারজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া চারজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তাঁদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।

এ ঘটনা ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে নগরের কোতোয়ালিতে ছুরি মেরে পৃথক ছিনতাইয়ের অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। নগরীর সিআরবি, পলোগ্রাউন্ড, স্টেশন রোড এলাকায় সারা রাত অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। নগরীর পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে পৃথক দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাঁরা গ্রেপ্তার হন।

কোতোয়ালি থানার ওসি তখন জানান, এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত ও গুরুতর জখম করে মোবাইল, টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে যান ওই ছিনতাইকারীরা।