চার ধাপে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের পরও চাঁদপুরের প্রায় অর্ধেক ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। বিশেষ করে শেষ দুই দফার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে সারা জেলায়।

চার দফায় অনুষ্ঠিত ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের ৮টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ৬৮টি ইউপির নির্বাচনে ৩৬টিতেই স্বতন্ত্রের মোড়কে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি নেতারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

সে হিসাবে যেসব ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি ইউপিতে নৌকা পরাজিত হয়েছে। বিশেষ করে চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে সারা জেলায় নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এ নিয়ে সারা জেলায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এখন নানা বিশ্লেষণ চলছে।

বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপ থেকে শুরু করে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত চাঁদপুরের ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৪০টি ইউপিতে নৌকার প্রার্থী জয়ী হলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ২৩টি ইউপিতে, বিএনপি নেতা নির্বাচিত হয়েছেন ১২টিতে এবং জামায়াতপন্থী ১ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপের (জেলার প্রথম ধাপ) ইউপি নির্বাচনে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯টিতে নৌকা জয়ী হয়। যার মধ্যে ২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তৃতীয় ধাপে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১৭টি ইউপির মধ্যে ১০টিতে নৌকা এবং ৭টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন। নৌকার বিজয়ীদের মধ্যে ৫ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

চতুর্থ ধাপে হাজীগঞ্জের ১১টি ইউপির ৬টিতে নৌকার প্রার্থী, ২টিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, ৩টিতে স্বতন্ত্র তথা বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এ ছাড়া শাহরাস্তির ১০টি ইউপির মধ্যে ৫টিতে নৌকা, ২টিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, ২টিতে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিএনপি নেতা এবং ১টিতে জামায়াতপন্থী চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হন।

পঞ্চম ধাপে কচুয়ার ১২টি ইউপির মধ্যে ৫টিতে নৌকা ও ৭টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, ফরিদগঞ্জের ১৩টি ইউপির মধ্যে ৩টিতে নৌকা, ৪টিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী, ৬টিতে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিএনপি নেতা এবং হাইমচরের ৪টি ইউপির মধ্যে ২টিতে নৌকা, ১টিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ও ১টি ইউপিতে বিএনপি নেতা নির্বাচিত হন। এর মধ্যে কচুয়ার ১ জন নৌকার প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তোফায়েল আহমেদ জানান, চার ধাপে চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার মোট ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে দলগতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টি অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ৪০টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বাকি ৩৬টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

মো. তোফায়েল আহমেদ আরও জানান, চাঁদপুরের ৮টি উপজেলায় ৮৯টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ৭৬টিতে নির্বাচন হলেও অন্যগুলোর মেয়াদ শেষ না হওয়া, আইনি জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিলে চাঁদপুরের কোনো ইউপির নির্বাচন হচ্ছে না।