আজাদুল আদনান, ঢাকা
একদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানির ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে জটিলতা। অন্যদিকে কিছু মেডিকেল ডিভাইস ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপকরণের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে। এতে সংকটের মুখে পড়ছে দেশের স্বাস্থ্য খাত। সংকট বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। রোগ নির্ণয়ের রি-এজেন্ট বা রাসায়নিক উপাদানের সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে কিছু পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
সরকারি হাসপাতালে রাসায়নিক উপাদানের অভাব না থাকলেও হৃদযন্ত্রের ভালভ ও অক্সিজেনেটরের মতো মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। এসব ডিভাইস সরবরাহ করে থাকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
রি-এজেন্ট ও মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রায় সব উপাদানই আমদানিনির্ভর। হৃদযন্ত্রের ভালভ ও অক্সিজেনেটর আমদানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আমদানির চাহিদার অর্ধেকের মতো রিএজেন্ট আসছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ চায় তারা।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) হৃদযন্ত্রের চিকিৎসায় প্রতি মাসে শতাধিক ভালভ লাগে। অস্ত্রোপচারের সময় দরকার হয় অক্সিজেনেটরের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভালভের চেয়ে অক্সিজেনেটরের চাহিদা তিন গুণ। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় ধরে ভালভ ও অক্সিজেনেটরের সরবরাহ প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এ পরিস্থিতিতে ১৪ নভেম্বর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জবাবে তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে সংকটের কথা জানিয়েছে।
এনআইসিভিডির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে এই সংকট তৈরি হয়েছে।সরবরাহকারীদের চাপ দিয়ে যাচ্ছি। লিখিতভাবে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তারা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে সংকট রয়েছে। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিভাইস আমদানি কমে গেছে।’
সরকারি হাসপাতালে ভালভ ও অক্সিজেনেটর সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম স্পন্দন, ভিশন মেডিটেক, ইউনিমেড এবং কার্ডিও হেল্প লিমিটেড।
ইউনিমেডের পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে রিএজেন্ট ও ডিভাইস উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানিতে ডলার সংকট সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে। তাই, সরবরাহ কমে গেছে। কবে নাগাদ ঠিক হবে বলা যাচ্ছে না। এক মাস হয় এলসি খোলার চেষ্টা করছি, এখনো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে আশ্বাসের কথা বলছে, সেগুলো কেবল কথার কথা।’
ক্যানসারের পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা
ধানমন্ডিতে আনোয়ারা মেডিকেল সার্ভিসেসে ক্যানসারের ১০টি পরীক্ষা হয়। রিএজেন্টের অভাবে এক মাস ধরে কোলন ক্যানসার শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে না। সংকট দেখা দিয়েছে স্তন ক্যানসার পরীক্ষার উপকরণও। বর্তমানে পরীক্ষা হচ্ছে আট মাস আগের রিএজেন্ট দিয়ে। নতুন করে সরবরাহ আদেশ না নেওয়ায় বাকি পরীক্ষাগুলো বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোগ নির্ণয়ে দেশে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিএজেন্ট বাইরের দেশ থেকে আনতে হয়। আমাদের এখানে ১০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়; কিন্তু বর্তমানে ৮টি হচ্ছে। এলসি খুলতে না পারায় সরবরাহকারীরা রিএজেন্ট দিতে পারছে না। আগে যেটা এক মাসে পাওয়া যেত, এখন সেটি ছয় মাসেও হচ্ছে না।’
সিটি হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাঈদ মৃধা বলেন, ডলার সংকটের কারণে এক্স-রে ফিল্মসহ সব ধরনের রিএজেন্টের দাম বেড়েছে। সরবরাহকারীরা বলছে, রিএজেন্ট পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দামও অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
ইমপালস হেলথ সার্ভিসেস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল হক বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে রিএজেন্ট ঠিকমতো মিলছে না। সরবরাহকারীরা বলছে, এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। ডায়ালাইসিস, এক্স-রের মতো অধিকাংশ বড় পরীক্ষার রিএজেন্ট বাইরে থেকে আনতে হয়। সেগুলোর কাঁচামাল বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে। কিন্তু কাঁচামাল না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’
ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিকসে টিউবসহ বেশ কিছু রিঅ্যাজেন্টের সংকট তৈরি হয়েছে। আগের কিছু রিএজেন্ট দিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেখানকার কো-অর্ডিনেশন সেলের কর্মকর্তা মো. কিতাব উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বর্তমানে যা মজুত আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ দিন চলবে। সরবরাহকারীরা বলছে, এলসি খুলতে না পারলে রিএজেন্ট আনা সম্ভব হবে না। আমরা নিজেরাও চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পাইনি। এভাবে চললে সামনে সংকটে পড়তে হবে।’
বড় প্রতিষ্ঠানও চিন্তায়
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রয়োজনের তুলনায় অন্তত তিন মাসের রিএজেন্ট মজুত রাখে। এই মুহূর্তে সমস্যা না হলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থা দেখে তারাও দুশ্চিন্তায় আছে। প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক অচিন্ত কুমার নাগ বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের এখনো সে ধরনের অবস্থায় পৌঁছেনি। কিন্তু চলমান সংকটাবস্থা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’
রাজধানীর আরও ছয়টি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খোঁজ নিতে গেলে, সবাই রিএজেন্ট সংকটের কথা জানায়। এসব প্রতিষ্ঠানে রিএজেন্ট সরবরাহ করে বায়োটেক, বায়োট্রেট, এসবি সলুশন, ফিউচার বিজনেস, ওভারসিস মার্কেটিং করপোরেশন (ওএমসি) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ঋণপত্র খুলতে জটিলতা শুরু হয়, যা এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বেসরকারি চিকিৎসায় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ লাগছে
এসবি সলুশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক মাস আগেও ঋণপত্র খুলতে তিন-চার দিন লাগত, এখন সেটি দুই মাস ঘুরেও হচ্ছে না।প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে এলসি জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। যে ব্যাংকের মাধ্যমে সব সময় আমদানি করি, তারাও ফিরিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাতেও দীর্ঘ সময় লাগছে।’
ওএমসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জুয়েল বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ইনকিউবেটরসহ অনেক রিএজেন্ট সরবরাহ করে থাকি আমরা। এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ায় এসব রিএজেন্ট আটকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে। এতে দামও বেড়েই চলেছে।’
ডায়াগনস্টিক রিএজেন্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব আমিনুল ইসলাম আবু বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই এলসি খোলা যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা নেই বলা হলেও অতি জরুরি রিএজেন্ট আনতে সমস্যা হচ্ছে। অর্ডার দিয়েও পাচ্ছে না বহু প্রতিষ্ঠান। যার ১ লাখ ডলার প্রয়োজন, তাকে দিচ্ছে ১৫ হাজার। ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট, সেটা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে সবারই জানা। এই সমস্যা না কাটলে অচিরেই বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
সরকারি হাসপাতালে রিএজেন্টের সংকট আছে কি না, জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক মোহম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, সরকারিতে এখনো তেমন পরিস্থিতি হয়নি। বেসরকারিতে সংকট থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশ্বাস
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে অবশ্য বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে এখন ডলারের কিছুটা সংকট রয়েছে। এ জন্য বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। কিন্তু স্বাস্থ্য হচ্ছে জরুরি খাত। এ ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এখানে এলসি জটিলতায় খুলতে না পারলে পুরো খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত, সেখানেই চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানালে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
একদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানির ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে জটিলতা। অন্যদিকে কিছু মেডিকেল ডিভাইস ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপকরণের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে। এতে সংকটের মুখে পড়ছে দেশের স্বাস্থ্য খাত। সংকট বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। রোগ নির্ণয়ের রি-এজেন্ট বা রাসায়নিক উপাদানের সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে কিছু পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
সরকারি হাসপাতালে রাসায়নিক উপাদানের অভাব না থাকলেও হৃদযন্ত্রের ভালভ ও অক্সিজেনেটরের মতো মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। এসব ডিভাইস সরবরাহ করে থাকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
রি-এজেন্ট ও মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রায় সব উপাদানই আমদানিনির্ভর। হৃদযন্ত্রের ভালভ ও অক্সিজেনেটর আমদানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আমদানির চাহিদার অর্ধেকের মতো রিএজেন্ট আসছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ চায় তারা।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) হৃদযন্ত্রের চিকিৎসায় প্রতি মাসে শতাধিক ভালভ লাগে। অস্ত্রোপচারের সময় দরকার হয় অক্সিজেনেটরের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভালভের চেয়ে অক্সিজেনেটরের চাহিদা তিন গুণ। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় ধরে ভালভ ও অক্সিজেনেটরের সরবরাহ প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এ পরিস্থিতিতে ১৪ নভেম্বর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জবাবে তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে সংকটের কথা জানিয়েছে।
এনআইসিভিডির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে এই সংকট তৈরি হয়েছে।সরবরাহকারীদের চাপ দিয়ে যাচ্ছি। লিখিতভাবে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তারা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে সংকট রয়েছে। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিভাইস আমদানি কমে গেছে।’
সরকারি হাসপাতালে ভালভ ও অক্সিজেনেটর সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম স্পন্দন, ভিশন মেডিটেক, ইউনিমেড এবং কার্ডিও হেল্প লিমিটেড।
ইউনিমেডের পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে রিএজেন্ট ও ডিভাইস উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানিতে ডলার সংকট সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে। তাই, সরবরাহ কমে গেছে। কবে নাগাদ ঠিক হবে বলা যাচ্ছে না। এক মাস হয় এলসি খোলার চেষ্টা করছি, এখনো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে আশ্বাসের কথা বলছে, সেগুলো কেবল কথার কথা।’
ক্যানসারের পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা
ধানমন্ডিতে আনোয়ারা মেডিকেল সার্ভিসেসে ক্যানসারের ১০টি পরীক্ষা হয়। রিএজেন্টের অভাবে এক মাস ধরে কোলন ক্যানসার শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে না। সংকট দেখা দিয়েছে স্তন ক্যানসার পরীক্ষার উপকরণও। বর্তমানে পরীক্ষা হচ্ছে আট মাস আগের রিএজেন্ট দিয়ে। নতুন করে সরবরাহ আদেশ না নেওয়ায় বাকি পরীক্ষাগুলো বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোগ নির্ণয়ে দেশে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিএজেন্ট বাইরের দেশ থেকে আনতে হয়। আমাদের এখানে ১০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়; কিন্তু বর্তমানে ৮টি হচ্ছে। এলসি খুলতে না পারায় সরবরাহকারীরা রিএজেন্ট দিতে পারছে না। আগে যেটা এক মাসে পাওয়া যেত, এখন সেটি ছয় মাসেও হচ্ছে না।’
সিটি হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাঈদ মৃধা বলেন, ডলার সংকটের কারণে এক্স-রে ফিল্মসহ সব ধরনের রিএজেন্টের দাম বেড়েছে। সরবরাহকারীরা বলছে, রিএজেন্ট পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দামও অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
ইমপালস হেলথ সার্ভিসেস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল হক বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে রিএজেন্ট ঠিকমতো মিলছে না। সরবরাহকারীরা বলছে, এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। ডায়ালাইসিস, এক্স-রের মতো অধিকাংশ বড় পরীক্ষার রিএজেন্ট বাইরে থেকে আনতে হয়। সেগুলোর কাঁচামাল বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে। কিন্তু কাঁচামাল না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’
ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিকসে টিউবসহ বেশ কিছু রিঅ্যাজেন্টের সংকট তৈরি হয়েছে। আগের কিছু রিএজেন্ট দিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেখানকার কো-অর্ডিনেশন সেলের কর্মকর্তা মো. কিতাব উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বর্তমানে যা মজুত আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ দিন চলবে। সরবরাহকারীরা বলছে, এলসি খুলতে না পারলে রিএজেন্ট আনা সম্ভব হবে না। আমরা নিজেরাও চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পাইনি। এভাবে চললে সামনে সংকটে পড়তে হবে।’
বড় প্রতিষ্ঠানও চিন্তায়
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রয়োজনের তুলনায় অন্তত তিন মাসের রিএজেন্ট মজুত রাখে। এই মুহূর্তে সমস্যা না হলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থা দেখে তারাও দুশ্চিন্তায় আছে। প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক অচিন্ত কুমার নাগ বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের এখনো সে ধরনের অবস্থায় পৌঁছেনি। কিন্তু চলমান সংকটাবস্থা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’
রাজধানীর আরও ছয়টি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খোঁজ নিতে গেলে, সবাই রিএজেন্ট সংকটের কথা জানায়। এসব প্রতিষ্ঠানে রিএজেন্ট সরবরাহ করে বায়োটেক, বায়োট্রেট, এসবি সলুশন, ফিউচার বিজনেস, ওভারসিস মার্কেটিং করপোরেশন (ওএমসি) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ঋণপত্র খুলতে জটিলতা শুরু হয়, যা এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বেসরকারি চিকিৎসায় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ লাগছে
এসবি সলুশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক মাস আগেও ঋণপত্র খুলতে তিন-চার দিন লাগত, এখন সেটি দুই মাস ঘুরেও হচ্ছে না।প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে এলসি জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। যে ব্যাংকের মাধ্যমে সব সময় আমদানি করি, তারাও ফিরিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাতেও দীর্ঘ সময় লাগছে।’
ওএমসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জুয়েল বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ইনকিউবেটরসহ অনেক রিএজেন্ট সরবরাহ করে থাকি আমরা। এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ায় এসব রিএজেন্ট আটকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে। এতে দামও বেড়েই চলেছে।’
ডায়াগনস্টিক রিএজেন্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব আমিনুল ইসলাম আবু বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই এলসি খোলা যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা নেই বলা হলেও অতি জরুরি রিএজেন্ট আনতে সমস্যা হচ্ছে। অর্ডার দিয়েও পাচ্ছে না বহু প্রতিষ্ঠান। যার ১ লাখ ডলার প্রয়োজন, তাকে দিচ্ছে ১৫ হাজার। ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট, সেটা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে সবারই জানা। এই সমস্যা না কাটলে অচিরেই বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
সরকারি হাসপাতালে রিএজেন্টের সংকট আছে কি না, জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক মোহম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, সরকারিতে এখনো তেমন পরিস্থিতি হয়নি। বেসরকারিতে সংকট থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশ্বাস
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে অবশ্য বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে এখন ডলারের কিছুটা সংকট রয়েছে। এ জন্য বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। কিন্তু স্বাস্থ্য হচ্ছে জরুরি খাত। এ ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এখানে এলসি জটিলতায় খুলতে না পারলে পুরো খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত, সেখানেই চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানালে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে