মালিহা লোধি
অনিশ্চয়তায় ভরা উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে এ সপ্তাহে (কাল বৃহস্পতিবার) পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটা দেশটির ১২তম জাতীয় নির্বাচন। দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম রেকর্ডসংখ্যক ১২ কোটি ৮৫ লাখ ভোটার নির্ধারণ করবেন কে পরবর্তী সরকার গঠন করবে।
পাঞ্জাব প্রদেশের ভোটারসংখ্যা অন্য তিনটি প্রদেশের মিলিত ভোটারের চেয়ে বেশি। এখানে ভোটার ৭ কোটি ৩২ লাখের মতো। যে কারণে এই প্রদেশের নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৬৬টি সাধারণ আসনের জন্য দেশের ফার্স্ট পাস্ট-দ্য-পোস্ট ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৫ হাজার ১১৩ জন প্রার্থী। চারটি প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদে সব আসন মিলিয়ে প্রার্থী আছেন ১২ হাজার ৬৩৮ জন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আসনের জন্য ৩১৩ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তবে এই সংখ্যা মোট প্রার্থীর মাত্র ৬ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচনের জন্য ৫৬৮ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনের দিনে লক্ষণীয় বিষয় ভোটার উপস্থিতি
নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতির হার পাকিস্তানের গণতন্ত্রের অবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক সক্রিয়তার মাত্রা নির্দেশ করবে। এই নির্বাচন সাধারণ মানুষ কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও সবার জন্য উন্মুক্ত মনে করেন, সেই বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করবে; বিশেষ করে এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যখন জনমনে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।
পাকিস্তানে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে গড় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫২ শতাংশের কাছাকাছি। আর আগের চারটি নির্বাচনে এটি ৫১ শতাংশ (২০১৮), ৫৩ শতাংশ (২০১৩), ৪৪ শতাংশ (২০০৮) এবং ৪১ শতাংশের (২০০২) মধ্যেই ছিল। ১৯৮৮ সালে শুরু হয়ে ১৯৯০-এর দশকে পরপর চারটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবে সেই সময়ে ভোটারের গড় উপস্থিতি ছিল ৪২ শতাংশ। তবে ১৯৯৭ সালে তা নেমে আসে ৩৬ শতাংশে। সাধারণত যখন মানুষ মনে করে তাদের ভোট ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না অথবা নির্বাচন ‘পূর্বনির্ধারিত’, তখন ভোটার উপস্থিতি কমে যায়।
এবার যদি ভোটার উপস্থিতি খুব কম হয়, তাহলে তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের আস্থার অভাবকে নির্দেশ করতে পারে। এ কারণে ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
নির্বাচন দিনের ইঙ্গিত
নির্বাচনের দিন ফলাফল কেমন হতে পারে, সে-সম্পর্কে অনেকগুলো ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা এখন নির্বাচনী পরিস্থিতির একটি অন্যতম চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তরুণ ভোটারদের (১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী) সংখ্যা—৫ দশমিক ৭ কোটি, যা শুধু রেকর্ডই নয়, মোট ভোটারের ৪৭ শতাংশের বেশি। এটি নির্বাচনের সম্ভাব্য গেম চেঞ্জার হতে পারে।
তরুণ ভোটারদের ভূমিকা: আসল লড়াইটা কি তরুণদের হাতে?
নির্বাচনী কেন্দ্রে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ঠিক কতটা বেশি, সেটা দেখে এবারের নির্বাচনে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় এমন দলগুলো কেমন করবে, সে-সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। তবে অতীতে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি খুব কমই ছিল। এ বিষয়ে যদিও কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই, তবে গ্যালপ পাকিস্তানের একটি প্রতিবেদনে (যা ১৯৮৮ সাল থেকে করা এক্সিট পোলের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে) দেখা গেছে, সাধারণত মাত্র এক-চতুর্থাংশ তরুণ ভোটার ভোট দেন।
আগের দুই নির্বাচনে সামগ্রিক ভোটার উপস্থিতি ছিল গড়ে ৫২ শতাংশ, কিন্তু তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। তবে ভয়েস অব আমেরিকার সাম্প্রতিক এক জরিপে ৭০ শতাংশ তরুণ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে তাঁরা ৮ ফেব্রুয়ারি ভোট দিতে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া কিছু ঘটনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তরুণেরা এবার ভোট দেওয়ার জন্য আরও বেশি উদ্বুদ্ধ। যদি তাঁরা সত্যিই বড় সংখ্যায় ভোটার হিসেবে আবির্ভূত হন, তাহলে তা এবারের নির্বাচনে চমকপ্রদ ফলাফল সৃষ্টি করতে পারে এবং ‘নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য’ বা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকেই উল্টে দিতে পারে।
নতুন ভোটার: ফলাফলের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারবেন কি?
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচনী তালিকায় ২ কোটি ৩৫ লাখের বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি নারী। নতুন ভোটাররা মোট ভোটারের ১৮ শতাংশ। এই সংখ্যার মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ ভোটার থাকলেও সম্ভবত এর আগে নিবন্ধিত না হওয়া বয়স্ক ভোটাররাও রয়েছেন। তাঁরা নির্বাচনের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেন। কারণ তাঁদের অনেকেই কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এবং প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচারে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এটি বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ফলাফলকে অনির্ধারিত করে তুলতে পারে।
নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ: অসমতার চিত্র
নিবন্ধিত নারী ভোটারসংখ্যা ৫ কোটি ৯৩ লাখ হলেও মোট ভোটারের তাঁরা মাত্র ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। অথচ জনসংখ্যায় নারীদের হার ৪৯ শতাংশ। অপর দিকে পুরুষ ভোটারসংখ্যা ৬ কোটি ৯২ লাখ, যা মোট ভোটারের ৫৪ শতাংশ; অর্থাৎ নারী ভোটারদের চেয়ে পুরুষ ভোটার প্রায় ১ কোটি বেশি, যা নির্বাচনী ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
যদিও নির্বাচন কমিশন এবং অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ায় এই ব্যবধান ক্রমাগত কমছে। তবে ভোটার উপস্থিতিতে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এখনো বিদ্যমান। ২০১৮ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের প্রায় ৫৬ শতাংশ উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪৬ শতাংশের কিছু বেশি, অর্থাৎ নারীদের উপস্থিতি পুরুষদের চেয়ে ১০ শতাংশ কম।
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের লাইন লম্বা হবে কি না, তা দেখার বিষয়। দীর্ঘ লাইন নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ার ইঙ্গিত হতে পারে, যা নারী ভোটারদের সমর্থনে দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে এমন দলগুলো উপকৃত হতে পারে।
মার্জিনাল আসন
পাকিস্তানের ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতিতে এমন বেশ কিছু আসন রয়েছে, যেখানে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান খুবই কম হয়। নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলো। পাকিস্তানের বেশ কিছু আসন রয়েছে, যেখানে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুব কম থাকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির এক শর বেশি আসনে প্রার্থীরা অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। ৮৭টি আসনে জয়ের ব্যবধান ছিল এক হাজার ভোটের কম এবং ২৬টি আসনে জয়ের ব্যবধান ছিল দুই হাজারের নিচে। এমনকি ৫১টি আসনে বিজয়ীর সঙ্গে পরাজিত প্রার্থীর ব্যবধান ছিল ছয় হাজার ভোটেরও কম।
কোথায় লড়াই সবচেয়ে কঠিন
নির্বাচনে তীব্র লড়াইয়ের আসনগুলোর বেশির ভাগই পাঞ্জাবে, যেখানে জাতীয় নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এই আসনগুলোতে সাধারণত গড়ে প্রায় নয় লাখ ভোটার রয়েছেন। মাত্র কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে এখানে জয়ী হওয়া কঠিন। তাই এই কঠিন লড়াইয়ের আসনগুলোই কিনা সামগ্রিক নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে, সেটা দেখার বিষয়। এখানে পিএমএল-এন, পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থী, পিপিপি এবং আইপিপি—এই চার দলের মধ্যে চতুর্মুখী লড়াই চলতে পারে।
ভোটকেন্দ্রগুলোর অর্ধেক ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
দেশব্যাপী ৯০ হাজার ৬৭৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেক নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মানে সেখানে নিরাপত্তাঝুঁকি আছে, আর ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ মানে ঝুঁকি আরও বেশি। প্রায় ২৭ হাজার ৬২৮টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১৮ হাজার ৪৩৭টিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পাঞ্জাবে পড়েছে। এরপরই সিন্ধু প্রদেশ, খাইবারপাখতুনখাওয়া (কেপি) ও বেলুচিস্তানে।
এর মানে হলো, এই ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটার-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার মতো নির্বাচনী সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি মূলত কেপি ও বেলুচিস্তানেই বেশি। যদিও এসব প্রদেশের ভোটকেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবুও নির্বাচনের দিনে এসব কেন্দ্রে কঠোর নজর রাখা উচিত, যাতে কোনো সহিংসতা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত না করে।
নির্বাচনের দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক—নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করার চেষ্টা বা ভোট কারচুপির কোনো ঘটনা ঘটে কি না বা সেই বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় কি না। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেবে, নির্বাচনের ফলাফলের বৈধতা নষ্ট করে দেবে এবং পাকিস্তানকে আবার অস্থিরতার সমুদ্রে ডুবিয়ে দেবে।
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
(পাকিস্তানি পত্রিকা ডন-এ প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
অনিশ্চয়তায় ভরা উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে এ সপ্তাহে (কাল বৃহস্পতিবার) পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটা দেশটির ১২তম জাতীয় নির্বাচন। দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম রেকর্ডসংখ্যক ১২ কোটি ৮৫ লাখ ভোটার নির্ধারণ করবেন কে পরবর্তী সরকার গঠন করবে।
পাঞ্জাব প্রদেশের ভোটারসংখ্যা অন্য তিনটি প্রদেশের মিলিত ভোটারের চেয়ে বেশি। এখানে ভোটার ৭ কোটি ৩২ লাখের মতো। যে কারণে এই প্রদেশের নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৬৬টি সাধারণ আসনের জন্য দেশের ফার্স্ট পাস্ট-দ্য-পোস্ট ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৫ হাজার ১১৩ জন প্রার্থী। চারটি প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদে সব আসন মিলিয়ে প্রার্থী আছেন ১২ হাজার ৬৩৮ জন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আসনের জন্য ৩১৩ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তবে এই সংখ্যা মোট প্রার্থীর মাত্র ৬ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচনের জন্য ৫৬৮ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনের দিনে লক্ষণীয় বিষয় ভোটার উপস্থিতি
নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতির হার পাকিস্তানের গণতন্ত্রের অবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক সক্রিয়তার মাত্রা নির্দেশ করবে। এই নির্বাচন সাধারণ মানুষ কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও সবার জন্য উন্মুক্ত মনে করেন, সেই বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করবে; বিশেষ করে এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যখন জনমনে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।
পাকিস্তানে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে গড় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫২ শতাংশের কাছাকাছি। আর আগের চারটি নির্বাচনে এটি ৫১ শতাংশ (২০১৮), ৫৩ শতাংশ (২০১৩), ৪৪ শতাংশ (২০০৮) এবং ৪১ শতাংশের (২০০২) মধ্যেই ছিল। ১৯৮৮ সালে শুরু হয়ে ১৯৯০-এর দশকে পরপর চারটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবে সেই সময়ে ভোটারের গড় উপস্থিতি ছিল ৪২ শতাংশ। তবে ১৯৯৭ সালে তা নেমে আসে ৩৬ শতাংশে। সাধারণত যখন মানুষ মনে করে তাদের ভোট ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না অথবা নির্বাচন ‘পূর্বনির্ধারিত’, তখন ভোটার উপস্থিতি কমে যায়।
এবার যদি ভোটার উপস্থিতি খুব কম হয়, তাহলে তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের আস্থার অভাবকে নির্দেশ করতে পারে। এ কারণে ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
নির্বাচন দিনের ইঙ্গিত
নির্বাচনের দিন ফলাফল কেমন হতে পারে, সে-সম্পর্কে অনেকগুলো ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা এখন নির্বাচনী পরিস্থিতির একটি অন্যতম চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তরুণ ভোটারদের (১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী) সংখ্যা—৫ দশমিক ৭ কোটি, যা শুধু রেকর্ডই নয়, মোট ভোটারের ৪৭ শতাংশের বেশি। এটি নির্বাচনের সম্ভাব্য গেম চেঞ্জার হতে পারে।
তরুণ ভোটারদের ভূমিকা: আসল লড়াইটা কি তরুণদের হাতে?
নির্বাচনী কেন্দ্রে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ঠিক কতটা বেশি, সেটা দেখে এবারের নির্বাচনে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় এমন দলগুলো কেমন করবে, সে-সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। তবে অতীতে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি খুব কমই ছিল। এ বিষয়ে যদিও কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই, তবে গ্যালপ পাকিস্তানের একটি প্রতিবেদনে (যা ১৯৮৮ সাল থেকে করা এক্সিট পোলের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে) দেখা গেছে, সাধারণত মাত্র এক-চতুর্থাংশ তরুণ ভোটার ভোট দেন।
আগের দুই নির্বাচনে সামগ্রিক ভোটার উপস্থিতি ছিল গড়ে ৫২ শতাংশ, কিন্তু তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। তবে ভয়েস অব আমেরিকার সাম্প্রতিক এক জরিপে ৭০ শতাংশ তরুণ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে তাঁরা ৮ ফেব্রুয়ারি ভোট দিতে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া কিছু ঘটনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তরুণেরা এবার ভোট দেওয়ার জন্য আরও বেশি উদ্বুদ্ধ। যদি তাঁরা সত্যিই বড় সংখ্যায় ভোটার হিসেবে আবির্ভূত হন, তাহলে তা এবারের নির্বাচনে চমকপ্রদ ফলাফল সৃষ্টি করতে পারে এবং ‘নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য’ বা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকেই উল্টে দিতে পারে।
নতুন ভোটার: ফলাফলের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারবেন কি?
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচনী তালিকায় ২ কোটি ৩৫ লাখের বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি নারী। নতুন ভোটাররা মোট ভোটারের ১৮ শতাংশ। এই সংখ্যার মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ ভোটার থাকলেও সম্ভবত এর আগে নিবন্ধিত না হওয়া বয়স্ক ভোটাররাও রয়েছেন। তাঁরা নির্বাচনের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেন। কারণ তাঁদের অনেকেই কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এবং প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচারে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এটি বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ফলাফলকে অনির্ধারিত করে তুলতে পারে।
নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ: অসমতার চিত্র
নিবন্ধিত নারী ভোটারসংখ্যা ৫ কোটি ৯৩ লাখ হলেও মোট ভোটারের তাঁরা মাত্র ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। অথচ জনসংখ্যায় নারীদের হার ৪৯ শতাংশ। অপর দিকে পুরুষ ভোটারসংখ্যা ৬ কোটি ৯২ লাখ, যা মোট ভোটারের ৫৪ শতাংশ; অর্থাৎ নারী ভোটারদের চেয়ে পুরুষ ভোটার প্রায় ১ কোটি বেশি, যা নির্বাচনী ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
যদিও নির্বাচন কমিশন এবং অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ায় এই ব্যবধান ক্রমাগত কমছে। তবে ভোটার উপস্থিতিতে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এখনো বিদ্যমান। ২০১৮ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের প্রায় ৫৬ শতাংশ উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪৬ শতাংশের কিছু বেশি, অর্থাৎ নারীদের উপস্থিতি পুরুষদের চেয়ে ১০ শতাংশ কম।
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের লাইন লম্বা হবে কি না, তা দেখার বিষয়। দীর্ঘ লাইন নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ার ইঙ্গিত হতে পারে, যা নারী ভোটারদের সমর্থনে দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে এমন দলগুলো উপকৃত হতে পারে।
মার্জিনাল আসন
পাকিস্তানের ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতিতে এমন বেশ কিছু আসন রয়েছে, যেখানে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান খুবই কম হয়। নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলো। পাকিস্তানের বেশ কিছু আসন রয়েছে, যেখানে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুব কম থাকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির এক শর বেশি আসনে প্রার্থীরা অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। ৮৭টি আসনে জয়ের ব্যবধান ছিল এক হাজার ভোটের কম এবং ২৬টি আসনে জয়ের ব্যবধান ছিল দুই হাজারের নিচে। এমনকি ৫১টি আসনে বিজয়ীর সঙ্গে পরাজিত প্রার্থীর ব্যবধান ছিল ছয় হাজার ভোটেরও কম।
কোথায় লড়াই সবচেয়ে কঠিন
নির্বাচনে তীব্র লড়াইয়ের আসনগুলোর বেশির ভাগই পাঞ্জাবে, যেখানে জাতীয় নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এই আসনগুলোতে সাধারণত গড়ে প্রায় নয় লাখ ভোটার রয়েছেন। মাত্র কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে এখানে জয়ী হওয়া কঠিন। তাই এই কঠিন লড়াইয়ের আসনগুলোই কিনা সামগ্রিক নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে, সেটা দেখার বিষয়। এখানে পিএমএল-এন, পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থী, পিপিপি এবং আইপিপি—এই চার দলের মধ্যে চতুর্মুখী লড়াই চলতে পারে।
ভোটকেন্দ্রগুলোর অর্ধেক ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
দেশব্যাপী ৯০ হাজার ৬৭৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেক নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মানে সেখানে নিরাপত্তাঝুঁকি আছে, আর ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ মানে ঝুঁকি আরও বেশি। প্রায় ২৭ হাজার ৬২৮টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১৮ হাজার ৪৩৭টিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পাঞ্জাবে পড়েছে। এরপরই সিন্ধু প্রদেশ, খাইবারপাখতুনখাওয়া (কেপি) ও বেলুচিস্তানে।
এর মানে হলো, এই ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটার-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার মতো নির্বাচনী সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি মূলত কেপি ও বেলুচিস্তানেই বেশি। যদিও এসব প্রদেশের ভোটকেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবুও নির্বাচনের দিনে এসব কেন্দ্রে কঠোর নজর রাখা উচিত, যাতে কোনো সহিংসতা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত না করে।
নির্বাচনের দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক—নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করার চেষ্টা বা ভোট কারচুপির কোনো ঘটনা ঘটে কি না বা সেই বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় কি না। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেবে, নির্বাচনের ফলাফলের বৈধতা নষ্ট করে দেবে এবং পাকিস্তানকে আবার অস্থিরতার সমুদ্রে ডুবিয়ে দেবে।
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
(পাকিস্তানি পত্রিকা ডন-এ প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে