স্বপ্না রেজা
বেঁচে থাকার তাগাদা অনেকের মতো তারও; বিশেষ করে দুই মেয়ের জন্য তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা শহরে পা ফেলেছে ৩০ বছরের হামিদা। বড় মেয়ে দাদির কাছে। দাদি তার সেবাযত্ন করার জন্য বউকে কাছে না রাখলেও তার মেয়ে সালমাকে কাছে রেখে দিয়েছে। বড় গলায় দাদি বলেছে, এই মেয়ে সালমা এখন থেকে তার দেখভাল করবে। রান্না করে তাকে খাওয়াবে, গোসল করাবে। প্রয়োজনে অনেক কিছু করবে। হামিদা পর পর দুই মেয়ের জন্ম দিলে শাশুড়ির ঘুম হারাম হয়ে যায়। ঘরের বাতির তৃষ্ণা বাড়ে। ছেলেকে সেই তৃষ্ণার কথা শোনায়। ছেলের পুরুষত্ব নড়েচড়ে বসে। সমাজের চারপাশের দেখা পুরুষের মতো দ্বিতীয় বিয়ের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা তারও জাগে। এতে মায়ের প্রতি তার আনুগত্য দিন দিন বেড়ে যায়। এই অযাচিত আকস্মিক আনুগত্য বোধ হামিদার পাশ থেকে স্বামীকে সরিয়ে নিতে বড় ভূমিকা পালন করে। একসময় শাশুড়ির পরামর্শে হামিদাকে তালাক দেয় স্বামী। ঘরের বাতির অজুহাতে মায়ের পছন্দমতো মেয়েকে বিয়ে করে। আর হামিদা ছোট মেয়েকে নিয়ে পথে নামে।
স্বামী লোকটি নিজের মায়ের প্রতি ভীষণ খুশি। এত সহজে আরেকজন নারীকে ভোগ করার সুযোগ মা-ই তাকে দিয়েছে। বন্ধ দরজা খুলে দিয়েছে। কম কী! অথচ হামিদাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সে এবং ভূমিষ্ঠ দুই কন্যার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় সে-ও খুশি ছিল। একঘেয়ে জীবনের অবসান কত সহজে হতে পারে, তা কল্পনাতীত। এই খুশিতে মা যা বলে, ছেলে তা-ই করে। দিন কাটে তার মহানন্দে। হামিদা তার বড় মেয়েকেও সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে চেয়েছিল। শাশুড়ি দেয়নি; বরং কাজের মানুষ করে রেখে দিয়েছে এবং সেটা সামাজিক ও রক্তের সম্পর্কের দাবিতে। শুধু সংসার নয়, হামিদা তার বড় মেয়েকেও হারিয়েছে ঘরের বাতি না জ্বালাতে পেরে। হামিদার শ্বশুরবাড়ি স্থানীয়ভাবে বেশ সুপরিচিত এবং ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচরণে বেশ বিশ্বাসী। তারা যা বলে, স্থানীয়রা সেটাকেই উত্তম মনে করে। হাজার হোক ধর্মকর্ম করা পরিবার। যা করবে, যা বলবে, সেটাই উত্তম। উল্টো হামিদার দোষ খোঁজে স্থানীয় মানুষ। দোষ না করে দোষী হতে সময় লাগে না। এই দোষ একজন ছেলেসন্তান জন্ম না দিতে পারার।
গ্রামের মানুষ এখন আর হাতে চিঠি লেখে না। কাগজ-কলমের প্রয়োজন পড়ে না। ডাকবাক্সও চোখে পড়ে না। ডাকপিয়ন পেশার অস্তিত্ব হাতে গোনা। গ্রামের মানুষ মনের কথা বলা বা প্রকাশের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। লেটেস্ট মডেল না হোক, জুতসই সেট ব্যবহার করে। ১০ জন লোক জড়ো হলে অন্তত ৮ জনের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যাবে। প্রযুক্তিতে আধুনিক হলেও চিন্তাচেতনায়, বুদ্ধিতে অনগ্রসরতার পরিণাম এমন অজস্র হামিদা। প্রতিবাদের ভাষা জানা নেই, আইনও জানে না। এরা সংখ্যায় দিন দিন বাড়ে, কমে না। এদের কথা কত জনই-বা ভাবে? আইন, অধিকার এদের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে।
২. সমাজের চোরেরা কেবল গ্রিল কেটে চুরি করতে অভ্যস্ত ও পটু নয়। চুরির ধরন বদলেছে। এখন বলতে গেলে চুরির জন্য গ্রিল কাটা লাগে না। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুমে বসে, দামি গাড়িতে বসে চুরি করা যায়। শারীরিক পরিশ্রম নয়, চুরির জন্য নির্দেশনা লাগে, হুকুম লাগে। লাগে সহায়তা ও সমর্থন। আগের ধরন পাল্টে এখন ইথারে ইথারে চুরি হয়ে যায়। একটা সময়ে হাতেনাতে চোর ধরা হতো। চোরদের ধরে মাথার চুল কেটে দেওয়া হতো, মুখে চুনকালি দেওয়া হতো, দড়ি দিয়ে বেঁধে স্থানীয় এলাকার অলিগলিতে ঘোরানো হতো। এতে স্থানীয় লোকজন চোর চিনতে পারত সহজে। চোর ধরার মহানন্দ এলাকায় বেশ কিছুদিন থাকত। সেই চোর ধরার বিষয়টি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। যত নিয়ম, আইনকানুন তৈরি ও প্রণয়ন করা হয়েছে, ততই দুর্বোধ্য হয়েছে চোর ধরার কৌশল ও উপায়। এককথায়, এখন আর সহজে চোর ধরা যায় না। চোর যখন অনেক বড় হয়, পরিণত হয়, প্রভাবশালী হয়, তখনো নয়। চোরের কপাল খারাপ হলে একটা সময় চোরের অপকর্ম প্রকাশ পায়। সব চোরের কপাল কিন্তু খারাপ হয় না। ভালো কপালের চোরেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
একজন প্রশ্ন করল, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ বিক্রিকে চুরি বলা যায় কি না। দায়িত্বশীলদের জাল সনদ বিক্রি অবশ্যই বড় ও জঘন্যতম চুরি। শুধু চুরি নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে বেইমানি। অবৈধভাবে জাল সনদ বিক্রি করে টাকা কামাই, জাহাজ চুরি তো বটেই। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পত্রিকান্তরে জানা যায়, কয়েক বছরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঁচ হাজারের মতো জাল সনদ বিক্রি করা হয়েছে। জাতির আস্থা, ভরসার গ্রিল কেটে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কীভাবে এমন অপরাধ করতে পারল, সেটাই প্রশ্ন। ডিবির সূত্রে জানা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সনদ-বাণিজ্যে জড়িত থাকতে পারেন। যদি ডিবি এর সত্যতা খুঁজে পায়, তাহলে এই বিশাল চুরি ও সাংঘাতিক বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি কী হবে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক অভিযোগ অনেক দিন ধরে। কথার সঙ্গে কাজের গরমিল দেখে এসব অভিযোগ। অভিযোগ—যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি শিক্ষাব্যবস্থায় নিয়োগ না পাওয়া। আরও অভিযোগ—রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ। যা-ই হোক, সনদ-বাণিজ্যের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভাবতে অবাক লাগে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কী করে উঠতে পারে? তাঁদের অতীত রেকর্ড, জীবনবৃত্তান্ত কেউ কি জানতে পারে না নিয়োগের আগে? নাকি এসব ব্যক্তি ক্ষমতার আসনে বসে দুর্নীতি, চুরি করার মানসিকতায় উপনীত হয়ে যায় ক্ষমতার অনাকাঙ্ক্ষিত এক সংস্কৃতিতে? আজব! কারা সঠিক আইন কিংবা নিয়মকে প্রতিষ্ঠিত করবে রাষ্ট্রে, যার দায়িত্ব কাজটি করা, সেই-ই যদি নিয়ম ভঙ্গ করে বসে, অনিয়ম করে বসে, কিংবা চুরি করে বসে? অনেকে বলে, আগে চোর ছিল ছিঁচকে, হাতে গোনা। আগে চোরের চুল কেটে দিলে তারা অন্তত লজ্জা পেত। এখন চোরেরা মস্ত বড়, দাপুটে। প্রভাবশালী তো বটেই। তাদের চুল কেটে দেওয়া হয় না, মুখে চুনকালি দেওয়া হয় না। ফলে এখানকার চোরেরা লজ্জা পায় না। লজ্জা তাদের ভূষণ নয়। লজ্জা এখন জনগণকে পেতে হয়, কর্তৃপক্ষের অপরাধ দেখে, কর্তৃপক্ষকে অপরাধপ্রবণ হতে দেখে। পাঁচ হাজার জাল সনদ মানে পাঁচ হাজার ভুয়া শিক্ষিত ব্যক্তি পয়দা হওয়া; পাঁচ হাজার অন্যায়কারীকে সমাজের ভেতর ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া। এই সনদধারীরা জেনে গেছে, ভুয়া পরিচয়ে এ সমাজে বিচরণ করা যায়, যার জন্য প্রয়োজন কেবল কিছু অসাধু, অসৎ দায়িত্বশীল চোর ব্যক্তি। প্রকৃত শিক্ষার এই আকালে ভুয়া শিক্ষিত পয়দার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। সেই সঙ্গে প্রশ্ন রাখছি, কয়েক বছর ধরে সনদ-বাণিজ্য হয় কী করে, দায়িত্বশীলদের মাথার ওপর তবে কি কেবলই একটা ফকফকা আকাশ?
৩. উল্লিখিত ঘটনা দুটি কাঙ্ক্ষিত নয়। অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভালো মানুষ তো নিশ্চয়ই আছে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
বেঁচে থাকার তাগাদা অনেকের মতো তারও; বিশেষ করে দুই মেয়ের জন্য তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা শহরে পা ফেলেছে ৩০ বছরের হামিদা। বড় মেয়ে দাদির কাছে। দাদি তার সেবাযত্ন করার জন্য বউকে কাছে না রাখলেও তার মেয়ে সালমাকে কাছে রেখে দিয়েছে। বড় গলায় দাদি বলেছে, এই মেয়ে সালমা এখন থেকে তার দেখভাল করবে। রান্না করে তাকে খাওয়াবে, গোসল করাবে। প্রয়োজনে অনেক কিছু করবে। হামিদা পর পর দুই মেয়ের জন্ম দিলে শাশুড়ির ঘুম হারাম হয়ে যায়। ঘরের বাতির তৃষ্ণা বাড়ে। ছেলেকে সেই তৃষ্ণার কথা শোনায়। ছেলের পুরুষত্ব নড়েচড়ে বসে। সমাজের চারপাশের দেখা পুরুষের মতো দ্বিতীয় বিয়ের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা তারও জাগে। এতে মায়ের প্রতি তার আনুগত্য দিন দিন বেড়ে যায়। এই অযাচিত আকস্মিক আনুগত্য বোধ হামিদার পাশ থেকে স্বামীকে সরিয়ে নিতে বড় ভূমিকা পালন করে। একসময় শাশুড়ির পরামর্শে হামিদাকে তালাক দেয় স্বামী। ঘরের বাতির অজুহাতে মায়ের পছন্দমতো মেয়েকে বিয়ে করে। আর হামিদা ছোট মেয়েকে নিয়ে পথে নামে।
স্বামী লোকটি নিজের মায়ের প্রতি ভীষণ খুশি। এত সহজে আরেকজন নারীকে ভোগ করার সুযোগ মা-ই তাকে দিয়েছে। বন্ধ দরজা খুলে দিয়েছে। কম কী! অথচ হামিদাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সে এবং ভূমিষ্ঠ দুই কন্যার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় সে-ও খুশি ছিল। একঘেয়ে জীবনের অবসান কত সহজে হতে পারে, তা কল্পনাতীত। এই খুশিতে মা যা বলে, ছেলে তা-ই করে। দিন কাটে তার মহানন্দে। হামিদা তার বড় মেয়েকেও সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে চেয়েছিল। শাশুড়ি দেয়নি; বরং কাজের মানুষ করে রেখে দিয়েছে এবং সেটা সামাজিক ও রক্তের সম্পর্কের দাবিতে। শুধু সংসার নয়, হামিদা তার বড় মেয়েকেও হারিয়েছে ঘরের বাতি না জ্বালাতে পেরে। হামিদার শ্বশুরবাড়ি স্থানীয়ভাবে বেশ সুপরিচিত এবং ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচরণে বেশ বিশ্বাসী। তারা যা বলে, স্থানীয়রা সেটাকেই উত্তম মনে করে। হাজার হোক ধর্মকর্ম করা পরিবার। যা করবে, যা বলবে, সেটাই উত্তম। উল্টো হামিদার দোষ খোঁজে স্থানীয় মানুষ। দোষ না করে দোষী হতে সময় লাগে না। এই দোষ একজন ছেলেসন্তান জন্ম না দিতে পারার।
গ্রামের মানুষ এখন আর হাতে চিঠি লেখে না। কাগজ-কলমের প্রয়োজন পড়ে না। ডাকবাক্সও চোখে পড়ে না। ডাকপিয়ন পেশার অস্তিত্ব হাতে গোনা। গ্রামের মানুষ মনের কথা বলা বা প্রকাশের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। লেটেস্ট মডেল না হোক, জুতসই সেট ব্যবহার করে। ১০ জন লোক জড়ো হলে অন্তত ৮ জনের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যাবে। প্রযুক্তিতে আধুনিক হলেও চিন্তাচেতনায়, বুদ্ধিতে অনগ্রসরতার পরিণাম এমন অজস্র হামিদা। প্রতিবাদের ভাষা জানা নেই, আইনও জানে না। এরা সংখ্যায় দিন দিন বাড়ে, কমে না। এদের কথা কত জনই-বা ভাবে? আইন, অধিকার এদের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে।
২. সমাজের চোরেরা কেবল গ্রিল কেটে চুরি করতে অভ্যস্ত ও পটু নয়। চুরির ধরন বদলেছে। এখন বলতে গেলে চুরির জন্য গ্রিল কাটা লাগে না। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুমে বসে, দামি গাড়িতে বসে চুরি করা যায়। শারীরিক পরিশ্রম নয়, চুরির জন্য নির্দেশনা লাগে, হুকুম লাগে। লাগে সহায়তা ও সমর্থন। আগের ধরন পাল্টে এখন ইথারে ইথারে চুরি হয়ে যায়। একটা সময়ে হাতেনাতে চোর ধরা হতো। চোরদের ধরে মাথার চুল কেটে দেওয়া হতো, মুখে চুনকালি দেওয়া হতো, দড়ি দিয়ে বেঁধে স্থানীয় এলাকার অলিগলিতে ঘোরানো হতো। এতে স্থানীয় লোকজন চোর চিনতে পারত সহজে। চোর ধরার মহানন্দ এলাকায় বেশ কিছুদিন থাকত। সেই চোর ধরার বিষয়টি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। যত নিয়ম, আইনকানুন তৈরি ও প্রণয়ন করা হয়েছে, ততই দুর্বোধ্য হয়েছে চোর ধরার কৌশল ও উপায়। এককথায়, এখন আর সহজে চোর ধরা যায় না। চোর যখন অনেক বড় হয়, পরিণত হয়, প্রভাবশালী হয়, তখনো নয়। চোরের কপাল খারাপ হলে একটা সময় চোরের অপকর্ম প্রকাশ পায়। সব চোরের কপাল কিন্তু খারাপ হয় না। ভালো কপালের চোরেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
একজন প্রশ্ন করল, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ বিক্রিকে চুরি বলা যায় কি না। দায়িত্বশীলদের জাল সনদ বিক্রি অবশ্যই বড় ও জঘন্যতম চুরি। শুধু চুরি নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে বেইমানি। অবৈধভাবে জাল সনদ বিক্রি করে টাকা কামাই, জাহাজ চুরি তো বটেই। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পত্রিকান্তরে জানা যায়, কয়েক বছরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঁচ হাজারের মতো জাল সনদ বিক্রি করা হয়েছে। জাতির আস্থা, ভরসার গ্রিল কেটে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কীভাবে এমন অপরাধ করতে পারল, সেটাই প্রশ্ন। ডিবির সূত্রে জানা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সনদ-বাণিজ্যে জড়িত থাকতে পারেন। যদি ডিবি এর সত্যতা খুঁজে পায়, তাহলে এই বিশাল চুরি ও সাংঘাতিক বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি কী হবে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক অভিযোগ অনেক দিন ধরে। কথার সঙ্গে কাজের গরমিল দেখে এসব অভিযোগ। অভিযোগ—যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি শিক্ষাব্যবস্থায় নিয়োগ না পাওয়া। আরও অভিযোগ—রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ। যা-ই হোক, সনদ-বাণিজ্যের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভাবতে অবাক লাগে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কী করে উঠতে পারে? তাঁদের অতীত রেকর্ড, জীবনবৃত্তান্ত কেউ কি জানতে পারে না নিয়োগের আগে? নাকি এসব ব্যক্তি ক্ষমতার আসনে বসে দুর্নীতি, চুরি করার মানসিকতায় উপনীত হয়ে যায় ক্ষমতার অনাকাঙ্ক্ষিত এক সংস্কৃতিতে? আজব! কারা সঠিক আইন কিংবা নিয়মকে প্রতিষ্ঠিত করবে রাষ্ট্রে, যার দায়িত্ব কাজটি করা, সেই-ই যদি নিয়ম ভঙ্গ করে বসে, অনিয়ম করে বসে, কিংবা চুরি করে বসে? অনেকে বলে, আগে চোর ছিল ছিঁচকে, হাতে গোনা। আগে চোরের চুল কেটে দিলে তারা অন্তত লজ্জা পেত। এখন চোরেরা মস্ত বড়, দাপুটে। প্রভাবশালী তো বটেই। তাদের চুল কেটে দেওয়া হয় না, মুখে চুনকালি দেওয়া হয় না। ফলে এখানকার চোরেরা লজ্জা পায় না। লজ্জা তাদের ভূষণ নয়। লজ্জা এখন জনগণকে পেতে হয়, কর্তৃপক্ষের অপরাধ দেখে, কর্তৃপক্ষকে অপরাধপ্রবণ হতে দেখে। পাঁচ হাজার জাল সনদ মানে পাঁচ হাজার ভুয়া শিক্ষিত ব্যক্তি পয়দা হওয়া; পাঁচ হাজার অন্যায়কারীকে সমাজের ভেতর ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া। এই সনদধারীরা জেনে গেছে, ভুয়া পরিচয়ে এ সমাজে বিচরণ করা যায়, যার জন্য প্রয়োজন কেবল কিছু অসাধু, অসৎ দায়িত্বশীল চোর ব্যক্তি। প্রকৃত শিক্ষার এই আকালে ভুয়া শিক্ষিত পয়দার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। সেই সঙ্গে প্রশ্ন রাখছি, কয়েক বছর ধরে সনদ-বাণিজ্য হয় কী করে, দায়িত্বশীলদের মাথার ওপর তবে কি কেবলই একটা ফকফকা আকাশ?
৩. উল্লিখিত ঘটনা দুটি কাঙ্ক্ষিত নয়। অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভালো মানুষ তো নিশ্চয়ই আছে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে