বাসব রায়
প্রশ্ন জাগে, ‘মানুষ যদি শ্রেষ্ঠ জীব হয় তাহলে নিকৃষ্ট কে?’ মানুষের বিবেকবোধ আছে, অনুভূতি আছে, আবেগ আছে, মানুষ অজানাকে জানতে চায়, মানুষের মধ্যে ধর্মমত আছে এবং সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধাভরে—ইত্যাদি গুণের কারণে মানুষ হয়তো শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।
আবার এসবের বিপরীতে মানুষের আবেগ-অনুভূতি যখন মানুষের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, যখন মানুষের অত্যাচারে পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়ে, তখন মনে হয় মানুষই পৃথিবীর নিকৃষ্ট জীব! প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা পৃথিবী জানে।
এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা কোথাও না কোথাও চলমান আছেই, যার কারণে নিয়মিত মানুষ মরছে, ঘরবাড়ি নিঃশেষ হচ্ছে, পরিবার-পরিজন হারিয়ে মানুষ আজীবনের আহাজারিতে ভুগছে এবং বিশ্বময় এসবের প্রভাব পড়ছে।
যুগ যুগ ধরে মানুষ আসলেই কি মানুষ হতে পেরেছে? মানুষ হতে চেয়ে বরং মানুষ অমানুষই হয়েছে। বর্ণভেদ প্রথা, দাসপ্রথা, খোঁজাপদ্ধতি, রাজা-জমিদারদের বিকৃত লালসা এবং বর্ণচোরা প্রজন্ম, নিয়মিত খুন-জখম প্রভৃতি মানুষের সমাজব্যবস্থাকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
কিন্তু এরপরও মানুষ বেঁচে আছে এবং পৃথিবীতে তার নিজস্ব ঢং নিয়ে চলমান আছে। মানুষ যতটা খারাপ কিছু করে তার চেয়েও অনেক গুণে খারাপ সে। প্রবল বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষ মানুষকেই ঠকাতে চায় বা ঠকিয়ে চলেছে দিনরাত। সাধারণ মানুষেরা, অর্থাৎ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরাই বেশি করে প্রতারিত হয় একদল খারাপ মানুষের কারণে। অথচ সব মানুষ খারাপ নয়, কিছু কিছু মানুষ খারাপ।
মানুষ ভয়ানক প্রতিহিংসাপরায়ণ; প্রতিশোধস্পৃহা মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করে ফেলে। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি ঘটনা অহরহ ঘটে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে স্বার্থপর হয় মানুষ এবং কখনোই স্বার্থের বাইরে যেতে চায় না। কিছু কিছু চাওয়া বা আকাঙ্ক্ষা মানুষ সহজাত প্রবৃত্তির মতো ধরে নেয়। নিজের মতো করে সবকিছুই ভাবে বা ভাবতে চায়। এক অদ্ভুত মননশীলতা মানুষের মধ্যে নিয়মিত কাজ করে, যা সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে, কোনোখানেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়।
জীবজন্তুকে নামে-বেনামে চেনা যায়, জানা যায় এবং তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু সুনির্দিষ্ট ধারণা আছে, যা স্বতঃসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় চলমান থাকে। কিন্তু মানুষ সব সময়ই ব্যতিক্রম। মানুষের প্রকৃতি গতিবিধি বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে ধারণা করা খুবই কঠিন; একই মানুষ এখনই সহজ আবার পরক্ষণেই সুকঠিন। যে মানুষ ফুলের পাপড়ি ছিঁড়তে কুণ্ঠাবোধ করে, সেই একই মানুষ অবলীলায় আরেকজন মানুষকে খুন করে বসে আছে। সজ্জন বলে যাকে জেনে এসেছি, তাকেই দেখি সর্বাধিক দুর্জন ব্যক্তি! মানুষকে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া।
আবার সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিটিই অন্যান্য মানুষ ও সমাজের উপকারে কাজ করে যাচ্ছে। খুব নিন্দিত ছেলেটিই নিজের জীবন বাজি রেখে কাউকে প্রাণে বাঁচিয়ে তুলছে। সত্যিই ভীষণ এক বিস্ময়কর প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য এই ‘মানব’ জাতীয় প্রাণীর।
মানুষ ধর্মীয় বিষয়গুলোতে বেশ দুর্বল এবং নিবেদিত, যদিও পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু থাকতে পারে—এটা অনেকেই বিশ্বাসই করে না। নীতিতে সুদৃঢ় কঠোর বৈশিষ্ট্যের মানুষেরা ঈশ্বরের নিয়মরীতিতে বরাবরই পাকাপোক্ত। অথচ তারাই প্রকাশ্যে নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।
ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা পুরোপুরি ধনাত্মক এবং সুযোগসন্ধানী একদল মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনকে কৌশলে নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে এবং অনেকেই ভণ্ডামির আশ্রয়ে নিজেদের ধর্মযাজক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ফলে ধর্ম আর অধর্মের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে নানাবিধ প্রচলিত মত ও পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।পক্ষান্তরে ধর্মীয় ভাবাদর্শে গড়া অসংখ্য মানুষ বা সংগঠন যুগ যুগ ধরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
বিচিত্র প্রকৃতির মানুষের ভার বহন করে চলেছে পৃথিবী; পৃথিবী নির্বাক, নিশ্চুপ! সমাজে পাপ বা পুণ্য এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা বা সমালোচনার প্রচলন আছে, যেখানে ধর্মীয় বা শাস্ত্রীয় মতের প্রাধান্যই বেশি। যিনি যা-ই বলুন, মানুষকে মানুষ হতে হলে মানুষের প্রকৃতি বা রুচিবোধের শৃঙ্খলা বা পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনা দরকার সবার আগে। মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে মানুষই ভাবতে পারে। মানুষ মানুষকে সত্যিকারে ভালোবাসলেই তার শ্রেষ্ঠত্বকে আলাদা করে প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
লেখক: কবি
প্রশ্ন জাগে, ‘মানুষ যদি শ্রেষ্ঠ জীব হয় তাহলে নিকৃষ্ট কে?’ মানুষের বিবেকবোধ আছে, অনুভূতি আছে, আবেগ আছে, মানুষ অজানাকে জানতে চায়, মানুষের মধ্যে ধর্মমত আছে এবং সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধাভরে—ইত্যাদি গুণের কারণে মানুষ হয়তো শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।
আবার এসবের বিপরীতে মানুষের আবেগ-অনুভূতি যখন মানুষের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, যখন মানুষের অত্যাচারে পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়ে, তখন মনে হয় মানুষই পৃথিবীর নিকৃষ্ট জীব! প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা পৃথিবী জানে।
এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা কোথাও না কোথাও চলমান আছেই, যার কারণে নিয়মিত মানুষ মরছে, ঘরবাড়ি নিঃশেষ হচ্ছে, পরিবার-পরিজন হারিয়ে মানুষ আজীবনের আহাজারিতে ভুগছে এবং বিশ্বময় এসবের প্রভাব পড়ছে।
যুগ যুগ ধরে মানুষ আসলেই কি মানুষ হতে পেরেছে? মানুষ হতে চেয়ে বরং মানুষ অমানুষই হয়েছে। বর্ণভেদ প্রথা, দাসপ্রথা, খোঁজাপদ্ধতি, রাজা-জমিদারদের বিকৃত লালসা এবং বর্ণচোরা প্রজন্ম, নিয়মিত খুন-জখম প্রভৃতি মানুষের সমাজব্যবস্থাকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
কিন্তু এরপরও মানুষ বেঁচে আছে এবং পৃথিবীতে তার নিজস্ব ঢং নিয়ে চলমান আছে। মানুষ যতটা খারাপ কিছু করে তার চেয়েও অনেক গুণে খারাপ সে। প্রবল বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষ মানুষকেই ঠকাতে চায় বা ঠকিয়ে চলেছে দিনরাত। সাধারণ মানুষেরা, অর্থাৎ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরাই বেশি করে প্রতারিত হয় একদল খারাপ মানুষের কারণে। অথচ সব মানুষ খারাপ নয়, কিছু কিছু মানুষ খারাপ।
মানুষ ভয়ানক প্রতিহিংসাপরায়ণ; প্রতিশোধস্পৃহা মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করে ফেলে। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি ঘটনা অহরহ ঘটে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে স্বার্থপর হয় মানুষ এবং কখনোই স্বার্থের বাইরে যেতে চায় না। কিছু কিছু চাওয়া বা আকাঙ্ক্ষা মানুষ সহজাত প্রবৃত্তির মতো ধরে নেয়। নিজের মতো করে সবকিছুই ভাবে বা ভাবতে চায়। এক অদ্ভুত মননশীলতা মানুষের মধ্যে নিয়মিত কাজ করে, যা সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে, কোনোখানেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়।
জীবজন্তুকে নামে-বেনামে চেনা যায়, জানা যায় এবং তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু সুনির্দিষ্ট ধারণা আছে, যা স্বতঃসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় চলমান থাকে। কিন্তু মানুষ সব সময়ই ব্যতিক্রম। মানুষের প্রকৃতি গতিবিধি বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে ধারণা করা খুবই কঠিন; একই মানুষ এখনই সহজ আবার পরক্ষণেই সুকঠিন। যে মানুষ ফুলের পাপড়ি ছিঁড়তে কুণ্ঠাবোধ করে, সেই একই মানুষ অবলীলায় আরেকজন মানুষকে খুন করে বসে আছে। সজ্জন বলে যাকে জেনে এসেছি, তাকেই দেখি সর্বাধিক দুর্জন ব্যক্তি! মানুষকে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া।
আবার সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিটিই অন্যান্য মানুষ ও সমাজের উপকারে কাজ করে যাচ্ছে। খুব নিন্দিত ছেলেটিই নিজের জীবন বাজি রেখে কাউকে প্রাণে বাঁচিয়ে তুলছে। সত্যিই ভীষণ এক বিস্ময়কর প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য এই ‘মানব’ জাতীয় প্রাণীর।
মানুষ ধর্মীয় বিষয়গুলোতে বেশ দুর্বল এবং নিবেদিত, যদিও পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু থাকতে পারে—এটা অনেকেই বিশ্বাসই করে না। নীতিতে সুদৃঢ় কঠোর বৈশিষ্ট্যের মানুষেরা ঈশ্বরের নিয়মরীতিতে বরাবরই পাকাপোক্ত। অথচ তারাই প্রকাশ্যে নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।
ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা পুরোপুরি ধনাত্মক এবং সুযোগসন্ধানী একদল মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনকে কৌশলে নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে এবং অনেকেই ভণ্ডামির আশ্রয়ে নিজেদের ধর্মযাজক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ফলে ধর্ম আর অধর্মের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে নানাবিধ প্রচলিত মত ও পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।পক্ষান্তরে ধর্মীয় ভাবাদর্শে গড়া অসংখ্য মানুষ বা সংগঠন যুগ যুগ ধরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
বিচিত্র প্রকৃতির মানুষের ভার বহন করে চলেছে পৃথিবী; পৃথিবী নির্বাক, নিশ্চুপ! সমাজে পাপ বা পুণ্য এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা বা সমালোচনার প্রচলন আছে, যেখানে ধর্মীয় বা শাস্ত্রীয় মতের প্রাধান্যই বেশি। যিনি যা-ই বলুন, মানুষকে মানুষ হতে হলে মানুষের প্রকৃতি বা রুচিবোধের শৃঙ্খলা বা পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনা দরকার সবার আগে। মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে মানুষই ভাবতে পারে। মানুষ মানুষকে সত্যিকারে ভালোবাসলেই তার শ্রেষ্ঠত্বকে আলাদা করে প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
লেখক: কবি
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে