মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
‘শাহজুল মীর ৬ লাখ টাহায় চর হেয়ার ইজারা আনছে এমপির থেহে। আর এই চরে আমরা ঘেরা জাল দিয়ে মাছ ধরমু। তাতে শাহজুল মীররে ৯০ হাজার টাহা দেতে হইছে। এই জ্যৈষ্ঠ মাসে টাহা দিছি, সামনের জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ধরমু। আর গত বছর দিছিলাম ৬০ হাজার, তার আগে দিছি ৩৫ হাজার।’
জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চর হেয়ারে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিতে নিতে কথাগুলো বলছিলেন জেলে আব্দুল আকন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাবালীতে বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন চর হেয়ারে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা ‘ঘেরা জাল’ দিয়ে মাছ ধরছিলেন। ওই সময় আব্দুল আকন ছাড়াও মোশাররফ হাওলাদার, তোতা মৃধা, হোসেনসহ সাত-আটজন জেলের সঙ্গে কথা হয়। একই দিনে রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার আরও কয়েকটি চর ঘুরে বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় চমকপ্রদ তথ্য।
মাছ শিকার করার জন্য বাঁশ পুঁতে, ডাল ফেলে জাল দিয়ে ঘিরে দেশের নদ-নদী দখল করার তথ্য বেশ পুরোনো। সংবাদমাধ্যমেও তা উঠে এসেছে নানা সময়ে। রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এবার জানা গেল সাগর দখল করে জেলেদের কাছ থেকে ইজারামূল্যের মতো নিয়মিত অর্থ আদায় করার তথ্য।
ওই জেলেরা জানান, কুয়াকাটার কাছে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা চর বিজয়, রাঙ্গাবালীর চর হেয়ার, সোনারচর, মেছের চর, জাহাজমারা চর, চরমোন্তাজ, তুফানিয়া চর, হাইরের চরসহ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে এবং গঙ্গামতি সৈকতের মোহনাসহ আশপাশে সাগর ও সৈকতে কারেন্ট জালের ঘের (স্থানীয় ভাষায় খুঁটা জাল) দিয়ে মাছ ধরার জন্য জেলেদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হচ্ছে। আর এই চাঁদা আদায়ের রীতির প্রচলন করেছেন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব।
জেলেদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে ‘জাল যার সাগরের মাছ তার’ রীতি চলে এলেও গত কয়েক বছরে তার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পটুয়াখালী উপকূলে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা সব চর, ডুবোচর, মোহনা ও সৈকতের স্থানে এখন আর নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারেন না জেলেরা। মাছ ধরতে হলে ইজারার মতো বছরভিত্তিতে টাকা দিতে হয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের লোকজনকে। ওই জেলেরা জানান, ক্ষমতাসীন দল ও সংসদ সদস্যের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে নেতৃত্ব দেন রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন, মহীপুর থানার ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুস জালাল, একই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিন্টু ভূইয়া, রাঙ্গাবালীর বাবু তালুকদার ও শাহজুল মীর।
‘এমপি মহিব মেয়া লিজ দেছে বাবু তালুকদাররে’
রাঙ্গাবালী এলাকার জেলে তোতা মৃধা বলেন, ‘এমপি মহিব মেয়া বাবু তালুকদাররে লিজ (ইজারা) দেছে, তার কাছ থেহে আমাগো দেশি মানুষ খালগোড়ায় বাড়ি শাহজুল মীর আনছে। আমরা শাহজুল মীরের কাছ দিয়া এই বছর ৯০ হাজার টাহায় আনছি।’
একই এলাকার জেলে মোশাররফ হাং (হাওলাদার) বলেন, ‘তাগো কাছে দিয়া চর রাইখা যদি টাকা না দেওয়া লাগত, তাইলে আমাগো গরিব মানুষের উপকার হইতে। আর এহন এই চরে মাছ ধরনের লাইগা গদি দিয়া টাকা আইনা তাদের দেই। এরপর যা থাহে তা কিস্তি দিয়া (পরিশোধ করে) ঘর-সংসার লইয়া খাই।’
সংসদ সদস্য বললেন, ‘আমি জানি না’
সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সাগর ‘ইজারা’ দেওয়ার মতো কোনো ঘটনাই তাঁর জানা নেই। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কে বা কারা সাগর ইজারা দিচ্ছে, আমি তা জানি না। যাদের কথা বলছেন, তাদের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজুল মীর বলেন, ‘ওই জেলেদের কাছে দুই-তিন মাস আগে কিছু মাছ চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমার কাছে মাছ বিক্রি কর; কিন্তু ওরা দেয়নি। মাছ দেয় নাই, তাই আপনাদের কাছে মিথ্যা কথা বলছে।’
সোনারচরসংলগ্ন মেছের চরের এক জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মেছের চরে ১২ জনে জাল দিয়ে মাছ ধরি। এই চর দুই লাখ টাহা দিয়া ইজারা আনতে হইছে। টাহা দিছি রাঙ্গাবালীর চেয়ারম্যান মামুন খানরে। গত বছর লোকসান হইছে, এ বছর কী হয় জানি না।’
রাঙ্গাবালীর বাবু তালুকদার ও ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান খান মামুনের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা তা অস্বীকার করেন। তাঁরা দাবি করেন, চর কিংবা সাগর ‘ইজারা’র সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
‘এমপি সাব অয়ার পর থাইক্যা এই অবস্থা’
ধুলাসার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার জানান, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন মোহনাসহ যত চর আছে, সবই ‘ইজারা’ দেওয়া হয়েছে। আর এই ইজারা দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। আব্দুল জলিল মাস্টার বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে জেলেগো টাহা দেওন লাগে।’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাহা দ্যাতে অয় কেন, হের জবাব দ্যাতে পারুম না, তয় মাছ ধরলে দ্যাতে অয়।’ কত বছর ধরে এমনটি চলছে, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, চাইর বছর। বর্তমান এমপি সাব অয়ার (নির্বাচিত হওয়ার) পর থাইক্যা এই অবস্থা।’ ‘ইজারা’ কে দেন, জানতে চাইলে সাবেক এই জনপ্রতিনিধি প্রথমে বলেন, ‘আমরা ছোড মানুষ, এত কথা কইতে পারুম না।’ পরে এমপি সাহেব কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলে মাথা নাড়েন।
আব্দুল জলিল জানান, সমুদ্র ও নদীর সংযোগস্থল রামনাবাদ চ্যানেল থেকে সমুদ্রের ‘মালোর ট্যাক’ পর্যন্ত প্রতিবছর ২৬ লাখ টাকায় ‘ইজারা’ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। বিষয়টি তদারক করেন ধুলাসার ইউনিয়নের মিন্টু ভূইয়া। এ ছাড়া চর বিজয়ও এ বছর ৪ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। গঙ্গামতি সৈকতের যে খেয়া দিয়ে পর্যটকেরা লাল কাঁকড়ার চরে যান, সেই খেয়াঘাট থেকে প্রতিবছর তিন লাখ টাকা নেন সংসদ সদস্য।
অভিযোগের বিষয়ে ধুলাসার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিন্টু ভূইয়া বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এমপি মহোদয় এ বিষয়ে জানেনই না।’
ধুলাসার ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য গঙ্গামতি এলাকার আনোয়ার ফকির বলেন, ‘সমুদ্রে মাছ ধরতে অইলে জেলেদের ট্যাহা দেওয়া লাগে। পার্টি অফিস করুম, এইডা করুম, ওইডা করুম—এইসব কইয়া ট্যাহা তুলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুস জালালসহ নেতারা। ট্যাহা না দিলে মাছ ধরতে দেয় না। এমপি সাবের ইশারা ছাড়া তো আর এইসব অয় না। ইউনুস জালালদের কি এত ক্ষ্যামতা আছে?’ তিনি আরও বলেন, গঙ্গামতি সমুদ্রসৈকতের খালের গোড়া, গঙ্গামতির হাইরের চর, গঙ্গামতির ইলিশ ধরার জালের খেও, চর ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব চর থেকে টাকা নেওয়া হয়।
ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুস জালালকে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় ফোন করা এবং গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘সাগর কিংবা চর ইজারা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনাদের কাছে যেহেতু শুনলাম, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
কলাপাড়ার ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ‘চর বা সমুদ্রের মোহনা ইজারা দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। যদি এ রকম হয়ে থাকে খোঁজ নেওয়া হবে।’
মাছের প্রাচুর্য কমছে
অভিযোগ উঠেছে, কিছু লোকের মুনাফা লোটার কারণে কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীর সব মোহনায় অবৈধ কারেন্ট জালের ঘের বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে মোহনা দিয়ে নদীতে প্রবেশের আগেই ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ওই জালে ধরা পড়ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে মাছের প্রজনন ও বংশবিস্তার।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ বি সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুঁটা জালের কারণে ছোট-বড় সব মাছ নির্বিচারে ধ্বংস ও ইলিশ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নদীতে মাছের প্রাচুর্য কমছে। মোহনায় ছোট-বড় ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে। নদীও মরে যাবে। এখনই এ বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ দরকার।’
‘শাহজুল মীর ৬ লাখ টাহায় চর হেয়ার ইজারা আনছে এমপির থেহে। আর এই চরে আমরা ঘেরা জাল দিয়ে মাছ ধরমু। তাতে শাহজুল মীররে ৯০ হাজার টাহা দেতে হইছে। এই জ্যৈষ্ঠ মাসে টাহা দিছি, সামনের জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ধরমু। আর গত বছর দিছিলাম ৬০ হাজার, তার আগে দিছি ৩৫ হাজার।’
জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চর হেয়ারে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিতে নিতে কথাগুলো বলছিলেন জেলে আব্দুল আকন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাবালীতে বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন চর হেয়ারে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা ‘ঘেরা জাল’ দিয়ে মাছ ধরছিলেন। ওই সময় আব্দুল আকন ছাড়াও মোশাররফ হাওলাদার, তোতা মৃধা, হোসেনসহ সাত-আটজন জেলের সঙ্গে কথা হয়। একই দিনে রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার আরও কয়েকটি চর ঘুরে বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় চমকপ্রদ তথ্য।
মাছ শিকার করার জন্য বাঁশ পুঁতে, ডাল ফেলে জাল দিয়ে ঘিরে দেশের নদ-নদী দখল করার তথ্য বেশ পুরোনো। সংবাদমাধ্যমেও তা উঠে এসেছে নানা সময়ে। রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এবার জানা গেল সাগর দখল করে জেলেদের কাছ থেকে ইজারামূল্যের মতো নিয়মিত অর্থ আদায় করার তথ্য।
ওই জেলেরা জানান, কুয়াকাটার কাছে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা চর বিজয়, রাঙ্গাবালীর চর হেয়ার, সোনারচর, মেছের চর, জাহাজমারা চর, চরমোন্তাজ, তুফানিয়া চর, হাইরের চরসহ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে এবং গঙ্গামতি সৈকতের মোহনাসহ আশপাশে সাগর ও সৈকতে কারেন্ট জালের ঘের (স্থানীয় ভাষায় খুঁটা জাল) দিয়ে মাছ ধরার জন্য জেলেদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হচ্ছে। আর এই চাঁদা আদায়ের রীতির প্রচলন করেছেন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব।
জেলেদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে ‘জাল যার সাগরের মাছ তার’ রীতি চলে এলেও গত কয়েক বছরে তার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পটুয়াখালী উপকূলে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা সব চর, ডুবোচর, মোহনা ও সৈকতের স্থানে এখন আর নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারেন না জেলেরা। মাছ ধরতে হলে ইজারার মতো বছরভিত্তিতে টাকা দিতে হয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের লোকজনকে। ওই জেলেরা জানান, ক্ষমতাসীন দল ও সংসদ সদস্যের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে নেতৃত্ব দেন রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন, মহীপুর থানার ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুস জালাল, একই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিন্টু ভূইয়া, রাঙ্গাবালীর বাবু তালুকদার ও শাহজুল মীর।
‘এমপি মহিব মেয়া লিজ দেছে বাবু তালুকদাররে’
রাঙ্গাবালী এলাকার জেলে তোতা মৃধা বলেন, ‘এমপি মহিব মেয়া বাবু তালুকদাররে লিজ (ইজারা) দেছে, তার কাছ থেহে আমাগো দেশি মানুষ খালগোড়ায় বাড়ি শাহজুল মীর আনছে। আমরা শাহজুল মীরের কাছ দিয়া এই বছর ৯০ হাজার টাহায় আনছি।’
একই এলাকার জেলে মোশাররফ হাং (হাওলাদার) বলেন, ‘তাগো কাছে দিয়া চর রাইখা যদি টাকা না দেওয়া লাগত, তাইলে আমাগো গরিব মানুষের উপকার হইতে। আর এহন এই চরে মাছ ধরনের লাইগা গদি দিয়া টাকা আইনা তাদের দেই। এরপর যা থাহে তা কিস্তি দিয়া (পরিশোধ করে) ঘর-সংসার লইয়া খাই।’
সংসদ সদস্য বললেন, ‘আমি জানি না’
সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সাগর ‘ইজারা’ দেওয়ার মতো কোনো ঘটনাই তাঁর জানা নেই। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কে বা কারা সাগর ইজারা দিচ্ছে, আমি তা জানি না। যাদের কথা বলছেন, তাদের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজুল মীর বলেন, ‘ওই জেলেদের কাছে দুই-তিন মাস আগে কিছু মাছ চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমার কাছে মাছ বিক্রি কর; কিন্তু ওরা দেয়নি। মাছ দেয় নাই, তাই আপনাদের কাছে মিথ্যা কথা বলছে।’
সোনারচরসংলগ্ন মেছের চরের এক জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মেছের চরে ১২ জনে জাল দিয়ে মাছ ধরি। এই চর দুই লাখ টাহা দিয়া ইজারা আনতে হইছে। টাহা দিছি রাঙ্গাবালীর চেয়ারম্যান মামুন খানরে। গত বছর লোকসান হইছে, এ বছর কী হয় জানি না।’
রাঙ্গাবালীর বাবু তালুকদার ও ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান খান মামুনের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা তা অস্বীকার করেন। তাঁরা দাবি করেন, চর কিংবা সাগর ‘ইজারা’র সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
‘এমপি সাব অয়ার পর থাইক্যা এই অবস্থা’
ধুলাসার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার জানান, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন মোহনাসহ যত চর আছে, সবই ‘ইজারা’ দেওয়া হয়েছে। আর এই ইজারা দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। আব্দুল জলিল মাস্টার বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে জেলেগো টাহা দেওন লাগে।’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাহা দ্যাতে অয় কেন, হের জবাব দ্যাতে পারুম না, তয় মাছ ধরলে দ্যাতে অয়।’ কত বছর ধরে এমনটি চলছে, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, চাইর বছর। বর্তমান এমপি সাব অয়ার (নির্বাচিত হওয়ার) পর থাইক্যা এই অবস্থা।’ ‘ইজারা’ কে দেন, জানতে চাইলে সাবেক এই জনপ্রতিনিধি প্রথমে বলেন, ‘আমরা ছোড মানুষ, এত কথা কইতে পারুম না।’ পরে এমপি সাহেব কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলে মাথা নাড়েন।
আব্দুল জলিল জানান, সমুদ্র ও নদীর সংযোগস্থল রামনাবাদ চ্যানেল থেকে সমুদ্রের ‘মালোর ট্যাক’ পর্যন্ত প্রতিবছর ২৬ লাখ টাকায় ‘ইজারা’ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। বিষয়টি তদারক করেন ধুলাসার ইউনিয়নের মিন্টু ভূইয়া। এ ছাড়া চর বিজয়ও এ বছর ৪ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। গঙ্গামতি সৈকতের যে খেয়া দিয়ে পর্যটকেরা লাল কাঁকড়ার চরে যান, সেই খেয়াঘাট থেকে প্রতিবছর তিন লাখ টাকা নেন সংসদ সদস্য।
অভিযোগের বিষয়ে ধুলাসার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিন্টু ভূইয়া বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এমপি মহোদয় এ বিষয়ে জানেনই না।’
ধুলাসার ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য গঙ্গামতি এলাকার আনোয়ার ফকির বলেন, ‘সমুদ্রে মাছ ধরতে অইলে জেলেদের ট্যাহা দেওয়া লাগে। পার্টি অফিস করুম, এইডা করুম, ওইডা করুম—এইসব কইয়া ট্যাহা তুলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুস জালালসহ নেতারা। ট্যাহা না দিলে মাছ ধরতে দেয় না। এমপি সাবের ইশারা ছাড়া তো আর এইসব অয় না। ইউনুস জালালদের কি এত ক্ষ্যামতা আছে?’ তিনি আরও বলেন, গঙ্গামতি সমুদ্রসৈকতের খালের গোড়া, গঙ্গামতির হাইরের চর, গঙ্গামতির ইলিশ ধরার জালের খেও, চর ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব চর থেকে টাকা নেওয়া হয়।
ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুস জালালকে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় ফোন করা এবং গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘সাগর কিংবা চর ইজারা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনাদের কাছে যেহেতু শুনলাম, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
কলাপাড়ার ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ‘চর বা সমুদ্রের মোহনা ইজারা দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। যদি এ রকম হয়ে থাকে খোঁজ নেওয়া হবে।’
মাছের প্রাচুর্য কমছে
অভিযোগ উঠেছে, কিছু লোকের মুনাফা লোটার কারণে কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীর সব মোহনায় অবৈধ কারেন্ট জালের ঘের বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে মোহনা দিয়ে নদীতে প্রবেশের আগেই ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ওই জালে ধরা পড়ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে মাছের প্রজনন ও বংশবিস্তার।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ বি সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুঁটা জালের কারণে ছোট-বড় সব মাছ নির্বিচারে ধ্বংস ও ইলিশ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নদীতে মাছের প্রাচুর্য কমছে। মোহনায় ছোট-বড় ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে। নদীও মরে যাবে। এখনই এ বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ দরকার।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে