তাপস মজুমদার
রাজনীতির মানুষ নই আমি। তবু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গতানুগতিক রাজনীতির দিন শেষ হতে চলেছে। একটি নতুন শক্তি এসেছে পথে—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শান্তি, সমৃদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক এক দেশের প্রত্যাশায় মানুষ অপেক্ষা করে আছে বহু বছর ধরে। একটি বড়সড় সংস্কারের মাধ্যমে মধ্যম ও নিম্নপর্যায়ের মানুষের ভাগ্য ফেরাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দিয়ে কাজ করার বোধ হয় এখনই সময়।
রাষ্ট্র একটা আদর্শগত ধারণা। জনগণের কল্যাণ করাই তার কাজ। সেই কল্যাণ নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলার স্বাধীনতায়, প্রত্যেক নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়, উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতে, চিকিৎসার সেবায়, ন্যায়ভিত্তিক বিচারপ্রাপ্তিতে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টিতে, নিয়মতান্ত্রিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায়, জনগণের পারস্পরিক সহমর্মিতার উদ্বোধনে, রুচিশীল শিল্পের জনপ্রিয়তায়, সৃজনশীলতার সুযোগের বিস্তারে, অবারিতভাবে সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরিতে এবং এমন আরও নানান সূচকে।
দেশে নির্বাচনীব্যবস্থার পরিবর্তন অতি আবশ্যক। কেউ কেউ বলছেন, আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা বৈষম্যকে অনেকাংশে দূর করতে পারে। বিজয়ী সব পায় (উইনার টেকস অল) ব্যবস্থা আমাদের মতো দেশের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।
নাগরিকের মানবিক মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, কোন শাসনব্যবস্থা কতটুকু শক্তিশালী তার একটা প্রমাণ—নাগরিকেরা সরকারকে নিয়ে কতটা মশকরা করতে পারে, এই মাপকাঠিতেও মাপা যায়। আমরা লক্ষ করি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বা বলা যেতে পারে বেশ কয়েক দশক ধরে আমরা আমাদের রসবোধ হারিয়ে ফেলেছি। সমাজজীবনে তাঁবেদারি ও তোষামোদ একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে। গঠনমূলক সমালোচনা যে বিরোধিতা নয় এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের কল্যাণে সেটা যে একান্ত আবশ্যক, এই বোধটি আমাদের জাগ্রত থাকা দরকার।
পেশাগত জীবনে দেখেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ অথবা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার একটা প্রচলন হয়ে গিয়েছিল। এই যোগাযোগ রক্ষার ব্যাপারটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রদ্ধা বা সম্মানের স্বার্থে নয়; বরং সেখান থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা ও আকাঙ্ক্ষা অথবা কিছু না পাওয়ার সম্ভাবনার ভয় থেকে। অযথা প্রশংসা একটা নিয়মিত ইস্যু। এ ব্যাপারটি এত খোলামেলা ও নোংরা হয়ে গিয়েছিল যে একজন অসৎ, দুর্নীতিবাজ মানুষকে তার বক্তৃতার আগে পরিচয়দানকালে তাকে দেশের এবং
জাতির প্রায় শ্রেষ্ঠ সন্তানের কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা তো শুধু নিন্দনীয় ব্যাপার নয়। উপরন্তু এটা জাতির জন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা একেবারেই প্রথমের কাজ। দল-মত-গোষ্ঠী-জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ-শহর-গ্রামনির্বিশেষে সবার প্রতি সমান আচরণ ও প্রতিটি মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করা আবশ্যক। কাজটি সহজ নয়। চ্যালেঞ্জ অনেক। কোনো ছোট গ্রুপ বা ব্যক্তিরও প্রতিবাদ অথবা নিদেনপক্ষে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কঠিন হলেও কাজটি করা সম্ভব। কেননা একটি নতুন শক্তির জন্ম হয়েছে।
খাদ্যে ভেজাল আমাদের অবধারিত অদৃষ্ট হয়ে গেছে। পৃথিবীর যত দেশে গিয়েছি এমনকি পথের খাবার, যাকে স্ট্রিট ফুড বলে, খেয়েও শরীরের কোনো সমস্যা হয়নি। অথচ আমার দেশে যেকোনো শহরেই যেকোনো রেস্টুরেন্টে নিশ্চিন্তে খেতে পারি না এক বেলা। এই অবস্থার অবসান হওয়া জাতীয় স্বার্থে অতীব জরুরি।
স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম দীর্ঘদিনের। চিকিৎসা পাওয়া এত ব্যয়বহুল হয়ে গেছে যে দেশের মানুষের আয়ের সঙ্গে তা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মানুষ সেখানে সেবা গ্রহণ করতে যেতে পারে না। পরিস্থিতি বাধ্য করায় তাকে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায় যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। কিন্তু সেটা অচল হয়ে পড়ে আছে। মানুষকে ফেরাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবার জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা সহজ করে কম খরচে উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
উচ্চশিক্ষায় এ দেশে যেন কোনো মা-বাবা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় যা ইচ্ছে তা-ই হয়। উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সরকারি ছাত্রসংগঠনের হল দখল, চাঁদাবাজি, ঠিকাদারসংশ্লিষ্ট দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, পদোন্নতি—সবকিছুতেই অনিয়ম। অপরদিকে গবেষণা এবং পড়াশোনার মান ক্রমাগত অধোগামী। শিক্ষা ও গবেষণাসংক্রান্ত প্রকল্পগুলোয় ভবন তৈরি এবং কম্পিউটার, এসি বা অন্যান্য জিনিসপত্র কেনাকাটায় যত মনোযোগ, শিক্ষা এবং গবেষণায় ততটা মনোযোগ দেখা যায় না। অনেক শিক্ষক যথাসময়ে জমা দেন না পরীক্ষার খাতা। অবস্থা এমন একটা জায়গায় গিয়ে ঠেকছিল যে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মেম্বার হিসেবে তাঁদের নিযুক্তির।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজ তাদের শক্তি ও সাহসের পরিচয় দিয়ে মূল কাজটি করে দিয়েছে। এখন গোটা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এর ফসল ঘরে তোলাটা বড় কথা। শিক্ষাঙ্গনে বুদ্ধিভিত্তিক শূন্যতা দূর করা, জ্ঞানভিত্তিক, উদার সাংস্কৃতিক আলোচনা প্রোমোট করার এখনই উত্তম ও উপযুক্ত সময়। প্রত্যেক শিক্ষককে হতে হবে ছাত্রবান্ধব। সুনির্দিষ্ট ও নিরপেক্ষ নীতিমালা অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনের পদচারণ সীমিত বা নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত করা হলে এসব সমস্যার সমাধান সহজ হবে। শুধু উচ্চশিক্ষায় নয়, কিছু ক্ষেত্রে মাধ্যমিকেও সুচিন্তিত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।
মানুষকে যত রকমভাবে সচেতন করা যায় করতে হবে। শুনেছি ইংল্যান্ডে একবার ডিমের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরে ঘরে কয়েক দিনের জন্য ডিম খাওয়া বন্ধ করে দেয় জনগণ। তখন ডিমের দাম কমাতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্টরা। এটা জনসচেতনতারই প্রকাশ। ট্রাফিক কন্ট্রোলে যেমন দেখা গিয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের। বেশ করেছে। এতে যে শুধু ট্রাফিক কন্ট্রোল হয়েছে তা-ই নয়, ন্যায়বোধসম্পন্ন সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠারও সুযোগ পেয়েছে তারা। তবে সেটাকে সুসংহত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে করার নীতি চালু করতে হবে। তাহলে তার দীর্ঘস্থায়ী ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ ধরনের সামাজিক মানবিক কাজে নিয়মিতভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়োজিত করার একটি সুপরিকল্পিত পদ্ধতি চালু হলে, সেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
খেলাপি ঋণ, দেশ থেকে অর্থ পাচার, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিসহ সব ধরনের অনিয়ম এবং অপরাধ কঠোর হাতে দমন করার সামর্থ্য অর্জন করাটা এই সরকারের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
যেকোনো অর্জন ফায়দা ওঠানোর জন্য নয়, আনন্দ-উল্লাসের জন্যও নয়। সেটাকে মর্যাদা দেওয়াটাই আসল। তা না হলে অর্জন ব্যর্থ হতে সময় লাগে না। দেশটি আমাদের সবার। তাই কাজ করা প্রয়োজন। পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এমন একটি সমাজ আমাদের নির্মাণ করা আবশ্যক, যেখানে প্রত্যেক মানুষ থাকবে ভয়হীন, হৃদয়ে কষ্ট নেই; আগামীকাল কী হবে তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই; শিশুরা মহানন্দে খেলে, নাগরিকেরা নির্ভাবনায় নিজ ঘরে ফিরে চুমু খায় সন্তানকে, মানুষ তার চিন্তার গভীরে ফিরতে পারে; নার্সিসিজম নেই, অন্যের মতে সহিষ্ণুতা আছে; বৃদ্ধ মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে, নিশ্চিন্ত মনে। সম্ভব হবে কি? দেখার অপেক্ষায়।
লেখক: সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাবেক ব্যাংকার
রাজনীতির মানুষ নই আমি। তবু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গতানুগতিক রাজনীতির দিন শেষ হতে চলেছে। একটি নতুন শক্তি এসেছে পথে—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শান্তি, সমৃদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক এক দেশের প্রত্যাশায় মানুষ অপেক্ষা করে আছে বহু বছর ধরে। একটি বড়সড় সংস্কারের মাধ্যমে মধ্যম ও নিম্নপর্যায়ের মানুষের ভাগ্য ফেরাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দিয়ে কাজ করার বোধ হয় এখনই সময়।
রাষ্ট্র একটা আদর্শগত ধারণা। জনগণের কল্যাণ করাই তার কাজ। সেই কল্যাণ নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলার স্বাধীনতায়, প্রত্যেক নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়, উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতে, চিকিৎসার সেবায়, ন্যায়ভিত্তিক বিচারপ্রাপ্তিতে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টিতে, নিয়মতান্ত্রিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায়, জনগণের পারস্পরিক সহমর্মিতার উদ্বোধনে, রুচিশীল শিল্পের জনপ্রিয়তায়, সৃজনশীলতার সুযোগের বিস্তারে, অবারিতভাবে সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরিতে এবং এমন আরও নানান সূচকে।
দেশে নির্বাচনীব্যবস্থার পরিবর্তন অতি আবশ্যক। কেউ কেউ বলছেন, আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা বৈষম্যকে অনেকাংশে দূর করতে পারে। বিজয়ী সব পায় (উইনার টেকস অল) ব্যবস্থা আমাদের মতো দেশের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।
নাগরিকের মানবিক মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, কোন শাসনব্যবস্থা কতটুকু শক্তিশালী তার একটা প্রমাণ—নাগরিকেরা সরকারকে নিয়ে কতটা মশকরা করতে পারে, এই মাপকাঠিতেও মাপা যায়। আমরা লক্ষ করি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বা বলা যেতে পারে বেশ কয়েক দশক ধরে আমরা আমাদের রসবোধ হারিয়ে ফেলেছি। সমাজজীবনে তাঁবেদারি ও তোষামোদ একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে। গঠনমূলক সমালোচনা যে বিরোধিতা নয় এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের কল্যাণে সেটা যে একান্ত আবশ্যক, এই বোধটি আমাদের জাগ্রত থাকা দরকার।
পেশাগত জীবনে দেখেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ অথবা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার একটা প্রচলন হয়ে গিয়েছিল। এই যোগাযোগ রক্ষার ব্যাপারটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রদ্ধা বা সম্মানের স্বার্থে নয়; বরং সেখান থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা ও আকাঙ্ক্ষা অথবা কিছু না পাওয়ার সম্ভাবনার ভয় থেকে। অযথা প্রশংসা একটা নিয়মিত ইস্যু। এ ব্যাপারটি এত খোলামেলা ও নোংরা হয়ে গিয়েছিল যে একজন অসৎ, দুর্নীতিবাজ মানুষকে তার বক্তৃতার আগে পরিচয়দানকালে তাকে দেশের এবং
জাতির প্রায় শ্রেষ্ঠ সন্তানের কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা তো শুধু নিন্দনীয় ব্যাপার নয়। উপরন্তু এটা জাতির জন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা একেবারেই প্রথমের কাজ। দল-মত-গোষ্ঠী-জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ-শহর-গ্রামনির্বিশেষে সবার প্রতি সমান আচরণ ও প্রতিটি মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করা আবশ্যক। কাজটি সহজ নয়। চ্যালেঞ্জ অনেক। কোনো ছোট গ্রুপ বা ব্যক্তিরও প্রতিবাদ অথবা নিদেনপক্ষে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কঠিন হলেও কাজটি করা সম্ভব। কেননা একটি নতুন শক্তির জন্ম হয়েছে।
খাদ্যে ভেজাল আমাদের অবধারিত অদৃষ্ট হয়ে গেছে। পৃথিবীর যত দেশে গিয়েছি এমনকি পথের খাবার, যাকে স্ট্রিট ফুড বলে, খেয়েও শরীরের কোনো সমস্যা হয়নি। অথচ আমার দেশে যেকোনো শহরেই যেকোনো রেস্টুরেন্টে নিশ্চিন্তে খেতে পারি না এক বেলা। এই অবস্থার অবসান হওয়া জাতীয় স্বার্থে অতীব জরুরি।
স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম দীর্ঘদিনের। চিকিৎসা পাওয়া এত ব্যয়বহুল হয়ে গেছে যে দেশের মানুষের আয়ের সঙ্গে তা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মানুষ সেখানে সেবা গ্রহণ করতে যেতে পারে না। পরিস্থিতি বাধ্য করায় তাকে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায় যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। কিন্তু সেটা অচল হয়ে পড়ে আছে। মানুষকে ফেরাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবার জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা সহজ করে কম খরচে উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
উচ্চশিক্ষায় এ দেশে যেন কোনো মা-বাবা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় যা ইচ্ছে তা-ই হয়। উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সরকারি ছাত্রসংগঠনের হল দখল, চাঁদাবাজি, ঠিকাদারসংশ্লিষ্ট দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, পদোন্নতি—সবকিছুতেই অনিয়ম। অপরদিকে গবেষণা এবং পড়াশোনার মান ক্রমাগত অধোগামী। শিক্ষা ও গবেষণাসংক্রান্ত প্রকল্পগুলোয় ভবন তৈরি এবং কম্পিউটার, এসি বা অন্যান্য জিনিসপত্র কেনাকাটায় যত মনোযোগ, শিক্ষা এবং গবেষণায় ততটা মনোযোগ দেখা যায় না। অনেক শিক্ষক যথাসময়ে জমা দেন না পরীক্ষার খাতা। অবস্থা এমন একটা জায়গায় গিয়ে ঠেকছিল যে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মেম্বার হিসেবে তাঁদের নিযুক্তির।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজ তাদের শক্তি ও সাহসের পরিচয় দিয়ে মূল কাজটি করে দিয়েছে। এখন গোটা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এর ফসল ঘরে তোলাটা বড় কথা। শিক্ষাঙ্গনে বুদ্ধিভিত্তিক শূন্যতা দূর করা, জ্ঞানভিত্তিক, উদার সাংস্কৃতিক আলোচনা প্রোমোট করার এখনই উত্তম ও উপযুক্ত সময়। প্রত্যেক শিক্ষককে হতে হবে ছাত্রবান্ধব। সুনির্দিষ্ট ও নিরপেক্ষ নীতিমালা অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনের পদচারণ সীমিত বা নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত করা হলে এসব সমস্যার সমাধান সহজ হবে। শুধু উচ্চশিক্ষায় নয়, কিছু ক্ষেত্রে মাধ্যমিকেও সুচিন্তিত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।
মানুষকে যত রকমভাবে সচেতন করা যায় করতে হবে। শুনেছি ইংল্যান্ডে একবার ডিমের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরে ঘরে কয়েক দিনের জন্য ডিম খাওয়া বন্ধ করে দেয় জনগণ। তখন ডিমের দাম কমাতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্টরা। এটা জনসচেতনতারই প্রকাশ। ট্রাফিক কন্ট্রোলে যেমন দেখা গিয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের। বেশ করেছে। এতে যে শুধু ট্রাফিক কন্ট্রোল হয়েছে তা-ই নয়, ন্যায়বোধসম্পন্ন সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠারও সুযোগ পেয়েছে তারা। তবে সেটাকে সুসংহত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে করার নীতি চালু করতে হবে। তাহলে তার দীর্ঘস্থায়ী ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ ধরনের সামাজিক মানবিক কাজে নিয়মিতভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়োজিত করার একটি সুপরিকল্পিত পদ্ধতি চালু হলে, সেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
খেলাপি ঋণ, দেশ থেকে অর্থ পাচার, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিসহ সব ধরনের অনিয়ম এবং অপরাধ কঠোর হাতে দমন করার সামর্থ্য অর্জন করাটা এই সরকারের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
যেকোনো অর্জন ফায়দা ওঠানোর জন্য নয়, আনন্দ-উল্লাসের জন্যও নয়। সেটাকে মর্যাদা দেওয়াটাই আসল। তা না হলে অর্জন ব্যর্থ হতে সময় লাগে না। দেশটি আমাদের সবার। তাই কাজ করা প্রয়োজন। পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এমন একটি সমাজ আমাদের নির্মাণ করা আবশ্যক, যেখানে প্রত্যেক মানুষ থাকবে ভয়হীন, হৃদয়ে কষ্ট নেই; আগামীকাল কী হবে তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই; শিশুরা মহানন্দে খেলে, নাগরিকেরা নির্ভাবনায় নিজ ঘরে ফিরে চুমু খায় সন্তানকে, মানুষ তার চিন্তার গভীরে ফিরতে পারে; নার্সিসিজম নেই, অন্যের মতে সহিষ্ণুতা আছে; বৃদ্ধ মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে, নিশ্চিন্ত মনে। সম্ভব হবে কি? দেখার অপেক্ষায়।
লেখক: সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাবেক ব্যাংকার
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে