অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
‘আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে হয় না। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারো মারা যেতে?’ ভদ্রলোক আমার চোখে চোখ রেখে স্থির দৃষ্টিতে বললেন। আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলাম তাঁর দিকে।
আমার চেম্বারে আসা ভদ্রলোকের বয়স ৭৫ বছর। একাধিক নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। একাধিক নামকরা মানবাধিকার সংস্থায় আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর লেখা বইয়ের প্রকাশকও নামকরা। কাজেই এই মানুষটি যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন কেন বলছেন, সেই প্রসঙ্গটা চট করে বোঝা যায় না।
চুপ করে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ফিট। ধোপদুরস্ত পোশাক-পরিচ্ছদ। টান টান মেরুদণ্ড। দুর্বল মনস্তত্ত্বের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার সামনে একজন সম্পূর্ণ সজাগ, আত্মবিশ্বাসী মানুষ বসে আছেন।
চেম্বার থেকে বেরিয়ে আগে অন্য একটি প্রসঙ্গ টানতে বাধ্য হচ্ছি। সম্প্রতি বহির্বিশ্বের একটি খবর দেখে শিউরে উঠেছি। নিউইয়র্ক পোস্টে ২ এপ্রিল একটি খবর ছাপা হয়েছে। শিরোনাম ‘শারীরিকভাবে সুস্থ ২৮ বছরের ডাচ নারীর স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত, কারণ বিষণ্নতা তাঁকে পঙ্গু করে দিয়েছে’। তখন থেকে ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ শব্দটা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
এই নারীর নাম জোরায়া তেরবিক। নেদারল্যান্ডসে জার্মানির কাছাকাছি একটি সীমান্ত শহরের ছোট্ট গ্রামে বাস করেন দুটো বিড়াল এবং তাঁর ৪০ বছর বয়স্ক প্রেমিকের সঙ্গে। আইনগতভাবে তাঁর জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ তিনি তাঁর বিষণ্নতা, অটিজম এবং বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার নিয়ে আর পারছেন না। ওনার ইচ্ছে ছিল উনি সাইকিয়াট্রিস্ট হবেন। অথচ নিজেই নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আজীবন যুদ্ধ করছেন। তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যু কার্যকর হবে মে মাসে।
তেরবিক বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে জানি যে যদি আমার অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে এই অবস্থা নিয়ে আমি আর চলতে পারব না।’ তেরবিক একা নন, তিনি ছাড়াও এখন অনেকেই এই পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। তিনি পাশ্চাত্যের স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে, তার এক উদাহরণ। অনিরাময়যোগ্য জীবন সীমিত রোগ, যেমন ক্যানসার; মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, যেমন বিষণ্নতা বা তীব্র দুশ্চিন্তা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, জলবায়ুর পরিবর্তন, সামাজিক মাধ্যম ইত্যাদি পাশ্চাত্যের মানুষকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানায় এ রিপোর্টটি।
এদিকে খেয়াল করে দেখুন, আমাদের দীর্ঘদিনের উপনিবেশিত মন মনে করে, পাশ্চাত্য থেকে যা-ই আসছে—সবই বুঝি ভালো, সেরা ও ইতিবাচক। সাদারা ভালো, আমরা তাদের অনুকরণ করি, তাদের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। সাদাদের মতো হয়ে ওঠা মানে জাতে ওঠা।তেরবিক বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কারণ তাঁর চিকিৎসক বলেছেন, ‘আমাদের আর কিছু করার নেই।আপনি আর কোনো দিন সুস্থ হবেন না।’
আরটিএল নিউজের বরাত দিয়ে উল্লেখ্য যে তেরবিক মারা যেতে চান তাঁর নিজের বসার ঘরের সোফায় বসে, যেখানে তাঁর পাশে তাঁর প্রেমিক থাকবেন। যেখানে কোনো আবহ সংগীত তিনি চান না। কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চান না। তিনি চান তাঁর মৃতদেহ দাহ করে ছাইগুলো জঙ্গলের কোথাও তাঁর প্রেমিক ছড়িয়ে দেবেন।
এই জায়গায় এসে আমি শিউরে উঠেছি। আমরা কি মৃত্যুকেও বাণিজ্যিকীকরণ করার যুগে প্রবেশ করছি?
যখন ইউথেনেশিয়া জীবননাশের একটি সাধারণ পথ হয়ে দাঁড়ায়, তখন এই পথ সহজেই বেছে নেওয়ার মানুষও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ইউ’ এবং ‘থানাতোস’ থেকে এসেছে। ‘ইউ’ শব্দটির অর্থ সহজ এবং ‘থানাতোস’ কথাটির মানে মৃত্যু; অর্থাৎ ‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটির মানে দাঁড়াচ্ছে ‘সহজ মৃত্যু’। নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ডে ইউথেনেশিয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কেবল মৃত্যুযন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়া মানুষই নয়, যাঁরা কোমায় রয়েছেন বছরের পর বছর ধরে, তাঁদেরও মৃত্যুর জন্য আবেদন করেন তাঁদের স্বজনেরা।
ধরুন, চিকিৎসক যদি তেরবিককে বলতেন, ‘আপনার জন্য এখনো আমাদের কিছু করার আছে!’ তাহলে নিশ্চয়ই তেরবিক স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতেন না। আমাদের ভয়াবহ পাশ্চাত্যপ্রবণতা সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার বিশ্বায়ন কি আমাদের আগামী দিনের তেরবিক হতে হাতছানি দিচ্ছে?
নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্রিস ভ্যান অ্যাগট তাঁর স্ত্রী ইউজিনের হাতে হাত রেখে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৯৩ বছর বয়সে একসঙ্গে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন। সাধারণত তিন ধরনের ইউথেনেশিয়া রয়েছে।
যেমন স্বেচ্ছায় মৃত্যু গ্রহণ করতে চায়, অস্বেচ্ছায় রোগী সংজ্ঞাহীন থাকে, ফলে রোগীর অনুমতি বা মতামত নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া অনিচ্ছাকৃত ইউথেনেশিয়া রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্পাদন করা হয়।
বাংলাদেশে ইউথেনেশিয়া এখনো অবৈধ। ২০১৭ সালে এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় যখন তোফাজ্জল হোসেন নামের মেহেরপুরের এক ফল বিক্রেতা তাঁর দুই ছেলে (২৪, ১৩ বছর) এবং এক নাতির (৮ বছর) জন্য ইউথেনেশিয়ার আবেদন করেন। কারণ তারা প্রত্যেকেই ডুশিন মাসকুলার ডিস্ট্রফি নামক নিরাময় অযোগ্য জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যেখানে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশির পরিমাণ কমতে থাকে। তোফাজ্জল হোসেন তাঁর ভিটেমাটি, দোকান বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জোগাতে সর্বস্বান্ত হন। তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারকে ভাবতে দেন তারা আমার নাতি ও সন্তানদের সঙ্গে কী করবে। তারা অনেক কষ্টে ভুগছে এবং এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায়। আমার পক্ষেও তাদের এই ভোগান্তি দেখার আর ধৈর্য নেই।’
ভাবা যায়? নিজের চোখে আয়না ধরি, যদি এই গল্প আমার হতো আমি কী করতাম?
এবার আমার চেম্বারের বিষয়ে ফিরে আসি। কয়েক দিন আগে ঠিক ওই ভদ্রলোকের মতো এমনই এক প্রস্তাব নিয়ে আরেক ভদ্রমহিলা এসেছিলেন। উচ্চশিক্ষিত সেই মানুষটিও অসহায়ের মতো কাঁদতে কাঁদতে চাইছিলেন, ‘আপনি কি সাহায্য করতে পারেন আমাকে মারা যেতে? আমার বয়স ৬১ বছর, কোনো অসুখ নেই, স্বামী চলে যাওয়ার পর আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।’ ইনিও মেয়ো ক্লিনিক থেকে শুরু করে বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার সেবা নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
আমার চেম্বারে আসা আলোচ্য ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা উভয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ নেবেন। কিন্তু যখন আসলেই আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়, তখন চিকিৎসক এবং ওষুধের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু প্রয়োজন।
মানুষের আধ্যাত্মিক সংকটে পাশে দাঁড়াতে হয় সমাজকেও। বন্দুকটা শুধু একা চিকিৎসকের বা কাউন্সেলরের কাঁধের ওপর রাখা যায় না। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ দিন শেষে আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ
‘আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে হয় না। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারো মারা যেতে?’ ভদ্রলোক আমার চোখে চোখ রেখে স্থির দৃষ্টিতে বললেন। আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলাম তাঁর দিকে।
আমার চেম্বারে আসা ভদ্রলোকের বয়স ৭৫ বছর। একাধিক নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। একাধিক নামকরা মানবাধিকার সংস্থায় আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর লেখা বইয়ের প্রকাশকও নামকরা। কাজেই এই মানুষটি যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন কেন বলছেন, সেই প্রসঙ্গটা চট করে বোঝা যায় না।
চুপ করে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ফিট। ধোপদুরস্ত পোশাক-পরিচ্ছদ। টান টান মেরুদণ্ড। দুর্বল মনস্তত্ত্বের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার সামনে একজন সম্পূর্ণ সজাগ, আত্মবিশ্বাসী মানুষ বসে আছেন।
চেম্বার থেকে বেরিয়ে আগে অন্য একটি প্রসঙ্গ টানতে বাধ্য হচ্ছি। সম্প্রতি বহির্বিশ্বের একটি খবর দেখে শিউরে উঠেছি। নিউইয়র্ক পোস্টে ২ এপ্রিল একটি খবর ছাপা হয়েছে। শিরোনাম ‘শারীরিকভাবে সুস্থ ২৮ বছরের ডাচ নারীর স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত, কারণ বিষণ্নতা তাঁকে পঙ্গু করে দিয়েছে’। তখন থেকে ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ শব্দটা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
এই নারীর নাম জোরায়া তেরবিক। নেদারল্যান্ডসে জার্মানির কাছাকাছি একটি সীমান্ত শহরের ছোট্ট গ্রামে বাস করেন দুটো বিড়াল এবং তাঁর ৪০ বছর বয়স্ক প্রেমিকের সঙ্গে। আইনগতভাবে তাঁর জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ তিনি তাঁর বিষণ্নতা, অটিজম এবং বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার নিয়ে আর পারছেন না। ওনার ইচ্ছে ছিল উনি সাইকিয়াট্রিস্ট হবেন। অথচ নিজেই নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আজীবন যুদ্ধ করছেন। তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যু কার্যকর হবে মে মাসে।
তেরবিক বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে জানি যে যদি আমার অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে এই অবস্থা নিয়ে আমি আর চলতে পারব না।’ তেরবিক একা নন, তিনি ছাড়াও এখন অনেকেই এই পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। তিনি পাশ্চাত্যের স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে, তার এক উদাহরণ। অনিরাময়যোগ্য জীবন সীমিত রোগ, যেমন ক্যানসার; মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, যেমন বিষণ্নতা বা তীব্র দুশ্চিন্তা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, জলবায়ুর পরিবর্তন, সামাজিক মাধ্যম ইত্যাদি পাশ্চাত্যের মানুষকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানায় এ রিপোর্টটি।
এদিকে খেয়াল করে দেখুন, আমাদের দীর্ঘদিনের উপনিবেশিত মন মনে করে, পাশ্চাত্য থেকে যা-ই আসছে—সবই বুঝি ভালো, সেরা ও ইতিবাচক। সাদারা ভালো, আমরা তাদের অনুকরণ করি, তাদের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। সাদাদের মতো হয়ে ওঠা মানে জাতে ওঠা।তেরবিক বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কারণ তাঁর চিকিৎসক বলেছেন, ‘আমাদের আর কিছু করার নেই।আপনি আর কোনো দিন সুস্থ হবেন না।’
আরটিএল নিউজের বরাত দিয়ে উল্লেখ্য যে তেরবিক মারা যেতে চান তাঁর নিজের বসার ঘরের সোফায় বসে, যেখানে তাঁর পাশে তাঁর প্রেমিক থাকবেন। যেখানে কোনো আবহ সংগীত তিনি চান না। কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চান না। তিনি চান তাঁর মৃতদেহ দাহ করে ছাইগুলো জঙ্গলের কোথাও তাঁর প্রেমিক ছড়িয়ে দেবেন।
এই জায়গায় এসে আমি শিউরে উঠেছি। আমরা কি মৃত্যুকেও বাণিজ্যিকীকরণ করার যুগে প্রবেশ করছি?
যখন ইউথেনেশিয়া জীবননাশের একটি সাধারণ পথ হয়ে দাঁড়ায়, তখন এই পথ সহজেই বেছে নেওয়ার মানুষও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ইউ’ এবং ‘থানাতোস’ থেকে এসেছে। ‘ইউ’ শব্দটির অর্থ সহজ এবং ‘থানাতোস’ কথাটির মানে মৃত্যু; অর্থাৎ ‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটির মানে দাঁড়াচ্ছে ‘সহজ মৃত্যু’। নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ডে ইউথেনেশিয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কেবল মৃত্যুযন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়া মানুষই নয়, যাঁরা কোমায় রয়েছেন বছরের পর বছর ধরে, তাঁদেরও মৃত্যুর জন্য আবেদন করেন তাঁদের স্বজনেরা।
ধরুন, চিকিৎসক যদি তেরবিককে বলতেন, ‘আপনার জন্য এখনো আমাদের কিছু করার আছে!’ তাহলে নিশ্চয়ই তেরবিক স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতেন না। আমাদের ভয়াবহ পাশ্চাত্যপ্রবণতা সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার বিশ্বায়ন কি আমাদের আগামী দিনের তেরবিক হতে হাতছানি দিচ্ছে?
নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্রিস ভ্যান অ্যাগট তাঁর স্ত্রী ইউজিনের হাতে হাত রেখে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৯৩ বছর বয়সে একসঙ্গে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন। সাধারণত তিন ধরনের ইউথেনেশিয়া রয়েছে।
যেমন স্বেচ্ছায় মৃত্যু গ্রহণ করতে চায়, অস্বেচ্ছায় রোগী সংজ্ঞাহীন থাকে, ফলে রোগীর অনুমতি বা মতামত নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া অনিচ্ছাকৃত ইউথেনেশিয়া রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্পাদন করা হয়।
বাংলাদেশে ইউথেনেশিয়া এখনো অবৈধ। ২০১৭ সালে এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় যখন তোফাজ্জল হোসেন নামের মেহেরপুরের এক ফল বিক্রেতা তাঁর দুই ছেলে (২৪, ১৩ বছর) এবং এক নাতির (৮ বছর) জন্য ইউথেনেশিয়ার আবেদন করেন। কারণ তারা প্রত্যেকেই ডুশিন মাসকুলার ডিস্ট্রফি নামক নিরাময় অযোগ্য জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যেখানে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশির পরিমাণ কমতে থাকে। তোফাজ্জল হোসেন তাঁর ভিটেমাটি, দোকান বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জোগাতে সর্বস্বান্ত হন। তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারকে ভাবতে দেন তারা আমার নাতি ও সন্তানদের সঙ্গে কী করবে। তারা অনেক কষ্টে ভুগছে এবং এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায়। আমার পক্ষেও তাদের এই ভোগান্তি দেখার আর ধৈর্য নেই।’
ভাবা যায়? নিজের চোখে আয়না ধরি, যদি এই গল্প আমার হতো আমি কী করতাম?
এবার আমার চেম্বারের বিষয়ে ফিরে আসি। কয়েক দিন আগে ঠিক ওই ভদ্রলোকের মতো এমনই এক প্রস্তাব নিয়ে আরেক ভদ্রমহিলা এসেছিলেন। উচ্চশিক্ষিত সেই মানুষটিও অসহায়ের মতো কাঁদতে কাঁদতে চাইছিলেন, ‘আপনি কি সাহায্য করতে পারেন আমাকে মারা যেতে? আমার বয়স ৬১ বছর, কোনো অসুখ নেই, স্বামী চলে যাওয়ার পর আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।’ ইনিও মেয়ো ক্লিনিক থেকে শুরু করে বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার সেবা নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
আমার চেম্বারে আসা আলোচ্য ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা উভয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ নেবেন। কিন্তু যখন আসলেই আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়, তখন চিকিৎসক এবং ওষুধের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু প্রয়োজন।
মানুষের আধ্যাত্মিক সংকটে পাশে দাঁড়াতে হয় সমাজকেও। বন্দুকটা শুধু একা চিকিৎসকের বা কাউন্সেলরের কাঁধের ওপর রাখা যায় না। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ দিন শেষে আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে