কাব্যরত্নাকর আব্বাস

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০: ১৯

তখনকার ফিফথ ক্লাসে ওঠার পর কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জে টিসি নিয়ে চলে এসেছিলেন আব্বাসউদ্দীন। কোচবিহার তো তখনই শহর, আর তুফানগঞ্জ হচ্ছে একটি মহকুমা, অনেকটা গ্রামের মতো। বাবার কর্মস্থল ছিল তুফানগঞ্জ।

কেন তুফানগঞ্জে এলেন? কোচবিহার শহরে কোথাও গলা খুলে গান গাওয়া যায় না। তুফানগঞ্জের চলতি পথেও গলা ছেড়ে গান গাইলে কেউ কিছু মনে করবে না। এটাই ছিল কারণ।
তুফানগঞ্জে ছিলেন একজন সরকারি ডাক্তার। মোবারক হোসেন ছিল তাঁর নাম। তিনি খুব ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। অর্গানের সঙ্গে। আব্বাসউদ্দীনের হোস্টেলের কাছেই ছিল ডাক্তার সাহেবের বাড়ি। তাই গানের নেশায় প্রতিদিন তাঁর বাড়িতে হাজিরা দিতে শুরু করলেন আব্বাসউদ্দীন। মোবারক সাহেব যখন গাইতেন, তখন দু-তিনবার শুনেই গানটি রপ্ত হয়ে যেত আব্বাসউদ্দীনের।

ফিফথ ক্লাসে পরীক্ষায় ফার্স্ট হলেন আব্বাসউদ্দীন। ডাক্তার সাহেব ছিলেন স্কুল কমিটির মেম্বার। তিনি পুরস্কার বিতরণীর সময় ঘোষণা করলেন, ‘যে ছেলে ভালো গান করতে পারবে, তাকেও একটা পুরস্কার দেওয়া হবে। ১০ টাকার বই।’ ১০ টাকার বই মানে অনেক বই।

তখন স্কুলে হলো গানের প্রতিযোগিতা। আব্বাসউদ্দীনই হলেন প্রথম। পুরস্কার বিতরণী সভায় আব্বাসউদ্দীন উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে গাইলেন, ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া...’। আর সমাপ্তি সংগীত গাইলেন, ‘সভা যখন ভাঙবে তখন শেষের গানটি যাব গেয়ে...’। সেবারের পুরস্কার বিতরণী সভায় এই গানগুলো বেশ নতুনত্ব সৃষ্টি করল স্কুলে।

ছোট শহরের সবার কাছেই পরিচিত ছিলেন বালক আব্বাসউদ্দীন। সব বাড়িতেই ছিল তাঁর যাতায়াত। হোস্টেলে এক ঘরে চারজন থাকতে হতো। তাদের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে দুজন মুসলমান আর দুজন হিন্দু। শুধু রান্নাঘর ছিল আলাদা। এতে দুই ধর্মের মধ্যে গড়ে উঠেছিল আত্মীয়তা। মজার ব্যাপার হলো, কোচবিহারে একটা রেওয়াজ ছিল। মুসলমান ছাত্রদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে নিতে হতো সংস্কৃত, আর হিন্দু ছেলেদের ফারসি। বিএ পর্যন্ত আব্বাসউদ্দীন সংস্কৃত পড়েছেন এবং সংস্কৃতে তিনি হয়েছিলেন ‘কাব্যরত্নাকর।’

সূত্র: আব্বাসউদ্দীন আহমদ, আমার শিল্পীজীবনের কথা, পৃষ্ঠা ৩১-৩৩

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত