অরুণ কর্মকার
শুরুতেই বলে রাখি, ‘পল্টিবদল’ বর্তমান প্রজন্ম জেন-জি প্রবর্তিত ও ব্যবহৃত একটি শব্দ। অর্থ অনেকটা খেলাধুলায় দলবদল কিংবা জার্সি বদলের মতো। এ রকম আরও কিছু শব্দ ও বাক্য তাঁরা ব্যবহার করেন, যেগুলো আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধ করা ও দেখা প্রজন্মের কাছে অপরিচিত এবং কিম্ভূত ঠেকতে পারে।
আবার পেন্ডুলামের মতো দোলাচলের ব্যাপারটাও জেন-জির কাছে পরিচিত না-ও হতে পারে। কেননা, বাড়িঘরে পেন্ডুলামওয়ালা দেয়ালঘড়ি কিংবা ‘গ্র্যান্ডফাদার ক্লক’ তাঁদের অনেকেই হয়তো প্রত্যক্ষ না-ও করে থাকতে পারেন। তাই দুই প্রজন্মের কাছেই বিষয়টি স্পষ্ট থাকা ভালো।
এই ‘পল্টিবদল’ কিংবা পেন্ডুলামের মতো অবিরত দোলাচলই বোধ হয় বাংলাদেশ নামক আমাদের রাষ্ট্রটির ভাগ্যের লিখন। না হলে যতবার এই রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তা সে হত্যা, সামরিক কিংবা গণ-অভ্যুত্থান, গ্রহণযোগ্য কিংবা অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যেভাবেই হোক না কেন, ততবারই এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এবং পথ চলার ইতিহাসের একটি খণ্ডিত অংশ পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে।
বলা ভালো, পাদপ্রদীপের আলোয় আনা হয়েছে। একইভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাসের অপর অংশকে মুছে ফেলার। প্রতিবারই যাঁদের তত্ত্বাবধানে এটা করা হয়েছে, তাঁদের কাছে পূর্ণ সত্যটা যে অজানা ছিল তা নয়। কিন্তু কখনো সেই পূর্ণ সত্য প্রতিষ্ঠার পথে কেউ হাঁটেননি।
এই যে হাঁটেননি, তার প্রধান কারণ রাজনীতি। দলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট বিভাজন। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই দেশের রাজনীতিতে এই ধারার প্রবর্তন হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই বিভাজনের ধারা রেললাইনের মতো সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। এরপর প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিভাজনের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এরপর রাজনীতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ ক্রমে নৃশংসতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আর বিভাজনের প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে দেশের রাজনীতি ও সমাজ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠতে পারেনি। কোনো দল কিংবা রাজনৈতিক আদর্শই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে গণ-অসন্তোষ।এই অসন্তোষেরই একটা চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে আমরা দেখলাম সাস্প্রতিক (জুলাই-আগস্টের) ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান।
দৃশ্যত এই অভ্যুত্থানের যাঁরা সংগঠক এবং যাঁদের ব্যাপক অংশগ্রহণে এই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে, সেই জেন-জির দাবিদাওয়া, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশবাসী যে ধারণা পেয়েছিল, তা ছিল ব্যতিক্রমী ও আশাবাদী হওয়ার মতো। সেই আশাবাদ বিভাজনমুক্ত জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার। যে অভিলাষ তাঁরা প্রকাশ করেছিলেন তা ছিল কোনো খণ্ডিত ইতিহাস নয়, পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় ইতিহাস ও জাতীয় আকাঙ্ক্ষার আলোকে দেশের পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রের সংস্কার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আদর্শের সুপ্ত সমর্থক হলেও দেশের যে বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় জীবনে ও রাষ্ট্রীয় আচারে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের প্রবর্তন চায়, তাঁরা জেন-জির প্রতি একপ্রকার নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন।
আমার জানামতে, এখনো জেন-জির প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর গত কয়েক দিনের কিছু কিছু ঘটনা, কোনো কোনো উপদেষ্টার কিছু কিছু উক্তি ওই সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে এই সংশয় সৃষ্টি করেছে যে জেন-জির অভিলাষ আদৌ বাস্তবে রূপায়িত হবে তো? হলে কীভাবে হবে? নাকি সবকিছু পল্টিবদল কিংবা পেন্ডুলামের অবিরত দোলাচলের গহ্বরে নিমজ্জিত হবে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশান্তরী হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন চূড়ান্ত হওয়ার পর গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি ভবন এবং অবকাঠামোতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাবলি জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই সবাই দেখেন। কিন্তু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে স্থাপিত জাদুঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটকে কেউ সেই কাতারে ফেলবেন না; বিশেষ করে আমি দলকানা ব্যতীত যে বিপুল জনগোষ্ঠীর কথা বলছি, তাঁরা তো নয়ই।
ওই ভবন ও জাদুঘর আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি অমূল্য সম্পদের ভান্ডার ছিল। এটি কোনো ব্যক্তির তো নয়ই, কোনো গোষ্ঠী কিংবা দলেরও সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা সঠিক নয়। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের অনেক জটিল ও অমীমাংসিত বিষয় নিষ্পত্তির সূত্র সেখানে সংরক্ষিত ছিল। গণবিস্ময়ের বিষয় হলো, এ ভবনটি ধ্বংস করা সম্পর্কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ একটি কথাও বললেন না।
এটা কি সেই আগেকার খণ্ডিত ইতিহাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষণ! সেটা কি জেন-জির সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে দেশ যে পুনরায় পল্টিবদল কিংবা পেন্ডুলামের অবিরত দোলাচলেই নিমজ্জিত হবে, সে বিষয়ে যেন কেউ কোনো সন্দেহ পোষণ না করেন।
আমরা দেশের সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে দেশকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য। নিজেরা স্বৈরাচারী হওয়ার জন্য নয়। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং এই সরকারের ‘পাওয়ার বেইজ’ ছাত্রদের কেউ কেউ যে আচরণ করেছেন, তার মধ্যে অনেকে পতিত স্বৈরাচারের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়েছেন। এমন অনেককে দেখেছি যাঁরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমর্থনে রাস্তায় নামতেও দ্বিধা করেননি, তাঁরাও এই আচরণে হতাশা এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তাদের পাওয়ার বেইজকে সমানভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
১৫ আগস্ট যেসব শোকাহত ও আবেগতাড়িত মানুষ ৩২ নম্বরে আসতে চেয়েছেন, ছাত্ররা খুব সহজেই পারতেন সুশৃঙ্খলভাবে তাঁদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। ছাত্ররা যদি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আগ্রহী মানুষের ৩২ নম্বরে যাওয়া নিশ্চিত করতেন, তাহলে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের শিরস্ত্রাণে আরেকটি বাড়তি পালক যুক্ত হতো। তাঁরা আরও বেশি গৌরবান্বিত হতেন। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা পেতেন। গণমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হলে সর্বত্র ধন্য ধন্য রব উঠত। কিন্তু তার পরিবর্তে তাঁরা যা করেছেন, তাতে পরিস্থিতির জটিলতা বেড়েছে। ফলে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তাদের পাওয়ার বেইজ নাকি ভাবছেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথা।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা তো করাই যায়। কিন্তু একটি রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে এ ধরনের পদক্ষেপ কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে, তার প্রমাণ তো পূর্ববর্তী সরকারই রেখে গেছে। তারা কি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে?
মানুষ যখন ক্ষমতার দম্ভে আত্মহারা হয়ে যায়, তখন অনেক ভুলভাল কাজ করতে থাকে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার তেমন অনেক কাজ করেছে। তার পুঞ্জীভূত ফল তারা পেয়েছে ৫ আগস্ট। তাদের বিতাড়িত করে আজ যাঁরা ক্ষমতাসীন হয়েছেন, তাঁরাও যদি সেই ধারাতেই চলতে থাকেন, তাহলে শুধু পল্টিবদলই আমরা আশা করতে পারি। তাতে পেন্ডুলামের মতো দোলাচল ছাড়া আর কিছুই হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের রাষ্ট্রকে যেন আবারও সেই দুর্ভাগ্যই বহন করতে না হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
শুরুতেই বলে রাখি, ‘পল্টিবদল’ বর্তমান প্রজন্ম জেন-জি প্রবর্তিত ও ব্যবহৃত একটি শব্দ। অর্থ অনেকটা খেলাধুলায় দলবদল কিংবা জার্সি বদলের মতো। এ রকম আরও কিছু শব্দ ও বাক্য তাঁরা ব্যবহার করেন, যেগুলো আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধ করা ও দেখা প্রজন্মের কাছে অপরিচিত এবং কিম্ভূত ঠেকতে পারে।
আবার পেন্ডুলামের মতো দোলাচলের ব্যাপারটাও জেন-জির কাছে পরিচিত না-ও হতে পারে। কেননা, বাড়িঘরে পেন্ডুলামওয়ালা দেয়ালঘড়ি কিংবা ‘গ্র্যান্ডফাদার ক্লক’ তাঁদের অনেকেই হয়তো প্রত্যক্ষ না-ও করে থাকতে পারেন। তাই দুই প্রজন্মের কাছেই বিষয়টি স্পষ্ট থাকা ভালো।
এই ‘পল্টিবদল’ কিংবা পেন্ডুলামের মতো অবিরত দোলাচলই বোধ হয় বাংলাদেশ নামক আমাদের রাষ্ট্রটির ভাগ্যের লিখন। না হলে যতবার এই রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তা সে হত্যা, সামরিক কিংবা গণ-অভ্যুত্থান, গ্রহণযোগ্য কিংবা অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যেভাবেই হোক না কেন, ততবারই এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এবং পথ চলার ইতিহাসের একটি খণ্ডিত অংশ পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে।
বলা ভালো, পাদপ্রদীপের আলোয় আনা হয়েছে। একইভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাসের অপর অংশকে মুছে ফেলার। প্রতিবারই যাঁদের তত্ত্বাবধানে এটা করা হয়েছে, তাঁদের কাছে পূর্ণ সত্যটা যে অজানা ছিল তা নয়। কিন্তু কখনো সেই পূর্ণ সত্য প্রতিষ্ঠার পথে কেউ হাঁটেননি।
এই যে হাঁটেননি, তার প্রধান কারণ রাজনীতি। দলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট বিভাজন। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই দেশের রাজনীতিতে এই ধারার প্রবর্তন হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই বিভাজনের ধারা রেললাইনের মতো সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। এরপর প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিভাজনের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এরপর রাজনীতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ ক্রমে নৃশংসতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আর বিভাজনের প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে দেশের রাজনীতি ও সমাজ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠতে পারেনি। কোনো দল কিংবা রাজনৈতিক আদর্শই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে গণ-অসন্তোষ।এই অসন্তোষেরই একটা চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে আমরা দেখলাম সাস্প্রতিক (জুলাই-আগস্টের) ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান।
দৃশ্যত এই অভ্যুত্থানের যাঁরা সংগঠক এবং যাঁদের ব্যাপক অংশগ্রহণে এই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে, সেই জেন-জির দাবিদাওয়া, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশবাসী যে ধারণা পেয়েছিল, তা ছিল ব্যতিক্রমী ও আশাবাদী হওয়ার মতো। সেই আশাবাদ বিভাজনমুক্ত জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার। যে অভিলাষ তাঁরা প্রকাশ করেছিলেন তা ছিল কোনো খণ্ডিত ইতিহাস নয়, পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় ইতিহাস ও জাতীয় আকাঙ্ক্ষার আলোকে দেশের পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রের সংস্কার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আদর্শের সুপ্ত সমর্থক হলেও দেশের যে বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় জীবনে ও রাষ্ট্রীয় আচারে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের প্রবর্তন চায়, তাঁরা জেন-জির প্রতি একপ্রকার নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন।
আমার জানামতে, এখনো জেন-জির প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর গত কয়েক দিনের কিছু কিছু ঘটনা, কোনো কোনো উপদেষ্টার কিছু কিছু উক্তি ওই সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে এই সংশয় সৃষ্টি করেছে যে জেন-জির অভিলাষ আদৌ বাস্তবে রূপায়িত হবে তো? হলে কীভাবে হবে? নাকি সবকিছু পল্টিবদল কিংবা পেন্ডুলামের অবিরত দোলাচলের গহ্বরে নিমজ্জিত হবে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশান্তরী হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন চূড়ান্ত হওয়ার পর গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি ভবন এবং অবকাঠামোতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাবলি জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই সবাই দেখেন। কিন্তু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে স্থাপিত জাদুঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটকে কেউ সেই কাতারে ফেলবেন না; বিশেষ করে আমি দলকানা ব্যতীত যে বিপুল জনগোষ্ঠীর কথা বলছি, তাঁরা তো নয়ই।
ওই ভবন ও জাদুঘর আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি অমূল্য সম্পদের ভান্ডার ছিল। এটি কোনো ব্যক্তির তো নয়ই, কোনো গোষ্ঠী কিংবা দলেরও সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা সঠিক নয়। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের অনেক জটিল ও অমীমাংসিত বিষয় নিষ্পত্তির সূত্র সেখানে সংরক্ষিত ছিল। গণবিস্ময়ের বিষয় হলো, এ ভবনটি ধ্বংস করা সম্পর্কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ একটি কথাও বললেন না।
এটা কি সেই আগেকার খণ্ডিত ইতিহাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষণ! সেটা কি জেন-জির সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে দেশ যে পুনরায় পল্টিবদল কিংবা পেন্ডুলামের অবিরত দোলাচলেই নিমজ্জিত হবে, সে বিষয়ে যেন কেউ কোনো সন্দেহ পোষণ না করেন।
আমরা দেশের সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে দেশকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য। নিজেরা স্বৈরাচারী হওয়ার জন্য নয়। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং এই সরকারের ‘পাওয়ার বেইজ’ ছাত্রদের কেউ কেউ যে আচরণ করেছেন, তার মধ্যে অনেকে পতিত স্বৈরাচারের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়েছেন। এমন অনেককে দেখেছি যাঁরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমর্থনে রাস্তায় নামতেও দ্বিধা করেননি, তাঁরাও এই আচরণে হতাশা এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তাদের পাওয়ার বেইজকে সমানভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
১৫ আগস্ট যেসব শোকাহত ও আবেগতাড়িত মানুষ ৩২ নম্বরে আসতে চেয়েছেন, ছাত্ররা খুব সহজেই পারতেন সুশৃঙ্খলভাবে তাঁদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। ছাত্ররা যদি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আগ্রহী মানুষের ৩২ নম্বরে যাওয়া নিশ্চিত করতেন, তাহলে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের শিরস্ত্রাণে আরেকটি বাড়তি পালক যুক্ত হতো। তাঁরা আরও বেশি গৌরবান্বিত হতেন। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা পেতেন। গণমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হলে সর্বত্র ধন্য ধন্য রব উঠত। কিন্তু তার পরিবর্তে তাঁরা যা করেছেন, তাতে পরিস্থিতির জটিলতা বেড়েছে। ফলে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তাদের পাওয়ার বেইজ নাকি ভাবছেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথা।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা তো করাই যায়। কিন্তু একটি রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে এ ধরনের পদক্ষেপ কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে, তার প্রমাণ তো পূর্ববর্তী সরকারই রেখে গেছে। তারা কি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে?
মানুষ যখন ক্ষমতার দম্ভে আত্মহারা হয়ে যায়, তখন অনেক ভুলভাল কাজ করতে থাকে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার তেমন অনেক কাজ করেছে। তার পুঞ্জীভূত ফল তারা পেয়েছে ৫ আগস্ট। তাদের বিতাড়িত করে আজ যাঁরা ক্ষমতাসীন হয়েছেন, তাঁরাও যদি সেই ধারাতেই চলতে থাকেন, তাহলে শুধু পল্টিবদলই আমরা আশা করতে পারি। তাতে পেন্ডুলামের মতো দোলাচল ছাড়া আর কিছুই হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের রাষ্ট্রকে যেন আবারও সেই দুর্ভাগ্যই বহন করতে না হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে