ইজাজুল হক
মদিনায় দুর্ভিক্ষ এবং খলিফা ওমর (রা.)
মদিনা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে ১৮ হিজরির হজের পর কঠিন দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। অনাবৃষ্টির কারণে মাঠঘাট শুকিয়ে যায় এবং পশুপাখি এমনকি মানুষও মরতে থাকে।
এমনকি মদিনার মাটি কালো হয়ে ছাইরঙা হয়ে যায়। এ কারণে বছরটিকে ইসলামের ইতিহাসে ‘আমুর রামাদাহ’ বা ‘ছাইয়ের বছর’ বলা হয়। (তবকাতে ইবনে সাআদ: ৩ / ৩১০)
এ সময় খলিফা ওমর (রা.) নিজেই মানুষের পাশে দাঁড়ান। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে যেসব খাবার, সেগুলো খাওয়া বন্ধ করে দেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, দুর্ভিক্ষের সময় ওমর (রা.) জয়তুন তেল খেতেন, তাঁর পেট গুড়গুড় করত। ঘি খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেন। পেটে আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে বলতেন, ‘তোমার মতো করে গুড়গুড় করতে থাকো। এই যাত্রায় মানুষ বেঁচে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমার জন্য এ ছাড়া আর কিছুই নেই।’ (তবকাতে ইবনে সাআদ: ৩ / ৩১৩-৩১৫)
ওমর (রা.) মরুর মানুষের জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে খাবার আনার ব্যবস্থা করেন এবং আল্লাহর কাছে দুর্ভিক্ষ দূর করে দেওয়ার দোয়া করেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘বছরটি খুব কঠিন ছিল। …ওমর (রা.) বেদুইনদের জন্য গ্রাম থেকে উট, গম ও তেল নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এরপর আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, পাহাড়ের চূড়ায় তাদের রিজিক তৈরি করে দিন।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: পৃ. ১৯৮; তাবকাতে ইবনে সাআদ: ৩ / ৩১৬)
তখন মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। অনেক মানুষই মারা গেছে। ক্ষুধা নিবারণে কেউ কেউ ইঁদুর পর্যন্ত খেয়েছে। ওমর (রা.) মিসরের গভর্নর আমর ইবনুল আস, কুফার গভর্নর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, বসরার গভর্নর আবু মুসা আল-আশআরি এবং শামের গভর্নর মুআবিয়া ইবনে আবি সুফইয়ানকে খাদ্য-বস্ত্র পাঠানোর জন্য চিঠি লেখেন।
(আন-নাওয়াহিল মালিয়্যাহ ফি খিলাফাতি ওমর: ৩৪৯-৩৫৪)
দুর্ভিক্ষের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বাঁচতে ওমর (রা.) বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান
নামাজ, দোয়া, মোনাজাত ও তওবার মাধ্যমে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার আহ্বান জানান ওমর (রা.)। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘ওমর (রা.) দুর্ভিক্ষের বছর এমন এক আমল করতেন, যা এর আগে করতেন না। মসজিদে এশার নামাজ পড়ে ঘরে আসতেন। এরপর রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত নামাজ আদায় করতেন। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে মদিনার উপকণ্ঠ ‘আনকাব’-এ এসে ঘোরাফেরা করতেন। একদিন শেষ রাতে আমি তাঁকে দোয়া করতে শুনেছি, ‘হে আল্লাহ, আমার হাতে মুহাম্মদের জাতিকে ধ্বংস কোরো না।’
মানুষকে আল্লাহর আজাবের ব্যাপারে সতর্ক করেন। দুই হাত তুলে কায়মনোবাক্যে দোয়া করেন। নিজে কাঁদেন, সবাইকে কাঁদান। মোনাজাতে একটি বাক্য বারবার বলেছিলেন সেদিন, ‘আল্লাহ! দুর্ভিক্ষ দিয়ে আমাদের ধ্বংস করবেন না এবং আমাদের থেকে বিপদ উঠিয়ে নিন।’ এরপর মানুষকে তওবা করার পরামর্শ দেন।
বৃষ্টির নামাজ আদায় করেন
ওমর (রা.) দুর্ভিক্ষের দিনে লোকজন জড়ো করে বৃষ্টির জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়েছিলেন এবং দোয়া করেছিলেন। দোয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের সঙ্গীরা আমাদের থেকে নিরাশ হয়েছে। আমাদের সামর্থ্যে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারিনি। আমরা অক্ষম। আপনার শক্তি ছাড়া কোনো শক্তি নেই। হে আল্লাহ, বৃষ্টি দিন। মানুষ বাঁচান, দেশ বাঁচান।’ এই দোয়ার পরেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে।
সাহায্যের জন্য গভর্নরদের চিঠি লেখেন
সাহায্যের আকুতি জানিয়ে আঞ্চলিক প্রদেশগুলোর গভর্নরদের কাছে চিঠি লেখেন ওমর (রা.)। চিঠি পেয়ে মিসর থেকে আমর ইবনুল আস (রা.) এক হাজার উট ময়দা পাঠালেন। ২০টি সামুদ্রিক জাহাজে পাঠালেন তেল। পাঁচ হাজার পোশাক পাঠালেন। ইরাক থেকে সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) পাঠালেন তিন হাজার উট ময়দা। তিন হাজার চাদর। শামের গভর্নর মুআবিয়া (রা.) পাঠালেন দুই হাজার উট নিত্যপণ্য। এভাবে সব প্রদেশ এগিয়ে আসে।
দুর্ভিক্ষের দিনগুলোতে ওমর (রা.) মানুষের দুঃখ-কষ্টে খুবই ব্যথিত থাকতেন। আসলাম (রা.) বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে খরা যদি না কাটে, তবে মানুষের চিন্তায় ওমর মারা যাবেন।’
সূত্র: ইসলাম স্টোরি ডটকম
মদিনায় দুর্ভিক্ষ এবং খলিফা ওমর (রা.)
মদিনা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে ১৮ হিজরির হজের পর কঠিন দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। অনাবৃষ্টির কারণে মাঠঘাট শুকিয়ে যায় এবং পশুপাখি এমনকি মানুষও মরতে থাকে।
এমনকি মদিনার মাটি কালো হয়ে ছাইরঙা হয়ে যায়। এ কারণে বছরটিকে ইসলামের ইতিহাসে ‘আমুর রামাদাহ’ বা ‘ছাইয়ের বছর’ বলা হয়। (তবকাতে ইবনে সাআদ: ৩ / ৩১০)
এ সময় খলিফা ওমর (রা.) নিজেই মানুষের পাশে দাঁড়ান। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে যেসব খাবার, সেগুলো খাওয়া বন্ধ করে দেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, দুর্ভিক্ষের সময় ওমর (রা.) জয়তুন তেল খেতেন, তাঁর পেট গুড়গুড় করত। ঘি খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেন। পেটে আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে বলতেন, ‘তোমার মতো করে গুড়গুড় করতে থাকো। এই যাত্রায় মানুষ বেঁচে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমার জন্য এ ছাড়া আর কিছুই নেই।’ (তবকাতে ইবনে সাআদ: ৩ / ৩১৩-৩১৫)
ওমর (রা.) মরুর মানুষের জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে খাবার আনার ব্যবস্থা করেন এবং আল্লাহর কাছে দুর্ভিক্ষ দূর করে দেওয়ার দোয়া করেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘বছরটি খুব কঠিন ছিল। …ওমর (রা.) বেদুইনদের জন্য গ্রাম থেকে উট, গম ও তেল নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এরপর আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, পাহাড়ের চূড়ায় তাদের রিজিক তৈরি করে দিন।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: পৃ. ১৯৮; তাবকাতে ইবনে সাআদ: ৩ / ৩১৬)
তখন মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। অনেক মানুষই মারা গেছে। ক্ষুধা নিবারণে কেউ কেউ ইঁদুর পর্যন্ত খেয়েছে। ওমর (রা.) মিসরের গভর্নর আমর ইবনুল আস, কুফার গভর্নর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, বসরার গভর্নর আবু মুসা আল-আশআরি এবং শামের গভর্নর মুআবিয়া ইবনে আবি সুফইয়ানকে খাদ্য-বস্ত্র পাঠানোর জন্য চিঠি লেখেন।
(আন-নাওয়াহিল মালিয়্যাহ ফি খিলাফাতি ওমর: ৩৪৯-৩৫৪)
দুর্ভিক্ষের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বাঁচতে ওমর (রা.) বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান
নামাজ, দোয়া, মোনাজাত ও তওবার মাধ্যমে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার আহ্বান জানান ওমর (রা.)। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘ওমর (রা.) দুর্ভিক্ষের বছর এমন এক আমল করতেন, যা এর আগে করতেন না। মসজিদে এশার নামাজ পড়ে ঘরে আসতেন। এরপর রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত নামাজ আদায় করতেন। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে মদিনার উপকণ্ঠ ‘আনকাব’-এ এসে ঘোরাফেরা করতেন। একদিন শেষ রাতে আমি তাঁকে দোয়া করতে শুনেছি, ‘হে আল্লাহ, আমার হাতে মুহাম্মদের জাতিকে ধ্বংস কোরো না।’
মানুষকে আল্লাহর আজাবের ব্যাপারে সতর্ক করেন। দুই হাত তুলে কায়মনোবাক্যে দোয়া করেন। নিজে কাঁদেন, সবাইকে কাঁদান। মোনাজাতে একটি বাক্য বারবার বলেছিলেন সেদিন, ‘আল্লাহ! দুর্ভিক্ষ দিয়ে আমাদের ধ্বংস করবেন না এবং আমাদের থেকে বিপদ উঠিয়ে নিন।’ এরপর মানুষকে তওবা করার পরামর্শ দেন।
বৃষ্টির নামাজ আদায় করেন
ওমর (রা.) দুর্ভিক্ষের দিনে লোকজন জড়ো করে বৃষ্টির জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়েছিলেন এবং দোয়া করেছিলেন। দোয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের সঙ্গীরা আমাদের থেকে নিরাশ হয়েছে। আমাদের সামর্থ্যে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারিনি। আমরা অক্ষম। আপনার শক্তি ছাড়া কোনো শক্তি নেই। হে আল্লাহ, বৃষ্টি দিন। মানুষ বাঁচান, দেশ বাঁচান।’ এই দোয়ার পরেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে।
সাহায্যের জন্য গভর্নরদের চিঠি লেখেন
সাহায্যের আকুতি জানিয়ে আঞ্চলিক প্রদেশগুলোর গভর্নরদের কাছে চিঠি লেখেন ওমর (রা.)। চিঠি পেয়ে মিসর থেকে আমর ইবনুল আস (রা.) এক হাজার উট ময়দা পাঠালেন। ২০টি সামুদ্রিক জাহাজে পাঠালেন তেল। পাঁচ হাজার পোশাক পাঠালেন। ইরাক থেকে সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) পাঠালেন তিন হাজার উট ময়দা। তিন হাজার চাদর। শামের গভর্নর মুআবিয়া (রা.) পাঠালেন দুই হাজার উট নিত্যপণ্য। এভাবে সব প্রদেশ এগিয়ে আসে।
দুর্ভিক্ষের দিনগুলোতে ওমর (রা.) মানুষের দুঃখ-কষ্টে খুবই ব্যথিত থাকতেন। আসলাম (রা.) বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে খরা যদি না কাটে, তবে মানুষের চিন্তায় ওমর মারা যাবেন।’
সূত্র: ইসলাম স্টোরি ডটকম
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে