ফারুক মেহেদী, ঢাকা
কর দেওয়ার সক্ষমতা যাচাই করে কোনো নাগরিককে করদাতা বানানোর দায়িত্ব বেসরকারি এজেন্টের ওপর ন্যস্ত করতে যাচ্ছে সরকার। করদাতা বাড়াতে এবং কর ফাঁকি ঠেকাতে আসছে অর্থবছর থেকে সরকার এ ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এমন ঘোষণা থাকতে পারে। তেমনটি হলে কমিশনের ভিত্তিতে সরকার মনোনীত বেসরকারি আয়কর এজেন্টই আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য মিলিয়ে ঠিক করে দেবেন কোনো নাগরিককে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) খুলে রিটার্ন জমা দিতে হবে কি না, দিলে কত টাকা কর দিতে হবে। কেউ নতুন করদাতা হলে তাঁকে স্থানভেদে ন্যূনতম ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা কর দিতে বলবে। ওই কর থেকে কমিশন বাবদ এজেন্ট পাবেন ৩০০ বা ৫০০ টাকা।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা না বাড়িয়ে, অটোমেশন কাজে না লাগিয়ে বেসরকারি এজেন্টের হাতে করদাতা খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হলে আদৌ কোনো সুফল মিলবে কি না, সে নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এতে করদাতা বাড়লেও একটি দালাল গোষ্ঠী তৈরি হবে। কর আদায় নিয়ে দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে।
এ ব্যাপারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা নিয়ে হয়তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগ করে কমিশন দিয়ে কর আদায়ের পথে দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। করদাতার সঙ্গে যোগসাজশ করে এজেন্টের নিজেরই পকেটে ভরার আশঙ্কা আছে।’
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে সরাসরি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাওয়া আমাদের মতো দেশে সুফল দেবে না। হাতের কাছে অটোমেশনসহ আরও অনেক বিকল্প থাকার পরও কেন এই পথে যাচ্ছে এনবিআর—এটা বোধগম্য হচ্ছে না। এর জন্য যে অর্থ কিংবা জ্ঞানের অভাব আছে তা নয়; এটা করা হচ্ছে কারণ, কাউকে ১০ পার্সেন্ট দিলাম, সরকারও কিছু পেল—এই আর কি।’
বাজেট ঘোষণার আর ১২ দিন বাকি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর বাজেট প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটের আকার হবে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের রাজস্ব আদায় থেকেই জোগান দিতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের শর্ত হিসেবে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোরও চাপ আছে। এটা করতে হলে এনবিআরকে কর আদায়ে যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠোর হতে হবে।
এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৬টি রিটার্ন জমা পড়েছে। অথচ টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। বলা যায়, সক্ষমতা থাকার পরও বিপুলসংখ্যক করদাতা রিটার্ন জমা দেন না। এ ছাড়া কর দেওয়ার সক্ষমতাসম্পন্ন আরও বিপুলসংখ্যক নাগরিক করজালের বাইরে আছেন। তাঁদের করের আওতায় আনার কৌশল খুঁজছে এনবিআর। সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে করদাতা খুঁজতে বেসরকারি খাত থেকে এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর খসড়াও তৈরি করেছে এনবিআর।
কর-নথির নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়বে
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এজেন্টরাই আগামী অর্থবছর থেকে নতুন করদাতার খোঁজে বেরোবেন। বাজেট ঘোষণায় ‘ইনকাম ট্যাক্স প্রিপেয়ারার (আইটিপি)’ নামের নতুন নিয়মের আওতায় এজেন্টরা করদাতার নথি তৈরি থেকে শুরু করে এ-সংক্রান্ত সব সেবা দেবেন। এ জন্য কমিশন বাবদ করের ১০ শতাংশ এজেন্ট পাবেন। এজেন্ট সরবরাহ করার জন্য মনোনীত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করতে পারে এনবিআর।
কমিশনের ভিত্তিতে বেসরকারি এজেন্টের মাধ্যমে কর আদায়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যক্তির করের মতো একটি সংবেদনশীল, গোপনীয় বিষয়ে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা কতটা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে, সে নিয়েও কথা উঠেছে। এ খাতের বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, কর বিভাগ নিয়ে এমনিতেই মানুষের মধ্যে করভীতি আছে। হয়রানির কারণে মানুষ সক্ষমতা সত্ত্বেও কর দিতে উৎসাহ দেখান না। কর দিতে গেলে ঘুষসহ অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ‘ওপেন সিক্রেট’। করদাতা খোঁজা এবং তাদের আয়-ব্যয়ের গোপন বিষয়ে নতুন করে তৃতীয় পক্ষ জড়ালে মানুষের করভীতি আরও বাড়বে। কর-নথির নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়বে।
করের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা হওয়ার শঙ্কা
করদাতার সঙ্গে এজেন্টের যোগসাজশে করের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না হয়ে ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ব্যক্তির কর-নথি অতি গোপনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এনবিআরেরও যে কেউ চাইলেই সেই নথি খুলে দেখতে পারেন না। কোনো নথির বিষয়ে সন্দেহ হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিরীক্ষা করতে পারেন। নতুন করদাতা ফাঁকিবাজ হলে তিনি এজেন্টের সঙ্গে আঁতাত করেও কর ফাঁকি দিতে পারেন। কমিশনভিত্তিক এজেন্ট হওয়ায় যত বেশি কর আদায় হবে তত বেশি কমিশন মিলবে। এতে করের অঙ্ক নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হওয়া এবং তা আদালত পর্যন্ত গড়ানোরও আশঙ্কা আছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করদাতা খুঁজতে চান, সেটা তো অনলাইনেই করা যায়। বিশ্বে যেখানে করদাতার সঙ্গে সাক্ষাৎ কমে যাচ্ছে, সেখানে করদাতার দরজায় যেতে হবে কেন? মূল কথা হয়রানির নতুন একটা অ্যাভিনিউ খোলা হচ্ছে। কর অফিসে তো যেতেই হচ্ছে, এর সঙ্গে নতুন এ বিপত্তি। এখানে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তারা কারও মামা-চাচা কি না এবং এটা দরপত্রে হবে কি না—সে বিষয়গুলোও তো স্পষ্ট নয়।’
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এটা না করে মোটাদাগে এনবিআরের কর প্রশাসনকে শক্তিশালী করলেই বরং ভালো হতো। অফিস ও জনবল বাড়িয়ে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে গেলে করদাতা বাড়ত।’ তিনি বলেন, ‘আমি একবার কর প্রশাসন সংস্কারের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটি সরকারের কাছে আছে। অর্থমন্ত্রী চাইলে সেটি করতে পারতেন।’
ডিজিটাল যুগে সাবেকি কৌশল
বেসরকারি এজেন্টের মাধ্যমে নতুন করদাতা খোঁজার পেছনে এনবিআরের সামনে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের উদাহরণ আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশগুলো যখন ওই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল তখনো তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটেনি। ফলে ওটাই ছিল যুক্তিযুক্ত। আর এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটায় করদাতার সঙ্গে কর আদায়কারীর দেখা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ঘুষ, দুর্নীতি ও সুযোগের অপব্যবহারের কারণে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বাংলাদেশ এমন পদ্ধতি অনুসরণের পর্যায়ে নেই।
এ প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে পুরোনো কৌশলে ফেরার যৌক্তিকতা দেখি না।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সিএ ফার্মকে নিয়োগ করা হয়েছিল জরিপ করে নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে, সেটা ব্যর্থ হয়। কারণ হলো তাদের মধ্যে পেশাদারি ছিল না। এটা মূলত কর বিভাগের কাজ। এটা যখন বাইরের কাউকে দেওয়া হবে, স্বাভাবিকভাবেই কর বিভাগের ভেতরে এটা নিয়ে কিছুটা গা-ছাড়া ভাব আসতে পারে। তারা ভাবতে পারে, আমাদের তো কাজ নেই। যাদের কাজ দেওয়া হয়েছে, তারাই করুক। এ রকম হলে উদ্যোগটা টেকসই হবে না।’
কর দেওয়ার সক্ষমতা যাচাই করে কোনো নাগরিককে করদাতা বানানোর দায়িত্ব বেসরকারি এজেন্টের ওপর ন্যস্ত করতে যাচ্ছে সরকার। করদাতা বাড়াতে এবং কর ফাঁকি ঠেকাতে আসছে অর্থবছর থেকে সরকার এ ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এমন ঘোষণা থাকতে পারে। তেমনটি হলে কমিশনের ভিত্তিতে সরকার মনোনীত বেসরকারি আয়কর এজেন্টই আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য মিলিয়ে ঠিক করে দেবেন কোনো নাগরিককে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) খুলে রিটার্ন জমা দিতে হবে কি না, দিলে কত টাকা কর দিতে হবে। কেউ নতুন করদাতা হলে তাঁকে স্থানভেদে ন্যূনতম ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা কর দিতে বলবে। ওই কর থেকে কমিশন বাবদ এজেন্ট পাবেন ৩০০ বা ৫০০ টাকা।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা না বাড়িয়ে, অটোমেশন কাজে না লাগিয়ে বেসরকারি এজেন্টের হাতে করদাতা খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হলে আদৌ কোনো সুফল মিলবে কি না, সে নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এতে করদাতা বাড়লেও একটি দালাল গোষ্ঠী তৈরি হবে। কর আদায় নিয়ে দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে।
এ ব্যাপারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা নিয়ে হয়তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগ করে কমিশন দিয়ে কর আদায়ের পথে দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। করদাতার সঙ্গে যোগসাজশ করে এজেন্টের নিজেরই পকেটে ভরার আশঙ্কা আছে।’
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে সরাসরি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাওয়া আমাদের মতো দেশে সুফল দেবে না। হাতের কাছে অটোমেশনসহ আরও অনেক বিকল্প থাকার পরও কেন এই পথে যাচ্ছে এনবিআর—এটা বোধগম্য হচ্ছে না। এর জন্য যে অর্থ কিংবা জ্ঞানের অভাব আছে তা নয়; এটা করা হচ্ছে কারণ, কাউকে ১০ পার্সেন্ট দিলাম, সরকারও কিছু পেল—এই আর কি।’
বাজেট ঘোষণার আর ১২ দিন বাকি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর বাজেট প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটের আকার হবে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের রাজস্ব আদায় থেকেই জোগান দিতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের শর্ত হিসেবে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোরও চাপ আছে। এটা করতে হলে এনবিআরকে কর আদায়ে যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠোর হতে হবে।
এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৬টি রিটার্ন জমা পড়েছে। অথচ টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। বলা যায়, সক্ষমতা থাকার পরও বিপুলসংখ্যক করদাতা রিটার্ন জমা দেন না। এ ছাড়া কর দেওয়ার সক্ষমতাসম্পন্ন আরও বিপুলসংখ্যক নাগরিক করজালের বাইরে আছেন। তাঁদের করের আওতায় আনার কৌশল খুঁজছে এনবিআর। সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে করদাতা খুঁজতে বেসরকারি খাত থেকে এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর খসড়াও তৈরি করেছে এনবিআর।
কর-নথির নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়বে
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এজেন্টরাই আগামী অর্থবছর থেকে নতুন করদাতার খোঁজে বেরোবেন। বাজেট ঘোষণায় ‘ইনকাম ট্যাক্স প্রিপেয়ারার (আইটিপি)’ নামের নতুন নিয়মের আওতায় এজেন্টরা করদাতার নথি তৈরি থেকে শুরু করে এ-সংক্রান্ত সব সেবা দেবেন। এ জন্য কমিশন বাবদ করের ১০ শতাংশ এজেন্ট পাবেন। এজেন্ট সরবরাহ করার জন্য মনোনীত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করতে পারে এনবিআর।
কমিশনের ভিত্তিতে বেসরকারি এজেন্টের মাধ্যমে কর আদায়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যক্তির করের মতো একটি সংবেদনশীল, গোপনীয় বিষয়ে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা কতটা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে, সে নিয়েও কথা উঠেছে। এ খাতের বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, কর বিভাগ নিয়ে এমনিতেই মানুষের মধ্যে করভীতি আছে। হয়রানির কারণে মানুষ সক্ষমতা সত্ত্বেও কর দিতে উৎসাহ দেখান না। কর দিতে গেলে ঘুষসহ অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ‘ওপেন সিক্রেট’। করদাতা খোঁজা এবং তাদের আয়-ব্যয়ের গোপন বিষয়ে নতুন করে তৃতীয় পক্ষ জড়ালে মানুষের করভীতি আরও বাড়বে। কর-নথির নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়বে।
করের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা হওয়ার শঙ্কা
করদাতার সঙ্গে এজেন্টের যোগসাজশে করের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না হয়ে ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ব্যক্তির কর-নথি অতি গোপনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এনবিআরেরও যে কেউ চাইলেই সেই নথি খুলে দেখতে পারেন না। কোনো নথির বিষয়ে সন্দেহ হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিরীক্ষা করতে পারেন। নতুন করদাতা ফাঁকিবাজ হলে তিনি এজেন্টের সঙ্গে আঁতাত করেও কর ফাঁকি দিতে পারেন। কমিশনভিত্তিক এজেন্ট হওয়ায় যত বেশি কর আদায় হবে তত বেশি কমিশন মিলবে। এতে করের অঙ্ক নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হওয়া এবং তা আদালত পর্যন্ত গড়ানোরও আশঙ্কা আছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করদাতা খুঁজতে চান, সেটা তো অনলাইনেই করা যায়। বিশ্বে যেখানে করদাতার সঙ্গে সাক্ষাৎ কমে যাচ্ছে, সেখানে করদাতার দরজায় যেতে হবে কেন? মূল কথা হয়রানির নতুন একটা অ্যাভিনিউ খোলা হচ্ছে। কর অফিসে তো যেতেই হচ্ছে, এর সঙ্গে নতুন এ বিপত্তি। এখানে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তারা কারও মামা-চাচা কি না এবং এটা দরপত্রে হবে কি না—সে বিষয়গুলোও তো স্পষ্ট নয়।’
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এটা না করে মোটাদাগে এনবিআরের কর প্রশাসনকে শক্তিশালী করলেই বরং ভালো হতো। অফিস ও জনবল বাড়িয়ে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে গেলে করদাতা বাড়ত।’ তিনি বলেন, ‘আমি একবার কর প্রশাসন সংস্কারের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটি সরকারের কাছে আছে। অর্থমন্ত্রী চাইলে সেটি করতে পারতেন।’
ডিজিটাল যুগে সাবেকি কৌশল
বেসরকারি এজেন্টের মাধ্যমে নতুন করদাতা খোঁজার পেছনে এনবিআরের সামনে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের উদাহরণ আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশগুলো যখন ওই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল তখনো তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটেনি। ফলে ওটাই ছিল যুক্তিযুক্ত। আর এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটায় করদাতার সঙ্গে কর আদায়কারীর দেখা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ঘুষ, দুর্নীতি ও সুযোগের অপব্যবহারের কারণে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বাংলাদেশ এমন পদ্ধতি অনুসরণের পর্যায়ে নেই।
এ প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে পুরোনো কৌশলে ফেরার যৌক্তিকতা দেখি না।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সিএ ফার্মকে নিয়োগ করা হয়েছিল জরিপ করে নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে, সেটা ব্যর্থ হয়। কারণ হলো তাদের মধ্যে পেশাদারি ছিল না। এটা মূলত কর বিভাগের কাজ। এটা যখন বাইরের কাউকে দেওয়া হবে, স্বাভাবিকভাবেই কর বিভাগের ভেতরে এটা নিয়ে কিছুটা গা-ছাড়া ভাব আসতে পারে। তারা ভাবতে পারে, আমাদের তো কাজ নেই। যাদের কাজ দেওয়া হয়েছে, তারাই করুক। এ রকম হলে উদ্যোগটা টেকসই হবে না।’
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে