আজকের পত্রিকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
এম এম আকাশ: কোটাপদ্ধতি যেকোনো বৈষম্যপূর্ণ সমাজের জন্য প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আছে, সেটাই তো বৈষম্যপূর্ণ সমাজ। আমরা যদি সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বলি, তোমরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করো, তাহলে ডারউনীয় নিয়মে যে যোগ্য, সে-ই টিকে থাকবে—‘স্ট্রাগল ফর দ্য এক্সিটেন্স অ্যান্ড সারভাইবাল অব দ্য ফিটেস্ট।’ এতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা প্রতিযোগিতায় আটকে থাকবে এবং ক্রমাগত তলিয়ে যেতে থাকবে। সব শেষে তারা আর টিকে থাকতে পারবে না। যদিও সেটা তাদের অপরাধের জন্য না। সেটা তাদের যোগ্যতার কমতির জন্য হতে পারে। কারণ, তাদের যোগ্যতার কমতিটা অতিক্রম করারও সুযোগ নেই।বংশানুক্রমিকভাবে তারা অযোগ্য থাকছে। ফলে তাদের সন্তানেরা কোনো অপরাধ ছাড়াই প্রতিযোগিতায় অক্ষম থেকে যাচ্ছে এবং অসম প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধানের দুটি উপায় আছে। এক. সমাজ যদি পরাজিত, প্রতিযোগিতায় অক্ষম, আপেক্ষিকভাবে পশ্চাৎপদ লোকদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়, তাহলে তারা টিকে থাকবে। জীবনসংগ্রামে পরাজিত হয়ে মৃত্যু অনিবার্য—এ রকম হতাশা এবং বিক্ষোভের মধ্যে তারা থাকবে না।
সমাজতন্ত্রে এই সমস্যার একটি সুরাহা করার চেষ্টা হয়েছিল। নিওলিবারালিজম তা প্রত্যাখ্যান করেছে। দুই. ন্যায়বিচার ও সুষম প্রতিযোগিতার জন্যই কোটার প্রয়োজন আছে। বাড়তি সুবিধার জন্য কোটাকে বলা হয় ‘এফারমেটিভ পলিসি’ বা ‘ইতিবাচক নীতি’। এই নীতি উন্নত সব দেশই এখন গ্রহণ করেছে। এটাকে অনেকভাবে বলা হয়। কোথাও বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তা’, কোথাও ‘সামাজিক কল্যাণ’। কিন্তু এগুলোর সব কথার মূল দার্শনিক ভিত্তি হলো, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সমাজ বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কিছু বাড়তি সুবিধা দেওয়া। সেটাকেই আমরা ‘কোটা’ বলি। সেটা যেন প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে যায়। এখন এখানে দুটি সমস্যা। এক. প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত কারা? সেটা নির্ণয় করা, কতটুকু দিলে তারা দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির দিকে যাবে না। আবার অতিরিক্ত দিলে তারা এর ওপর বছরের পর বছর নির্ভরশীল হয়েই থাকবে।
সেটাও সম্মানজনক নয়—করুণানির্ভর জীবন! এখন তাদের অতিরিক্ত ও স্থায়ী কোটা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলে তো তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং এটা কোনোভাবেই কাম্য না। আরেকটা উদ্দেশ্য হলো, তাদের মরতে না দেওয়া। বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অর্থ হলো তাদের আপাতত বাঁচিয়ে রাখা। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ মেয়াদে তাদের নিজের চেষ্টায় বাঁচার সক্ষমতা অর্জন করার দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। এ দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য কোটার নকশা কী হবে, কাকে দেওয়া হবে, কতটুকু দেওয়া হবে এবং কত দিন দেওয়া হবে? এগুলো হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্ন। কারণ, অতিরিক্ত কোটা দিলে, অতিরিক্ত সময়ের জন্য দিলে এবং অযোগ্যদের দিলে যোগ্য লোকেরা তাদের যোগ্যতার পুরস্কারের তুলনায় অযোগ্যদের বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ভেবে তারা মনে করবে, এখানে ন্যায় রক্ষিত হচ্ছে না; মানে মুড়ি-মুড়কির মতো একই দাম হওয়ার মতো হয়ে যাবে। মুড়কি মানে যারা একটু উন্নত, তাদের বাড়তি কাজ করার প্রণোদনা থাকল না। এতে সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতির চাকা থেমে যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে কোটাব্যবস্থা বাতিল, না সংস্কারের দাবি তোলা উচিত?
এম এম আকাশ: ওপরের বক্তব্য অনুযায়ী, আমরা যদি বাংলাদেশের কোটাব্যবস্থাকে দেখি, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে সংবিধান পেয়েছি তাতে যা আছে, আমি যে দার্শনিক যুক্তির কথা বললাম, সংবিধান অনুযায়ী সেটা মেনে নেওয়াই উচিত। সেটাতে নির্দিষ্ট একটা ধারা আছে। কোটাব্যবস্থায় সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই কোটার প্রসঙ্গটা ছিল। সেই সময়ে ঠিক হয়েছিল কোটা কাকে কাকে দেওয়া হবে। তখন যেহেতু মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন একটা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি। তাঁরা জীবনের একটা বছর লস করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন শ্রমিক-কৃষক; মানে গণ-শ্রেণির মানুষ। মধ্যবিত্ত, ছাত্র-যুবারাও ছিলেন। তাঁরাও যে খুব ধনী লোকের সন্তান ছিলেন, তা কিন্তু নয়। সেই সময়ের মুক্তিযোদ্ধারা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। তখন কিন্তু নকল মুক্তিযোদ্ধা সেভাবে ছিল না। তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবিধানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ঠিকই ছিল এবং ৩০ শতাংশ কোটা নিয়ে কেউই আপত্তি করেনি। কিন্তু এরপর থেকে ধীরে ধীরে কিছু সমস্যা তৈরি হতে থাকল। কারণ সেই সময়ে বলা হয়নি কোটাটা কত দিন পর্যন্ত চলবে এবং কয় প্রজন্ম থাকবে। সেই সময়ে বলে দেওয়া উচিত ছিল। এটা সেই সময়ে কোটার নকশার একটা সীমাবদ্ধতা ছিল।
পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, সুবিধাবঞ্চিত কোনো অংশকে রাষ্ট্র থেকে সুবিধা দেওয়া হয়, তখন সেটা তারা উন্নতির পরেও ছাড়তে চায় না।তারপরও হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পর্যন্ত কোটা ঠিকই ছিল। সব যুক্তি এ পর্যন্ত চলে। কিন্তু এরপর নাতি পর্যন্ত যুক্তিটা চলে না।আমার ধারণা, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তো ভবিষ্যতে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে মুক্তিযুদ্ধে যাননি। নিজেদের আত্মরক্ষা এবং দেশের প্রতি অঙ্গীকারের কারণে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। এখন এই কোটার অপব্যবহার হচ্ছে। সে জন্য অন্য শ্রেণির লোকেরা মনে করছে, এই কোটার কারণে তাদের প্রতি ন্যায়নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। সে জন্য তারা আন্দোলন করছে এবং তাদেরও যুক্তি আছে।
কিন্তু কোটা তুলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। গত আন্দোলনের সময়ই কোটা সংস্কারের জন্য একটা কমিশন গঠন করা উচিত ছিল। সেই কমিশনের ওপর দুটি টিওআর দেওয়া উচিত ছিল। সুবিধাবঞ্চিত অংশ কারা, তা চিহ্নিত করা। তারা সুবিধা পেয়ে গেলে কত দিন তা চলবে এবং কখন তারা আর কোটা ব্যবহার করতে পারবে না। যেমন কেউ একজন কোটার সুবিধা পেয়ে চাকরি পেল। চাকরির প্রমোশনের সময় আবার সেটা ব্যবহার করল। এ জন্য তখন এটা আর দেওয়া ঠিক হবে না।
সে প্রথম শ্রেণির চাকরি পাওয়ার পর তো একটা সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির পরিবারে পরিণত হলো। সুতরাং এই নিয়মগুলো ঠিকমতো করা হয়নি। কাকে কোন পর্যন্ত এবং কত দিন এই সুবিধা দেওয়া হবে, সেটা ঠিক করা হয়নি। সেটা ছিল ভুল। সেই বিধিগুলো না করার কারণে অপাত্রে কোটা বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপাত্রে যখন কোটা বণ্টন হচ্ছে, তখন যারা অন্য পাত্র, তারা বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং পাত্ররা অপাত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই অর্থে এই আন্দোলনটা ন্যায়সংগত। এখন পাত্ররা অপাত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বলে, পাত্র ভেঙে দেওয়াটা ঠিক হবে না। অপাত্রদের পাত্র থেকে বের করে এনে সঠিক পাত্রদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর নিষ্পত্তি আদালতের মাধ্যমে, নাকি সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত?
এম এম আকাশ: এটা ঠিক আদালত বা সংসদে আলাপ-আলোচনার বিষয় নয়। সামগ্রিকভাবে আলাপ-আলোচনা করে ধীর মস্তিষ্কে একটা সমাধানে আসা দরকার। এ ধরনের সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত টাস্কফোর্স গঠন করে। জ্ঞানী-গুণী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠন করে। সুবিধাবঞ্চিত যেসব শ্রেণি আছে, যেমন প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, পশ্চাৎপদ জেলাসহ আরও কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করে, এদের প্রত্যেকের প্রতিনিধি নিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যেসব বিশেষজ্ঞ কাজ করে, তাদের নিয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা।
টাস্কফোর্সের মতামত এবং সংবিধানের বিধিবিধানের আলোকে কোটার সংস্কার কীভাবে করা যায়, সে জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদি, সুসংহত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতকারী সুপারিশের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান কার্যকর করা যেতে পারে। সেটা নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেই সুপারিশ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করতে পারে। এর জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা কোটাবিরোধীদের রিট করতে হতো না। আমি মনে করি, এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা হয়তো হতো না।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এম এম আকাশ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
এম এম আকাশ: কোটাপদ্ধতি যেকোনো বৈষম্যপূর্ণ সমাজের জন্য প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আছে, সেটাই তো বৈষম্যপূর্ণ সমাজ। আমরা যদি সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বলি, তোমরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করো, তাহলে ডারউনীয় নিয়মে যে যোগ্য, সে-ই টিকে থাকবে—‘স্ট্রাগল ফর দ্য এক্সিটেন্স অ্যান্ড সারভাইবাল অব দ্য ফিটেস্ট।’ এতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা প্রতিযোগিতায় আটকে থাকবে এবং ক্রমাগত তলিয়ে যেতে থাকবে। সব শেষে তারা আর টিকে থাকতে পারবে না। যদিও সেটা তাদের অপরাধের জন্য না। সেটা তাদের যোগ্যতার কমতির জন্য হতে পারে। কারণ, তাদের যোগ্যতার কমতিটা অতিক্রম করারও সুযোগ নেই।বংশানুক্রমিকভাবে তারা অযোগ্য থাকছে। ফলে তাদের সন্তানেরা কোনো অপরাধ ছাড়াই প্রতিযোগিতায় অক্ষম থেকে যাচ্ছে এবং অসম প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধানের দুটি উপায় আছে। এক. সমাজ যদি পরাজিত, প্রতিযোগিতায় অক্ষম, আপেক্ষিকভাবে পশ্চাৎপদ লোকদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়, তাহলে তারা টিকে থাকবে। জীবনসংগ্রামে পরাজিত হয়ে মৃত্যু অনিবার্য—এ রকম হতাশা এবং বিক্ষোভের মধ্যে তারা থাকবে না।
সমাজতন্ত্রে এই সমস্যার একটি সুরাহা করার চেষ্টা হয়েছিল। নিওলিবারালিজম তা প্রত্যাখ্যান করেছে। দুই. ন্যায়বিচার ও সুষম প্রতিযোগিতার জন্যই কোটার প্রয়োজন আছে। বাড়তি সুবিধার জন্য কোটাকে বলা হয় ‘এফারমেটিভ পলিসি’ বা ‘ইতিবাচক নীতি’। এই নীতি উন্নত সব দেশই এখন গ্রহণ করেছে। এটাকে অনেকভাবে বলা হয়। কোথাও বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তা’, কোথাও ‘সামাজিক কল্যাণ’। কিন্তু এগুলোর সব কথার মূল দার্শনিক ভিত্তি হলো, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সমাজ বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কিছু বাড়তি সুবিধা দেওয়া। সেটাকেই আমরা ‘কোটা’ বলি। সেটা যেন প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে যায়। এখন এখানে দুটি সমস্যা। এক. প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত কারা? সেটা নির্ণয় করা, কতটুকু দিলে তারা দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির দিকে যাবে না। আবার অতিরিক্ত দিলে তারা এর ওপর বছরের পর বছর নির্ভরশীল হয়েই থাকবে।
সেটাও সম্মানজনক নয়—করুণানির্ভর জীবন! এখন তাদের অতিরিক্ত ও স্থায়ী কোটা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলে তো তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং এটা কোনোভাবেই কাম্য না। আরেকটা উদ্দেশ্য হলো, তাদের মরতে না দেওয়া। বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অর্থ হলো তাদের আপাতত বাঁচিয়ে রাখা। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ মেয়াদে তাদের নিজের চেষ্টায় বাঁচার সক্ষমতা অর্জন করার দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। এ দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য কোটার নকশা কী হবে, কাকে দেওয়া হবে, কতটুকু দেওয়া হবে এবং কত দিন দেওয়া হবে? এগুলো হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্ন। কারণ, অতিরিক্ত কোটা দিলে, অতিরিক্ত সময়ের জন্য দিলে এবং অযোগ্যদের দিলে যোগ্য লোকেরা তাদের যোগ্যতার পুরস্কারের তুলনায় অযোগ্যদের বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ভেবে তারা মনে করবে, এখানে ন্যায় রক্ষিত হচ্ছে না; মানে মুড়ি-মুড়কির মতো একই দাম হওয়ার মতো হয়ে যাবে। মুড়কি মানে যারা একটু উন্নত, তাদের বাড়তি কাজ করার প্রণোদনা থাকল না। এতে সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতির চাকা থেমে যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে কোটাব্যবস্থা বাতিল, না সংস্কারের দাবি তোলা উচিত?
এম এম আকাশ: ওপরের বক্তব্য অনুযায়ী, আমরা যদি বাংলাদেশের কোটাব্যবস্থাকে দেখি, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে সংবিধান পেয়েছি তাতে যা আছে, আমি যে দার্শনিক যুক্তির কথা বললাম, সংবিধান অনুযায়ী সেটা মেনে নেওয়াই উচিত। সেটাতে নির্দিষ্ট একটা ধারা আছে। কোটাব্যবস্থায় সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই কোটার প্রসঙ্গটা ছিল। সেই সময়ে ঠিক হয়েছিল কোটা কাকে কাকে দেওয়া হবে। তখন যেহেতু মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন একটা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি। তাঁরা জীবনের একটা বছর লস করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন শ্রমিক-কৃষক; মানে গণ-শ্রেণির মানুষ। মধ্যবিত্ত, ছাত্র-যুবারাও ছিলেন। তাঁরাও যে খুব ধনী লোকের সন্তান ছিলেন, তা কিন্তু নয়। সেই সময়ের মুক্তিযোদ্ধারা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। তখন কিন্তু নকল মুক্তিযোদ্ধা সেভাবে ছিল না। তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবিধানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ঠিকই ছিল এবং ৩০ শতাংশ কোটা নিয়ে কেউই আপত্তি করেনি। কিন্তু এরপর থেকে ধীরে ধীরে কিছু সমস্যা তৈরি হতে থাকল। কারণ সেই সময়ে বলা হয়নি কোটাটা কত দিন পর্যন্ত চলবে এবং কয় প্রজন্ম থাকবে। সেই সময়ে বলে দেওয়া উচিত ছিল। এটা সেই সময়ে কোটার নকশার একটা সীমাবদ্ধতা ছিল।
পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, সুবিধাবঞ্চিত কোনো অংশকে রাষ্ট্র থেকে সুবিধা দেওয়া হয়, তখন সেটা তারা উন্নতির পরেও ছাড়তে চায় না।তারপরও হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পর্যন্ত কোটা ঠিকই ছিল। সব যুক্তি এ পর্যন্ত চলে। কিন্তু এরপর নাতি পর্যন্ত যুক্তিটা চলে না।আমার ধারণা, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তো ভবিষ্যতে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে মুক্তিযুদ্ধে যাননি। নিজেদের আত্মরক্ষা এবং দেশের প্রতি অঙ্গীকারের কারণে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। এখন এই কোটার অপব্যবহার হচ্ছে। সে জন্য অন্য শ্রেণির লোকেরা মনে করছে, এই কোটার কারণে তাদের প্রতি ন্যায়নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। সে জন্য তারা আন্দোলন করছে এবং তাদেরও যুক্তি আছে।
কিন্তু কোটা তুলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। গত আন্দোলনের সময়ই কোটা সংস্কারের জন্য একটা কমিশন গঠন করা উচিত ছিল। সেই কমিশনের ওপর দুটি টিওআর দেওয়া উচিত ছিল। সুবিধাবঞ্চিত অংশ কারা, তা চিহ্নিত করা। তারা সুবিধা পেয়ে গেলে কত দিন তা চলবে এবং কখন তারা আর কোটা ব্যবহার করতে পারবে না। যেমন কেউ একজন কোটার সুবিধা পেয়ে চাকরি পেল। চাকরির প্রমোশনের সময় আবার সেটা ব্যবহার করল। এ জন্য তখন এটা আর দেওয়া ঠিক হবে না।
সে প্রথম শ্রেণির চাকরি পাওয়ার পর তো একটা সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির পরিবারে পরিণত হলো। সুতরাং এই নিয়মগুলো ঠিকমতো করা হয়নি। কাকে কোন পর্যন্ত এবং কত দিন এই সুবিধা দেওয়া হবে, সেটা ঠিক করা হয়নি। সেটা ছিল ভুল। সেই বিধিগুলো না করার কারণে অপাত্রে কোটা বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপাত্রে যখন কোটা বণ্টন হচ্ছে, তখন যারা অন্য পাত্র, তারা বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং পাত্ররা অপাত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই অর্থে এই আন্দোলনটা ন্যায়সংগত। এখন পাত্ররা অপাত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বলে, পাত্র ভেঙে দেওয়াটা ঠিক হবে না। অপাত্রদের পাত্র থেকে বের করে এনে সঠিক পাত্রদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর নিষ্পত্তি আদালতের মাধ্যমে, নাকি সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত?
এম এম আকাশ: এটা ঠিক আদালত বা সংসদে আলাপ-আলোচনার বিষয় নয়। সামগ্রিকভাবে আলাপ-আলোচনা করে ধীর মস্তিষ্কে একটা সমাধানে আসা দরকার। এ ধরনের সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত টাস্কফোর্স গঠন করে। জ্ঞানী-গুণী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠন করে। সুবিধাবঞ্চিত যেসব শ্রেণি আছে, যেমন প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, পশ্চাৎপদ জেলাসহ আরও কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করে, এদের প্রত্যেকের প্রতিনিধি নিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যেসব বিশেষজ্ঞ কাজ করে, তাদের নিয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা।
টাস্কফোর্সের মতামত এবং সংবিধানের বিধিবিধানের আলোকে কোটার সংস্কার কীভাবে করা যায়, সে জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদি, সুসংহত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতকারী সুপারিশের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান কার্যকর করা যেতে পারে। সেটা নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেই সুপারিশ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করতে পারে। এর জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা কোটাবিরোধীদের রিট করতে হতো না। আমি মনে করি, এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা হয়তো হতো না।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এম এম আকাশ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে